Hooch toll 171, excise OC suspended in WB

The Officer-in-charge of Excise department in Diamond Harbour, Radheshyam Pande, was today suspended on charge of dereliction of duty, South 24-Parganas district police superintendent L N Meena said.
According to the Chief Medical Officer (Health) S Adhikary, the killer hooch claimed 171 lives in Diamond Harbour sub-divisional hospital, M R Bangur hospital and at National Medical college and hospital.
Union Minister of State for Information and Broadcasting C M Jatua said that he had shot off a letter to the Commissioner of Excise three months ago, calling for action against mushrooming of liquor joints in Sangrampur and other areas of the district.
"No action has been taken so far," Jatua told news agency. The CMO(H) said that Diamond Harbour sub-divisional hospital, where most of the victims were admitted, alone accounted for 121 deaths, followed by 44 in M R Bangur hospital and six in National medical college and hospital.
She said that blood samples of the victims had been sent to Belgachia laboratory by forensic experts.
Police said that 12 arrests were so far made but the kingpin of the hooch racket Khonra Badshah was still absconding.
Meanwhile, a CID team, led by DIG, CID (operations) K Jayraman, visited Sangrampur and adjacent villages as also hospitals to talk to the victims as part of the inquiry process into the hooch tragedy.
The hooch victims included labourers, rickshaw pullers and hawkers.
Postmortem on 141 bodies have been done and the bodies handed over to the respective families, police said.
Police said that 12-year-old Raju Laskar, who took a glass of killer hooch out of fun mistaking it a glass of water, died at the M R Bangur hospital last night.
Health department sources said doctors, nurses, and para-medical staff whose leaves were cancelled were working overtime to attend the hooch victims.
The victims fell ill after consuming spurious liquor from several illegal joints on Tuesday night. Preliminary investigations suggest that the deaths occurred due to methyl alcohol toxicity which led to respiratory and cardiac failure.
Meanwhile, locals on Friday dismantled many liquor joints in Mograhat, Usthi and nearby areas in the district.
Excise department personnel broke hundreds of hooch bottles and destroyed the shanties in North 24-parganas district.
PTI
![]() |
http://www.anandabazar.com/piclg.html
আমরি-কাণ্ডের মতো বিষমদে মৃত্যুমিছিলের ঘটনাতেও রাজ্য সরকার এবং বিরোধী শিবির প্রাথমিক ভাবে 'সহযোগিতার' পথেই হাঁটছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় ঘোষণা করেছিলেন, দোষীদের খুঁজে বার করার সময় কোনও 'দলের কথা' ভেবে কাজ করা হবে না। তাঁর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সিপিএম বিধায়ক আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা বলেছিলেন, সিপিএম বা তৃণমূল না-দেখে দোষীদের গ্রেফতার করুক সরকার। সেই সহমতের বাতাবরণই সন্ধ্যায় বদলে গেল, যখন শিল্প ও পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সরাসরি সিপিএম-কে 'বিষমদের ঘটনার নায়ক' বলে অভিহিত করলেন। তাঁর অভিযোগ, 'পরিকল্পনামাফিক' চোলাই মদের সঙ্গে রাসায়নিক মিশিয়ে সিপিএমের স্থানীয় নেতারাই এত মানুষের মৃত্যু ডেকে এনেছেন!
'পরিকল্পনা'র ব্যাখ্যা করে তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতা পরে জানান, আমরি-র ঘটনায় যে ভাবে তোদিদের সঙ্গে সিপিএম জড়িয়ে পড়েছিল, তা থেকে 'নজর ঘোরাতেই' ওই কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তাঁর কথায়, "আমরি নিয়ে সিপিএম ক্রমশই বিব্রত হচ্ছে। সেই বিড়ম্বনা চাপা দেওয়ার জন্য এই কাণ্ড ঘটানো হল না তো? নইলে কী করে এত গায়ে-গায়ে এই দু'টি ঘটনা ঘটল?"
তৃণমূল শিবিরের এই অভিযোগ চোলাই মদ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবিত সর্বদল বৈঠকের উপরে ছায়া ফেলবে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিষমদকে 'সামাজিক সমস্যা' হিসেবে চিহ্নিত করে তার মোকাবিলায় সব দলের মতামত চেয়েছেন মমতা। এ দিনই বিধানসভায় তিনি জানান, আগামী সোমবার স্পিকারের পৌরোহিত্যে সর্বদল বৈঠক বসবে। তার আগে এ দিনই পার্থবাবুর ডাকে বিধানসভায় তাঁর ঘরে গিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। ভূমি বিল সংক্রান্ত কিছু 'জটিলতা' এবং শীত অধিবেশনে লাগাতার কিছু সমস্যা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি চোলাইয়ের রমরমা বন্ধে লাইসেন্সকৃত দেশি মদের দোকান ও জোগান বাড়ানোর প্রস্তাব ঘরোয়া ভাবে সরকারকে দেন তিনি।
কিন্তু পার্থবাবুর মন্তব্য সরকার-বিরোধী প্রকাশ্য সম্পর্কে তো বটেই, এই 'ট্র্যাক টু' যোগাযোগেও অনিশ্চয়তা এনে দিয়েছে।
সর্বদল বৈঠকের দরজা বন্ধ না করলেও সূর্যবাবু পরে বলেন, "ঘরোয়া ভাবে কী বলছি, সেটা বড় কথা নয়। সরকার সর্বদলে কী বলে সেটা আগে দেখি।" সিপিএমের এক প্রাক্তন মন্ত্রী এবং বর্ষীয়ান বিধায়কের কথায়, "সরকারের খেলা আগে দেখি! তার পরে আমরা ঠিক করব, কী করব।"
মুখ্যমন্ত্রী যে দিন বিধানসভায় বিষ মদের ঘটনায় সিআইডি তদন্তের কথা জানিয়েছেন, সে দিন মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তিত্ব কী ভাবে এমন মন্তব্য করলেন তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই সরব বিরোধী শিবির। বিরোধী দলনেতা 'চ্যালেঞ্জ' ছুড়ে বলেছেন, তাঁরা সরকারকে 'ব্ল্যাঙ্ক চেক' দিচ্ছেন। যাকে পারে গ্রেফতার করে সরকার তাদের অভিযোগ প্রমাণ করুক! সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু পার্থবাবুর মন্তব্যকে 'মিথ্যা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন' আখ্যা দিয়েছেন। সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, "এটা তো বছরের সেরা রসিকতা!" আজ, শুক্রবার বিধানসভায় পার্থবাবুরই প্রশ্নোত্তর পর্বে জবাব দেওয়ার কথা। তাঁকে নিয়ে আজ বিধানসভা উত্তপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা।
পার্থবাবুর মন্তব্যের পিছনে রয়েছে প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবের কটাক্ষ। সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্মেলনের সমাবেশে রাজ্য সরকারকে 'মড়ার সরকার' বলে অভিহিত করে তিনি অভিযোগ করেছেন, রাজ্য সরকার শুধু মৃতদের নিয়ে ভাবছে (বিষ মদে ক্ষতিপূরণের প্রতি প্রচ্ছন্ন কিন্তু অবধারিত ইঙ্গিত-সহ) কিন্তু জীবিতদের সমস্যা সমাধানে কিছু করতে পারছে না।
এরই তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নিজের ঘরে পার্থবাবু বলেন, "মানুষ উচিত শিক্ষা দিলেও সিপিএমের এক দঙ্গল নেতা তা গ্রহণ করেননি। শীত কালে যাঁদের আরও বেশি করে গর্তে থাকার কথা, তাঁরা হঠাৎ বাইরে বেরিয়ে মানুষের হয়ে কথা বলার চেষ্টা করছেন! বিষমদের নায়ক হচ্ছেন সিপিএমের নেতারা! দায়িত্ব নিয়ে বলছি, যাঁরা এ সব কথা বলছেন, তাঁরাই পরিকল্পনামাফিক মদের সঙ্গে কোনও দ্রব্য মিশিয়ে মৃত্যুপথযাত্রীতে পরিণত করেছেন।" প্রাথমিক তদন্তে এমন কোনও ইঙ্গিত কি মিলেছে, যার ভিত্তিতে তিনি এ কথা বলছেন? পার্থবাবু বলেন, "যাঁরা দোষী, সিপিএমের সেই স্থানীয় নেতারা গা-ঢাকা দিয়েছেন কেন?"
