| এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? -শুভ কিবরিয়া | |||
বাংলাদেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল পারস্পরিক সংঘাত ও দ্বন্দ্বকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছে, এ থেকে বেরিয়ে আসা এখন খুব দুষ্কর। দুই বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অহং, দ্বেষ, জিঘাংসা দুই দলের সীমানা পেরিয়ে রাষ্ট্রের গোটা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে, রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের সুস্থিতির যে অবয়ব গত দুই দশকে তিলে তিলে গড়ে উঠছিল, তা সর্বব্যাপী ভাঙনের মুখে। জনমানুষের দীর্ঘ শ্রমে ও অবিমিশ্র নিষ্ঠায় গড়ে ওঠা অর্থনীতির গতিশীলতা আনার সর্বজনীন চেষ্টাটা এখন স্থবিরতায় আক্রান্ত। রাজনীতির সব পথ এখন সহিংসতায় পর্যবসিত। রাজনৈতিক শিষ্টাচার ক্রমশ নিম্নমুখীন। এই অবনমন রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান, অঙ্গ এমনকি রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতিতে দ্রুততার সঙ্গে বিস্তার লাভ করছে। ফলে মূল্যবোধহীন হিংসা ও বৈরী মনোভাবে রাষ্ট্রস্থিত সমাজ আক্রান্ত হচ্ছে প্রবলতরভাবে। রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে রুচি, আচার, ব্যবহার, সর্বত্রই এখন ভাঙনের পদধ্বনি। দ্রুতলয়ে ভেঙে পড়ছে সবকিছু। সুস্থিত সমাজ গড়ার বদলে সহিংস, ঘৃণাজাত, পরস্পরকে নির্মূল আকাক্সক্ষী এক সমাজ বিনির্মিত হচ্ছে দ্রুতলয়ে। এই দ্রুত ঝড় রাষ্ট্রকে কোনো খাদের কিনারায় নামাবে, নাকি আমরা এই অবনমন থেকে উত্তরণ পাব- এই অমীমাংসিত, বহুজিজ্ঞাসিত প্রশ্নের বিশ্লেষণ করেছেন শুভ কিবরিয়া ‘সকাল থেকে মধ্যরাত, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত এখানে নিরন্তর গর্বিত মিথ্যাচার ও আরো মিথ্যাচারের মধ্যে ডুবে থাকতে হয়; রাষ্ট্র অবিরল শেখায় যে মিথ্যাচারই সত্যাচার, দুর্নীতিই সুনীতি, অত্যাচারই জনগণকে সুখী করার পদ্ধতি, প্রতারণাই সুসমাচার, অবিচারই সুবিচার, অনধিকারই অধিকার, বর্বরতাই সংস্কৃতি, অন্ধকারই আলোর অধিক, দাম্ভিকতাই বিনয়, সন্ত্রাসই শান্তি, মৌলবাদই মুক্তি, মূর্খ অসৎ অমার্জিত ভণ্ড ক্ষমতাসীনদের একচ্ছত্র তাণ্ডব আর নিষ্পেষণই গণতন্ত্র।’ [-হুমায়ুন আজাদ। আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম। ফেব্রুয়ারি ২০০৫, পৃ. ১৪-১৫] ভাঙছে কী? আপাতত বাংলাদেশের সমাজের গোটা চেহারায় একটা কসমেটিক সৌন্দর্য আছে বটে। শহর ও নগরে, দেবালয় ও বিদ্যালয়ের আপাতত চেহারায় কোনো মলিনতা ধরা পড়বে না হয়তো। কিন্তু খোলসটা খুললেই, মুখোশটা নামালেই বোঝা যাবে উন্নয়ন আর রাজনীতির চেহারাটা কি কদর্যই না হয়ে পড়েছে! গত এক বছরে সব বড় রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য, বিবৃতি, টকশোর শব্দগুলো ঘাঁটলে বোঝা যাবে কোথায় নেমেছে বাংলাদেশ। শুধু তা-ই নয়, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের