Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Thursday, August 29, 2013

সিরিয়া-সঙ্কটে পতনের নয়া রেকর্ড গড়ল টাকা

সিরিয়া-সঙ্কটে পতনের নয়া রেকর্ড গড়ল টাকা
সিরিয়া-সঙ্কটে পতনের নয়া রেকর্ড গড়ল টাকা
এই সময়: পুজোর মরসুমে ঘরদোরের কলি ফেরানো কিংবা বাড়ির পুরোনো টিভি বা ওয়াশিং মেশিনটা পাল্টে নতুন আর একটা ঘরে আনার চিন্তা আপাতত শিকেয় তুলে রাখাই ভালো৷ কারণ জন্মাষ্টমীর সকালে ডলার পিছু টাকার দাম ছুঁয়ে ফেলল ৬৮.৮০৷ সর্বকালে টাকার দামে এটাই সর্বাধিক পতন৷ প্রত্যাশিত ভাবেই টাকার এই অবমূল্যায়নের সঙ্গে সঙ্গেই বাড়তে চলেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় আরও বহু জিনিসের দাম৷ বুধবারই আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল পিছু ১১৬ ডলারে পৌঁছে যায়৷ ভারতীয় বাজারের সংকট আরও বাড়িয়ে তুলেছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ডামাডোল৷ সিরিয়ায় পশ্চিমি দেশগুলির আক্রমণ করার সম্ভাবনা বাড়তেই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷

বুধবার সকালে বাজার খোলার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায়৷ টাকার বিনিময় দর সর্বকালীন রেকর্ড ভেঙে নীচে নামে৷ মার্কিন ডলারের দাম হয় ৬৮.৮০ টাকা, ইউরো পৌঁছয় ৯০.৬১ টাকায়৷ সোনার দাম এক ধাক্কায় প্রতি ১০ গ্রামে ২৫০০ টাকা বেড়ে পৌঁছে যায় ৩৪,৫০০ টাকায়৷ এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক গৃহঋণ ও গাড়ির ঋণে সুদ বাড়ানোর কথা ঘোষণা করায় মধ্যবিত্তের উপর চাপ আরও বাড়বে৷ কয়েক দিনের মধ্যেই লিটারপ্রতি তিন থেকে চার টাকা বাড়তে পারে ডিজেলের দাম৷ এর মধ্যেই মালগাড়ির পণ্য পরিবহণের ভাড়া বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে রেল৷ ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের আগুন দরে ঘৃতাহুতি হতে চলেছে৷ উত্‍সবের মরসুমে বিশেষ সেল দেওয়া আদৌ যাবে কি না, তা ভাবতে শুরু করেছে বিভিন্ন সংস্থা৷ ইতিমধ্যেই টিভি, ওয়াশিং মেশিন বা কম্পিউটারের মতো ইলেকট্রনিক জিনিসের দাম বাড়তে চলেছে বলে জানিয়ে দিয়েছে প্রস্ত্ততকারী সংস্থাগুলি৷ বুধবারই জেনারেল মোটর্স তাদের গাড়ির দাম ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে৷ অডি, বিএমডব্লিউ-এর মতো আরও বেশ কয়েকটি সংস্থা ইতিমধ্যেই গাড়ির দাম বাড়িয়েছে৷
অর্থনীতির এই দুর্দিনে সুর চড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলও৷ এ দিনের ঘটনায় আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই বলে আশ্বস্ত করতে চেয়েছেন কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা৷ কিন্ত্ত তাতে বিরোধীদের মুখ বন্ধ করা যায়নি৷ বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিং বলেছেন, 'সাধারণ মানুষ থেকে বিনিয়োগকারী-- এই সরকারের উপর আস্থা হারিয়েছেন সকলেই৷' তাঁর বক্তব্য, টাকাকে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য অবিলম্বে ইউপিএ সরকারের ইস্তফা দেওয়া উচিত৷ তাঁর দাবি, 'এখনই লোকসভা নির্বাচন হয়ে নতুন সরকার এলেই একমাত্র বাজারের আস্থা ফিরতে পারে৷' আরও খোলাখুলি সমালোচনা করেছেন দলীয় মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকর৷ তাঁর কথায়, 'সব রকম সামগ্রীর দাম বাড়বে এ বার৷ কাজ হারাবেন লক্ষ লক্ষ মানুষ৷ এই বিপর্যয় মানুষের কীর্তি, ইউপিএ-র কীর্তি৷'

