Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Tuesday, October 7, 2014

একটি সহজ কথায় সরল জিজ্ঞাসা ঃ- 'মতুয়া' ধর্মাবলম্বী কোনো মৃত ব্যক্তির নামের আগে 'স্বর্গীয়' শব্দ ব্যবহার করা উচিৎ কি না ।

একটি সহজ কথায় সরল জিজ্ঞাসা ঃ- 'মতুয়া' ধর্মাবলম্বী কোনো মৃত ব্যক্তির নামের আগে 'স্বর্গীয়' শব্দ ব্যবহার করা উচিৎ কি না ।
পবিত্র বিশ্বাস ।

'মতুয়া' ধর্মাবলম্বী কোনো মৃত ব্যক্তির নামের আগে 'স্বর্গীয়' শব্দ ব্যবহার করা কী উচিৎ ? এ বিষয়ে প্রথমেই একটা কথা সকলেরই জেনে রাখা দরকার - " স্বর্গ " কী ? এর অবস্থান কোথায় ? " স্বর্গ " শব্দটি কোথা থেকে এসেছে ? " স্বর্গ " শব্দটি সংস্কৃত শব্দ । বিশ্লেষণ করলে দাঁড়ায় সু + _/ঋজ্‌+অ । অর্থাৎ সু উপসর্গের সঙ্গে ঋজ্ ধাতু এবং অ প্রত্যয় সহযোগে স্বর্গ । সু অর্থাৎ উত্তম বা উৎকৃষ্ট । ঋজ্ অর্থাৎ অর্জন । তাহলে স্বর্গের অর্থ দাঁড়ায় উৎকৃষ্টতা অর্জন বা যে স্থান উত্তমরূপে সমৃদ্ধময় । কিন্তু , বৈদিকবাদীরা এর অর্থ করেছেন দেবলোক বা পূণ্যবানেরা মৃত্যুর পরে যে স্থানে বাস করেন । তাহলে এই স্বর্গ কোথায় ? আমরা পুরাণে , শাস্ত্রে যত্রতত্র দেখতে পাই স্বর্গ নিয়ে দেব এবং অসুরের যুদ্ধ । শেষ পর্যন্ত ছলে বলে কৌশলে দেবগণই স্বর্গের দখল নেয় । অদ্যাবধি তারা নাকি সেখানে বিরাজ করছেন বলে বৈদিকবাদী ধর্মভীরুরা বিশ্বাস করেন । আমরা যদি একটু বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এই স্বর্গের ঠিকানার অনুসন্ধান করি , তাহলে নিশ্চই এর সন্ধান পাবো । আর সেখানে মৃত্যুর পরে মানুষ যেতে পারে কি না তাও অনুধাবন করতে পারবো । 
আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে অর্থাৎ আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ থেকে ২৫০০ অব্দ সময়কালে মধ্য এশিয়ার এক মানবগোষ্ঠী নর্ডিক জাতির আর্যভাষীরা ছিলো যাযাবর , পশুচারী এক অসভ্য জনগোষ্ঠী । তাদের পোশাকী নাম ছিলো 'দেব' । এদের না ছিলো স্থায়ী ঠিকানা , না ছিলো ঘরদোর , না ছিলো শিক্ষাদীক্ষা , না ছিলো কোনো আচার-সংস্কার। এরা যেখানে পশু-খাদ্যের সন্ধান পেতো , সেখানেই কিছু দিনের জন্য আস্তানা গাড়ত । যতদিন তাদের পালিত পশুর খাবার জোটে । ভ্রাম্যমান এই অসভ্য জনজাতির দুর্ভোগের শেষ ছিলো না । ঝড় , বৃষ্টি , খরা প্রভৃতি নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এরা সারা বছরই থাকতো বিপর্যস্ত । এদের পালিত পশু ঘাস-পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করত , আর এদের জীবন ধারণের একমাত্র উপায় ছিলো গাছের ফল-মূল , আর ওই পালিত পশুর দুধ , মাংস । কৃষিকাজ বা বাণিজ্য বিষয়টি তখনও এদের কাছে অজ্ঞাত । এই যাযাবর জাতির মানুষদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার একমাত্র বাহন ছিলো ঘোড়া । যেহেতু এদের পশুদের মেরে কেটে খেতে হতো এবং বিভিন্ন হিংস্র বন্য পশু বা অন্য কোনো