বক্তৃতা আর কথামালার রেকর্ড ঘাঁটলেও দেখা যাবে রাষ্ট্রাচারের কোথাও নিয়মনীতি-শুভবোধের আর ন্যূনতম উপস্থিতিও নেই। সর্বশেষ ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি ডেলিগেটের সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা যে বার্তা দিলেন, দেখা গেল বৈঠকের মূল সুরের সঙ্গে তা বেমানান। আলোচনা হয়েছে যা, বাইরে এলো তার ঠিক বিপরীত কথা। বেঁকে বসলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদল। অবশেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি সংশোধিত হলো। সংশোধিত যৌথ বিবৃতি প্রকাশে বাধ্য হলো আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একটা দেশের রাষ্ট্রাচার কোন পর্যায়ে নামলে এরকম ছলচাতুরি করতে হয়, ছলচাতুরি ধরা পড়ার পর বিবৃতি পাল্টাতে হয়- হাতের কাছে তার নমুনা পাওয়া ভার! এই চর্চাই চলছে বাংলাদেশের সর্বত্র। দুই. এক সময় বাংলাদেশের স্কুল-কলেজের বোর্ড নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষাগুলোতে নকল হতো খুব। নকল ঠেকানো ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কত্ত কথা হতো এসব নিয়ে! এখন আর নকলের কথা শোনা যায় না। পরীক্ষার হলে নকলের দায়ে শিক্ষার্থী বহিষ্কারের কথাটাও শোনা যায় না তেমন। তাহলে কি ধরে নিতে হবে, পরীক্ষার মান বেড়েছে, শিক্ষার্থীরা খুব মনোযোগ দিয়ে সবাই পড়াশোনা করছে, কোথাও আর নকলের দরকার পড়ছে না? বোর্ড নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষাগুলোর ফলাফল, পরীক্ষা হলের আপাত চেহারা হয়তো সেই বার্তাই দেবে। কিন্তু মুখোশটা খুললেই বেরিয়ে পড়বে অন্য চেহারা। এখন পরীক্ষায় নকল হয় না, তবে পরীক্ষার হল থেকে পরীক্ষার খাতা দেখা সর্বত্রই রাষ্ট্র সমর্থিত সুযোগ সুবিধা বহাল হয়েছে প্রকাশ্য ও গোপন নানান কায়দায়। পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীদের সহায়তা করেন শিক্ষকরা। খাতা দেখার সময় বিশেষ সুবিধার নির্দেশ আসে ওপর মহল থেকে। যে রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল পরীক্ষার্থী যেন কোনো নৈতিক সুবিধা না পায়, বিশেষ দয়ার কোনো আনুকূল্য না পায় সেই নিশ্চয়তা বিধান করার, এখন রাষ্ট্রই তার পাশে দাঁড়িয়ে গেছে দু-হাত নিয়ে। রাষ্ট্রের চাই রাশি রাশি জিপিএ ফাইভ। রাষ্ট্রকর্তারা চান তাদের সাফল্য দেখাতে। তাই পরীক্ষার হল তো বটেই, পরীক্ষার খাতা দেখার সময়ও বিশেষ সুবিধা জোটে পরীক্ষার্থীর ভাগ্যে। এভাবেই আমরা ভালো ও মন্দের সত্যিকার পার্থক্য ঘুচিয়ে ফেলছি। সারা বছর পড়াশোনা করা, মেধাবী ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থীর সঙ্গে ছলচাতুরি করা শিক্ষার্থীর কোনো পার্থক্যই রাখছি না। দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই ঘটনাগুলো ঘটছে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায়। শুধু শিক্ষাখাত নয়, সমাজের সর্বত্রই, উঁচু