Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Tuesday, January 8, 2013

ক্ষমতার লড়াইয়ে রেজ্জাক মোল্লা কোমরের হাড়ে চিড় ধরার কারণে শয্যাশায়ী।ক্ষমতা ও রাজনীতির মানবিক মুখ হয় না। কুলীনতন্ত্রে ক্ষমতাই হল আসল। বাকী যা কিছু সবই অবান্তর।দিন প্রতিদিন কুনলীনতন্ত্রের এই রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে মারা পড়ছে যে সাধারণ মানুষ, তাঁরা ব্রাত্য, অন্ত্যজ, অপাংতেয়, অস্পৃশ্য ও সংখ্যালঘু।ক্ষমতার শিখরে যারা আছেন তাঁদের কিচ্ছু যায় আসে না। কিন্তু এই ক্ষমতার লড়াইয়ে সাধারণ জনগণ যখন আড়াআড়ি আমরা ওরাঁয় দ্বিধা বিভক্ত, রক্তনদী মহারক্তসমুদ্র হতে কতক্ষন?এপার বাংলা ওপার বাংলা, কোনও বাংলায় ক্ষমতার লড়াই থেকে কারও নিস্তার নেই। পশ্চিম বঙ্গে পন্চায়েত নির্বাচন আসন্ন।সারা রাজ্যই এখন কুরুক্ষেত্র। সবাই আজ ধনুর্ধর। নিমিত্তমাত্র।আত্মীয় পরিজন নিধনই ধর্ম। ওপার বাংলায় এই ধর্ম এখন জেহাদ। শুধু মাত্র তফাত এতটুকু। ক্ষমতা ও ধর্মের নিকট শুভবুদ্ধি, বিবেকের বাণী ও গণতান্ত্রিক ভিন্নমত, শুধু কুকুরের গর্জন, যেমনটা বলেছেন হিন্দু ধর্মগুরু আশারাম বাপু। পলাশ বিশ্বাস

ক্ষমতার লড়াইয়ে রেজ্জাক মোল্লা কোমরের হাড়ে চিড় ধরার কারণে শয্যাশায়ী।ক্ষমতা ও রাজনীতির মানবিক মুখ হয় না। কুলীনতন্ত্রে ক্ষমতাই হল আসল। বাকী যা কিছু সবই অবান্তর।দিন প্রতিদিন কুনলীনতন্ত্রের এই রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে মারা পড়ছে যে সাধারণ মানুষ, তাঁরা ব্রাত্য, অন্ত্যজ, অপাংতেয়, অস্পৃশ্য ও সংখ্যালঘু।ক্ষমতার শিখরে যারা আছেন তাঁদের কিচ্ছু যায় আসে না। কিন্তু এই ক্ষমতার লড়াইয়ে সাধারণ জনগণ যখন আড়াআড়ি আমরা ওরাঁয় দ্বিধা বিভক্ত, রক্তনদী মহারক্তসমুদ্র হতে কতক্ষন?এপার বাংলা ওপার বাংলা, কোনও বাংলায় ক্ষমতার লড়াই থেকে কারও নিস্তার নেই। পশ্চিম বঙ্গে পন্চায়েত নির্বাচন আসন্ন।সারা রাজ্যই এখন কুরুক্ষেত্র। সবাই আজ ধনুর্ধর। নিমিত্তমাত্র।আত্মীয় পরিজন নিধনই ধর্ম। ওপার বাংলায় এই ধর্ম এখন জেহাদ। শুধু মাত্র তফাত এতটুকু। ক্ষমতা ও ধর্মের নিকট শুভবুদ্ধি, বিবেকের বাণী ও গণতান্ত্রিক ভিন্নমত, শুধু কুকুরের গর্জন, যেমনটা বলেছেন হিন্দু ধর্মগুরু আশারাম বাপু।


পলাশ বিশ্বাস


ক্ষমতার লড়াইয়ে রেজ্জাক মোল্লা কোমরের হাড়ে চিড় ধরার কারণে শয্যাশায়ী।ক্ষমতা ও রাজনীতির মানবিক মুখ হয় না। কুলীনতন্ত্রে ক্ষমতাই হল আসল। বাকী যা কিছু সবই অবান্তর।দিন প্রতিদিন কুনলীনতন্ত্রের এই রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে মারা পড়ছে যে সাধারণ মানুষ, তাঁরা ব্রাত্য, অন্ত্যজ, অপাংতেয়, অস্পৃশ্য ও সংখ্যালঘু।ক্ষমতার শিখরে যারা আছেন তাঁদের কিচ্ছু যায় আসে না। কিন্তু এই ক্ষমতার লড়াইয়ে সাধারণ জনগণ যখন আড়াআড়ি আমরা ওরাঁয় দ্বিধা বিভক্ত, রক্তনদী মহারক্তসমুদ্র হতে কতক্ষন?এপার বাংলা ওপার বাংলা, কোনও বাংলায় ক্ষমতার লড়াই থেকে কারও নিস্তার নেই। পশ্চিম বঙ্গে পন্চায়েত নির্বাচন আসন্ন।সারা রাজ্যই এখন কুরুক্ষেত্র। সবাই আজ ধনুর্ধর। নিমিত্তমাত্র।আত্মীয় পরিজন নিধনই ধর্ম। ওপার বাংলায় এই ধর্ম এখন জেহাদ। শুধু মাত্র তফাত এতটুকু। ক্ষমতা ও ধর্মের নিকট শুভবুদ্ধি, বিবেকের বাণী ও গণতান্ত্রিক ভিন্নমত, শুধু কুকুরের গর্জন, যেমনটা বলেছেন হিন্দু ধর্মগুরু আশারাম বাপু।


ঢাকা : দুই নেত্রীর মাঝেই ক্ষমতার লড়াই কাজ করছে, তাদের এ ক্ষমতার লড়াইয়ের অবসান ঘটাতে হলে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রয়োজন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশের জনগণ কখনোই সহাবস্থান পাবে না বলে মন্ত্যব্য করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ) এর কনভেনার ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।

 

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সংগঠন আয়োজিত 'জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান : সময়ের দাবি' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

 

তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শীর্ষ দুই দলের হিংসাত্মক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে এবং গতানুগতিক রাজনীতির পরিবর্তন আনতেই বিএনএফের জন্ম। আমরা জনগণের জানমালের ফয়ক্ষতি দেখতে চাই না, সহিংস রাজনীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহার দেখতে চাই না।

 

এ সময় আসন্ন নির্বাচনকে সফল করতে কয়েকটি প্রস্তাব জানান নাজমুল হুদা।

 

তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে সফল করতে সংবিধানের ১২৩ ধারা অনুসারে সংসদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তিন মাসের ভেতর নির্বাচনের বিধান ফিরিয়ে আনতে হবে।

নির্বাচন কমিশনই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করবে এক্ষেত্রে তাদের আরো শক্তিশালী করতে হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানকে যে সকল দায়িত্ব দেওয়া হতো তা নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে। সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠিত করতে হবে এবং অবশ্যই সদস্য সংখ্যা হতে হবে ৭-৯ জন। দেশকে রক্ষার্থে দুই নেত্রীকে একত্রে সংলাপে বসে সংবিধানকে পুনর্গঠিত করতে হবে।

 

বিএনএফের চিফ কোঅর্ডিনেটর ও মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন কো-কনভেনার অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম, সদস্য সচিব আরিফ মঈনুদ্দিনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

 

(এসটিেআরএ/ডিডি/ডিসেম্বর ১৫.২০১২)


মিশরে ক্ষমতার লড়াই
রবিবার, ২৪ জুন ২০১২

মানবজমিন ডেস্ক: মিশরে ক্ষমতার লড়াই চলছে। এ লড়াইয়ে লিপ্ত হয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী ও মুসলিম ব্রাদারহুড। ফলে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে হোসনি মুবারক ক্ষমতায় থাকার সময়ে যে উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল মিশরে, সেই একটি চিত্র ফিরে আসার সমূহ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মুসলিম ব্রাদারহুড দাবি করছে, সদ্য সমাপ্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাদের প্রার্থী মোহাম্মদ মুরসি বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু সেনাবাহিনী ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য নির্বাচনের সেই ফলকে উল্টে দিতে চায়। এ নিয়ে মুসলিম ব্রাদারহুডের হাজার হাজার সমর্থক শুক্রবার ঐতিহাসিক তাহরির স্কোয়ারসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে। সেনাবাহিনী মুসলিম ব্রাদারহুডের ওই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, দীর্ঘদিন তাদের ক্ষমতায় থাকার কোন খায়েশ নেই। মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রার্থী মুরসি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, তারা মিশরের জনগণের গণতান্ত্রিক প্রত্যাশার প্রতি সম্মান দেখাচ্ছে না। ফলে তাদের বিক্ষোভ চলতেই থাকবে। তিনি নিজেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী বলে দাবি করেন। এর আগে গত সপ্তাহে সেনাবাহিনী মিশরের পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে। এখানেই শেষ নয়। তারা নির্বাচন দেয়ার ক্ষমতা নিজেদের কাছে নিয়ে নেয়। তারপর মিশরবাসী এখনও অপেক্ষা করছেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলের জন্য। এই ফল গত ২১শে জুন প্রকাশ করার কথা ছিল। কিন্তু ফল বিলম্বিত করে ক্ষমতাসীন সামরিক কাউন্সিল।

http://www.mzamin.com/details.php?nid=MTA0MjU=&ty=&s=21&c=


হামলার প্রতিবাদ  
রবিবার আবদুর রেজ্জাক মোল্লার উপর তৃণমূলের আক্রমণের প্রতিবাদে যাদবপুরের কৃষ্ণা গ্লাস থেকে গড়িয়া পর্যন্ত মিছিল।

রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করলেন বামেরা, পাল্টা মিছিলের হুমকি তৃণমূলের
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র।--পিটিআই।
বামনঘাটায় বাম সমর্থকদের উপর গুলি চালানো ও বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর অভিযোগ নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করলেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র ও বাম নেতৃত্বরা। এদিন রাজ্যপালের কাছে অভিযুক্তের শাস্তির দাবি নিয়ে ও বামেদের উপর হামলার অভিযোগ নিয়ে স্মারকলিপি জমা দেন তাঁরা। এদিন তিনি বলেন, মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করার পরই পরবর্তী কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এই ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য ও জেলা জুরে ধিক্কার মিছিল করবে বামেরা।

রেজ্জাক মোল্লার উপর হামলার 
নিন্দায় পলিট ব্যুরো

নিজস্ব প্রতিনিধি: নয়াদিল্লি, ৭ই জানুয়ারি — সি পি আই (এম) নেতা আবদুর রেজ্জাক মোল্লার উপর তৃণমূলের সশস্ত্র বাহিনীর হামলার তীব্র ভাষায় নিন্দা করেছে পার্টির পলিট ব্যুরো। সোমবার এক বিবৃতিতে পলিট ব্যুরো বলেছে, পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য তথা বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লাকে শারীরিকভাবে আঘাত করে তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম এবং তার বাহিনী। তিনি সেই সময় একটি অগ্নিদগ্ধ পার্টি দপ্তর দেখতে ভাঙড়ে গিয়েছিলেন। ঐ পার্টি দপ্তরটি পুড়িয়ে দেয় তৃণমূলীরাই। আহত রেজ্জাক মোল্লার চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে। পলিট ব্যুরো, সি পি আই (এম)-সহ বামপন্থী দল এবং বিরোধীদের উপর তৃণমূলীদের ধারাবাহিক আক্রমণের এটি নবতম সংযোজন। সি পি আই (এম)-র দাবি, তৃণমূল নেতাসহ অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস যেভাবে দিনের পর দিন হিংসাত্মক কাজকর্মকে মদত যুগিয়ে যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে সমস্ত গণতান্ত্রিক শক্তিকে প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানিয়েছে পলিট ব্যুরো।

এদিকে, আবদুর রেজ্জাক মোল্লার উপর তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণের নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছে সারা ভারত কিষান সভা। এই অপরাধের সঙ্গে যুক্তদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে কিষান সভা। এদিন এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রেজ্জাক মোল্লা সংগঠনের প্রবীণ নেতা। তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং ৮বার নির্বাচিত হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায়। তৃণমূলীদের হামলায় অগ্নিদগ্ধ পার্টি দপ্তর দেখতে তিনি গিয়েছিলেন ভাঙড়ের কাঁটাতলায়। তখনই তাঁর উপর হামলা চালায় তৃণমূলীরা। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, এভাবে প্রতিবাদী কন্ঠ যদি হিংসা এবং শারীরিক আক্রমণ করে বন্ধ করে দেবে ভাবলে বড় ধরনের ভুল করছে তৃণমূল কংগ্রেস। কিষান সভাসহ গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি এই হিংসাত্মক আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে বলে জানিয়েছে। 


সিপিএম ও কংগ্রেস যৌথ ভাবে বাংলার উন্নয়ণকে বাধা দিচ্ছে। রাজ্য জুরে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা তৈরী করছে সিপিএম। বামনঘাটায় বাম সমর্থকদের উপর গুলি চালানো ও বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনার পর সাংবাদিক বৈঠকে একথাই জানালেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি আরও বলেছেন, রাজ্য জুরে শুধু রাজনৈতিক দলগুলিই নয়, বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমও ছবি দেখিয়ে রাজ্যে জুরে বিশৃঙ্খলা ছড়াচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিতর্কিত ও অভিযুক্ত আরাবুলের পাশে থেকে এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, সিপিএমের অস্ত্রের হামলার জেরে আরাবুলকে ভাঙড় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনায় বেশ কয়েকজন তৃণমূল কর্মী গুরুতর আহত হয়েছে। কোথা থেকে এত অস্ত্র আসছে সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যা ব্যবস্থা নেওয়ার তা পুলিশ করবেন।

এদিন বৈঠকে পাল্টা মিছিলের কর্মসূচি পালন করার আহ্বান জানালেন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আগামী ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারী পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যে ৬টা থেকে তৃণমূলের পক্ষ থেকে ধিক্কার মিছিলের কর্মসৃচি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে এখনও কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। অন্যদিকে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত হয়ে কেন্দ্রের কাছে দ্বারস্থ হয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। রাজ্যের পরিস্তিতি খতিয়ে দেখার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য । রাজ্যের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্র থেকে বিশেষ দল পাঠানোর আবেদনও জানিয়েছেন তিনি।




 রেজ্জাক মোল্লার কোমরের দুটি হারে চিড় ধরা পড়েছে। আজ সকালেই প্রবীন বিধায়কের এমআরআই করা হয়। সেই পরীক্ষায় তাঁর কোমরের হারে চিড় ধরা পড়ে। বিকেলে তাঁর সিটি স্ক্যান হওয়ার কথা। চোয়ালের হারে কোনও ধরণের চোট আছে কিনা  স্ক্যান করে পরীক্ষা করা হবে। তাঁর চিকিত্সার জন্য ছয় সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

রেজ্জাক মোল্লাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া নিয়েই গতকাল দুপুর থেকেই টানা পোড়েন চলছিল। প্রবীণ ওই বিধায়ককে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য সরকার চাপ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করে সিপিআইএম। বিকেলে রেজ্জাক মোল্লাকে দেখতে গিয়ে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, রেজ্জাক মোল্লাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন চিকিত্‍‍‍সকেরা। কিন্তু পরিবারের অনুরোধে তাঁকে হাসপাতালে রেখে দেওয়া হয়েছে। তারপর মেডিক্যাল বুলেটিনেও জানানো হয়, রেজ্জাক মোল্লার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। এই পরিস্থিতিতে আজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ নেয়, সে দিকে নজর ছিল সিপিআইএম নেতৃত্বের।


বামনঘাটার বাম কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনায় আরাবুল ইসলামের পাশেই দাঁড়ালেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, সিপিআইএম সমর্থকেরাই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে আরাবুলের ওপর। আহত হওয়ায় আরাবুলকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। সিপিআইএম রাজ্যজুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে বলে তাঁর অভিযোগ। মহাকরণে আজ আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বৈঠকে হাজির ছিলেন পুলিস-প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তারা। 

অথচ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। একইসঙ্গে মহাকরণ থেকেই তিনি ঘোষণা করলেন দলের কর্মসূচি। তিনি জানান, নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টার বিরুদ্ধে আগামী  দশ থেকে আঠোরই জানুয়ারি রাজ্যজুড়ে পথে নামবে তৃণমূল কংগ্রেস।