সিপিআইএম পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, 'প্রধানমন্ত্রীর দাবি ১৯৯১-এর সঙ্গে বর্তমান অবস্থার মিল নেই, কিন্ত্ত আমার তা মনে হয় না৷ বরং এবারকার পরিস্থিতি আরও খারাপ৷ অর্থ আছে যাঁদের হাতে, তাঁরা তো দেশীয় বাজারে লগ্নিই করছেন না৷ সব টাকা সোনা, সম্পত্তি বা বিদেশি মুদ্রায় ঢেলে দিচ্ছেন৷' বর্তমান পরিস্থিতিকে 'অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা' বলেছেন সিপিআই সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত৷

টাকার দাম ক্রমশ নীচের দিকে নামায় বাড়তে চলেছে সারের দাম৷ ফলে আগামী দিনে কৃষিতেও তার প্রভাব পড়বে৷ বিদেশে পড়তে যাওয়ার মুখে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বহু ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যত্‍৷ ইংল্যান্ডের মতো দেশগুলিতে ছাত্র ভিসা পাওয়ার অন্যতম শর্ত হল, আবেদনকারীকে দেখাতে হবে যে এক বছর বিদেশে থাকা-খাওয়ার খরচ বহন করার মতো সামর্থ্য তাঁর আছে৷ এর জন্য ভিসা আবেদনের ঠিক আগের ২৮ দিন আবেদনকারীকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এক বছরের দৈনন্দিন খাওয়া থাকার খরচ বাবদ ৮,০০০ পাউন্ডের সমপরিমাণ টাকা রাখতে হবে৷ এ মাসের গোড়ায় যাঁরা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা রেখেছিলেন, তাঁরা তখন পাউন্ডের দর হিসাব করেছিলেন ৯২ টাকা৷ বুধবার পাউন্ড-টাকার সেই বিনিময় দর দাঁড়িয়েছে ১০৬.৩২ টাকা৷ অর্থাত্‍, ভিসা পেতে হলে প্রত্যেককে এখন তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাউন্ড প্রতি অতিরিক্ত ১৪.৩২ টাকা (মোট ১,১৪,৫৬০ টাকা) জমা করতে হবে৷

গত সপ্তাহ থেকেই বিদেশি মুদ্রার বাজারে ডলার, পাউন্ড, ইউরোর আকাল হঠাত্‍ করেই অনেকটা বেড়ে গিয়েছে৷ সেপ্টেম্বর থেকেই মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক তাদের মাসিক ৮,৫০০ কোটি ডলার মূল্যের ঋণপত্র কেনা কমাতে পারে এই আশঙ্কায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এ দেশে তাদের লগ্নি বিক্রি করে ডলার ঘরে তুলতে হুড়োহুড়ি শুরু করে দেন৷ ৭ অগস্ট থেকে বুধবার পর্যন্ত এখানকার শেয়ার ও ঋণপত্রের বাজারে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা প্রায় ১৫ কোটি ডলার মূল্যের লগ্নি বিক্রি করে দিয়েছে৷

এর মধ্যেই সোমবার থেকে নতুন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সিরিয়াকে কেন্দ্র করে৷ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে কয়েকদিনের মধ্যেই সেনা অভিযান চালাতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের যৌথ বাহিনী৷ বৃহস্পতিবারই সিরিয়ায় সাধারণ নাগরিকদের উপর রাসায়নিক হামলার নিন্দা করে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে নিন্দা প্রস্তাব আনতে পারে ব্রিটেন৷ সেনা অভিযান শুরু হলে তার ফল সুদূর প্রসারী হতে পারে এই আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা মার্কিন ডলার, জাপানি ইয়েন, সুইস ফ্রাঙ্ক বা সোনায় লগ্নি করে নিজেদের বিনিয়োগ নিরাপদ করতে চাইছেন৷

এ দিকে, সিরিয়ায় পশ্চিমি অভিযান শুরু হলে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলি থেকে তেলের জোগান ব্যাহত হবে এই আশঙ্কায় আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামও লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে৷ গত বুধবার থেকে আন্তজার্তিক বাজারে তেলের দাম প্রায় ৫ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ আন্তর্জাতিক বাজারে তেল কিনতে হলে চাই ডলার৷ তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় তেল বিপণন সংস্থাগুলির ডলারের চাহিদাও অনেক বেড়ে গেছে গত তিন-চার দিনে৷ অথচ, টাকার বিনিময় দর এত দ্রুত পড়ায় রপ্তানিকারীরা তাদের ডলারের আয় এখনই বাজারে বিক্রি করে টাকায় পরিবর্তন করতে চাইছেন না৷ খুব শীঘ্রই ডলারের দর ৭১-৭২ টাকায় পৌঁছতে পারে বলে বাজি ধরাও চলছে৷

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Welcome

Website counter

Followers

Blog Archive

Contributors