ও নিচু, উচ্চতর ও নিম্নতর, ভালো ও মন্দের ফারাক ঘুচে যাচ্ছে রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায়, শক্তি ও সংখ্যার জোরে। আপাতত এর সুফল পাচ্ছে গুটিকতক ক্ষমতাবান, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গোটা জাতি। ফলে সংখ্যাধিক্যের জোর গুণগত মানকে ঠেলে নামিয়ে দিচ্ছে নিচে, এক অতল গহ্বরে। গত দুই দশকে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা আমাদের প্রায় সব ক্ষেত্রেই এই নিম্নগামিতাকেই প্রবলতর করে তুলেছে। ভাঙন কেন? বাংলাদেশকে এই বিপদের মুখে পড়তে হলো কেন? কেন বাংলাদেশ চার দশক পরেও তার রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক করে তুলতে পারল না? কেন, ন্যূনতম চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলা করার বদলে সবকিছু হুড়মুড় করে ভেঙে পড়াকেই বাংলাদেশের অমোঘ নিয়তি বলে মেনে নিতে হলো? কেন বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা দাঁড়াল না? কেন, সামান্যতেই ভারত, আমেরিকা, চীন বা রাশিয়ামুখীন হয়ে বিদেশি প্রভুদের দিকেই তাকাতে হচ্ছে সব সময়? কেন, আমরা আত্মবিধ্বংসী হয়ে উঠতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি! কেন সর্বত্রই এই আগ্রাসী অশান্তি নিয়ে ভাঙনের মুখে গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থা? কারণ- এক. মূল কারণ ঐতিহাসিক। ঐতিহাসিকভাবেই এই ভূখণ্ড অশান্তির জায়গা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সম্প্রতি অনেক গবেষণা প্রমাণ দিচ্ছে, এই অঞ্চল কখনোই ‘ সোনার বাংলা’ ছিল না। অভাব, অনটন আর সামাজিক-রাজনৈতিক অশান্তি এখানে সব সময় ছিল। অতীতে এ অঞ্চল ‘ সোনার বাংলা’ ছিল, এই মিথ শাসকশ্রেণির বানানো। কাজেই আজকেও বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক অশান্তি, তার একটি ঐতিহাসিক সূত্রতা আছে। দুই. সমস্যা বা সংকট মোকাবিলার জন্য যে যোগ্যতা প্রয়োজন, যে সুস্থিতি দরকার কিংবা যে পরিত্রাণমূলক উদ্ভাবনী মস্তিষ্ক দরকার- তা বর্তমানের মতো অতীতেও কখনো আমরা অর্জন করতে পারিনি। ফলে সংকটের সময় তা বাড়ানো ছাড়া আমাদের হাতে তা কমেনি। তিন. বাইরের সালিশ ছাড়া আমরা কখনো নিজেদের সমস্যা সমাধান করতে শিখিনি। এই ব্যর্থতার ফলে সমস্যা সমাধানের জন্য অন্যদের দ্বারস্থ হতে হয়েছে কিংবা অন্যরা এসে আমাদের সমস্যায় নাক গলিয়েছে। এই যোগ্যতাহীনতা বরাবর আমাদের পরনির্ভর করেছে। আবার পরনির্ভরতার কারণে নিজেদের যোগ্যতার ঘাটতি কাটেনি। ফলে এক পরিত্রাণহীন সংকটমুখর চক্রেই আবর্তিত হয়েছে এ ভূখণ্ডের মানুষ। চার. আমাদের রাজনীতি বিকশিত হয়েছে বিরুদ্ধবাদের ওপর দাঁড়িয়ে। আমাদের প্রতিপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধই করতে হয়েছে প্রতিবাদ আর ‘না’ সূচক লড়াই করে। ফলে প্রতিষ্ঠান ভাঙতে আমাদের যে সামর্থ্য গড়ে উঠেছে, প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে সেই সামর্থ্য আমরা অর্জন করতে পারিনি। সর্বক্ষণ ‘না’ বলাটার মধ্যেই আমরা জোর খুঁজে পেয়েছি। পাকিস্তান জমানার ২৪ বছর, বাংলাদেশ জমানার ৪০ বছর অন্তত এই ষাট-পঁয়ষট্টি বছরে আমরা ‘নো’ বলাতে জয়যুক্ত হয়েছি। তাই আমাদের রাজনীতি মূলত ‘নো’ বা নেতিবাচক ধারাতেই বিকাশ লাভ করেছে। এখানে যে যত বড় গলায় হাঁকডাক দিতে পেরেছে সেই তত বড় নেতা বলে পরিগণিত হয়েছে। মানুষ তাকে পছন্দ করেছে। তাৎক্ষণিক উত্তেজনা যে যত বাড়াতে পেরেছে তার পক্ষেই মানুষের সমর্থন মিলেছে। ফলে যুক্তিপ্রবণ, মস্তিষ্কজাত রাজনীতির বিকাশ এখানে ঘটেনি যতটা ঘটেছে শরীরপ্রবণ রাজনীতির। পাঁচ. আজকে বাংলাদেশের রাজনীতির যে সংকট তার একটা ঐতিহাসিক ঐতিহ্য আছে। নানা ফর্মে এই দ্বেষপ্রবণ রাজনীতিকেই আমরা টেনে এনেছি। কখনো গণতান্ত্রিক মোড়কে স্বৈরতন্ত্র, আবার কখনো সামরিক মোড়কে গণতন্ত্র বাংলাদেশে জিইয়ে থেকেছে। অবিকশিত, অনুদার, উদ্ভাবনহীন, চিন্তাশূন্য, আদর্শহীন, চিৎকারপ্রবণ রাজনীতিই বাংলাদেশের নিয়তি হিসেবে দেখা দেয়ায় রাষ্ট্র ন্যায়-আর শক্ত প্রাতিষ্ঠানিক ভিতের ওপর দাঁড়াতে পারেনি। এখনো পারছে না। ফলে, সংকটের হালকা কাঁপুনি কিংবা সামান্য ধুলোঝড় সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলছে। রোগ লক্ষণ ও পরিত্রাণ বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার ভবিষ্যৎ কী? এটা কি কোনো সমাধানের জায়গা নেবে? বিদেশিদের হস্তক্ষেপে কি বাংলাদেশের বিবদমান দুই বড় দলের দুই নেত্রী আলোচনায় বসবেন? নাকি এই অচলাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হবে? নাকি একপক্ষের জয় ঘটবে, অন্যপক্ষ পরাজিত হবে? নাকি দুই দলের বিবাদ যত দীর্ঘায়িত হবে ততই রাষ্ট্রের সবকিছু আরও ভেঙে পড়বে? এই তমসাময় সময়কে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সামাজিক দায়িত্বশীলদের প্রচেষ্টায় কি আলোময় দিনে রূপান্তরিত করতে পারবেন?- এ প্রশ্ন যেমন উঠছে, তেমনি কতগুলো সামাজিক ও রাজনৈতিক লক্ষণ দিনে দিনে সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। সেই লক্ষণগুলো চেনা যাক- এক. দুই পক্ষের লড়াইয়ে সরকারপক্ষ এখন কিছুটা দৃঢ় অবস্থায় আছে। কাজেই সরকারের আপাতত নমনীয় হবার কোনো সম্ভাবনা নেই। সরকারপক্ষ তাই প্রতিপক্ষকে আরও দুর্বল করার দীর্ঘ প্রক্রিয়া শুরু করতে চাইবে। সরকারের এই লক্ষণ মিসরের সামরিক শাসক ফাতাহ আল সিসি এবং সিরিয়ার সংখ্যালঘু শিয়া সম্প্রদায়ের শাসক হাফিজ আল আসাদের লক্ষণের কাছাকাছি। এ দু’দেশেই পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে বটে কিন্তু সরকার অবস্থান বদলায়নি। দুই. বিএনপি নেত্রী বেগম জিয়া এখন কিছুটা দুর্বল অবস্থায় থাকলেও তার চাওয়া এই অচলাবস্থা দীর্ঘতর হোক। একমাত্র দীর্ঘতর অচলাবস্থাই তার পক্ষে সুবিধাজনক আলোচনার দুয়ার খুলতে পারে। কেননা সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে প্রতিপক্ষের ওপর যে পরিমাণ চাপ দিতে পারে তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে। বিশেষত ক্রসফায়ার বা বিনা বিচারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে দেশের মানুষকে খুন করার প্রবণতা যত বাড়ছে, তাকে তত নিজের পক্ষে সুবিধাজনক রাজনৈতিক চাল হিসেবে তিনি ভাবছেন। মানুষের রক্তে সরকারের হাত যত রাঙাবে জোয়ার-ভাটার পথ পেরিয়ে তাদের এই আন্দোলন তাকে ততটাই সুবিধা দেবে। এছাড়া পিছপা হবার পথ রুদ্ধ বলে লড়াই চালিয়ে যাওয়াটাই রাজনৈতিক সুবুদ্ধিসম্মত বলেই তার ভাবনা। আপাতত বেগম জিয়ার কর্মকাণ্ডে সেই লক্ষণ সুস্পষ্ট। তিনিও তার অবস্থান বদলাননি। তিন. মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়, দল বিবেচক মধ্যবিত্ত, সরকার ও বিএনপিÑ দুই শিবিরে বিভক্ত। সমাজের এই বিভক্তি রাজনৈতিক অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত করার পক্ষে অনুকূল। চার. পেট্রলবোমা, বার্ন ইউনিট, পেট্রলবোমায় মানুষের মৃত্যু, গুপ্তহত্যা, ক্রসফায়ারÑ ক্রমশ সমাজে গা সওয়া হয়ে যাচ্ছে। এই প্রবণতাকে মানুষ নিয়তি নির্ধারিত এবং দীর্ঘস্থায়ী বলে মেনে নিচ্ছে বাধ্য হয়ে। স্কুল, কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অবরুদ্ধ অবস্থায় বেড়ে ওঠাকে এই দেশে জন্ম নেয়ার কুফল হিসেবে দেখছে। সমাজের এই নেতিবাচক প্রবণতাকে রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য অনুকূল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। পাঁচ. রাষ্ট্রের ভেতরের সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক সংলাপ কাজে আসছে না। কাজেই সহিংসতা অনিবার্য। জাতিসংঘ, আমেরিকা, ভারত মধ্যস্থতায় জড়িয়ে নিজেদের স্বার্থ অক্ষুণœ রাখতে মরিয়া। এই বহুমাত্রিক প্রবণতা যেসব দেশে দেখা গেছে সেখানে সমাজ মনস্তত্ত্ব ক্রমশ জটিলতর হয়েছে। সহিংসতাই সেখানে বিজয়ী হয়েছে। আদর্শহীন রাজনৈতিক লড়াই, ধর্মীয় সহিংসতা বিকাশে সহায়তা পেয়েছে। বাংলাদেশে এখন সেই লক্ষণ সুস্পষ্ট। এসব লক্ষণ সমাজকে বিভাজিত করে। সমাজের হতাশাকে ক্ষোভে পরিণত করে। ক্ষোভ, অনিয়ম ও দুর্নীতিকে উৎসাহী করে। রীতি ও নিয়ম পরাভূত হয় ক্ষোভ, হতাশা ও অনিয়মের কাছে। ফলে চারপাশের সবকিছুকে ভেঙে পড়তে দেখে মানুষ উপায়হীনতাকেই ভাগ্যনির্দেশিত বলে মেনে নেয়। সমাজ ও রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ক্ষতি এই দুর্ভাগ্যজনক সামাজিক ও রাষ্ট্রিক উপলব্ধি। তখন হুমায়ুন আজাদের ভাষায় আমজনতার মনের মধ্যে গুমরে ওঠে- ‘আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম? এমন দুঃস্থ, দুর্নীতিকবলিত, মানুষের অধিকারহীন, পঙ্কিল, বিপদসঙ্কুল, সন্ত্রাসীশাসিত, অতীতমুখী, প্রতিক্রিয়াশীল, ধর্মান্ধ, সৃষ্টিশীলতাহীন, বর্বর, স্বৈরাচারী বাঙলাদেশ, যেখানে প্রতিমুহূর্তে দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়?’ http://www.shaptahik.com/v2/? | |||
No comments:
Post a Comment