রাজ্যে গণতন্ত্র নেই। বামনঘাটা কাণ্ডে এই প্রতিক্রিয়া সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে আজ রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বাম প্রতিনিধিদল। সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়েছেন, রাজ্যপাল বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। ঘটনার কড়া নিন্দা করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও। কাল প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট।    

বামনঘাটা কাণ্ডে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে রাজ্যপালকে স্মারকলিপি দিল বামেরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিস সুপারের কাছে যে দাবিপত্র দেওয়া হয়েছে , তার প্রতিলিপিই রাজ্যপালের কাছে জমা দিয়েছে বাম প্রতিনিধি দল। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। 
 
ঘটনা নিয়ে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হলেও বিধানসভার স্পিকারের কাছে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও দাবি জানাবে না বামেরা। বামনঘাটার ঘটনায় রাজ্য সরকারের কড়া নিন্দা করেছেন সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত। "প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যাতে বাম কর্মী সমর্থকেরা যোগ না দিতে পারেন সেজন্য হামলা হয়েছে বামনঘাটায়।", প্রতিক্রিয়া বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর। 
 
সিপিআইএম নেতা গৌতম দেবের অভিযোগ, প্রতিবাদ সভায় যোগ দেওয়ার কথা আগাম জানা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ পুলিস-প্রশাসন। এই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট। বিকেল পাঁচটায় ধর্মতলা মোড় থেকে কলেজ স্কোয়ার পর্যন্ত মিছিলে অংশ নেবেন বাম নেতৃত্ব।


আক্রান্ত রেজ্জাক মোল্লাকে আরও অন্তত ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। আজ সকালে হাসপাতালের তরফে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁর আরও কিছু শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন চিকিত্‍‍‍সকেরা। 

রেজ্জাক মোল্লাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া নিয়েই গতকাল দুপুর থেকেই টানা পোড়েন চলছিল। প্রবীণ ওই বিধায়ককে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য সরকার চাপ সৃষ্টি করছে  বলে অভিযোগ করে সিপিআইএম। বিকেলে রেজ্জাক মোল্লাকে দেখতে গিয়ে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেন, রেজ্জাক মোল্লাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন চিকিত্‍‍‍সকেরা। কিন্তু পরিবারের অনুরোধে তাঁকে হাসপাতালে রেখে দেওয়া হয়েছে। তারপর মেডিক্যাল বুলেটিনেও জানানো হয়, রেজ্জাক মোল্লার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। এই পরিস্থিতিতে আজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ নেয়, সে দিকে নজর ছিল সিপিআইএম নেতৃত্বের। 

বেসরকারি ওই হাসপাতাল কি সরকারি চাপের কাছে নতিস্বীকার করবে? তানিয়ে তীব্র জল্পনা ছিল রাজনৈতিক মহলে। কিন্তু সকালেই চিকিত্‍‍সকেরা সিদ্ধান্ত নেন সত্তরোর্ধ্ব বিধায়ককে আরও আটচল্লিশ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রেখে আরও কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হবে।


দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডে নিগৃহীতার ঘাড়ে `আংশিক দোষ` চাপানোর পর এবার এবার সমালোচকদের `গর্জনকারী কুকুর` বললেন বাপু আসারাম। আজ ভক্তকুলের উদ্দেশে অনুশোচনাহীন আসারাম বলেন, "প্রথমে একটা কুকুর ডাকে। তার পর সব কুকুররা ডাকতে শুরু করে। হাতি যদি কুকুরের পিছনে দৌড়তে শুরু করে তাহলে হাতিরই সম্মান কমে। আমি কেন ওদের পিছনে ছুটব?" তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করার জন্য মিডিয়াকেও একহাত নেন তিনি। 

তিনি আরও বলেন এক্ষেত্রে আইন সংশোধন করে কঠিন করা হলে তার অপপ্রয়োগ ঘটবে। তিনি বলেন, "আইনের অপব্যবহারের সবথেকে বড় উদাহরণ পণপ্রথার ক্ষেত্রে দেখা যায়।"


রবিবার ভাঙড়ে আক্রান্ত সিপিএম বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লাকে দেখতে গতকাল হাসপাতালে পুস্পস্তবক হাতে গিয়েছিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজনৈতিক শত্রু শিবিরের নেতার আরোগ্য কামনা করলেও রেজ্জাকের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগে যাঁর দিকে আঙুল তুলছেন বিরোধীরা, ভাঙড়ের সেই 'মাসলম্যান' নেতা আরাবুল ইসলামের ব্যাপারে তিনি কিন্তু নীরবই ছিলেন। রেজ্জাকের ওপর হামলার অভিযোগে আজ উত্তর ২৪ পরগনার বামনঘাটায় সিপিএমের মিছিলে বোমা-বন্দুক নিয়ে হামলার পিছনেও আরাবুলকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও কার্যত এই বিতর্কিত প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়কের পাশেই দাঁড়ালেন শিল্পমন্ত্রী! সিপিএম, কংগ্রেস ও সংবাদমাধ্যমের একাংশের ঘাড়েই দোষ চাপালেন তিনি!
রাজ্যের আরও তিন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে পাশে নিয়ে পার্থবাবু ওই তিন শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করে তার বিরুদ্ধে পথে নামার দলীয় কর্মসূচী ঘোষণা করেন। বলেন, বামনঘাটায় আরাবুলের ওপর আক্রমণ শানিয়েছে সিপিএমই!। গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে আরাবুল।
রাজনৈতিক মহল পার্থবাবুর সাফাই দেওয়ার চেষ্টা সম্পর্কে যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি তুলেছে, তা হল, তিনি কী করে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ব্যাপারে রাজ্যের মূল প্রশাসনিক ভবন মহাকরণে দাঁড়িয়ে দলীয় কর্মসূচী ঘোষণা করলেন! বামনঘাটায় সিপিএমের মিছিলে হামলা চালানোর অভিযোগ যে আরাবুলের বিরুদ্ধে, তাঁকেই আড়াল করে রাজ্য মন্ত্রিসভার এই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই জানিয়ে দিলেন, আরাবুল নির্দোষ।বরং তাঁর ওপরই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে সিপিএম!।
রেজ্জাকের ওপর 'আক্রমণে'র ঘটনার পর রাজ্যের নগরোন্নয়ণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম তাঁর বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন। এদিন পার্থবাবুর সাংবাদিক বৈঠকে হাজির থাকলেও আরাবুলের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি নিয়ে অবশ্য একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি হাকিম।। শিল্পমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, সিপিএম ও কংগ্রেস এবং কয়েকটি সংবাদমাধ্যম রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এর প্রতিবাদে আগামী ১০ থেকে ১৮ জানুয়ারি রাজ্যে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬ টার পর মিছিল-সভার কর্মসূচী গ্রহণ করেছে তৃণমূল।

ভাঙড়ে গণ্ডগোলের খবর পাওয়ার পর অসুস্থ শরীর নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে মহাকরণে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী৷ মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজিকে নিয়ে বৈঠক শুরু হয় দুপুর আড়াইটে থেকে৷ বৈঠক চলে আধঘণ্টা৷ এরপর, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস ও ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী৷ দু'ঘণ্টা ধরে বৈঠক চলে৷ তারপর, মহাকরণে সাংবাদিক বৈঠক করেন শিল্পমন্ত্রী৷

বাম আমলে অভিযোগ ছিল, সরকার চলত আলিমুদ্দিন থেকে৷ এরপর, মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা বলেছিলেন, মহাকরণ রাজনীতির জায়গা নয়৷ কিন্তু, এ দিন যে ভাবে মহাকরণ থেকে শিল্পমন্ত্রী তৃণমূলের কর্মসূচি ঘোষণা করলেন, তাতে দল ও সরকার মিলে মিশে গেল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ 
পাশাপাশি, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, সিপিএমের লোকজন অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে এ কথা বলে পার্থ চট্টোপাধ্যায় পুলিশের দিকে কার্যত স্পষ্ট বার্তা দিয়ে দিলেন৷ ঠিক করে দিলেন তদন্তের অভিমুখ৷ তদন্তের আগেই কার্যত ঘোষণা করে দিলেন ফল৷ দময়ন্তী সেনের বদলির ঘটনার স্মৃতি এখনও টাটকা৷ এই পরিস্থিতিতে, পার্থর এ দিনের মন্তব্যের পর তদন্ত কী অন্য কিছু উঠে আসা সম্ভব? প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও৷  

শিল্পমন্ত্রীর গলায় এ দিন শোনা গেল আরাবুল-প্রশাংসা৷ বললেন,আরাবুল উদ্যমী ছেলে৷ রেজ্জাকের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে কি যুধিষ্ঠির হতে হবে? এ দিন মহাকরণে সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ফের তোপ দাগেন পার্থ৷ এর আগে আলিপুরে সুজনের কটাক্ষ, সরকার ভয় পেয়ে সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধেও তোপ দাগছে৷ 
অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ৷ কর্মসূচি-পাল্টা কর্মসূচি৷ ভাঙড়কাণ্ডকে কেন্দ্র করে শাসক-বিরোধী সংঘাতের জেরে রাজ্য রাজনীতির উত্তাপ সহজে কমার নয় বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল৷ 

http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/32254-2013-01-08-13-01-54



সৈয়দ নাজমুশ শান

মহাধুমধামের সঙ্গে ১২ ও ১৪ মার্চ রাজধানীতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুটি মহাসমাবেশ হয়ে গেল। এর মধ্যে সরকারি দল ও তার সমমনা ১৪ দলীয় জোটের সমাবেশটি নিয়ে কোনো ঝামেলা না হলেও তুলকালাম কা- হয়েছে বিরোধী দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে। ১২ মার্চ বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের মহাসমাবেশটি হয়েছে প্রবল উত্তাপ-উত্তেজনা এবং উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে । এই কর্মসূচি সফল করার জন্য বিএনপি ও তার সমমনাদের ব্যাপক তৎপরতা এবং সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম ঠেকাতে সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের নানামুখি কর্মকা-ের ফলে জনমনে সংঘাত-সংঘর্ষের আতঙ্ক সৃষ্টি হলেও শেষপর্যন্ত রক্তক্ষয়ী সংঘাত ছাড়াই সমাবেশটি শেষ হওয়ায় মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। 
এমনকি সমাবেশের দিনটিতে রাজধানীতে হরতালের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় জনজীবনে যে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছিল তার যন্ত্রণাও অনেকটা লাঘব হয়েছে এই ভেবে যে, শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের কোনো অঘটন বা প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। দুই দলের নেতাদের গরম গরম ভাষণ এবং হুমকি ধমকিতে পরিবেশ ছিল উত্তপ্ত। জনমনে বিরাজ করছিল আতঙ্ক। সেটার আপাতত নিরসন হয়েছে। এটাই সংঘাতের রাজনীতির অসহায় শিকার সাধারণ মানুষের জন্য স্বস্তির বিষয়।
কয়েকদিনের মধ্যে বিএনপির মহসমাশের বিপরীতে আওয়ামী লীগ ও চৌদ্দ দলের কর্মসূচি পালিত হয়েছে তিনটি। ৭ মার্চ উপলক্ষে গণশোভাযাত্রার পর ১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় মানববন্ধন। এরপর ১৪ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে ১৪ দলের মহাসমাবেশ। ১২ মার্চের সমাবেশে যেমন প্রধান বক্তা ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া, তেমনি ১৪ মার্চের সমাবেশে প্রধান ভাষণটি দিয়েছেন শেখ হাসিনা। 
কয়েকদিন ধরে সর্বত্র ১২ মার্চের মহাসমাবেশের লাভ-ক্ষতি নিয়ে নানারকম আলোচনা হচ্ছে। একইভাবে কথা হচ্ছে পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ১১ মার্চ রাজধানীতে ১৪ দলীয় জোটের দীর্ঘ মানববন্ধন এবং ১৪ মার্চের মহাসমাবেশ সম্পর্কেও। কোন সমাবেশ কত বড় হয়েছিল সে প্রসঙ্গ ছাপিয়ে উঠছে পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক কর্মসূচির সাফল্য-ব্যর্থতা। শুধু তাই নয়, বিরোধী দলের মহাসমাবেশে সরকারি দল কেন বাধা সৃষ্টি করল, কেন ছাত্রলীগের ক্যাডাররা লাঠিসোটা নিয়ে মাঠে নামলো সে প্রশ্নও উঠছে। 
এ দেশে বিরোধী দলের কর্মসূচিতে সরকার পক্ষের বাধা সৃষ্টি এবারই প্রথম নয়। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তবে এটা ঠিক একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে এমন তুলকালাম কা- সাম্প্রতিক অতীতে আর কখনো ঘটেনি। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাধার মুখেও বিপুল লোক সমাগম বিবেচনায় এই মহাসমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি একটি রাজনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে আর নৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে আওয়ামী লীগের। তবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই বড় দলের এই সাফল্য-ব্যর্থতা ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে জনগণের অন্তহীন দুর্ভোগ আর জামায়াতের নাটকীয় সাফল্য। 
১২ মার্চের সমাবেশের কারণে সবচেয়ে নাস্তানাবুদ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জনগণ। অবশ্য একমাত্র জনগণ ছাড়া সংশ্লিষ্ট সবাই সন্তুষ্ট।আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের তৃপ্তির কারণ তারা মনে করে তারা রাজপথ দখলে রাখতে পেরেছে এবং বিএনপি-জামায়াতের 'সন্ত্রাস-নৈরাজ্য' থেকে জনগণকে রক্ষা করতে পেরেছে। বিএনপি ঢাকায় একটি 'তাহরির স্কয়ার' সৃষ্টি করতে না পারায় তারা বেজায় খুশি। অপরদিকে বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের দোসররা এখন রীতিমত ফুরফুরে মেজাজে। কারণ, প্রবল বাধার মুখে তারা একটি বিশাল সমাবেশ করে ঢাকাকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। বিএনপি শিবির এখন দারুণ চাঙ্গা এবং আগামী দিনে বড় ধরনের সাফল্যের স্বপ্নে বিভোর। 
তবে, এক কথায় ১২ মার্চের সমাবেশ থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে জামায়াতে ইসলামী। সমাবেশটি হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার নামে এবং এর প্রধান উদ্যোক্তাও বিএনপি। কিন্তু লাভের ফসল প্রায় সবটুকুই উঠেছে জামায়াতের ঘরে। সাম্প্রতিককালে জামায়াত কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল, নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন ভীত-সন্ত্রস্তভাবে। বিপর্যস্ত সেই জামায়াতের নেতা-কর্মীরাই এই মহাসমাবেশের সুযোগে নেপথ্য থেকে বুক ফুলিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। 
শুধু তাই নয়, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে আটক ও বিচারাধীন জামায়াত নেতা গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদীদের প্রতিকৃতি মঞ্চের সামনে রেখে তাদের মুক্তিও দাবি করা হয়েছে। আবার প্রমাণিত হয়েছে ক্ষমতার লড়াইতে জেতার জন্য মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপিকে রাজাকার নেতাদের স্বার্থে ব্যবহৃত হতে দিতেও আপত্তি নেই বেগম জিয়ার। খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে বার বার যে অভিযোগ শেখ হাসিনা করছেন, মহাসমাবেশে জামায়াতের দাপট ও লম্ফ-ঝম্প প্রকারান্তরে সেই অভিযোগকেই জোরদার করেছে। 
১২ মার্চ মহাসমাবেশ করে বেগম জিয়া সরকারকে 'গণজোয়ারে ভাসিয়ে' নিতে পারেননি বটে; তবে সেই লক্ষ্য অর্জন, বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি আদায়ে আন্দোলন তীব্রতর করার প্রস্তুতি জোরদার করতে সক্ষম হয়েছেন। বিএনপি দাবি করেছে এই সমাবেশের মাধ্যমে মানুষ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়েছে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। 
১২ মার্চের সমাবেশে বক্তৃতাকালে খালেদা জিয়া ১০ জুনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি পুনর্বহালের জন্য তিন মাসের 'আলটিমেটাম' দিয়ে বলেছেন অন্যথায় ১১ জুন আবার সমাবেশ করে সরকার পতনের কর্মসূচি দেয়া হবে। ইতিমধ্যে মহাসমাবেশে বাধা সৃষ্টির প্রতিবাদে ২৯ জুন সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছেন তিনি। এছাড়া তিনি নামসর্বস্ব কিছু দল নিয়ে চারদলীয় জোটকে সম্পস্রারিত করার ঘোষণা দেন। 
মার্চ মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এবং যুদ্ধারপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করার দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন চৌদ্দ দল রাজধানীতে বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে ১৪ মার্চ। এই সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার আলটিমেটামের জবাব দেবেন এটাই সকলে আশা করেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা এ সম্পর্কে একটি কথাও বলেননি। তিনি বরং খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, আপনি যত চেষ্টাই করুন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে পারবেন না। তাদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই। বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, পারেননি। যুদ্ধারাধীদেরও রক্ষা করতে পারবেন না। তিনি খালেদার উদ্দেশে আরো বলেন, পেছনের দরোজা দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন ভুলে যান। আইএসআই-এর কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগের পুনরুল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত দরদ থাকলে যে দেশের (পাকিস্তান) টাকা খান সে দেশে চলে যান। 
১২ মার্চ খালেদা জিয়া যে আলটিমেটাম দেন ১৪ তারিখ শেখ হাসিনা তার ভাষণে সে সম্পর্কে কিছু না বললেও আগের দিন ১৩ মার্চ তারিখেই আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ বলেছিলেন, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করেছে। এই রায়ের ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এই দিন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংসদে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে কোনো বিকল্প প্রস্তাব থাকলে তা সংবিধানসম্মত এবং গণতান্ত্রিক হতে হবে। কোনো অনির্বাচিত সরকারকে এক সেকেন্ডের জন্যও দেশ শাসন করতে দেয়া হবে না। 
তবে শেখ হাসিনা ১৪ তারিখের সমাবেশে খালেদার আলিটিমেটামের জবাব না দিলেও পরোক্ষভাবে জবাব দিয়েছেন ১৫ মার্চ গণভবনে খুলনার আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বক্তৃতাকালে। আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে এই বক্তৃতায় তার ব্যাখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশগুলোতে যেভাবে নির্বাচন হয় বাংলাদেশেও আগামী নির্বাচন সেভাবেই হবে। এখন থেকে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক পথে চলবে। অগণতান্ত্রিক পথে বাংলাদেশ একদিনও চলবে না। 
দেশের রাজনীতির চালচিত্রের দিকে তাকালে আমরা কি দেখতে পাই? শেখ হাসিনা বলছেন, সংবিধান ও গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা। অপরদিকে খালেদা জিয়া বলছেন দেশ বাঁচানো, জনগণকে বাঁচানোর কথা। নানাভাবে যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অজুহাত তুলে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষেও কথা বলছেন। 
এদিকে অতীতে নির্বাচনের সময় কে ভারতের কাছ থেকে আর কে পাকিস্তানের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন সে অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিতর্ক বেশ জমে উঠছে। কিছুদিন আগে লন্ডনের বিখ্যাত ইকনমিস্ট পত্রিকায় একটি খবরে বলা হয়েছিল যে, ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগ ভারত থেকে বস্তা বস্তা টাকা পেয়েছে। এটা আদালত বা সরকারি কোনো সূত্রে সমর্থিত হয়নি। তারপরও বিএনপি নেতারা এই খবরটিকে ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক প্রচারণার কাজে ব্যবহার করছেন।
ইতিমধ্যে সমপ্রতি দুবাইয়ের খালিজ টাইমস পত্রিকার খবরে বলা হয় যে, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময় পাকিস্তানের আইএসআই বাংলাদেশের বিএনপিকে ৫০ কোটি রুপি দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় একাধিকবার এ বিষয়টি উল্লেখ করেন এবং গত ১৪ মার্চ খালেদার উদ্দেশে বলেন, যাদের টাকা খান সেই দেশে চলে যান। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম বিএনপির টাকা নেওয়ার খবরের তীব্র প্রতিবাদ করে এই অভিযোগ প্রমাণের জন্য শেখ হাসিনাকে চ্যালেঞ্জ করেন। 
ইতিমধ্যে গত বৃহস্পতিবার লন্ডনের ডেইলি মেইল পত্রিকার অনলাইনে প্রকাশিত খবরের উদ্ধতি দিয়ে শনিবার ঢাকার বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের বলা হয় : '১৯৯১ সালে বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে বিএনপিকে ৫০ কোটি রুপি দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর সাবেক প্রধান আসাদ দুররানি। গত বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের সুিপ্রম কোর্টে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে আইএসআই-এর অর্থ প্রদান সম্পর্কে এয়ারমার্শাল আসগর খানের দায়ের করা এক রিটের শুনানিকালে দুররানি একথা স্বীকার করেন। এরপর আর কোনো মন্তব্য করা বোধ হয় নিষপ্রয়োজন।
আসলে দুই নেত্রীর মধ্যে চলছে ক্ষমতার লড়াই। আর এই লড়াই ও অন্তহীন রেষারেষিতে লিপ্ত দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার আশা ছাপিয়ে প্রবল হয়ে উঠছে রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা। দুই নেত্রীর সর্বশেষ বক্তৃতায়ও আশার আশ্বাসের বদলে আশঙ্কার সংকেতই বেশি স্পষ্ট। 
রাজনৈতিক সমঝোতার প্রশ্নে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয়ের ওপরই আস্থা রাখা কঠিন। তারপরও মানুষ বিশ্বাস করতে চায় যে দুই দলই সংঘাত এড়াতে চায় এবং সংকটের সমাধান চায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের কথাবার্তা থেকে এটা স্পষ্ট যে তারা সংকটের সমাধান চান; কিন্তু অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে রাজি নন। আবার বিএনপিও অবশ্যই সংকটের সমাধান চায়, তবে তা নিজের শর্তে। অর্থাৎ দৃশ্যতঃ দুই পক্ষেরই দাবি : আপস-মীমাংসা চাই, তবে তালগাছটা আমার।
এভাবে সমঝোতা, সমাধান হয় না। তাই অচলাবস্থা থেকেই যাচ্ছে। এই অচলাবস্থা ভাঙার জন্য জনগণের মধ্য থেকে চাপ বাড়ছে, চাপ আছে কূটনীতিকদের কাছ থেকেও। নিজেদের সদিচ্ছায় না হোক, ঘরে-বাইরে ক্রমবর্ধমান এই চাপের কারণে হলেও দুই পক্ষকে এক সময় জেদাজেদি ছেড়ে আলোচনা ও সমঝোতার পথ ধরতেই হবে। এমন আশা প্রায় দুরাশার শামিল। তবুও আশাবাদী জনগণ এখনো হাল ছাড়তে চায় না। কারণ, আশাই তো মানুষের শেষ ভরসা।