জনগোষ্ঠীর আক্রমনকে প্রতিহত করার জন্য এদের কাছে থাকত ধারালো অস্ত্র । এদের জীবনে না ছিলো কোনও সুখ স্বাচ্ছন্দ্য , না ছিলো কোনও আরাম , আয়েশ , বিলাসিতা । জীবনের প্রতি মুহূর্তই এরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতো । এরাই একদিন পশুখাদ্যের সন্ধান করতে করতে এসে পড়ল বর্তমান ভারত ভূখণ্ডের মধ্যে । তখন উত্তর পশ্চিম ভারতে উৎকৃষ্ট নগর সভ্যতা গড়ে তুলে নিশ্চিন্তে বসবাস করত আলপাইন মানবগোষ্ঠীর অসুর ও নাগ জাতির মানুষেরা । যা আমরা ইতিহাসে হরপ্পা , মহেঞ্জোদারো সভ্যতা হিসাবে উল্লেখ পাই । এই সভ্যতাই আলপাইন তথা অসুর জাতির মানুষের গড়ে তোলা এক অতি উৎকৃষ্ট সভ্যতা । এদের ভাষা ছিলো আসুরিক ভাষা । তৎকালীন সময়ে সারা পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম উন্নত নগর সভ্যতা ছিলো এই হরপ্পা , মহেঞ্জদারো সভ্যতা । এই সভ্যতার স্রষ্টা অসুর ও নাগ জাতির মানুষেরা তখন শিক্ষায় , সম্পদে ছিলো উত্তম রূপে সমৃদ্ধ । এদের জীবিকা ছিলো কৃষিকাজ এবং বাণিজ্য। সারা বছরের খাদ্য এদের শস্যাগারে মজুত থাকতো । এই অসুর এবং নাগ জাতির মানুষেরাই মূলত ভারতবর্ষের মূলনিবাসী । এদের ছিলো সুপরিকল্পিত নগর জীবন , সুখ , স্বাচ্ছন্দ্য , শিক্ষা , সংস্কৃতি , আরাম , আয়েশ , বিলাসিতা সবই । সমস্ত দিক দিয়ে এরা ছিলো উৎকৃষ্ট অবস্থানে । প্রতিনিয়ত দুঃখ দুর্দশার সঙ্গে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা পশুচারী যাযাবর নর্ডিক শ্রেণির বহিরাগত আর্যভাষীরা , যারা 'দেব' নামে পরিচিত , তারা অসুরদের এরকম সাজানো গোছানো জীবনযাপন দেখে তো হতবাক । তারা ভাবলো আমাদের ঘর নেই দোর নেই , থাকার স্থায়ী ঠিকানা নেই ; রোদ , বৃষ্টি , ঝড়ে আশ্রয় নেই , আর এই অসুরেরা কত সুখে নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করছে । এরা তো স্বর্গে বসবাস করে । এই স্বর্গ আমাদের যেনতেন প্রকারে দখল করতেই হবে । তারপরের ইতিহাস আমরা বেদ-স্রষ্টাদের রচিত হেয়ালিময় গল্পকাহিনি থেকে অনেকটা জানতে পারি , ঐতিহাসিকদের গবেষণা থেকে অনেকটা বুঝতে পারি । এক সময় হরপ্পাবাসীদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে বহিরাগত আলপাইন মানবগোষ্ঠীর দেবগণ সেই হরপ্পা সভ্যতা তথা স্বর্গ দখল নিলো । দেবগণের হল স্বর্গ বিজয় । ভারতবর্ষে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলো । শৌর্য-বীর্যের দিক থেকে অসুর জাতির কাছে এরা দুর্বল হলেও অসুর জাতির নির্বিবাদী সরলতার সুযোগ নিয়ে নানা ছলে বলে কৌশলে আক্ষরিক অর্থে তাদেরকে পরাজিত করে এক সময় ক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান করে দেবগণ । অসুর জাতির শৌর্য-বীর্যের প্রমাণ শাস্ত্রাদিতে প্রায় সর্বত্রই পাওয়া যায় । ক্ষমতা দখলের পরই দেবগণের শুরু হলো অসুরদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রচনা । এই অসুর জাতির কাছ থেকে লেখাপড়ার কৌশল অর্জন করে বুঝতে পারলো এতো মহাসম্পদ । পুরাণে যার নাম "সুধা" । এ সম্পদ শুধুমাত্র দেবগণের মধ্যেই কুক্ষীগত করে রাখতেই হবে । নিজেদের আধিপত্য দীর্ঘকাল কায়েম রাখার জন্য অসুরদের উপর জারি হলো নানা ফতোয়া । মূলনিবাসীদের শিক্ষা অর্জন নিষিদ্ধ হলো । এই ফতোয়ার শিকার হয়ে দীর্ঘকাল অশিক্ষার অন্ধকারে থেকে থেকে মূলনিবাসী জনজাতির মস্তিষ্কের উর্বরতা ক্রমে লোপ পেতে থাকে । আর সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে শুধুমাত্র হাতে নয় , ভাতেও মারার ষড়যন্ত্র রচনা করলো ওই বহিরাগত আর্যভাষী দেবগণ । তারা আসুরিক ভাষা এবং নিজেদের প্রাকৃত ভাষার মিশ্রণ ঘটিয়ে নানা সংস্কারের মাধ্যমে সৃষ্টি করলো এক নতুন ভাষা- 'সংস্কৃত' ; যার অপর নাম দিল 'দেবভাষা' বা 'দেবনাগরী ভাষা' । সেই ভাষাতেই রচিত হলো মূলনিবাসীদের দমিয়ে রাখার নানা ষড়যন্ত্রের দলিল । নিজেদের অতীত ইতিহাসকে লিপিবদ্ধ করে রাখার জন্য ছদ্মকাহিনির আড়ালে রচনা করল গ্রন্থাদি । যার নাম দিয়ে দিলো শাস্ত্র । কিছু সত্যের সঙ্গে অজস্র মিথ্যা , কল্পকাহিনি যোগ করে এবং মূলনিবাসী অসুর , নাগ , দৈত্য ,রাক্ষস , দানবদের যৎপরোনাস্তি কুৎসিত , কদাকার , হীন , নীচ অপবাদ দিয়ে রচিত হল পুরাণ-কাহিনি । দীর্ঘকাল অস্তিত্ত্বের সংকট মোকাবিলা করতে করতে মূলনিবাসীরা একসময় ভুলেই গেলো তাদের পূর্বেকার শৌর্য-বীর্যের ইতিহাস । দীর্ঘকাল অশিক্ষার অন্ধকারে থাকা মূলনিবাসীরা তাদের স্থূল বোধে সরল মনে বিশ্বাসও করে নিলো ওই সব কল্পকাহিনি । বড়রা যেমন শিশুদের ভুলিয়ে রাখে রঙিন খেলনা দিয়ে; তেমনি কুচক্রী ওই দেবগণও মূলনিবাসীদের মুগ্ধ করে রাখল অলীক কল্পকাহিনির ছলনায় । দেবগণ শাস্ত্রের মাধ্যমে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করলো শুভ শক্তি , অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন মানবজাতির মঙ্গলকারী ও ত্রাতা রূপে । আর অসুরদের বানিয়ে দিলো অশুভশক্তি , খল , কদাকার , কুৎসিত , ভয়ঙ্কর ইত্যাদি ইত্যাদি রূপে । অতীত-স্মৃতি বিস্মৃত মূলনিবাসীরা সেই কাহিনি এবং বর্ণনা অনুধাবন করে নিজেদের কে আর অসুরের উত্তরসূরী ভাবতে পারলো না এবং ভাবতে চাইলোও না । যেহেতু তারা মানুষ , তাই দেবগণকেই তারা মুক্তিদাতা হিসাবে মেনে নিলো । এই মেনে নেওয়ায় দেবগণের সুবিধা হল আরো সুগভীর ষড়যন্ত্র রচনা করার । কল্পকাহিনির মধ্যে অসুর আর দেবগণের সংগ্রামের কথা আছে । অসুরদের অতীত-স্মৃতি চিরতরে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য দেবগণ নিজেদের কে মানব দেহে অস্তিত্ত্বকে আত্মগোপন করল । কারণ , দেবগণ যদি বাস্তবের মানুষ হিসাবে থেকে যায় , তাহলে মানুষ বাস্তবের অসুরের খোঁজ করবে । আর তাতে সমস্ত ষড়যন্ত্রের ভাণ্ড ফুটে যাবে । তাই নিজেরা দেব নাম বদলে বেদের মাধ্যমে বর্ণবিভাজনের নীতিতে নিজেদের ব্রাহ্মণ বলে পরিচয় দেওয়া শুরু করলো । সেই সঙ্গে প্রচার করলো দেবতাদের