এ দিন সভায় মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতির পর রেজ্জাক বলতে উঠেছিলেন, সংগ্রামপুরের ওই মদের ঠেকের 'নাকের ডগায়' পুলিশ ফাঁড়ি আছে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে থামিয়ে বলেন, "চুপ করে থাকুন! আমি কোনও দল দেখে কিছু বলিনি। বাদশা খোকন কোন দলের লোক, আমি কিন্তু বলিনি। নিজের দলের খোঁজ নিন। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দলের প্রভাব থাকলে পুলিশের অসুবিধা হয়।"
রেজ্জাক (যাঁকে এ দিন সংগ্রামপুরে যাওয়ার পথে আটকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ সিপিএমের) অবশ্য দাবি করেছেন, ওই বিষমদের ঠেকের মালিক হিসেবে যে বাদশা খোকনের নাম মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সে এখন তৃণমূলে ভিড়েছে। তাঁর কথায়, "এরা সিপিএমের লোক হলে আলিমুদ্দিনে এনে গুষ্টির পিন্ডি চটকাতাম। ওরা সব তৃণমূলে ঢুকেছে।" তাঁর আরও বক্তব্য, "নাম করছি না। ওই যে লোকটা সূর্যোদয় (নন্দীগ্রামে) থেকে সূর্যাস্তের সময় ছিল, সে-ও তো এখন তৃণমূলে! ধরতে অসুবিধা কী?" রেজ্জাক যে মগরাহাটের কুখ্যাত দুষ্কৃতী সেলিমের কথা বোঝাতে চেয়েছেন সেটা স্পষ্ট। নন্দীগ্রাম 'পুনর্দখলের' সময় সিপিএম যাকে ব্যবহার করেছিল বলে অভিযোগ তৃণমূলের।
রেজ্জাকের মন্তব্যের জবাবে পার্থবাবু বলেন, "ওই দোকান যে সিপিএম নেতারা চালাতেন, এদের দিয়ে ক্যাডার-বাহিনী তৈরি হত, এটা আর গোপন নেই। কেউ ছাড় পাবে না!" তাঁর এই 'গুরুতর' অভিযোগের জবাবে সূর্যবাবু পাল্টা বলেছেন, "এখন মনে হচ্ছে, ওঁদেরই কোনও ষড়যন্ত্র ছিল আমাদের নাম জড়িয়ে দেওয়ার জন্য। বিধানসভার ভিতরে মুখ্যমন্ত্রী এবং বাইরে রেজ্জাক যা বলেছিলেন, তাতে দলের পরিচয় না-দেখেই দোষীদের ধরার কথা ছিল। সরকারের সাহস থাকলে যাকে পারে, ধরুক! মন্ত্রী যা বলেছেন, তা প্রমাণ হোক!" আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী এবং সিপিএম বিধায়ক আনিসুর রহমানের বক্তব্য, "মুখ্যমন্ত্রী তো বিধানসভায় বললেন সিআইডি তদন্ত হচ্ছে। তার মধ্যেই পরিষদীয় মন্ত্রীর এমন মন্তব্য! মুখ্যমন্ত্রীর উপর কি তাঁর ভরসা নেই? নাকি সিআইডি-তে ভরসা নেই?" পার্থবাবুর মন্তব্যের পরে বিরোধী শিবির থেকে আরও প্রশ্ন উঠেছে, আমরি-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে যে পরিস্থিতি মোকাবিলায় যে তৎপরতা সঞ্চার করেন, সেই সরকারই বিষমদ কাণ্ডে অন্য পথে হাঁটছে কেন? বিমানবাবুর কথায়, "এত লোক মারা গিয়েছেন। যখন প্রশাসনের তৎপরতা দেখানোর কথা, তখন এই কথা বলা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা!" বুধবার ঘটনাস্থল ঘুরে এসে রেজ্জাক এ দিনই বলেন, "হাসপাতালে দেখলাম জেলাশাসক, সিএমওএইচ, এসপি সব ঘর আলো করে বসে আছেন! জানতে চাইলাম, চিকিৎসাটা হচ্ছে কই? গাঁয়ে-ঘরে এমন হলে লোকে তেঁতুল জল খাওয়ায় (পাকস্থলী পরিষ্কারের জন্য)। এখানে মেডিক্যাল টিম আগে পৌঁছলে কিছু প্রাণ বাঁচত।"
কাঠগড়ায় নেশা বাড়ানোর কাঠের স্পিরিট | ||
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা | ||