http://www.dainikdestiny.com/index.php?view=details&type=main&cat_id=1&menu_id=54&pub_no=133&news_type_id=1&index=2&archiev=yes&arch_date=19-03-2012


আরাবুলী সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক মুখ্যমন্ত্রী নিজেই

নিজস্ব প্রতিনিধি

ভাঙড়, ৭ই জানুয়ারি - পাড়ার 'দাদা' থেকে ত্রাসে পরিণত হওয়ার প্রতিটি অধ্যায়ের নিখুঁত বিবরণ জমা আছে কালীঘাট থেকে বাইপাসের ধারে তৃণমূল ভবনে। লিখিত সেই বিবরণের (অভিযোগ পত্র) সংখ্যা ইতোমধ্যেই দুই অঙ্ক ছাড়িয়েছে। হাতিশালা থেকে বামুনঘাটা, বেঁওতা থেকে গাজীপুর—ভাঙড়ের সাধারণ মানুষজন জানেন বাহুবলী আরাবুলের প্রাণশক্তি বরাবরই তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।

তৃণমূলের এই নেতা ২০০৬-এ বিধায়ক হয়। বেসরকারী সংস্থার হয়ে জমি দখলে 'হাত পাকানো' আরাবুল ততদিনে পেশায় রীতিমতো দক্ষ হয়ে উঠেছিল। ভাঙড়-২ নম্বর ব্লকের তিন বিঘা শালি জমি গায়ের জোরেই দখল নিয়েছিল আরাবুল ইসলাম। নওয়াবাদ গ্রামের গরিব কৃষকের ক্ষমতা ছিলো না বাধা দেওয়ার। তাই অনেক আশা নিয়েই নেতাজী ইন্ডোরে এসে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন নাম জানাতে ভয় পাওয়া নওয়াবাদের সেই গরিব কৃষক। ২০১১ সালের ৩০শে জুলাই। ভেবেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী হয়তো তাঁর হাতছাড়া হওয়া জমি ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। দু-মাস পরে, ২৫শে সেপ্টেম্বর সেই দখল করা কৃষি জমিতেই পুলিসের পাশে বসেই খোশমেজাজে আড্ডায় ব্যস্ত আরাবুলকে দেখে সেই ভুল ভেঙে গেছে তাঁর।

নওয়াবাদ থেকে বেঁওতা, একাধিক ঠিকানায় একাধিক চিঠি, একাধিক অভিযোগপত্র গেছে কখনো মহাকরণে, কখনো তৃণমূল ভবনে। ত্রাস হয়ে ওঠা আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধেই। মমতা ব্যানার্জি চান না, অপছন্দ করেন, অথচ আরাবুল ইসলাম প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে জমি দালালি থেকে বেসরকারী সংস্থার হয়ে গরিব কৃষকের জমি দখলে হুমকি দিচ্ছে, মারধর করছে, তোলা তুলছে— কট্টর তৃণমূলী সমর্থককেও এটা বোঝানো কষ্টকর।

বেসরকারী সংস্থার হয়ে জমি যোগাড় করবে না সরকার- মমতা ব্যানার্জির নাকি ঘোষিত নীতি। মমতা ব্যানার্জির মহাকরণে প্রবেশের অনেক আগেই ২০০৮সালের শেষদিকে বেসরকারী সংস্থার দুটি প্রকল্পে জন্য জমি আদায়ে আরাবুলের ভয়ঙ্কর চেহারা দেখেছিলেন ভাঙড়বাসী। জমি দিতে অনিচ্ছুক এক যুবককে শাসানি দেওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই সেই যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল ভাঙড়ে। ৩০২ধারায় মামলা দায়ের হয়েছিল কীর্তিমান আরাবুলের বিরুদ্ধে। ততদিনে নন্দীগ্রাম কাণ্ড ঘটে গেছে। এরপরেও জোর করে জমি দখলে তাঁর স্নেহধন্যের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ। নির্বিকার মমতা ব্যানার্জি ফের ২০১১ সালে প্রার্থী করে দিয়েছিলেন আরাবুল ইসলামকে। বেদিক ভিলেজের কাণ্ড জানে গোটা রাজ্যবাসী। বেসরকারী সংস্থার হয়ে জমি দখল করছে আরাবুল, খুদে। খাস ভাঙড়েই তৃণমূল কর্মী আজিজুল বৈদ্যকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে এই বাহিনীরই নাম। আজিজুল বৈদ্যের পরিবারের সদস্যরাও জানিয়েছিলেন দলীয় কোন্দলের পরিনাম এই ঘটনা। খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মী মিয়াজান খান সেদিন জানিয়েছিল মাটির জন্য সাড়ে ৪লক্ষ টাকা দিয়েছিল আজিজুল বৈদ্য। সেই টাকার মধ্যে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা পেয়েছিল মিয়াজান ও মোমিন খান। বাকি টাকা খুদে ও আরাবুল ভাগ করে নিয়েছে। খুদের নির্দেশমতো ওই যুবককে চরম শিক্ষা দিতেই পেটানো হয়েছে বলে সে পুলিসের কাছে স্বীকার করেছে বলে জানা গিয়েছিল পুলিসের সূত্রেই। পুলিস কী ব্যবস্থা নিয়েছিল? সততার প্রতীক মমতা ব্যানার্জিই বা কী ব্যবস্থা নিয়েছিলেন বেপরোয়া আরাবুলকে ঠেকাতে?

২০০৬ সালে কলকাতা লেদার কমপ্লেক্স থানার ওসির মাথা ফাটিয়ে দিয়ে ৪০ দিন জেল হেফাজতে ছিল এই গুণধর তৃণমূল নেতা। নির্বাচন কমিশনে তাঁর জমা দেওয়া হলফনামা জানাচ্ছে, তাঁর বিরুদ্ধে আটটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ৩০৭ধারার মত খুনের চেষ্টার ধারাও । ২০০৬ সালে বিধানভা নির্বাচনের সময় হলফনামায় সম্পত্তি তিন লক্ষ টাকার। মাত্র পাঁচ বছর পরেই গত বিধানসভা নির্বাচনে যে হলফনামা জমা দিয়েছে তাতে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে প্রায় ৯২লক্ষ টাকা! মাত্র পাঁচ বছরেই এই বিপুল সম্পত্তির উৎস কী, তা জানেন ভাঙড়ের মানুষজন। জানে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বও। তৃণমূলের জমি নীতির মুখ এই আরাবুল। যেখানে বেসরকারী সংস্থা নিজেই জমি কিনবে আর সেই কেনায় বেসরকারী সংস্থাকে 'সাহায্য' করবে আরাবুলের মত নেতারা। কৃষকের দরকষাকষির ক্ষমতা সেখানে থাকে না। ভাড়াটে বাহিনী দিয়ে জমি দখল করা হয় বেসরকারী সংস্থার জন্য। আর খুশি হয়ে সেই বেসরকারী সংস্থা পুষিয়ে দেবে গরিব কৃষক উচ্ছেদ করা বাহিনীকে। এই বোঝাপড়ারই নির্মম উদাহরণ বেদিক ভিলেজ কাণ্ড। 

আরাবুলের কাজকে প্রকাশ্যেও মদত যুগিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। গোটা রাজ্য জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হলেও মহাকরণে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী ভাঙড় কলেজের অধ্যাপিকাকে জলের জগ ছুঁড়ে মারার ঘটনাকেও বৈধতা দিয়েছিলেন। রেজ্জাক মোল্লার ওপরে আক্রমণের কিছুক্ষণ পরেই তাঁর বিশ্বস্ত মন্ত্রীকে দিয়ে সাফাই দিয়েছেন হামলার। 

রেজ্জাক মোল্লার ওপর হামলার ঘটনায় এফ আই আর তালিকায় মূল অভিযুক্ত আরাবুল ইসলাম। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে রবিবার সকালেই এই হামলার ঘটনায় সরাসরি যুক্ত ছিল সামাদ মোল্লা, জুলফিকার আলি মোল্লা, সত্যজিত মণ্ডল, ভাসা, প্রদীপের মত আরাবুল ঘনিষ্ঠরা। এদের পরিচয় কী? কাশীপুর থানার ভগবানপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পশ্চিম সাঁতুলিয়া গ্রামের গৃহবধূর ওপর শ্লীলতাহানির ঘটনায় মূল অভিযুক্ত। সামান্য খেতের কাজ থেকে আজ কোটিপতি, বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ির মালিক। বেঁওতা- ২নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলী প্রধানের স্বামী জুলফিকার আলি মোল্লা। একাধিক অভিযোগ পুলিসের খাতায়। বেঁওতা গ্রামের তৃণমূল নেতা সত্যজিত মণ্ডলের হুমকি, সন্ত্রাসের জেরে এখনও এই গ্রামের ৭০জন সি পি আই(এম) সমর্থক ঘরছাড়া। দিনের যে কোন সময় গেলে প্রকাশ্যে সশস্ত্র অবস্থাতেই দেখা যায় এই তৃণমূলী মাতব্বরকে। কোথায় প্রশাসন? শুধুমাত্র ভাঙড়-২নম্বর ব্লকেই সি পি আই(এম)-র ১০টি কার্যালয় বন্ধ। 

অভিযোগ তোলা হচ্ছে 'বহিরাগত' হিসাবে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন রেজ্জাক মোল্লা। রেজ্জাক মোল্লা ক্যানিং পূর্ব-২ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক। ঘটনাস্থলও তাঁর নিজের বিধানসভা এলাকার মধ্যে। তৃণমূলের পুড়িয়ে দেওয়া পার্টি অফিস দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। চওড়া পিচ রাস্তার একদিকে তৃণমূলের 'চার হাজার লোক'। পিচ রাস্তার উল্টোদিকে বেশ কিছুটা দূরের খালপাড়ের ধারে পোড়া পার্টি অফিস দেখতে যাওয়া মানে প্ররোচনা ছড়ানো? হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে রেজ্জাক মোল্লা নিজে জানিয়েছেন, দূর থেকে ছুটে এসে আরাবুলই তাঁকে প্রথম মুখে ঘুষি মারেন। প্রবীণ বিধায়কের ওপর হামলার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হলেও এখনও তিনি অধরা! মনীষীর জন্মদিন থেকে ছট পুজো-সব কিছুতেই ফেসবুকে মন্তব্য লিখলেও একটিবারের জন্যও কেন এই ঘটনায় মুখ খুললেন না মুখ্যমন্ত্রী!

