Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Sunday, July 26, 2015

বাঘের পিঠে সরকার


উপসম্পাদকীয়

বাঘের পিঠে সরকার

সালাহউদ্দিন বাবর

২৬ জুলাই ২০১৫,রবিবার, ১৭:৫৪

সালাহউদ্দিন বাবর

সালাহউদ্দিন বাবর

দেশের রাজনৈতিক অবস্থা অনেকটা নিস্তরঙ্গ। রমজানের আগে দেশের রাজনীতিতে এমন শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করে। এবারো এর ব্যতিক্রম হয়নি। ক্ষমতাসীন দলেরও কোনো তৎপরতা নেই। যদিও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় বা প্রশাসন দিয়ে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা থেমে নেই। অপর দিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোরও কোনো কর্মসূচি নেই।
এই নিস্তরঙ্গ পরিবেশের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভায় কিছুটা রদবদল করেছেন। এ ঘটনা ক্ষমতাসীন দলের ভেতর এক ধরনের চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ যারা এসেছেন তারা তেমন কোনো আলোচিত ব্যক্তি নন। এই সংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে আলোচিত ছিল একজন মন্ত্রীর দফতর বদল। মন্ত্রিসভায় এই রদবদলের আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে হঠাৎ করে কোনো আভাস-ইঙ্গিত ছাড়াই মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী করা হয়। সৈয়দ আশরাফকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করায় ক্ষমতাসীন দলেও প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সাথে তার কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। ঈদের আগে তার লন্ডন যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি লন্ডন সফর স্থগিত করেন। 
প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের পর সৈয়দ আশরাফ পুনরায় একটি কম গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রী হিসেবে যোগ দেন। সৈয়দ আশরাফ সাময়িক সময়ের জন্য মন্ত্রণালয়ের তার আসন থেকে সরে গিয়েছিলেন বটে কিন্তু দলের ভেতর এ সময়ে একটা বড় ঝাঁকুনি লক্ষ করা গেছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ করে যেকোনো নির্বাচনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। সৈয়দ আশরাফকে মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেয়ার পর তার নীরবতা ও দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী নিজে বিব্রত হয়ে পড়েন। সম্ভাব্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত ক্ষতিকর বলে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড মনে করে।
সব সরকারের আমলেই স্থানীয় সরকার দফতরটি দলের সাধারণ সম্পাদক পেয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর আস্থাশীল ব্যক্তিদের এখানে স্থান হয়েছে। সৈয়দ আশরাফ সরে আসার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্ত ব্যক্তি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী। তিনি প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়ও বটে। 
সৈয়দ আশরাফ নতুন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর দলের মধ্যেও তার তৎপরতা বাড়িয়েছেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি দলের যৌথসভা ও গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। তার কিছু মন্তব্য রাজনীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর বলেছেন, দলীয়ভাবে প্রশাসন পরিচালনা করা হবে না এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার কাজ করবে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছে প্রশাসনের ওপর বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রশাসনের কর্মকর্তারা রাজনৈতিক বক্তব্য রাখছেন। প্রশাসনে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি সবই হচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনার ভিত্তিতে। এমন পরিস্থিতিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রীর এই বক্তব্য খানিকটা হাস্যকর মনে হলেও দেশের রাজনীতিতে যেকোনো পরিবর্তন আনতে হলে প্রথমে দরকার হবে প্রশাসনের ন্যূনতম নিরপেক্ষ ও পেশাদারিত্ব অবস্থান নেয়া। তা যদি নিশ্চিত করা না যায় তাহলে কোনোভাবেই বিরোধী রাজনৈতিক দলের আস্থা অর্জন করা সম্ভব হবে না। আমরা লক্ষ করছি, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের এই বক্তব্য বিএনপির পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে। প্রশাসন দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখা হবে এ কথা বলা যতটা সহজ, তা করা ততটা সহজ নয়। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যদি সত্যিই প্রশাসনকে নিরপেক্ষ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পরিচালনা করতে চান, সে ক্ষেত্রে তাকে নানা ধরনের বাধার মুখে পড়তে হবে। জনপ্রশাসন বিষয়ে তদারকির জন্য মন্ত্রীর মর্যাদায় একজন উপদেষ্টাও রয়েছেন। তার ভূমিকা কেমন হবে তাও দেখার বিষয়। সরকারের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হচ্ছে, দলীয় প্রভাবের মাধ্যমে প্রশাসন পরিচালনার কারণে কতগুলো ক্ষমতার কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। পুলিশের একজন এসআই বা কনস্টেবল তার চাকরির পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিচয় সামনে আনছেন। তিনি ভাবছেন সরকার তো টিকে আছে তাদের কারণে। একইভাবে আমলাদের মধ্যে এমন অনেক গ্রুপ তৈরি হয়েছে যারা ভাবছেন, তারাই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছেন। এ ধরনের মনোভাবের অবসান ঘটানো সহজ নয়। যদি নতুন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এমন বক্তব্য দিয়ে থাকেন, তাহলে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এর কমবেশি প্রভাব পড়বে। 
অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করেন সরকার একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপের চেয়েও এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহলের চাপ রয়েছে। মুখে যাই বলা হোক না কেন, বৈধতার সঙ্কট সরকারের প্রধান সঙ্কট। এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে হলে অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন দেয়া ছাড়া সরকারের সামনে আর কোনো গত্যন্তর নেই। সত্যিকার অর্থে যদি মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিকে সরকার এগিয়ে যেতে চায় তাহলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সরকারকে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সৈয়দ আশরাফের গ্রহণযোগ্যতা অন্যদের চেয়ে বেশি। এ ছাড়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে জাতিসঙ্ঘের রাজনীতিবিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর সাথে নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে তিনি আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন। সেই আলোচনার পথ ধরে নতুন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু করতে হবে। মনে রাখতে হবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সরকারের একাধিক মন্ত্রী বলেছিলেন এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। অর্থমন্ত্রী একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এই নির্বাচনে আমরা জনগণের ম্যান্ডেট পাইনি তাড়াতাড়ি আরেকটি নির্বাচন দিতে হবে। মন্ত্রীদের এসব বক্তব্য থেকে অনুমান করা যায় জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতকে সে সময় এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। 
ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা মনে করেন মধ্যবর্তী নির্বাচন যদি দিতে হয় তাহলে এখন থেকে তার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। ক্ষমতাসীন দলের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি এখন বড় ধরনের সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা অনেকটা ছত্রভঙ্গ অবস্থায় রয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসার পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি তার বক্তব্য-বিবৃতি প্রচারেও আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। জামায়াতও প্রবল চাপের মধ্যে রয়েছে। এমন গুঞ্জনও রয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার যদি শাস্তি হয় তাহলে তিনি নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হবেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে যদি নির্বাচন দেয়া যায় তাহলে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে সহজে বিজয়ী হওয়া সম্ভব হবে। আবার দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষে নির্বাচন বর্জন করাও সম্ভব হবে না। হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মী এখন জেলে। সরকার বিরোধী দলকে সাধারণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে দিচ্ছে না। শত শত মামলা মাথায় নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে রয়েছেন মাঠপর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। বিরোধী দলের এমন দুর্বল অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়ার ক্ষেত্রে অনেককে উৎসাহিত করছে। 
যেভাবে রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ করা হোক না কেন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে বিএনপি বা খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে এমন কৌশল কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে। নিশ্চয়ই ২০ দলীয় জোট নেতারা সরকারের এমন পরিকল্পনা মাথায় রেখেছে, মূল কথা হচ্ছে বিদ্যমান রাজনৈতিক অবস্থা নির্বাচনের জন্য অনুকূল থাকবে কি না সে প্রশ্ন আগে মীমাংসা হতে হবে। নির্বাচন বা সহনশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য অনেক অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে হবে। প্রথমত, ২০ দলের নেতাকর্মী যারা আটক রয়েছেন তাদের মুক্তি, সব সরকারি বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে আনা, নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজনীয় সংস্কার করা এবং আরো কিছু বিষয়ে সংবিধান সংশোধন করা অপরিহার্য হয়ে পড়বে। 
যেভাবে মধ্যবর্তী নির্বাচন হোক না কেন নির্বাচন-পূর্ব সংলাপের মাধ্যমে এসব প্রশ্নের সুরাহা করতে হবে। সংবিধান সংশোধন করা সরকারি দলের সম্মতি ছাড়া সম্ভব হবে না। বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। এই প্রশ্নে বিরোধী দল এবং সরকারি দল পরস্পর মুখোমুখি। দেশের মানুষ তো বটেই; আন্তর্জাতিক মহলও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ভিন্ন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা মেনে নেবেন কি না সেটা বড় প্রশ্ন। এসব নিয়ে বড় ধরনের ঝড় উঠবে রাজনৈতিক অঙ্গনে। আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে তা নিয়ে সাংবিধানিক জটিলতা দূর করা সহজ নয়। তেমনি নির্বাচন কমিশন নিয়েও জটিলতা রয়েছে। বর্তমান কমিশনের ওপর বিরোধী দলের আস্থা নেই। এ পর্যন্ত এই কমিশনের অধীনে যে ক'টা নির্বাচন হয়েছে তার একটাও মানসম্পন্ন হয়নি। এই অবস্থায় কমিশন নিজেরা যদি সরে না যান তবে তাদের সরানো কঠিন। এ ব্যাপারে যদি বড় ধরনের সমঝোতা না হয় তাহলে নির্বাচন নিয়ে বড় ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হবে। 
প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের রাজনীতি এখন জটিল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। মধ্যবর্তী নির্বাচন হোক বা সহনশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হোক তার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে ক্ষমতাসীন দলকে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে এবং সুশাসন নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে তাতে গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য ক্ষমতাসীনদের বেশি ছাড় দিতে হবে। আসলে একদলীয় শাসন কায়েম করতে গিয়ে সরকার এমন এক বাঘের পিঠে সওয়ার হয়েছে যেখান থেকে নামা তাদের জন্য বিপদের কারণ। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে বিরোধী রাজনৈতিক আলোচনার পথে ফিরে আসতে হবে। নিজেদের ছকে নির্বাচন কিংবা বিরোধী রাজনীতি নির্মূল করে ক্ষমতায় টিকে থাকা সহজ হবে না। সাত বছর ধরে বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর নানাভাবে নিপীড়ন চালানোর পরও তাদের নিঃশেষ করা সম্ভব হয়নি। এর কারণ হচ্ছে জনসমর্থন। বিরোধী দলের ওপর যত নিপীড়ন চালানো হয়েছে সরকারের জনসমর্থন তত কমেছে। এই বাস্তবতা ক্ষমতাসীনদের উপলব্ধি করতে হবে। - See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/41026#sthash.BnhBcxEj.dpuf

--
Pl see my blogs;


Feel free -- and I request you -- to forward this newsletter to your lists and friends!

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Welcome

Website counter

Followers

Blog Archive

Contributors