মৃতের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। সাম্প্রতিক অতীতে বিষ-মদের এমন চেহারা পশ্চিমবঙ্গ দেখেনি। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ করে কেন এমন 'হন্তারক' হয়ে উঠল চোলাই মদ? কী ছিল তাতে? পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্তে মৃতদের পেট থেকে মিথাইল অ্যালকোহল বা মিথানল মিলেছে। যা অত্যন্ত মারাত্মক বিষ বলে জানিয়ে ময়নাতদন্তকারীরা দাবি করেছেন, চোলাই খাওয়ার ফলেই এই 'বিষ' তাদের শরীরে ঢুকেছিল। কিন্তু চোলাইয়ে মিথাইল অ্যালকোহল এল কী ভাবে? আবগারি দফতর সূত্রে খবর, সাধারণত, শর্করা জাতীয় উপাদান পচিয়ে তার থেকে ইথাইল অ্যালকোহল প্রস্তুত করা হয়। এর সঙ্গে শ্বেতসার বা কার্বোহাইড্রেট (মূলত পচা ভাত) মিশিয়ে তৈরি হয় দিশি মদ। কিন্তু চোলাইয়ের ক্ষেত্রে অন্য ব্যবস্থা। এখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নেশার মাত্রা বাড়াতে ইথাইল অ্যালকোহলের সঙ্গে মিথাইল অ্যালকোহল, সোরা এমনকী কীটনাশকও মেশানো হয়। যাতে কম খরচেই বেশি নেশা হয়। মিথাইল অ্যালকোহল চলতি ভাষায় কাঠ পালিশের স্পিরিট বা মিথানল বলেই পরিচিত। বিজ্ঞানীরা জানান, মিথানল হল স্পিরিটের সব থেকে অশোধিত পর্যায়। সাধারণ অবস্থায় এটি হাল্কা, বর্ণহীন, দাহ্য এবং উগ্র গন্ধযুক্ত হয়। স্বাদে অত্যন্ত মিষ্টি। মূলত কাঠ পালিশ, প্লাস্টিক, রঙ, প্লাইউড এবং ছাপা শিল্পেই এটি ব্যবহৃত হয়। এই মিথানল মানবশরীরে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে। মগরাহাটে সেটাই ঘটেছে বলে তদন্তকারীদের সন্দেহ। কী ভাবে তৈরি হয় চোলাই? আবগারি ও পুলিশ সূত্রের খবর, চোলাইয়ের ভাটিগুলিতে ঘরোয়া প্রক্রিয়ায় প্রথমে চিটেগুড় বা চিনির গাদ (মোলাসেস) পচিয়ে ইথাইল অ্যালকোহল তৈরি হয়। পচানোর জন্য ব্যবহার করা হয় ইস্ট। হাঁড়ির ভিতরে পচা গুড় বা মোলাসেস রেখে তার উপরে জল ঢেলে 'পাতন' প্রক্রিয়ার সাহায্যে ইথাইল অ্যালকোহল তৈরি হয়। মেশানো হয় পচা ভাতও। শেষে যোগ করা হয় মিথাইল অ্যালকোহল, কীটনাশক ইত্যাদি। সকালে মগরাহাটের পূর্ব ও পশ্চিম পাঁচগাছিয়া এলাকায় চোলাইয়ের ভাটি ভাঙতে গিয়ে পুলিশ দেখে, এলাকায় ছোট ছোট পুকুরে গুড় পচানো হচ্ছে। আর পাশের পুকুরের কালো জলে ডুবিয়ে রাখা হয়েছে চোলাইয়ের ড্রাম। ওই এলাকার এক বাসিন্দা জানান, ওই ড্রামেই পরে মেশানো হবে মিথাইল অ্যালকোহল বা মিথানল। পুলিশ জানিয়েছে, এ ধরনের ভেজাল রুখতে মিথানলে এখন নীল রং দেওয়া হয়। ঘোলাটে-সাদা রঙের চোলাইয়ে নীল রংয়ের মিথানল মেশানো হলে তার রংও পাল্টে যাবে। সহজেই ভেজাল ধরা পড়ার কথা। তা হলে ধরা পড়ছে না কেন? আবগারি দফতরের অফিসারদের দাবি, চোলাইয়ের ক্ষেত্রে যে ভাবে মিথানল মেশানো হয়, তা অনেকটা এক পুকুর জলে এক দোয়াত কালি মেশানোর সামিল। তাই রঙের পরিবর্তন অতটা ধরা পড়ে না। কিন্তু ওই সামান্য মিথানল মেশালে কি কারও মৃত্যু হতে পারে? চিকিৎসকেরা জানান, মিথানল এতটাই বিষাক্ত যে মাত্র ১০ মিলিলিটার শরীরে ঢুকলে সেই ব্যক্তি অন্ধ হয়ে যাবেন। আর ৩০ মিলিলিটার ঢুকলে মৃত্যু নিশ্চিত। তাঁদের বক্তব্য, মিথানল থেকে দু'ভাবে বিষক্রিয়া ছড়াতে পারে। এক, শুঁকে অথবা চামড়ার মাধ্যমে। যার ফলে হাঁপানি বা স্নায়ুর রোগ দেখা দিতে পারে। দুই, ওই রাসায়নিক পান করলে। তদন্তকারীদের দাবি, মগরাহাটের ঘটনায় দ্বিতীয় পদ্ধতিতেই বিষক্রিয়া ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা জানান, শরীরে মিথানল ঢুকলে পরিপাকের মাধ্যমে তা ফরম্যালডিহাইড এবং পরে ফরমিক অ্যাসিড তৈরি হয়। এর থেকে বিষক্রিয়ায় কোষে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে যায়, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যার নাম হাইপোক্সিয়া। দেখা দেয় মাথাব্যথা, ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনির মতো উপসর্গ। শরীরে অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে গেলে কিডনি তা শরীর থেকে বার করে দিতে পারে না। ফলে কিডনি অকেজো হয়। স্নায়ুতন্ত্র ও যকৃৎ-সহ পেটের অন্যান্য প্রত্যঙ্গেরও মারাত্মক ক্ষতি হয়। সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, "চোলাইয়ে মিথাইল এবং ইথাইল অ্যালকোহল মিশে যাওয়ার ফলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং ফুসফুস বিকল হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে যকৃতের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েও মৃত্যু হয়।" বুধবার মগরাহাটে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও একই উপসর্গ দেখা গিয়েছিল। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, বিষ মদে যাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, মারা না-গেলেও অনেকে চিরকালের মতো অন্ধ হয়ে যেতে পারেন। চোখের স্নায়ুর উপর চোলাইয়ের বিষক্রিয়ার মারাত্মক প্রভাব পড়ে বলে তাঁরা জানান। | ||
|
কবরের লাশ তুলে মর্গে | |||||||||||||||||||||
বিষমদে মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ কেন, প্রশ্ন সব স্তরেই | |||||||||||||||||||||
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা | |||||||||||||||||||||
ময়না-তদন্ত করা হয়নি। বিষমদে মৃত্যুর পরে বুধবার রাতেই আত্মীয়েরা তড়িঘড়ি কবর দিয়ে দিয়েছিলেন দেহগুলি। বৃহস্পতিবার সরকারের এক ঘোষণা শুনে সেই লাশই মাটি খুঁড়ে তুলে ময়না-তদন্তের জন্য নিয়ে গিয়েছেন বাড়ির লোকেরা। কী সেই ঘোষণা? রাজ্য সরকার বুধবার বিধানসভায় ঘোষণা করেছে, বিষমদে মৃতদের পরিবারকে দু'লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। তাদের ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদও। আর ওই ঘোষণা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মগরাহাট অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তেই কবর দেওয়া অনেক লাশ তুলে আনা হয়েছে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে। কারণ, ক্ষতিপূরণ পেতে গেলে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট থাকা বাধ্যতামূলক। জেলার এক পুলিশকর্তা জানান, বুধবারেও অনেক পরিবারই ময়না-তদন্ত না-করিয়ে প্রিয়জনের মৃতদেহ নিয়ে চলে গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার দেখা যায়, তাদের মধ্যেই অনেকে ময়না-তদন্তের জন্য আবার দেহ নিয়ে হাজির হয়েছেন। কবর থেকে তুলে ময়না-তদন্তের জন্য আনা হয়েছে, এই ধরনের প্রায় ৩০টি মৃতদেহ তাঁরা পেয়েছেন বলে জানান ওই পুলিশকর্তা। ক্ষতিপূরণ নিয়ে ওই এলাকায় যখন জোর আলোচনা চলছে, তখন তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে অর্থ দফতরের অন্দরমহলে। দফতরের অফিসারদের একাংশের বক্তব্য, কোষাগারের যখন 'নুন আনতে পান্তা ফুরোনো'র অবস্থা, তখন বেআইনি চোলাই খেয়ে যাঁদের মৃত্যু হল, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কেন? অর্থ দফতরের কর্তাদের বক্তব্য, বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের পরিবার-পিছু দু'লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে গেলে রাজ্যের কোষাগার থেকে তিন থেকে চার কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। | |||||||||||||||||||||