এই নীরবতাই আরাবুলের শক্তি। আর আরাবুলের শক্তি মানে নিউটাউন থেকে রাজারহাট, ভাঙড় জুড়ে জমি দালালির রমরমা, পাট্টা হাতছাড়া হওয়া কৃষকের সংখ্যা বাড়তে থাকা। মুখ্যমন্ত্রীর এই নীরবতা ভাঙড়ের উদ্বেগ আরও বাড়াচ্ছে।

http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=34369


রক্তিম তরঙ্গ
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ২৩তম সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশ, ১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২, ব্রিগেড ময়দান
ছবির সংখ্যা: 61
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ২৩তম সম্মেলন
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ২৩তম সম্মেলন ১৫-১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ জ্যোতি বসু নগর || হরকিষাণ সিং সুরজিৎ মঞ্চ
ছবির সংখ্যা: 28
অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গড়ার লক্ষ্যে 
অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গড়ার লক্ষ্যে এলাকায় এলাকায় প্রচার অভিযান
ছবির সংখ্যা: 180
প্রতিরোধে শ্রমজীবীরা
নয়াদিল্লি, ২৩শে ফেব্রুয়ারি- আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লক্ষ শ্রমজীবী মানুষের প্রতিবাদী মিছিলে বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নের পাশাপাশি শামিল হয়েছিল আই এন টি ইউ সি-ও।
ছবির সংখ্যা: 32
ব্রিগেডে জনজোয়ার
হৃদয়ের উত্তাপে প্রতিরোধের বসন্ত। শহীদের নাম সযত্নে বুকে জড়িয়ে রাখা আট স্তম্ভের ওপরের মঞ্চ থেকেই উচ্চারিত হলো পশ্চিমবঙ্গে অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার গঠনের শপথ।
ছবির সংখ্যা: 46
শুধু এগিয়ে চলা
বিধান নগর গভরমেন্ট কলেজে এস এফ আই-র জয়ের পর উচ্ছ্বাস।
ছবির সংখ্যা: 21
পথে নেমেই প্রতিবাদ
সন্ত্রাস-কবলিত জঙ্গীপুরের সেকেণ্ডা থেকে গিরিয়ার পথে জনস্রোত।
ছবির সংখ্যা: 23
প্রতিরোধের সমাবেশ
জনসমুদ্র : ৮ই, জানুয়ারি ২০১১রবিবার সিঙ্গুরে বামফ্রন্টের ডাকে সমাবেশের একাংশ।
ছবির সংখ্যা: 17

রেজ্জাক মোল্লাকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমন। আজ বেলা ১১টা নাগাদ মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে আহত বিধায়কের সঙ্গে দেখা করেন সুমন।

http://zeenews.india.com/bengali/videos/kabir-suman-met-senior-cipm-mla-at-hospital_1868.html



বামনঘাটায় বামেদের উপর গুলি, আহাত ২৭

ইতিমধ্যে 

ফের অগ্নিগর্ভ ভাঙড়। এবার বামনঘাটায়। গুলি, বোমা, বাসে আগুন, ভাঙচুর। সিপিআইএম নেতাদের অভিযোগ, আলিপুরে বিক্ষোভ সভায় আসার পথে তাঁদের সমর্থক বোঝাই বাসগুলির উপর হামলা চালায় আরাবুল ইসলামের নেতৃত্বে তৃণমূল কর্মীরা। হামলায় অন্তত ৬ জন সিপিআইএম সমর্থক গুলিবিদ্ধ। জখম আরও বেশ কয়েকজন। আগুন দেওয়া হয় ১২টি বাসে। ভাঙচুর হয়েছে আরও বেশ কয়েকটি বাস।

ভাঙড়ের কাঁটাতলা। গত শনিবার ওই অঞ্চলেই আক্রান্ত হয়েছিলেন সিপিআইএম বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা। মঙ্গলবার এই কাঁটাতলার সামনে বাম সমর্থকদের মিছিল পৌঁছতেই প্রথম খবর আসে, বামনঘাটায় জমায়েত করেছে তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকরা। আলিপুরে রেজ্জাক মোল্লার ওপর হামলার প্রতিবাদে দলের বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন তাঁরা। তৃণমূলের জমায়েত শুনে তাঁরা থমকে যান। কিন্তু পুলিসের আশ্বাস মেলায় ফের এগিয়ে যান তাঁরা। কিন্তু গাড়ির সারি কিছুদুর এগোতে আচমকা খবর আসে মিছিলের পিছন দিকে হামলা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, পিছন থেকে সিপিআইএমের মিছিলে ইটবৃষ্টি শুরু হয়। বাঁশ দিয়ে গাড়ি ভাঙচুর চলে। রাস্তায় ফেলে বহু বাম কর্মী সমর্থককে মারধর করা হয়। চালানো হয় গুলি, ব্যাপক বোমাবাজিও হয়েছে। প্রাণভয়ে অনেকে পালিয়ে যান। পরপর দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

অভিযোগ, রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা তৃণমূল কর্মীরাই হামলা করে। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন আরাবুল ইসলাম। আরাবুল ও তাঁর সঙ্গী গুলি চালিয়েছে বলেও অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শীদের।

হামলার খবর পেয়ে এলাকায় বাড়তি পুলিস পাঠানো হয়। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ ছিল যে পুলিস এবং দমকল বহুক্ষণ ঢুকতে পারেনি। কিন্তু এলাকায় পুলিস, কমব্যাট ফোর্সের উপস্থিতি সত্ত্বেও আতঙ্ক ছিল।

আহতদের মধ্যে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন। অভিযোগ, পুলিস থাকলেও সাহায্য পাননি মেলেনি। নিজেদের উদ্যোগে সমর্থকদের গাড়িতে আহতদের নিয়ে তাঁরা রওনা দেন কলকাতায়। তাদের নিয়ে আসা হয় ই এম বাইপাস সংলগ্ন বেসরকারি হাসপাতালে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় আহতরা সেখানে চিকিত্‍সাধীন



তৃণমূল কংগ্রেসের পাল্টা দাবি, হামলায় তাঁদের কয়েকজন সমর্থক আহত হয়েছেন। সিপিআইএমের অভিযোগ, সমর্থকদের বিক্ষোভ সমাবেশে যাওয়া আটকাতেই পরিকল্পনা মাফিক এই হামলা চালানো হয়েছে।


এবার 'অসুস্থ' আরাবুল নার্সিংহোমে


দু'দিনের মধ্যে ফের অগ্নিগর্ভ ভাঙড়৷ আরাবুল ইসলাম আমাদের ক্যামেরার সামনে বসে অভিযোগ করলেন, তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে  সিপিএম কর্মী-সমর্থকরা৷ বাইটও দিলেন তিনি৷ আরাবুল যে গুলি চালানোর ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন, স্থানীয় সূত্রে খবর, দুপুর বারোটা নাগাদ এই ঘটনা ঘটেছে৷ আর দুপুর ২টো পাঁচ নাগাদ টিভি ক্যামেরার সামনে বসে সেই হামলার বিবরণ দিলেন আরাবুল৷ দাবি করলেন, তাঁর চোট লেগেছে৷


আর এই বক্তব্যেরও প্রায় পৌনে দু'ঘণ্টা পর বিকেল পৌনে চারটেয় শহরের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি হন আরাবুল ইসলাম৷ 
কিন্তু, এখানেই ধাক্কা খায় ফিরহাদ হাকিমের 'সরকারি বনাম বেসরকারি হাসতাপালের' তত্ত্ব৷ রেজ্জাক মোল্লার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নিয়ে কটাক্ষ করে ফিরহাদ হাকিমই তো ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, যে সিপিএম বিধায়ক নাটক করতেই সরকারি হাসপাতালে না গিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন৷
তাহলে, এখন আরাবুল কেন নার্সিংহোমে ভর্তি হলেন? তাহলে তিনি ও কি নাটক করছেন৷ এই প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে৷
বিমান বসু সরাসরি অভিযোগ করেছেন, আরাবুলের কিচ্ছু হয়নি৷ আর বিমান বসুর অভিযোগে সিলমোহর দিয়েছেন ওই বেসরকারি নার্সিংহোমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর৷ বলেছেন, শরীরের বাইরে কোনও আঘাত নেই আরাবুলের৷।
দু'দিন আগে রেজ্জাক যখন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, সেসময় আরাবুল অভিযোগ করেছিলেন, রেজ্জাক নাটক করছেন৷ দু'দিন পরে রাজনৈতিক মহল সেই কথাই বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে৷ 

http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/32257-2013-01-08-14-55-57


২৪ ঘণ্টা আগে যাঁকে সুস্থ বলে জানিয়েছিলেন চিকিত্সকেরা৷ ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই সেই রেজ্জাক মোল্লারই মেরুদণ্ডের হাড়ে চিড় ধরা পড়ল৷ আর এই খবরই উস্কে দিল নয়া প্রশ্ন৷


সোমবার বেসরকারি হাসপাতালটির তরফে জানানো হয়, রেজ্জাক মোল্লা সুস্থ৷ তাঁকে ছেড়ে দেওয়া যেতেই পারে৷ 
হাসপাতালের দাবির ভিত্তিতে আরও তীব্র হয় শাসকদলের কটাক্ষ৷ বলা হয়, নাটক করছেন রেজ্জাক৷ কিন্তু, ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই পরিবর্তন৷ মঙ্গলবার হাসপাতালের মেডিক্যাল অপরেশন্স-এর জেনারেল ম্যানেজার বলেন, রেজ্জাক মোল্লার মেরুদণ্ডের এল-ওয়ান হাড়ে চিড় ধরেছে৷ তাঁকে আপাতত হাসপাতাল থেকে ছাড়া হচ্ছে না৷ 
তাহলে ২৪ ঘণ্টা আগে কীভাবে রেজ্জাককে ছাড়ার কথা বলল হাসপাতাল? 
আহত সিপিএম বিধায়কের চিকিত্সার দায়িত্বে থাকা ৩ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডে আরও ৩ চিকিত্সককে রাখা হয়েছে৷ এদিকে এদিনও, রেজ্জাককে ঘিরে হাসপাতাল চত্বরে ফের দেখা গেল রাজনৈতিক সৌজন্যের ছবি৷ রেজ্জাককে দেখতে হাসপাতালে আসে এসইউসি নেতৃত্ব৷ এছাড়াও, এদিন হাসপাতালে আসেন শ্যামল চক্রবর্তী ও সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়৷  
আহত রেজ্জাক মোল্লার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ফিরহাদ হাকিম৷ মঙ্গলবার তাঁর দলের নেতা আরাবুল ইসলাম ভর্তি হলেন একটি বেসরকারি হাসপাতালেই৷ ফলে, প্রশ্ন উঠছে, বিরোধী দলের নেতাদের ক্ষেত্রে যে তত্ত্বের কথা বলেন ফিরহাদ, সেই তত্ত্ব কি তবে তাঁর দলের নেতাদের ক্ষেত্রে খাটবে না? 

http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/32256-2013-01-08-14-41-16


ভাঙড়ে আক্রান্ত সিপিএম সমর্থকেরা, অভিযোগ আরাবুলের বিরুদ্ধে
এই সময়: এবার আগুন জ্বলল ভাঙড়ে। কাঠগড়ায় সেই আরাবুল ইসলাম। উঠল সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের দিকে গুলি চালানোর অভিযোগ।

রেজ্জাক মোল্লার উপর আক্রমণের পর থেকেই পারদ চড়ছিল। মঙ্গলবার তা চরম আকার ধারণ করে। অভিযোগ, কলকাতায় বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিতে আসার সময় বামফ্রন্ট কর্মী-সমর্থকদের গাড়ির উপর হামলা চালায় তৃণমূল কংগ্রেস। গাড়ি লক্ষ করে চালানো হয় গুলি, ছোড়া হয় বোমা। এর পর বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সিপিএম নেতাদের দাবি, তাঁদের অন্তত পাঁচ জন কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত বেশ কয়েকজন। অনেকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আহতদের বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁচ্ছেন সিপিএম নেতা তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সম্পাদক গৌতম দেব।

সুজন চক্রবর্তী, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, সাত্তার মোল্লাদের দাবি, আরাবুল ইসলাম সামনে দাঁড়িয়ে থেকে এই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন। সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের গাড়ি লক্ষ করে তিনিই গুলি চালিয়েছেন। যদিও পাল্টা দাবি করে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে, সিপিএমের কর্মীরাই গুলি চালিয়েছেন। গুলি লেগেছে আরাবুল ইসলামের পায়ে। তাঁকে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আগামীকাল অর্থাত্‍ বুধবার পাল্টা মিছিলের কর্মসূচি করবেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল সমর্থকেরা। এদিন বামনহাটায় মুকুল রায় জনসভা করবেন বলে জানা গিয়েছে। ঘটনার জেরে মহাকরণে জরুরী বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে থাকবেন স্বরাষ্ট্রসচিব।

সিপিএম নেতারা বলছেন, আরাবুলের নেতৃত্বেই এদিন রাস্তা আটকে দাঁড়ান তৃণমূল কর্মীরা। গাড়ি থামিয়ে চলে দেদার আক্রমণ। গুলি চালানোর পাশাপাশি চলে বোমাবাজি এবং ইটবৃষ্টি। পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ সিপিএমের। বামনঘাটায় তৃণমূলের এহেন হিংসাত্মক আচরণের প্রতিবাদে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের নেতৃত্বে বামেরা আজ রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি জমা দেবেন ।

এদিকে, আরাবুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বামেদের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও তাঁকে গ্রেপ্তার না-করায়, বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে বামেরা। বালিগঞ্জ থেকে মিছিল শুরু হয়েছে। শেষ হবে আলিপুরে এসপি-র অফিসের সামনে। রয়েছে অবস্থান বিক্ষোভ ও ঘেরাও কর্মসূচি। মিছিলের নেতৃত্বে রয়েছেন সূর্যকান্ত মিশ্র, রবীন দেব, সুজন চক্রবর্তীর মতো নেতারা। পুলিশের নির্দেশে মিছিলের গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। রাসবিহারী হয়ে হাজরা দিয়ে আলিপুরের পরিবর্তে মিছিল যায় চেতলা দিয়ে।


ফের আরাবুলের তাণ্ডব বামেদের ওপর, প্রতিক্রিয়া কান্তি গাঙ্গুলির

http://zeenews.india.com/bengali/videos/kanti-gangulys-reax_1876.html


বামনঘাটায় বামেদের উপর গুলি, সাফাই পার্থর

http://zeenews.india.com/bengali/videos/partha-reax_1879.html



সমাবেশে আসার পথে বাম সমর্থকদের গাড়িতে আগুন

http://zeenews.india.com/bengali/videos/tmc-goons-put-on-fire_1875.html



আবার শিরোনামে আরাবুল ইসলাম। তাঁর নেতৃত্বেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল দক্ষিণ ২৪পরগনার বামনঘাটা। বালিগঞ্জে বিক্ষোভ সভায় যোগ দিতে আসার সময় গুলি চলল বাম সমর্থকদের বাসে। ভাঙচুর হয়েছে বেশ কয়েকটি বাস।

http://zeenews.india.com/bengali/videos/bamanghata-clash_1872.html


আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার ওপর আক্রমণে অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়ক আরাবুল ইসলামের সমালোচনা করে কবীর সুমন বলেন, "গণ আন্দোলনের ওরা কী জানে?"

http://zeenews.india.com/bengali/videos/kabir-suman-byte_1869.html

রেজ্জাক মোল্লাকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমন। আজ বেলা ১১টা নাগাদ মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে আহত বিধায়কের সঙ্গে দেখা করেন সুমন।

http://zeenews.india.com/bengali/videos/kabir-suman-met-senior-cipm-mla-at-hospital_1868.html


