আহমদ শরীফের ডায়েরি #০৪
kai Kaus
"... মুজিববাদী আঁতেলরা এমন বেহায়া চাটুকার যে কোন মিথ্যাভাষণে তাদের কোন লজ্জা-শরম নেই। তারা জানেন মুজিবের পাকিস্তান ভাঙার কোন স্বপ্ন বা সাধ ছিল না, তিনি ছিলেন সোহরাওয়ার্দীর চেলা এবং মুসলিম লীগার ও হিন্দুবিদ্বেষী। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছিল তাকে ১৯৭০ সনের নির্বাচন। কেননা আগরতলা মামলা তাকে অপমানিত ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ বাঙালীর হিরো বানিয়ে দিয়েছিল। শেখ মুজিব ১৯৭১ সনের ২৫ মার্চ অবধি প্রধানমন্ত্রীত্বের জন্যে দরকষাকষি করছিলেন, যদিও সে লক্ষ্যে ছাত্রনেতাদের পরামর্শে তিনি ৭ই মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার ও মুক্তির সংগ্রামের কথা উচ্চারণ করেছিলেন তার প্রধানমন্ত্রীত্বপ্রাপ্তি ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যেই। প্রমাণ তিনি ঐ সভার পরেই দ্রোহী হননি, ছাত্ররাও ধরেনি অস্ত্র।
২৫শে মার্চে পাকিস্তান সরকারই বাঙালীকে প্রতারিত করে হত্যাকান্ড চালাতে থাকে। বিপন্ন ও অস্ত্রচ্যুত সেনানিরা, পুলিশেরা এবং ক্ষুব্ধ-ক্রুদ্ধ তরুণেরা অনন্যোপায় হয়ে অস্ত্র ধারণ করে, তাদের সঙ্গে জুটে যায় আওয়ামীলীগারেরা এবং ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ স্বাধীনতাকামী জনগণ গাঁ-গঞ্জ থেকে শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে। শেখ মুজিব যে মুক্তি বা স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেরনা-প্রণোদনাপ্রবর্তনা দাতা তা কেউ অস্বীকার করে না। যদিও সবটা তাৎক্ষণিক এবং অবস্থার ও অবস্থানের পরিণাম, পরিকল্পিত নয়, উদ্দিষ্ট ছিল না বলেই।
কিন্তু ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সনের আগস্ট অবধি মুজিব শাসন হচ্ছে ত্রাসের, হত্যার, কাড়ার, মারার, জোর-জুলুমের, স্বৈরাচারের, দুর্ভিক্ষের, পীড়নের, শোষনের, জবরদখলের ও জবরদস্তির হৃৎকাঁপানো বীভৎস রূপের। - ১৬/১২/১৯৯৭
- আহমদ শরীফ / আহমদ শরীফের ডায়েরি : ভাব-বুদ্বুদ ॥ [ জাগৃতি প্রকাশনী - ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ । পৃ: ১৭৩ ]
No comments:
Post a Comment