![]() | |||||||||||||||||||||
বাঙুর হাসপাতালে অসুস্থদের পরিজন। বৃহস্পতিবার। ছবি:রাজীব বসু | |||||||||||||||||||||
অনেকের বক্তব্য, যে-কোনও মৃত্যুই দুঃখের। কিন্তু এই ধরনের ঘটনায় মৃত্যুর সঙ্গে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতাল বা স্টিফেন কোর্টের মতো অগ্নিকাণ্ডে অসহায় মৃত্যুর কোনও তুলনা হয় না। তাই ক্ষতিপূরণের নামে এই টাকা দেওয়ার নজির তৈরি করা ঠিক হচ্ছে না। কারণ, বিষমদে মৃত্যুর কারণে এক বার ওই টাকা দেওয়া হলে ভবিষ্যতেও এই ধরনের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে সরকার। চোলাই মদে মৃত্যুর ঘটনায় রাজ্যের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্তে বিভিন্ন মহলে যে সমালোচনা শুরু হয়েছে, তা হয়তো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানেও গিয়েছে। মমতা বৃহস্পতিবার বিধানসভায় বলেন, "যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের কেউ রিকশা চালাতেন, কেউ ঠেলা চালাতেন, কেউ বা হকারি করতেন। তাঁদের পরিবার তো কোনও অন্যায় করেনি।" মৃতদের অন্ত্যেষ্টির জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে পরিবার-পিছু ১০ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান মমতা। বিষমদে মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ কেন? মহাকরণে এই প্রশ্নটিকে পাশ কাটিয়ে যান অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তিনি বলেন, "বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী যা বলার বলে দিয়েছেন, নতুন করে আমার বলার কিছু নেই।" অর্থমন্ত্রী মুখ না-খুললেও অর্থ দফতরের এক কর্তা জানান, ক্ষতিপূরণ দিতে যত টাকা খরচ হবে, সেই টাকা ওই এলাকার উন্নয়নে লাগানো যেত। চোলাই মদ খেয়ে মৃত্যু, তার জন্য রাজ্যের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্তে রীতিমতো 'হতাশ' অর্থনীতিবিদদের একাংশ। তাঁদের স্পষ্ট কথা, এই ধরনের একটি ঘটনায় সরকারের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা মোটেই ঠিক হয়নি। তিন কোটি টাকাতেও এমন অনেক প্রকল্পের কাজ শেষ করে ফেলা যায়, যা হয়তো দীর্ঘদিন ধরে সামান্য কিছু অর্থের অভাবে থমকে রয়েছে। বরং এই ঘটনার পরে রাজ্য সরকারের ভাবা উচিত ছিল, কী ভাবে গ্রামাঞ্চলে আরও বেশি সংখ্যক দেশি মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়া যায়। তাঁদের ব্যাখ্যা, এতে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বাড়ত, বিষমদ খেয়ে মৃত্যুও ঠেকানো যেত। রাজ্য সরকারের ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এক শ্রেণির মানুষের বক্তব্য, চোলাই মদের কারবারিরা রাজ্যকে এক পয়সাও কর দেয় না। উল্টে গ্রামবাসীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে তারা দিনের পর দিন বিষাক্ত চোলাই খাইয়ে চলেছে হাজার হাজার মানুষকে। যাদের দোষে এতগুলো মানুষের মৃত্যু হল, সাধারণ মানুষের দেওয়া করের টাকা থেকে তাদের দায় কেন মেটাবে রাজ্য সরকার?
|
No comments:
Post a Comment