আরাবুল বহাল তবিয়তে

http://zeenews.india.com/bengali/videos/arabul-islam-in-meeting-bhangar_1870.html

ভাঙড়ে আক্রান্ত রেজ্জাক মোল্লা, ভর্তি হাসপাতালে, হামলা চালানো হয় তাঁর গাড়িতে

http://zeenews.india.com/bengali/videos/attack-on-rejjak-molla_1866.html


রেজ্জাক মোল্লার উপর হামলার ৪৮ঘণ্টা পেরতে না পেরতেই ফের রণক্ষেত্র ভাঙড়৷ রেজ্জাক-নিগ্রহের প্রতিবাদে বামেদের মিছিলে বোমা, গুলি নিয়ে হামলার অভিযোগ বামনঘাটাতে৷ কাঠগড়ায় সেই তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম৷ 
মঙ্গলবার বেলা ১২টা৷ বালিগঞ্জ থেকে আলিপুর পর্যন্ত বামেদের মিছিলে যোগ দিতে ভাঙড়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে কলকাতার দিকে আসছিলেন দলীয় কর্মী-সমর্থকরা৷ অভিযোগ, সেই সময়েই ভাঙড়ের বামনঘাটাতে বাম কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা চালায় তৃণমূল৷ অভিযোগ, বোমাবাজি করে প্রায় ৪০টি গাড়িতে ভাঙচুর চালায় তৃণমূল সমর্থকরা৷ আগুন দেওয়া হয় ১২-১৪টি গাড়িতে৷
ভাঙড়ের সিপিএম নেতা সাত্তার মোল্লার অভিযোগ, রিভলভার নিয়ে হামলা চালান খোদ আরাবুল ইসলাম৷ দাবি, গুলিবিদ্ধ ৩ সিপিএম কর্মী৷

সিপিএমের দাবি, আহতদের মধ্যে ২ জনকে মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ অন্যদিকে, সিপিএমের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার অভিযোগ তুলেছেন আরাবুল ইসলাম৷ তাঁর অভিযোগ, সিপিএম নেতা সাত্তার মোল্লার নেতৃত্বে তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়৷ চোট পান তিনি৷ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে বামেরা৷ 
পাল্টা অভিযোগই শুধু নয়, বুধবার ভাঙড়ে পাল্টা মিছিল করার ডাক দিয়েছে তৃণমূল৷ মুকুল রায়ের নেতৃত্বে মিছিলে পা মেলাবেন স্থানীয় দলীয় কর্মী-সমর্থকরা৷ অন্যদিকে, বুধবার রাজ্যজুড়ে বামেদের ধিক্কার দিবস৷ বিকেল ৫টায় লেনিন সরণি থেকে প্রতিবাদ মিছিল৷ বামেদের হুমকি, আরাবুল গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত চলবে বিক্ষোভ, সমাবেশ৷

http://abpananda.newsbullet.in/kolkata/59-more/32249-2013-01-08-07-52-24

সোমবার দিল্লি গর্ণধর্ষণকাণ্ড নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ান ধর্মগুরু আসারাম বাপু। স্বঘোষিত এই ধর্মগুরুর দাবি করেন, অভিযুক্তদের সঙ্গে সঙ্গে নির্যাতিতা তরুণীও এই ঘটনার জন্য সমান দায়ি। আসারামের মত ছিল, অভিযুক্তদের ভাই সম্বোধন করে যদি তরুণী তাদের কাছে রেহাই ভিক্ষা করা উচিত ছিল। তারঁ মতে সেক্ষেত্রে হয়ত এতবড় বিপর্যয় এড়ানো যেত। দিল্লি গণধর্ষণকাণ্ড নিয়ে গোটা দেশ যখন প্রতিবাদ উত্তাল সেসময় আসারামের এই মন্তব্যে সব মহলই ক্ষুব্ধ।


রাজ্যে গণতন্ত্র নেই। বামনঘাটা কাণ্ডে এই প্রতিক্রিয়া সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে আজ রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বাম প্রতিনিধিদল। সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়েছেন, রাজ্যপাল বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। ঘটনার কড়া নিন্দা করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুও। কাল প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট।    

বামনঘাটা কাণ্ডে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে রাজ্যপালকে স্মারকলিপি দিল বামেরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিস সুপারের কাছে যে দাবিপত্র দেওয়া হয়েছে , তার প্রতিলিপিই রাজ্যপালের কাছে জমা দিয়েছে বাম প্রতিনিধি দল। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। 
 
ঘটনা নিয়ে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হলেও বিধানসভার স্পিকারের কাছে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও দাবি জানাবে না বামেরা। বামনঘাটার ঘটনায় রাজ্য সরকারের কড়া নিন্দা করেছেন সিপিআইএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত। "প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যাতে বাম কর্মী সমর্থকেরা যোগ না দিতে পারেন সেজন্য হামলা হয়েছে বামনঘাটায়।", প্রতিক্রিয়া বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর। 
 
সিপিআইএম নেতা গৌতম দেবের অভিযোগ, প্রতিবাদ সভায় যোগ দেওয়ার কথা আগাম জানা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ পুলিস-প্রশাসন। এই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট। বিকেল পাঁচটায় ধর্মতলা মোড় থেকে কলেজ স্কোয়ার পর্যন্ত মিছিলে অংশ নেবেন বাম নেতৃত্ব।


আক্রান্ত রেজ্জাক মোল্লা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে নাটক করছেন। রবিবারই এই মন্তব্য করেছিলেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কিন্তু এই প্রথম নয়। পার্কস্ট্রিট ও কাটোয়া ধর্ষণকাণ্ড, বর্ধমানে প্রদীপ তা, কমল গায়েন হত্যাকাণ্ড থেকে বর্ধমানের জেলা সভাধিপতির ওপর আক্রমণ--সব ক্ষেত্রেই এই ধরনের বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা। আক্রান্তদের ওপরই ঘটনার দায় চাপানোর চেষ্টা করেছেন তাঁরা। 

বিধানসভা ভোটের পর থেকেই বার বার আক্রান্ত হয়েছেন বিরোধীরা। কিন্তু এইসব ঘটনাকেই লঘু করে দেখানোর মরিয়া চেষ্টা করছে সরকার। কোথাও তাঁদের বক্তব্য ছোট ঘটনা। আবার কোথাও ঘটনাটির দায় চাপিয়ে দিয়েছেন বিরোধীদের ওপরই। শুধু বিরোধীরাই নন, পার্কস্ট্রিট ও কাটোয়া ধর্ষণকাণ্ডের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

পার্কস্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ডকে সাজানো ঘটনা বলে মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর পুলিস কমিশনারের বক্তব্য ছিল ষড়যন্ত্র করে সরকারের বিরুদ্ধে কুংসা ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। পার্কস্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ডকে সাজানো ঘটনা বলে মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আর পুলিস কমিশনারের বক্তব্য ছিল ষড়যন্ত্র করে সরকারের বিরুদ্ধে কুংসা ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।  

কাটোয়া ধর্ষণকাণ্ডে নির্যাতিতা মহিলার স্বামী সিপিআইএম কর্মী বলে বিরূপ মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।  

বর্ধমানের দুই সিপিআইএম নেতা প্রদীপ তা, কমল গায়েন খুনের ঘটনাতেও বিরোধীদের ওপরই দায় চাপিয়েছিলেন শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা। সিপিআইএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই ওই দুই নেতা খুন হয়েছেন বলে তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়েছিল। 

বর্ধমানের জেলা সভাধিপতি উদয় সরকারের ওপর হামলার ঘটনাতেও একই ধারা অব্যাহত ছিল। যে নিরাপত্তারক্ষী সভাধিপতিকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, তাঁকেই গ্রেফতার করেছে পুলিস। 

রেজ্জাক মোল্লার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে প্রবীণ বিধায়ক নাটক করছেন বলে মন্তব্য করেছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। 


রবিবারই থানায় তাঁর নামে এফআইআর দায়ের হয়েছে। অথচ সোমবার প্রকাশ্যে তিনি সভা করলেন। পুলিসের পাহাড়ায়। এতসব কাণ্ড যাঁকে ঘিরে, সেই আরাবুল ইসলাম কিন্তু নিরুত্তাপ। উল্টে তাঁর প্রশ্ন, সিপিআইএমের কোনও মিটিং-এ যদি তিনি ঢুকে পড়তেন তাহলে তাঁকে কি রসগোল্লা ছোঁড়া হত না? আজ ভাঙরের ঘটকপুকুরে গতকালের ঘটনার প্রতিবাদে সভা করেন আরাবুল ইসলাম।

সেই বৈদিক ভিলেজ কাণ্ড থেকে শুরু। কখনও ব্যবসায়ী খুন, কখনও পুলিস, কখনও আবার অধ্যাপিকা নিগ্রহ, কখনও আবার খবর সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের হুমকির অভিযোগ উঠেছে আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে। তবু আরাবুলের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া তো দূর অস্ত। উল্টে তাঁর পাশেই দাঁড়িয়েছে দল। বারবার। প্রশাসনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। সেই জোরেই বিধায়ক হামলায় অভিযুক্ত হয়েও পুলিসি পাহারা নিয়ে দিব্যি সভা করেন আরাবুল ইসলাম।

ভাঙড়ে রেজ্জাক মোল্লার ওপর আক্রমণের ঘটনায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করলেন রাজ্যপাল এন কে নারায়ণন। হামলার কড়া নিন্দা করেছেন তিনি। বলেছেন, কোনও ধরনের আক্রমণই সমর্থনযোগ্য নয়। সমর্থনযোগ্য নয় রাজনীতিকদের ওপর হামলাও। 

ভাঙরে রেজ্জাক মোল্লা আক্রান্তের ঘটনায় রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করলেন পিডিএস নেতা সমীর পুততুণ্ড। তিনি বলেন, এই ঘটনাকে যাঁরা নাটক বলছেন তাঁরা নিজেরাই নাটক করছেন। এই ধরনের মন্তব্যে আসল ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়া যায় না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।


ভাঙড়ে আক্রান্ত সিপিএম সমর্থকেরা, অভিযোগ আরাবুলের বিরুদ্ধে
এই সময়: এবার আগুন জ্বলল ভাঙড়ে। কাঠগড়ায় সেই আরাবুল ইসলাম। উঠল সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের দিকে গুলি চালানোর অভিযোগ।

রেজ্জাক মোল্লার উপর আক্রমণের পর থেকেই পারদ চড়ছিল। মঙ্গলবার তা চরম আকার ধারণ করে। অভিযোগ, কলকাতায় বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিতে আসার সময় বামফ্রন্ট কর্মী-সমর্থকদের গাড়ির উপর হামলা চালায় তৃণমূল কংগ্রেস। গাড়ি লক্ষ করে চালানো হয় গুলি, ছোড়া হয় বোমা। এর পর বেশ কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সিপিএম নেতাদের দাবি, তাঁদের অন্তত পাঁচ জন কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত বেশ কয়েকজন। অনেকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আহতদের বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁচ্ছেন সিপিএম নেতা তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সম্পাদক গৌতম দেব।

সুজন চক্রবর্তী, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়, সাত্তার মোল্লাদের দাবি, আরাবুল ইসলাম সামনে দাঁড়িয়ে থেকে এই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন। সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের গাড়ি লক্ষ করে তিনিই গুলি চালিয়েছেন। যদিও পাল্টা দাবি করে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে, সিপিএমের কর্মীরাই গুলি চালিয়েছেন। গুলি লেগেছে আরাবুল ইসলামের পায়ে। তাঁকে স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আগামীকাল অর্থাত্‍ বুধবার পাল্টা মিছিলের কর্মসূচি করবেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল সমর্থকেরা। এদিন বামনহাটায় মুকুল রায় জনসভা করবেন বলে জানা গিয়েছে। ঘটনার জেরে মহাকরণে জরুরী বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে থাকবেন স্বরাষ্ট্রসচিব।

সিপিএম নেতারা বলছেন, আরাবুলের নেতৃত্বেই এদিন রাস্তা আটকে দাঁড়ান তৃণমূল কর্মীরা। গাড়ি থামিয়ে চলে দেদার আক্রমণ। গুলি চালানোর পাশাপাশি চলে বোমাবাজি এবং ইটবৃষ্টি। পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ সিপিএমের। বামনঘাটায় তৃণমূলের এহেন হিংসাত্মক আচরণের প্রতিবাদে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের নেতৃত্বে বামেরা আজ রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি জমা দেবেন ।

এদিকে, আরাবুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বামেদের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও তাঁকে গ্রেপ্তার না-করায়, বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে বামেরা। বালিগঞ্জ থেকে মিছিল শুরু হয়েছে। শেষ হবে আলিপুরে এসপি-র অফিসের সামনে। রয়েছে অবস্থান বিক্ষোভ ও ঘেরাও কর্মসূচি। মিছিলের নেতৃত্বে রয়েছেন সূর্যকান্ত মিশ্র, রবীন দেব, সুজন চক্রবর্তীর মতো নেতারা। পুলিশের নির্দেশে মিছিলের গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। রাসবিহারী হয়ে হাজরা দিয়ে আলিপুরের পরিবর্তে মিছিল যায় চেতলা দিয়ে।


ডায়মন্ড হারবার: হাজার প্রতিবাদেও পুলিশের চরিত্র রয়ে গেল সেই একই রকম৷ পার্ক স্ট্রিটের ছায়া পড়ল ডায়মন্ড হারবারেও৷ ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে এক যুবককে উদ্ধার করেছিল পুলিশই৷ কিন্ত্ত অভিযোগ জানাতে সোমবার দিনভর হন্যে হয়ে ঘুরলেন লাঞ্ছিতা গৃহবধূ৷ ডায়মন্ড হারবার থানা তাঁর অভিযোগ নিতেই রাজি হচ্ছিল না৷ সারা দিন ঘোরানোর পর শেষে স্থানীয় সাংবাদিকদের চাপে পড়ে পুলিশ অভিযোগ নিয়েছে বটে৷ কিন্ত্ত তাঁদের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে৷ 
একের পর এক মহিলা নির্যাতনের ঘটনায় এখন সংবাদ শিরোনামে ডায়মন্ড হারবার৷ পর পর বেশ কয়েক জন তরুণী খুন ও ধর্ষিতা হয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার এই মহকুমায়৷ কিন্ত্ত পুলিশের সক্রিয়তা যে বাড়েনি, সোমবারের ঘটনায় তা স্পষ্ট৷ রবিবার রাতে স্থানীয় বাহাদুরপুরে বছর ছাব্বিশের এক গৃহবধূকে বাড়ি থেকে হাত-পা, মুখ বেঁধে তুলে নিয়ে গিয়েছিল চার যুবক৷ তাঁরা সবাই স্থানীয় বাসিন্দা৷ বধূটি তখন রান্না করছিলেন৷ তাঁর স্বামী, পেশায় একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মী তখনও বাড়ি ফেরেননি৷ 
চার যুবক মহিলাকে বাড়ি থেকে কিছু দুরে অন্ধকারে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে গিয়ে পরনের কাপড় টেনে ছিঁড়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন৷ বধূটি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁকে মারধরও করা হয়৷ ধস্তাধস্তিতে মুখের বাঁধন আলগা হয়ে গেলে তিনি চিত্কার শুরু করেন৷ তা শুনে আশপাশের বাসিন্দারা ছুটে গেলে তিন জন পালিয়ে যেতে পারলেও, স্থানীয় মানুষ এক জনকে ধরে ফেলেন৷ চার জনের মুখেই কালো কাপড় বাঁধা ছিল৷ আটক যুবকটির মুখের কাপড় গ্রামবাসীরা সরিয়ে দিলে, তাঁকে চিনতে পারেন সবাই৷ যুবকটির নাম বাবাই মণ্ডল৷ তিনি ওই পাড়ারই বাসিন্দা৷তাঁকে মারধর শুরু হলে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ৷ উত্তেজিত গ্রামবাসীদের হাত থেকে আটক ওই যুবকটিকে পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়৷