সঙ্গে তাদের সরাসরি যোগাযোগ আছে । ব্রাহ্মণরা তাদের ইতিহাস লিখে রাখলো , কিন্তু, ছদ্মনামের আড়ালে । আর সেই ছদ্মকাহিনির ছলনায় বাস্তবের উত্তর পশ্চিম ভারতের অসুর জাতির গড়ে তোলা উন্নত নগর সভ্যতা ( হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা ) সমৃদ্ধ সাম্রাজ্য , যা বহিরাগত দেবগণের কাছে ছিলো স্বর্গ ; সেই স্বর্গ ও চলে গেলো ওই আকাশের দিকে কোনো এক অজ্ঞাত স্থানে । আর পরসম্পদ লুন্ঠনকারী ,কুচক্রী , শঠ , প্রবঞ্চক দেবগণেরা হয়ে গেলো সেই স্বর্গের অনন্তকালের অধিবাসী । দেবতারা অমর হয়ে থাকলো তাদের রচিত নানা গ্রন্থাদির মাধ্যমে ভগবান হয়ে , শুভশক্তির প্রতীক হয়ে । আর অসুরেরা পরিচয় পেল কুৎসিত , খল চরিত্র রূপে । অসুরদের আর অশুভ শক্তির প্রতীক আলাদা করে বলতে হয় না , শুধু অসুর বললেই সবাই বুঝে নেয় । এমনই মহিমা ব্রাহ্মণ্যবাদীদের ষড়যন্ত্রের । বেদ বর্ণিত ব্রাহ্মণরা কোনো এক অজ্ঞাত লোকে দেবতা রূপে অমর হয়ে থাকলো । আর ব্রাহ্মণরাই তাদের সেই ছদ্মরূপকে কেন্দ্র করে মূলনিবাসীদের শোষণের নানা কৌশল রচনা করে আজও চলছে । নিরাপদে লুন্ঠন করার জন্য সৃষ্টি করেছে বিভিন্ন উপায়। ষড়যন্ত্রের তালিকায় সংযোজন করেছে - বুজরুকির নানা তত্ত্ব । যেমন - জন্মান্তরবাদ , স্বর্গ-নরক , ইহকাল-পরকাল , পাপ-পূণ্য , ব্রাহ্মণকে দান , ব্রাহ্মণ সেবা , ব্রাহ্মণ ভোজন , তন্ত্র-মন্ত্র , পূজা-পার্বন , উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণ ইত্যাদি ইত্যাদি আর কত কী তার ইয়ত্তা নেই । মূলনিবাসী জনজাতিকে দুর্বল থেকে দুর্বলতর করে তোলার জন্য হাজার হাজার জাতিতে করলো বিভক্ত । আবার এই সহজ সরল শিক্ষিত মূলনিবাসী মানুষের উপাসনার জন্য যাতে দেবতার টান না পড়ে , তার জন্য দেবতার সংখ্যাও পর্যাপ্ত করে বানিয়ে দিল ৩৩,০০০০০০০০ ( তেত্রিশ কোটি ) । বর্তমান এই জনবিস্ফোরণের যুগে এখনও অবধি তেত্রিশ কোটি ব্রাহ্মণের জন্ম হয়েছে কি না সন্দেহ । আর দুই-তিন হাজার বছর আগেই ছদ্ম কাহিনিতে নিজেদের সংখ্যা কি না তেত্রিশ কোটি বানিয়ে দিলো ! একেই বলে কূটনীতি । বলে না পেরে বোলে জেতা । 
কিন্তু , যুগের চিত্রপট বদলাচ্ছে । ইতিহাসের নিয়মে এই সব ছল চাতুরী , বুজরুকির জামানার একদিন শেষ হবেই । শিশু চিরকাল শিশু থাকে না । সেও একদিন বড় হয় । চিরকাল তাকে রঙিন খেলনা দিয়ে ভুলিয়ে রাখা যায় না । সে একদিন বুঝতে শেখে কোনটা সত্য , কোনটা মিথ্যা ।এ দেশের মূলনিবাসী জনেরা নানা সময়ে , নানা ভাবে এর প্রতিবাদ করেছে । খ্রিষ্ট পূর্ব ষষ্ঠ শতকে এই অপশাসন , শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন বুদ্ধ গৌতম । পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মূলনিবাসীদের সনাতন ধর্ম বৌদ্ধ ধর্ম রূপে । দীর্ঘকাল পরে অষ্টাদশ - উনবিংশ শতকে এই বৈদিকবাদী আচার সর্বস্ব হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন একদিকে শাহুজী মাহারাজ , পেরিয়ার রামস্বামী , জ্যোতিবা ফুলে , ভীমরাও আম্বেদকর প্রমুখ , আর অন্য দিকে প্রবল পরাক্রমশালী মহামানব হরিচাঁদ ঠাকুর , গুরুচাঁদ ঠাকুর । হরিচাঁদ ঠাকুর ব্রাহ্মণ-সৃষ্ট বেদ-বিধি , শৌচাচার কে কুকুরের উচ্ছ্বিষ্টের চাইতেও নিকৃষ্ট বলে মনে করতেন । সত্যিকারের বিশ্ব মানব ধর্মের আদর্শ এবং দর্শন নির্ভর "মতুয়া" ধর্ম প্রতিষ্ঠা করলেন পতিত , ধর্মহারাকে ধর্ম দিতে । যে ধর্মের মধ্যে মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ নেই , নেই মানুষের স্বার্থ চরিতার্থের আচার সংস্কার , নেই মানুষ হয়ে মানুষকে দূরে সরানোর জাত-পাত । মিথ্যাচার ,ছলনা , প্রবঞ্চনা বর্জিত সত্য , প্রেম , পবিত্রতার ধর্ম "মতুয়া" ধর্ম । পতিত জাতির জাগরণে শিক্ষার বার্তা নিয়ে যে ধর্মের প্রচার প্রসার ঘটালেন গুরুচাঁদ ঠাকুর। এই মতুয়া ধর্মাবলম্বী কোনো মানুষ যদি সেই বৈদিক ধর্মজাত ব্রাহ্মণদের জালিয়াতির তত্ত্ব জন্মান্তরবাদ , স্বর্গ-নরক , আত্মা-পরমাত্মা , পাপ-পূণ্য , তন্ত্র-মন্ত্র , পূজা-পার্বন ইত্যাদির কোনো নীতিকে মেনে নেন , তাহলে তিনি আর মতুয়া থাকলেন কোথায় ? আমরা যদি কোনো মৃত ব্যাক্তির নামের পূর্বে স্বর্গীয় শব্দ প্রয়োগ করি , তাহলে আত্মা-প্রেতাত্মা স্বীকার করতে হয় , আত্মা-প্রেতাত্মা স্বীকার করলে জন্মান্তরবাদ স্বীকার করতে হয় , জন্মান্তরবাদ স্বীকার করলে ব্রাহ্মণের জালিয়াতি , প্রবঞ্চনা স্বীকার করতের হয় ; ব্রাহ্মণের জালিয়াতি মেনে নিলে , তার শ্রেষ্ঠত্ত্ব স্বীকার করতে হয় , ব্রাহ্মণের শ্রেষ্ঠত্ত্বকে স্বীকার করলে দেব-দেবতার অলৌকিক অস্তিত্ত্বকে স্বীকার করতে হয় , আর তা স্বীকার করলে অবতারবাদকেও মেনে নিতে হয় । কারণ , থেকে দেব-দেবতারা নাকি মর্ত্যে অর্থাৎ এই পৃথিবীতে অবতরণ করে মনুষ্য রূপে জন্ম নেন বলে তাকে অবতার বলা হয় । এবার ভাবুন , যাকে স্বর্গীয় করা হল , তিনি যদি মতুয়া হন , মৃত্যুর পর তাঁকে পাকা বৈদিকবাদী হিন্দু বানানো হল নাকি ? 
যদিও এখনও পর্যন্ত বহু ব্যাক্তি মতুয়া হয়েও বৈদিক দেব-দেবীর পূজা - অর্চনা করেন তন্ত্র-মন্ত্র- ব্রাহ্মণ সহকারে । হরিচাঁদ , শান্তিমাতা , গুরুচাঁদ এঁদের মূর্তি বা ছবির পাশে মন্দিরে নানা দেব-দেবীর মুর্তি বা ছবি স্থাপন করেন । যারা এসব করেন , তাঁরা হয়তো মতুয়া দর্শনকে না বুঝে বা 
মনের সান্ত্বনার জন্য করেন । কিন্তু , হরি-গুরুচাঁদের কৃপায় লেখা-পড়া জানা মানুষেরা যদি সেই একই ভুল করেন , তাহলে মতুয়া ধর্মের স্বতন্ত্র অস্তিত্বের সংকট দেখা দেবে অচিরেই । হরি-গুরুচাঁদের পতিত উদ্ধারের সংগ্রাম ব্যর্থতায় পর্যবশিত হবে । এ ব্যাপারে প্রত্যেক মতুয়ারই সচেতন হওয়া ভীষণ ভাবে প্রয়োজন । সত্য অপ্রিয় হলেও সত্যকে গ্রহণ করা উচিৎ । 
______________________ 
পবিত্র বিশ্বাস ।

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Welcome

Website counter

Followers

Blog Archive

Contributors