তখনকার মতো পরিস্থিতি শান্ত হলেও পুলিশের ভূমিকায় আবার তেতে উঠেছে ডায়মন্ড হারবার৷ রাত থেকে ওই মহিলা ও তাঁর স্বামী বার বার থানায় ঘুরতে থাকেন৷ দম্পতিটির অভিযোগ, পুলিশ বার বার তাঁদের ফিরিয়ে দেয়৷ অভিযোগ নিতে চায়নি৷ নির্যাতিতা মহিলার স্বামীর অভিযোগ, 'ওদের সঙ্গে আমার জমি সংক্রান্ত একটা বিরোধ চলছিল৷ আক্রোশ মেটানোর জন্য ওরা আমার স্ত্রীর উপর চড়াও হয়েছিল৷ ধর্ষণের পর খুন করার পরিকল্পনা ছিল ওদের৷ স্ত্রীর মুখে শুনেছি, ওদের সবার হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল৷' 
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, অভিযুক্তদের মধ্যে সম্ভবত এমন কেউ আছেন, যারা ধরা পড়লে অনেক কিছু ফাঁস হবে৷ অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে৷ তবে ভয়ে কোনও মানুষই নিজের নাম জানাতে চান না৷ নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, 'তৃণমূলের চাপেই পুলিশ অভিযোগ নিচ্ছে না৷ তৃণমূল ঘটনাটি চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে৷ পুলিশ অভিযোগ নিলেও, তদন্ত কতটা হবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে৷ প্রকৃত দোষিরা হয়তো গ্রেন্তারই হবে না৷' পুলিশ অভিযোগ নিতে দেরি করায় এ সব প্রশ্ন আরও বেশি করে উঠছে৷ 
তৃণমূল নেতারা অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না৷ স্থানীয় বিধায়ক দীপক হালদার বলেন, 'ঘটনাটি বিস্তারিত জানি না৷ খোঁজ নিয়ে জানতে হবে৷' দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, 'অভিযোগ নেওয়া হয়েছে৷ এক জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে৷ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হবে৷'

তৈরি থাকুন, হুঙ্কার আরাবুলের
ভাঙড়: হুঙ্কার থামছে না তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামের৷ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁর পাশেই রয়েছেন বুঝতে পেরে আরও সুর চড়িয়ে সোমবার রেজ্জাক মোল্লাকে ফের হুমকি দিয়েছেন৷ ভাঙড়ের ঘটকপুকুর মোড়ে দলের এক সভায় তিনি বলেন, 'রেজ্জাক সাহেব, তৈরি থাকুন, পঞ্চায়েত ভোটে আপনার নাটকের জবাব দেব৷' এ দিনও তিনি অভিযোগ করেন, রবিবার রেজ্জাক মোল্লা তৃণমূলের মিটিংয়ে ঢুকে পড়েছিলেন৷ তাঁর প্রশ্ন, 'আমরা যদি সিপিএমের পার্টি অফিসে যাই, তা হলে কি ওরা রসগোল্লা ছুড়বে?' অর্থাত্‍ তিনি স্বীকার করে নিলেন যে, রবিবার তিনি এবং তাঁর দলবল সিপিএমের প্রবীণ বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লাকে 'রসগোল্লা' ছোড়েননি৷ দলের বিক্ষুব্ধ সাংসদ কবীর সুমনকেও এক হাত নেন আরাবুল৷ তিনি বলেন, 'ওঁকে ধিক্কার জানানো ছাড়া আর কিছু করার নেই৷ দলের মধ্যে থেকে একদল লোক নানা চক্রান্ত করছে৷ সব ব্যবস্থা হবে৷' 
আরাবুলের এ দিনের সভায় তেমন ভিড় চোখে পড়েনি৷ তবে পুলিশি ব্যবস্থা ছিল দেখার মতো৷ সভায় হাজির ছিলেন জেলা তৃণমূলের ভাইস চেয়ারম্যান শক্তি মণ্ডল, ভাঙড়ের যুব নেতা কাইজার আহমেদ-সহ স্থানীয় নেতারা৷ আরাবুল সভায় সগর্বে জানিয়ে দেন, আগের দিন কাঁটাতলায় আরাবুল অ্যান্ড কোম্পানি কোনও সন্ত্রাস করেনি৷ তাঁর নামে সিপিএম অপপ্রচার চালাচ্ছে৷ তিনি অভিযোগ করেন, 'রেজ্জাক মোল্লা নিজের জামা ছিঁড়ে, গাড়ির কাচ ভেঙে নাটক করেছেন৷ নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে না-থেকে রেজ্জাক ভাঙড়ে মাটি পাওয়ার চেষ্টা করছেন৷ ওসব করে কোনও লাভ হবে না৷ পঞ্চায়েত ভোটেই তিনি সেটা টের পাবেন৷' 
রবিবারের ঘটনার পর তাড়দহ গ্রাম পঞ্চায়েতের কাঁটাতলা গ্রামে রীতিমতো আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে৷ গ্রামে পুলিশ-প্রশাসনের দেখা মিললেও বাসিন্দারা কোনও বল-ভরসা পাচ্ছেন না৷ রেজ্জাক মোল্লা মার খাওয়ার পর থেকে অনেক সিপিএম সমর্থকই গ্রামে থাকার সাহস পাচ্ছেন না৷ অনেকে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন৷ কাঁটাতলা সংলগ্ন ভাঙার খাল, টংপাড়া, মাখালতলা, ঘাসখালি প্রভৃতি এলাকার অধিকাংশ পুরুষই বাড়ি ছাড়া৷ তাড়দহ পঞ্চায়েতের সিপিএম উপ-প্রধান ভারতী সর্দার জানান, রবিবার বিকেলের পর থেকে তিনি এবং তাঁর পরিবার অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন৷ ঘাসখালিতে অনেক ঘুরে একজন পুরুষের দেখা মিলল৷ সিপিএম সমর্থক ওই ব্যক্তি কিছুতেই নাম জানাতে চাইলেন না৷ চোখেমুখে আতঙ্ক৷ তিনি জানান, আগের দিন রেজ্জাক সাহেব তৃণমূলের সভায় ঢুকতে যাননি৷ আরাবুলরা মিথ্যে কথা প্রচার করছেন৷ রেজ্জাক মোল্লা কাঁটাতলায় সিপিএমের পোড়া অফিস দেখতে গিয়েছিলেন৷ তখনই আরাবুলের বাহিনী তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে৷ 
কাঁটাতলার অনেক মহিলার অভিযোগ, এ দিন সকালেও তৃণমূলের সমর্থকেরা বাড়ি বাড়ি এসে হুমকি দিয়ে গিয়েছে, 'কী করে সিপিএম করিস, দেখে নেব৷' এই পরিবর্তনের বাজারেও কাঁটাতলা এখন সিপিএমের দুর্গ৷ রাজনৈতিক মহল বলছে, এর জন্যই আরাবুলের বাহিনী কাঁটাতলার জমি দখল করতে নেমেছে পঞ্চায়েত ভোটের আগে৷ এ দিন কাঁটাতলা এবং আশপাশ এলাকায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷ রাস্তায় পুলিশি টহলদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পূর্ব) কঙ্করপ্রসাদ বাড়ুই৷ 
সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, 'এই আরাবুলরাই তৃণমূলের রত্ন, এরাই দলের আত্মা৷ তবে সব তৃণমূল সমর্থক ওদের কাজকর্ম পছন্দ করেন না৷' সুজনবাবুরও অভিযোগ, রবিবারের ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন গ্রামে সিপিএম সমর্থকদের ভয় দেখানো হচ্ছে৷

লোক বক্তৃতায় অশোক মিত্র

অর্থনীতিই অর্থনীতির শেষ কথা নয়, মূল নিয়ামক রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ০১-১২-২০১২


অশোক মিত্র

অশোক মিত্র

অর্থনীতিই অর্থনীতির শেষ কথা নয়। যত গুরুত্বপূর্ণই হোক না কেন, গোটা পৃথিবীর নিয়ামক শেষ পর্যন্ত অর্থশাস্ত্র নয়। বরং অর্থনীতির ওপর যাঁরা ছড়ি ঘোরাচ্ছেন, ক্ষমতা যাঁরা দখল করেছেন, রাজনীতির কেন্দ্রস্থলে যাঁরা আছেন, তাঁরাই নিয়ামক ও নিয়ন্ত্রক।
ভারতের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অশোক মিত্র এভাবেই গতকাল শুক্রবার অর্থনীতির ওপর রাজনীতির প্রভাব ও বিস্তারকে বিবৃত করলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই সমিতির (ডিইউএএ) সহযোগিতায় বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত 'উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন' শীর্ষক লোক বক্তৃতায় অশোক মিত্র আরও বলেন, রাজনীতিতে টিকতে হলে নোংরা ঘাঁটতে হয়। অর্থনীতিবিদেরা কিছুদূর পর্যন্ত যেতে পারেন, তারপর নয়।'
নিজের রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে অশোক মিত্র বলেন, 'আমি সরকারি অর্থনীতিবিদ হিসেবেই জীবন কাটাতে পারতাম। কিন্তু নিজের দেশের (পশ্চিম বাংলা) জন্য কিছু করার তাগিদ থেকে রাজনীতি করতে গিয়েছিলাম। তবে এখানে হয় স্রোতে গা ভাসাতে হবে, না-হয় প্রতিবাদী হতে হবে। প্রতিবাদের কণ্ঠ ক্ষীণ হলে ছেড়ে দিতে হবে।'
রাজধানীর এলজিইডি ভবন মিলনায়তনে গতকাল বিকেলে ৮৫ বছর বয়সী এই প্রবীণ অর্থনীতিবিদ তাঁর বক্তৃতায় রাজনীতি-অর্থনীতির সম্পৃক্ততা, উন্নয়নের অমীমাংসিত বিভিন্ন প্রশ্ন এবং বিশ্বায়নের বর্তমান অবস্থায় উন্নত পুঁজিবাদী অর্থনীতির সংকট নিয়ে আলোকপাত করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র অশোক মিত্র দেশ বিভাগের কিছুদিন পর ভারতে চলে যান। তিনি পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের প্রথম অর্থমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর আদি বাড়ি পুরান ঢাকার আরমানিটোলা এলাকায়।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারকাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ডিইউএএর সভাপতি সৈয়দ মনজুর এলাহী।
উন্নয়ন ও বিশ্বায়ন: শুধু প্রবৃদ্ধির হারই যে উন্নয়ন নয়, সে কথা জোর দিয়ে বললেন অশোক মিত্র। প্রশ্ন করলেন, 'স্বাধীনতার ৬৫ বছর পরও ভারতের প্রায় অর্ধেক মানুষ নিরক্ষর। এটা কোন ধরনের উন্নয়ন?' তাঁর আরও প্রশ্ন,'কর্মসংস্থানহীন, পুষ্টিহীন উন্নয়ন কি আমাদের কাম্য? কিছু মানুষ ফুলে-ফেঁপে উঠছে। এটা কি উন্নয়ন?' জবাবও নিজেই দিলেন এই বলে যে, দেখতে হবে প্রবৃদ্ধির হার নয়, বরং কর্মসংস্থান কত বেড়েছে, কতজন খেতে-পরতে পারছে, নিরক্ষরতা দূর হয়েছে কি না ইত্যাদি।
অশোক মিত্র বলেন, 'সাচ্চা অর্থনীতিবিদ হয়েও আমরা বলতে পারি না উন্নয়ন কী। আর যাঁরা রাজনীতি করছেন, তাঁরা যা বলবেন, তা-ই উন্নয়ন। কেননা, তাঁরাই তো রাষ্ট্র ও সরকারের নীতি নির্ধারণ করেন।
বিশ্বায়নের সঙ্গে উন্নয়নের সম্পর্ক বিশ্লেষণ জটিল কাজ হিসেবে উল্লেখ করে অশোক মিত্র বলেন, 'কার্ল মার্ক্সই সবার আগে সজ্ঞানে বিশ্বায়নের কথা বলে গেছেন। বলেছেন, "দুনিয়ার মজদুর, বিশ্বায়িত হও। দুনিয়ার মজদুর এক হও।"'
কিন্তু আজকের বিশ্বায়ন আর শ্রমজীবী মানুষের বিশ্বায়নের কথা বলে না, বলে পুঁজি ও পণ্যের বিশ্বায়নের কথা—এ মন্তব্য করে অশোক মিত্র পুঁজিবাদী অর্থনীতির চলমান সংকটের দিকে আলোকপাত করলেন। ইউরোপের আর্থিক সংকটের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বললেন, 'অপরাধ করল ফাটকাবাজেরা, ভুক্তভোগী হলো গরিবেরা।'
প্রসঙ্গ বাংলাদেশ: 'বাংলাদেশের নারী প্রগতি আমাকে মুগ্ধ করে'—এক প্রশ্নের জবাবে এমনটাই বললেন অশোক মিত্র। বললেন, তাঁর সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে দুজন মুসলমান ছাত্রী ছিলেন, যাঁরা বোরকা পরে আসতেন। আর এবার ঢাকা বিমানবন্দরে নামার পর যে মহিলা বিমানকর্মী তাঁকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে ঠেলে এনেছেন, তাঁর মুখে সাবলীল ইংরেজি আর চটপট কাজ। এমনই এক প্রগতির উদাহরণ। বিশ্বায়ন ছাড়া এই প্রগতি হতো কি না, তাতে তাঁর সন্দেহ আছে বলেও উল্লেখ করলেন অশোক মিত্র।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র হওয়াকে নিজের জীবনে সবচেয়ে গর্বের বিষয় বলে উল্লেখ করেন বক্তৃতার শুরুতেই। তাঁর জীবনের সবকিছুর জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ঋণী। তিনি বলেন, 'এখানকার অর্থনীতিবিদেরা অর্থশাস্ত্রের যৌক্তিক বিশ্লেষণক্ষমতা রপ্ত করেও মাটির সঙ্গে সংযোগ হারাননি। সেই পঞ্চাশের দশক থেকে তাঁদের গবেষণায় মাটি ও মানুষ গুরুত্ব পেয়েছে, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যৌক্তিক পটভূমি তৈরিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।' 
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। তিনি অশোক মিত্রকে তাঁর এবং আরও অনেকের গুরু হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ১৯৭১ সালে দিল্লিতে তাঁর বাসভবন হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদদের শরণার্থী শিবির। 
রেহমান সোবহান বলেন, 'অশোকদাই আমাকে ভারত সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান অনন্য। পূর্বপুরুষের ভিটার প্রতি টান ও রাজনৈতিক দর্শনই এটা সম্ভব করেছে।'

http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-12-01/news/309745


মমতার ক্ষমতা: নির্মমতা!!!


ক্যাটাগরী: 

আমি ছোটবেলা থেকেই যে নেত্রীকে বেশি পছন্দ করতাম তিনি হলেন ভারতের মমতা ব্যানার্জী । তার কথা চলন তার জোড়ালো যুক্তি সততা দৃঢ়প্রত্যয় ভাষণ সবকিছুই আকর্ষনীয় । তার সাধাসিধে জীবনযাপন অন্য সব নেতার চেয়ে আলাদা । তিনি কৃষকদের জন্য আন্দোলন করে হিট হয়েছেন , নন্দীগ্রাম আর সিঙ্গুরের জমি রক্ষাকরতে পুলিশের পেটুনি খেয়ে অনশনে বসেছিলেন । অবশেষে তার প্রতিবাদে টাটা গ্রুপ কৃষকদের জমি ফেরত দিতে বাধ্য হয় , যদিও বামফ্রন্ট বলেছিল " মমতা সস্তা রাজনীতি করছে, রাজ্যে শিল্পায়ণ হোক তা তিনি চান না ।" ঠিক তাই হল বাংলাদেশের সাথে, তিনি সস্তা রাজনীতি শুরু করেছেন , বাংলাদেশকে ইস্যু করে তার সমর্থন বাড়াচ্ছেন ! তিনি রাজ্যবাসিকে বোঝাচ্ছেন বামফ্রন্টের সময় যেভাবে রাজ্যের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে পানি দিয়েছে তা আর মমতা হতে দেবেন না । তিনি এখন তিস্তা নিয়ে শিলিগুড়ী কুচবিহারে তথা উত্তর বঙ্গে ( পশ্চিমবঙ্গ ) জয় করতে চাচ্ছেন অপরদিকে নূতন করে গঙ্গার জল নিয়ে বিতর্ক তুলে দক্ষিণবঙ্গ জয় করতে চাচ্ছেন । আমার ছোটবেলার তাকে ভাললাগার একটা দিক জানাছিলনা যে মমতার সৎ রাজনীতির অন্তরালে আছে একটি নির্মমতার চেহারা , আর সস্তা রাজনীতি । তাকে টিভিতে দেখলেই অভিভূত হয়ে যেতাম , এখন দেখলেই মনে হয় তার দ্বৈত-চরিত্রের কথা ! বামফ্রন্ট নির্বাচনের আগেই বলেছিলেন মমতা দ্বৈত-চরিত্রের অধিকারী । ।এখন তা দেখতে পাচ্ছি , যিনি বাংলাদেশের নেত্রী শেখ হাসিনাকে পরমবন্ধু মানতেন, যিনি শেখ হাসিনাকে অদর্শ মেনে রাজনীতি করতেন, তাকে শুনেছি পশ্চিমবাংলার শেখ হাসিনা বলা হয় আর এতে তিনি গর্বিত ছিলেন । শেখ হাসিনাকে দিদি বলে ডাকতেন , কারণ শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া ভারতের পারমাণবিক বিভাগে চাকরিরত অবস্থায় মমতার সাথে হাসিনা বেশ ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠে , গত বিধানসভা নির্বাচনে মমতার শ্লোগান ছিল মা-মাটি-মানুষ আর প্রতিশ্রুতি ছিল শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করেই ডিজিটাল পশ্চিম বঙ্গ আর পরিবর্তনের অঙ্গিকার , হ্যাঁ পরিবর্তন তিনি করছেন তবে তা রাজ্যকে কেন্দ্র করেই তার আর হাসিনাকে মনেহয় মনে নেই । তিনি যে বামফ্রন্টের ভাষায় দ্বৈত চরিত্রের অধিকারী, তাই তার এই চরিত্রের পরিবর্তন হওয়া অস্বভাবিক নয় । তার দ্বৈতচরিত্রের উদাহরণ দেয়া যেতেপারে , এক. তিনি একসময় বিজেপির সাথে জোট করেছিলেন সেই সময় তিনি রেলমন্ত্রী হোন , কিন্তু এবার নির্বাচনে তিনি ভাষনে বলেছিলেন "এই বামফ্রন্টই নাকি বিজিপির মতো কট্টর হিন্দুত্ববাদকে রাজ্যে জায়গা দিয়েছে !! " আবার এবার তিনি ধর্মনিরপেক্ষ দল কগ্রেজের সাথে জোট করেছেন, তার ক্ষমতার মসনদ দখল করতে হিন্দুত্ববাদহোক আর ধর্মনিরপেক্ষ যেই হোক কোন আপত্বি নেই !! মমতা ক্ষমতায় বসে হাসিনা দিদিকে ভুলেগেছেন কিন্তু মমতার এই সস্তারাজনীতি ভারতের উন্নয়ণ বৈষম্য বৃদ্ধিকরবে । পূর্বভারতের সাথে পশ্চিম ভারত চিরকালই বৈষম্য বিরাজমান । ত্রিপুরার অসমের মিজোরামের মতো সাতটি রাজ্য সবসময়ই চায় তারা বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্ব বজায় রেখে পশ্চিম ভারত থেকে সরাসরি করিডোর বা ট্রানজিটের মাধ্যমে পন্য আদানপ্রদান করতে , এর জন্য চাই বন্ধুত্ব আর সেটা ভারত চায় । কিন্তু মমতার কাছে যেন পরাস্থ হয়েছে দিল্লী সরকার । পরাস্থ হয়েছে সেভেনসিস্টার নামের প্রদেশগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরা ! পানি চুক্তি না হবার কারনে শুধু যে বাংলাদেশই হতাশ হয়েছে তা নয় বরং ভারতের বহু ব্যক্তি রাজনীতিক বুদ্ধিজীবিরা হতাশ হয়েছেন ! এমন কি বামফ্রন্টও হতাশ হয়েছেন । তারা বলেছেন মমতার সস্তা রাজনীতি আমাদের দেশকে বন্ধুহীন করে ফেলবে । দিল্লী ত রাজ্যের কাছে বন্দি । মমতা বন্দি সস্তা রাজনীতিতে ! তার বাংলাদেশের প্রতি নির্মমতা দুই দেশেরই সচেতন মহল সহ্য করতে পারছেনা । মমতার বক্তব্য গঙ্গার পানিচুক্তি নাকি পশ্চিমবঙ্গের হলুদিয়া আর কলকাতা বন্দরকে শুকিয়ে দিয়েছে !! তিনি বুঝাতে চাইছেন জ্যোতি বসু পশ্চিমবঙ্গের কথা না ভেবেই দায়িত্ব জ্ঞানহীন ভাবে গঙ্গাচুক্তি করেছেন আর তিনি তা করবেন না । আসলে মমতা যতদিনই মূখ্যমন্ত্রী থাক কখনই জতির্ময় জ্যোতি বসু হতে পারবেন না । ।

মমতা ভুলে যেতে পারেন যে হাসিনা তার বন্ধু , তিনি ভুলেযেতে পারেন বাংলাদেশেও তার ভক্ত ছিল , তিনি ভুলেযেতে পারেন ইলিশের স্বাদ । তার ভুললে চলবেন না যে তাদের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নের কাছে বাংলাদেশ একটি বড় ফ্যাক্ট !! তার একটি উদাহরণ দেয়া যাক , গত বিএনপি জামাত জোট সরকারের সময়ে বাংলাদেশে পার্বত্ব অঞ্চলে পাকিস্তানি গয়েন্দা সংস্থা আইএসআর ঘাঁটি গাড়তে দেয়া হয়েছিল , লক্ষ্য ভারতী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাহায্য করা , অবশ্য আমাদের জঙ্গিরাও এতে পরিপূষ্ট হয় ! আর তার ফলশ্রুতিতে পূর্বভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদী উল্ফাগোষ্ঠি অসমে বিভিন্ন প্রকার অপকর্ম ও বিদ্রোহ করতে থাকে । এমনকি আমাদের দেশে হোটেল শেরাটনে পারভেজ মোশাররোফের সাথে উল্ফার নেতা পরেশ বড়ুয়ার ৩ ঘন্টা ব্যাপি সরকারি প্রোটকলে বৈঠক করানো হয় । এর পরপরই বাংলাদেশ হয় অন্তর্জাতীক চোরাচালানির বড়রূট । আস্ত্র আসতে থাকে , চলে ভারত বিরোধী ষড়যন্ত্র ! পাকিস্তানের লক্ষ্য হচ্ছে তারা বাংলাদেশের হাড়ানোর বেদনা অসম দ্বারা মেটাতে । তারা অসমকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চায় , আর তারই ফাঁদে পা বাড়ায় বিএনপি নেতা ও যুবরাজরা । এফবিআই রিপোর্ট মোতাবেক বিএনপি নেত্রীর পূত্র তারেক রহমান উলফার কাছথেকে এক হাজার কোটি টাকা ঘুষ খেয়ে ১০ ট্রাক অস্ত্র চালান আনতে সম্মতি প্রদান করেন । এমনকি ভারতের গণতন্ত্রের ও স্থিতিশীলতার হুমকি দাউদ রহমানের সাথেও তারেকের ঘনিষ্ঠতার সম্পর্ক শোনা যায় । এগুলো যুক্তরাস্ট্রের গয়েন্দা এফবিআই তাদের ওয়েব সাইটে ডকুমেন্ট সহ তুলে ধরে । মমতা কি জানেন পররাস্ট্রনীতি কি জিনিস ? তার তো বোঝা উচিত হাসিনা সরকার ভারতের জন্য কত গুরুত্ব বহন করেন ? তিনি তার আঞ্চলিক রাজনীতির স্বার্থের উর্ধে উঠতে পারলেন না !! আজ যদি বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর চীনকে দিয়ে দেয়া হয় তবে ভারতের জন্য কত হুমকি হবে তা কি মমতা বোঝেন ? আসলে ভারতে রাজনীতিবীদরা চান ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালথাক । তাইত তারা কিছুটা বেশি ছাড়দিয়ে হলেও বাংলাদেশের বন্ধুত্ব কামনা করেথাকে । কিন্তু দুর্ভাগ্য ভাতের কিছু বড় বড় আমলা আছেন যারা পাকিস্তান থেকে আগত রিফিজী আর কিছু আছেন আইএসআই এর পয়সা খান (কিছুদিন আগে ধরাও খেয়েছেন একজন) তারা কখনই চান-না বাংলাদেশের ক্ষমতায় শেখ হাসিনা থাক , তারা পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষা করতেই ব্যস্ত , তারা চায় পাকিস্তানের মূল এজেন্ডা সফল হোক , আর সেই কারনে কিছু আমলারাও পানিচুক্তি হতে দিচ্ছেন না , হতে দিলেন না সাউথ এশিয়ান টাস্কফোর্স !! এগুলো হল গভির ষড়যন্ত্রের ব্যাপার । বাংলাদেশ নদীর আনুপাতিক আয়তন অনুসারে ২৮ শতাংশ পানি পায় , কিন্তু এই বন্ধুত্ব বজায় রাখতেই মনমোহন ৪৮শতাংশ পানি দিতে সম্মত হোন , কিন্তু বাধসাধল মমতার নির্মমতা আর ভারতীয় কিছু আমলার ষড়যন্ত্র !! মমতার কগ্রেজ তৃণমূলকগ্রেজ দ্বন্দ্ব এটা বড় ফ্যাক্টর হয়েছে নূতন করে । মমতা কখনই চাইবেননা কগ্রেজ সফল হোক , তাহলে যে রাজ্যে আবার তার দখল চলেযাবে প্রণবের হাতে , আবার এসএম কৃষ্ণাও মমতা বড় শত্রু কারণ তার উপর রাগ হিলারী ক্লিন্টনকে কলকাতা না এনে তাকে মাদ্রাজ নিয়ে যাওয়ায় মমতা কৃষ্ণার কোন কথাই মানতে নারাজ । মমতা বামদের খষড়া করা চুক্তিতে সই করবেননা বলে পণও করেছেন , এতকিছু ভারতীয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও মমতার সংকীর্ণ রাজনীতি ভারতের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব নষ্ট করছে ।

আমি হলফ করে বলতে পারি মমতা আঞ্চলিক নেত্রী হিসেবে ভাল কিন্তু পররাস্ট্রনীতিতে মমতা ভারতের একটি অভিশাপ বটে !! মমতার নির্মমতায় বাংলাদেশ বলি হচ্ছে !!! তবে আমরা এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ভারত বন্ধুত্বের খাতিরে সকল সমস্যা অচিরেই সমাধান হবে বলে আশা রাখি ।

http://blog.bdnews24.com/mehedibk/69618


আইনশৃঙ্খলা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দল পাঠানোর আবেদন জানাল কংগ্রেস



আইনশৃঙ্খলা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দল পাঠানোর আবেদন জানাল কংগ্রেস
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য।---সংবাদসংস্থা।
এই সময় : ফের কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের ক্ষেত্র সমাগত৷ প্রেক্ষাপট, রাজ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের রাজনীতি এবং আইনের 'অপশাসন৷' প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক কলকাতা সফরে তাঁর কাছে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে লিখিত নালিশ জানিয়েছিল প্রদেশ কংগ্রেসের প্রতিনিধিদল৷ ভাঙড় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার পর এবার কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের প্রয়োজন অনুভব করছে কংগ্রেস৷ আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি একান্তভাবেই রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত হওয়ায় আপাতত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে বিশেষ পরিদর্শক দল পাঠানোর আবেদন জানাতে চলেছেন রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য৷ 

মঙ্গলবার ১০ তারিখের মহাকরণ অভিযানের নীল নক্সা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাঁদের এই মনোভাবের কথা জানিয়েছেন প্রদীপবাবু৷ তিনি বলেন, 'রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি ক্রমশ উচ্ছন্নে যাচ্ছে৷ আমরা উদ্বিগ্ন৷ কাল কী হবে কেউ জানি না৷ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিস্তারিত চিঠি দিয়ে আমরা অনুরোধ জানাব একটি বিশেষ দল পাঠিয়ে রাজ্যের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখে যেতে৷' রায়গঞ্জে এইমস গড়তে জমি অধিগ্রহণ শুরু করার দাবিতে ১০ জানুয়ারি কলকাতা অচল করে দেওয়ার প্রস্ত্ততিও সেরে ফেলেছে কংগ্রেস৷ সুসজ্জিত ট্যাবলোয় রায়গঞ্জে এইমসের দাবি লেখা থাকলেও প্রদেশ নেতারাই মনে করছেন, দক্ষিণবঙ্গে বিশেষ করে কলকাতায় উত্তরবঙ্গ কেন্দ্রিক ইস্যুতে যতটা সাড়া পাওয়া যাবে তার চেয়ে ঢের বেশি সাড়া মিলবে রাজনৈতিক সংঘাত এবং সরকারের 'নিষ্ক্রিতার' বিষয়টি৷ তাই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে ফিয়ার্স লেন, ব্র্যাবোর্ণ রোড এবং রানি রামণি অ্যাভিনিউ থেকে মিছিল করে আইন অমান্যই করবে কংগ্রেস৷ উল্লেখ্য, পুলিশ প্রশাসন কিন্ত্ত কংগ্রেসকে তিন জায়গায় পৃথক জমায়েতের অনুমতি দেয়নি৷ 

দু'দিন আগে রেজ্জাক মোল্লা প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে 'আপত্তিকর' মন্তব্য করলেও প্রদেশ কংগ্রেস কিন্ত্ত তাঁর শারীরিক নিগ্রহকে 'বদল নয়, বদলা হিসেবেই দেখছে৷ মমতার সরকারের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অভিযোগকে প্রতিষ্ঠা দেবে ভাঙড় পরিস্থিতি৷ প্রদেশ কংগ্রেস সূত্রে খবর, শ্যামপুকুরের পারিবারিক বিবাদে তৃণমূল কাউন্সিলরের ছেলের শালিশি থেকে শুরু করে বিধানসভার ভিতরে বাইরে বিধায়কদের নিরাপত্তাহীনতা সবই স্থান পাবে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির চিঠিতে৷ 

২০১১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে নেতাই হত্যাকান্ডের পর কেন্দ্রীয় সরকার তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে পত্রবোমা পাঠানোয় বাম সরকারের বিড়ম্বনার একশেষ হয়েছিল৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এখনও বলেন, নেতাই ছিল বামেদের কফিনে শেষ পেরেক৷ অনেকেই মনে করেন, সেসময় মমতার সঙ্গে জোটের পথ মসৃণ করতে 'হার্মাদ' শব্দটিকেও সরকারি স্বীকৃতি দিয়েছিলেন তত্কালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পালানিয়াপ্পান চিদাম্বরম৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার কয়েকমাস পর সেই চিদাম্বরমই কলকাতায় এক বণিকসভার অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলেন,'পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক হিংসার ঐতিহ্য বন্ধ করা যায়নি৷' তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জোট ভেঙে কেন্দ্রীয় সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর, বিশেষ করে কেন্দ্রে সরকার ফেলতে তিনি বাম বিজেপির সাহায্য চাওয়ার পর সনিয়া মনমোহনেরও 'জোটধর্মের' দায় নেই৷ বহুদিন পর রাজ্যে কংগ্রেসের বিবদমান গোষ্ঠীগুলিকেও একমঞ্চে নিয়ে আসার কৃতিত্ব অবশ্য দেওয়া যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই৷ এমতাবস্থায়, পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসার গ্রাফ উর্ধমুখি হলে দিল্লি প্রদেশ কংগ্রেসের দাবিতে সায় দিয়ে প্রশাসক মমতার বিরুদ্ধে বিবৃতি দিতেই পারে৷ মাত্র ক'দিন আগে ধর্মতলায় কংগ্রেসের এফডিআই সমাবেশে হাইক্যান্ডের প্রতিনিধি শাকিল আহমেদ কিন্ত্ত নারি নির্যাতনের প্রশ্নে রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন৷ মঙ্গলবারও দিল্লিতে মমতা বিরোধী বিবৃতি দিয়েছেন তিনি৷ 

বাম বিধায়কদের কাছে 
উদ্বেগ প্রকাশ রাজ্যপালের

নিজস্ব প্রতিনিধি : কলকাতা, ৮ই জানুয়ারি — ভাঙড়ের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। চার দশকের প্রবীণ বিধায়ক আবদুর রেজ্জাক মোল্লার উপর আক্রমণ এবং মঙ্গলবার সেই ভাঙড়েই বামপন্থী কর্মীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালনার ঘটনা নিয়ে এদিনই সন্ধ্যায় বাম পরিষদীয় দলের প্রতিনিধিরা রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন। ৭০ বছর বয়সী বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লার উপর আক্রমণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামকে এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিস গ্রেপ্তার করেনি। সে কথাও রাজ্যপালকে জানান বাম পরিষদীয় দলের প্রতিনিধিরা। রাজ্যপাল যে সামগ্রিক ঘটনাপ্রবাহে রীতিমতো উদ্বিগ্ন, তা এদিন প্রকাশ করেছেন। বাম পরিষদীয় দলের নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র রাজভবন থেকে বেরিয়ে বলেন, রাজ্যপাল এই ধরনের হিংসার বিরুদ্ধে, এই কথা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন। তিনি এও বলেছেন, তাঁর পক্ষ থেকে যা করার নিশ্চয়ই করবেন।

আলিপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বামফ্রন্টের কর্মসূচী চলাকালীনই রাজ্যপালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সূর্যকান্ত মিশ্র। এদিন সন্ধ্যা ৬টায় রাজ্যপাল বাম পরিষদীয় দলকে সাক্ষাতের সময় দেন। সূর্যকান্ত মিশ্র, প্রবোধ সিন্‌হা, সুভাষ নস্কর, বিশ্বনাথ কারক এবং আনন্দময় মণ্ডল আলিপুর থেকে সোজা চলে আসেন রাজভবনে। প্রতিনিধি দলে ছিলেন প্রাক্তন সাংসদ তথা সি পি আই (এম) দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী। প্রায় আধঘণ্টা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা বলেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। আলিপুরে জেলা পুলিস সুপারের হাতে যে স্মারকলিপি এদিন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে তারই প্রতিলিপি রাজ্যপালকে দেয় বাম পরিষদীয় দল। এদিন আলিপুরের অবস্থান সমাবেশে আসার পরে বামনঘাটায় যেভাবে বামফ্রন্ট কর্মীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে তৃণমূলীরা তাও অবহিত করেন সূর্যকান্ত মিশ্র। পরে সাংবাদিকদের তিনি জানান, সমাবেশে আসার পথে মোট ২০টি গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। তারমধ্যে ১৪টাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় মোট ২৭জন বামফ্রন্ট কর্মী আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৫জন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। এরমধ্যে ২জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এসব ঘটনা সবটাই রাজ্যপালকে জানানো হয়েছে। সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, বামনঘাটায় যেখানে এদিন ঘটনাটি ঘটেছে সেই স্থানও লেদার কম‍‌প্লেক্স থানার অন্তর্গত। আবদুর রেজ্জাক মোল্লাকে শনিবার যেখানে আক্রমণ করা হয়েছিল সেখান থেকে দূরত্ব ২ থেকে ৩ কিলোমিটার। সেদিন রেজ্জাক মোল্লাকে আক্রমণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত আরাবুল এদিনের ঘটনার সময়ও সক্রিয় অংশ নিয়েছেন। সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, এত কাণ্ডের পরেও ভাঙড়ের এই লোকটি কীভাবে পুলিসের গ্রেপ্তার এড়িয়ে ঘুরছেন বোঝা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, 'এহেন 'খ্যাতিসম্পন্ন' ব্যক্তি নাকি বুলেট ইনজ্যুরি হয়েছেন বলে বলা হচ্ছে। অথচ তিনি এদিনও আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁকে কে বুলেট মারবে জানি না। আমাদের তো মারার ক্ষমতা নেই। ওদের দলের লোকজনের থাকলে থাকতে পারে।

সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, গতকাল থেকেই চেষ্টা করা হচ্ছে হাসপাতাল থেকে রেজ্জাক মোল্লাকে ছেড়ে দেওয়ার। ৭ই জানুয়ারি বেসরকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি বুলেটিন প্রকাশ করে। সেই বুলেটিনের প্রতিলিপি এদিন রাজ্যপালের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। মিশ্র বলেন, এক্স-রে করে কিছু পাওয়া যায়নি। কিন্তু এম আর আই করে দেখা গেলো ফাস্ট লাম্বার ভার্টিকাতে ফ্যাকচার রয়েছে। অর্থাৎ শিরদাঁড়ায় চিড় ধরা পড়েছে। এই অবস্থায় প্রবীণ মানুষটিকে কতদিন সমস্যায় থাকতে হবে জানি না। এই সরকার কতো জঘন্য কাজ করতে পারে তার আরেক উদাহরণ হলো বেসরকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়ে প্রবীণ অসুস্থ মানুষটিকে ছুটি দেওয়ার চেষ্টা। বিধানসভার অধ্যক্ষকে বাম পরিষদীয় দলের পক্ষ থেকে কিছু বলা হবে কী না? সূর্যকান্ত মিশ্রের কা‍‌ছে জানতে চান সাংবাদিকরা। মিশ্র বলেন, অধ্যক্ষ হলেন বিধানসভায় আমাদের 'অভিভাবক'। বিধানসভায় চার দশক ধরে প্রতিনিধিত্ব করছেন আবদুর রেজ্জাক মোল্লা, এখন অধ্যক্ষ ঠিক করবেন তিনি কী করবেন। তাঁর বিবেক, বিচার বুদ্ধির উপরে আমরা নির্ভর করছি। তবে আমরা আজ রাজ্যপালকে বলেছি, রাজ্যের একজন মন্ত্রী কীভাবে মহাকরণ থেকে দলের কর্মসূচী ঘোষণা করেন। উন্নয়নে আমরা বাধা সৃষ্টি করছি তাই তাঁরা আন্দোলনে নামবেন বলেছেন। সন্ধ্যা ৬টার পরে মিছিল। এখানেই আমাদের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ১৮ তারিখ পর্যন্ত নাকি এসব চলবে। প্রসঙ্গত, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি এদিন মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এ প্রসঙ্গে রাজভবনের বাইরে এসে সরকারের একইভাবে সমা‍‌লোচনা করেন সুজন চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, যেখানে বিরোধীদের রাস্তায় থাকার কথা সেখানে সরকার ১০ দিন ধরে রাস্তায় থাকবে। তাও আবার সন্ধ্যার পরে। আসলে আইনশৃঙ্খলার আরও অবনতি চাইছে ওরা।


রাজ্যের গণতন্ত্রকেই ধ্বংস করতে চাইছে তৃণমূল 
বললেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ৭ই জানুয়ারি – তৃণমূল এরাজ্যের গণতন্ত্রকেই ধ্বংস করতে চাইছে। ভাঙড়ের ঘটনা তারই প্রমাণ। সোমবার এই আশঙ্কা প্রকাশ করলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান ও সি পি আই (এম)-র রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। এদিন সকালে মুজফ্‌ফর আহ্‌মদ ভবনে রাজ্য বামফ্রন্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে প্রবীণ কৃষকনেতা ও সি পি আই (এম) বিধায়ক আবদুর রেজ্জাক মোল্লার ওপর ভাঙড়ে তৃণমূলী হামলার তীব্র নিন্দা করে বিমান বসু বলেন, প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়কের নেতৃত্বে তৃণমূলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা পরিচিত দুষ্কৃতীরা এই হামলা চালিয়েছে। গণতান্ত্রিক ব‌্যবস্থাকে ধ্বংস করে একদলীয় শাসন কায়েম করতে চাইছে তৃণমূল। এটা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। 

এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের সর্বত্র যেভাবে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটছে এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে, সেবিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিমান বসু বলেন, তৃণমূল সরকারের আমলে রাজ্যে নৈরাজ্যের পরিবেশ ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে। বিভিন্ন জেলার এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে ক্রমশ এই নৈরাজ্যের পরিবেশ ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি ভাঙড়ের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, শনিবার গভীর রাতে ভাঙড়ের কাঁটাতলায় সি পি আই (এম)-র একটি অফিস আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয় তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা। রবিবার সকালে এই খবর পেয়ে জেলার পুলিস সুপার এবং থানার ও সি-কে টেলিফোন করে রেজ্জাক মোল্লা জানান, তিনি ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। পুলিসের পক্ষ থেকে তাঁকে ওখানে যেতে নিষেধ করা হয়নি। একজন বিধায়ক, রাজনৈতিক নেতা বা কর্মীর তাঁর দলের পার্টি অফিসে যাওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে। কিন্তু তিনি ওখানে যেতেই তৃণমূলীরা তাঁর ওপর হামলা চালায়। ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম প্রথম তাঁর মুখে ঘুষি চালায় এবং তারপর তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা তাঁকে বেপরোয়াভাবে মারতে থাকে। আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে এই হামলার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে এবং অবিলম্বে আক্রমণকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে বলে বিমান বসু জানান। এই হামলার প্রতিবাদে বামফ্রন্টের বিধায়করা মঙ্গলবার আলিপুরে জেলা পুলিস সুপারের দপ্তরের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ জানানোর কর্মসূচী নিয়েছে। এদিন রাজ্য বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচীকে সমর্থন জানানো হয়। বিমান বসুসহ রাজ্য বামফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা এদিন হাসপাতালে গিয়ে রেজ্জাক মোল্লার সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁর চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। 

তৃণমূল যে গোটা পশ্চিমবাংলায় একটা নৈরাজ্যের পরিবেশ কায়েম করতে চাইছে, তার উল্লেখ করে বিমান বসু বলেন, তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়করা যে ভাষায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের শাসানি দিচ্ছেন, সর্বত্র উস্‌কানিমূলক কথাবার্তা বলছেন, তা নিজের কানে না শুনলে কেউ বিশ্বাসই করতে পারবেন না যে এটা কোনো গণতান্ত্রিক ব‌্যবস্থায় বলা যায়! গণতান্ত্রিক ব‌্যবস্থার পক্ষে বিপজ্জনক একটা পরিবেশ তৈরি করার দিকে এগোচ্ছে তৃণমূল। গণতন্ত্র ধ্বংস করে দলতন্ত্র কায়েম করাই ওদের লক্ষ্য। বিমান বসু বামফ্রন্টের নেতা-কর্মীদের এই পরিস্থিতিতে সংযত থেকে ধৈর্য না হারিয়ে মানুষের কাছে প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরতে প্রচারধারা অব‌্যাহত রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়করা যতই প্ররোচনা দিক না কেন, ওদের ফাঁদে কেউ পা দেবেন না। রেজ্জাক মোল্লার ওপর আক্রমণের বিষয়ে রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি আলোচনার স্তরে আছে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বামফ্রন্টের বাইরে অন্য কোনো দল বা কোনো ব্যক্তি যদি গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার এই প্রশ্নে আমাদের কর্মসূচীকে সমর্থন করেন অথবা কর্মসূচীতে যোগ দিতে চান তবে আমরা স্বাগত জানাবো। 

আসন্ন পঞ্চায়েত সাধারণ নির্বাচন ও রাজ্যে তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী প্রস্তুতি দ্রুততার সঙ্গে চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বামফ্রন্ট। বিমান বসু এদিন বলেন, কবে নির্বাচন হবে তার দিকে তাকিয়ে থেকে প্রস্তুতিতে ঢিলে দিলে চলবে না। জেলা প্রশাসনের ওপর যেভাবে রাজ্য সরকারের চাপ জারি আছে, তাতে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি অথবা এপ্রিল মাসে পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে পারে। ফলে আমাদের প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে হবে। এছাড়া, বীরভূমের নলহাটি, মুর্শিদাবাদের রেজিনগর এবং মালদহের ইংরেজবাজার বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন বাজেটের আগে বা পরে হবে। এই কেন্দ্রগুলিতেও নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে হবে বলে জানান বিমান বসু। অবিলম্বে খাদ্য সুরক্ষা আইন কার্যকরী করার দাবিতে বামফ্রন্টের উদ্যোগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সই সংগ্রহের যে কর্মসূচী চলছে, তাকে আরো জোরকদমে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে এদিন বামফ্রন্টের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।



শ্যামপুকুরে মৃত্যু: গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত

শ্যামপুকুরকাণ্ডে গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত৷ ছোটেলাল সাউ নামে ওই ব্যক্তিকে গালিব স্ট্রিট থেকে আজ গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ তৃণমূলের পার্টি অফিসে সালিশি সভা ডেকে মারধর করার জেরেই মৃত্যু কি না তা তারা তদন্ত করে দেখছে৷
শ্যামপুকুরে শুভেন্দু দত্ত নামে মাঝবয়সী এক ব্যক্তির মৃত্যু৷ শনিবার রাতের এই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয় তোলপাড়৷ অভিযোগ, ভাড়াটিয়া বিবাদকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিসে রীতিমতো সালিশি সভা ডাকে তৃণমূল৷ তারপর শুভেন্দু দত্ত ও তাঁর মেয়েকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ৷ পরিজনদের দাবি, ওই মারধরের জেরেই মৃত্যু হয় শুভেন্দু দত্তর৷ এরপরই শ্যামপুকুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মৃতের মেয়ে শ্রীপর্ণা৷ সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা শুরু করে পুলিশ৷ ঘটনার পর থেকেই ফেরার ছিলেন মূল অভিযুক্ত ছোটালাল সাউ৷ তাঁকে, মঙ্গলবার, গালিব স্ট্রিট থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷  

পরিবারের অভিযোগ, গোপীমোহন দত্ত লেনে তিনটি ঘর ভাড়া নিয়ে ছিলেন শুভেন্দু দত্ত৷ তাঁর মধ্যে একটি ঘর ভাড়া নেন ছোটেলাল নামে এক ব্যক্তি৷ আরও একটি ঘর ভাড়া দেওয়ার জন্য তিনি মাঝেমধ্যেই শুভেন্দুর ওপর চড়াও হতেন বলে অভিযোগ৷ পরিবারের দাবি, ছোটেলাল সাত নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মঞ্জুশ্রী চৌধুরীর ছেলে অভিজিত্‍ চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ৷  শনিবার রাতে ছোটেলাল ফের চড়াও হন বলে অভিযোগ৷ অভিযোগ, এরপর শুভেন্দু ও তাঁর মেয়েকে পার্টি অফিসে ডেকে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়৷ পরিবারের দাবি, সেই মারধরের জেরেই শুভেন্দু দত্তর মৃত্যু হয়৷ 
অভিজিত্ চৌধুরীর অবশ্য দাবি, বাড়াটিয়া বিবাদ মেটাতে, শুভেন্দু দত্তকে পার্টি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়নি৷ তাঁকে মারধরও করা হয়নি৷  
এই ঘটনার পরই অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ কিন্তু মূল অভিযুক্ত ছোটেলাল সাউ ফেরার ছিলেন৷ এদিন তাঁকে গ্রেফতার করা হয়৷ 

আরাবুল আছেন আরাবুলেই৷ 
ভাঙড়ে সিপিএম নেতা রেজ্জাক মোল্লার ওপর আক্রমণের প্রতিবাদে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামকে গ্রেফতারের দাবিতে আলিপুরে বামেদের বিক্ষোভ  বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়েই আক্রান্ত সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরা৷ কাঠগড়ায় সেই আরাবুল৷ অভিযোগ, আরাবুলের নেতৃত্বেই হামলা চালানো হয়৷ পোড়ানো হয় বাস, গাড়ি৷ চালানো হয় গুলি৷


আরাবুল অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷ সিপিএমের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলার অভিযোগ তুলেছেন তিনি৷ তাঁর অভিযোগ, সিপিএম নেতা সাত্তার মোল্লার নেতৃত্বে তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়৷ তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়৷ বুকে ও পায়ে চোট লেগেছে বলে দাবি আরাবুলের৷
তৃণমূলের এই প্রাক্তন বিধায়ক অবশ্য এর আগেও সংবাদের শিরোনামে এসেছেন৷
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার বলেন, শিক্ষায় রাজনীতির দাপাদাপি তিনি বরদাস্ত করবেন৷ কিন্তু, তাঁর সেই হুঁশিয়ারি বোধহয় ভাঙড়ে আরাবুলের কানে পৌঁছয় না৷ আর তাই, লোকমুখে প্রচলিত মাধ্যমিক পাস আরাবুল, রাজনীতির ক্ষমতাবলে ভাঙড় কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি হন৷ শুধু তাই নয়, সভাপতি হওয়ার সুবাদে কলেজের শিক্ষিকাকে জলের জগ ছুঁড়েও মারেন বলে অভিযোগ৷ 
তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে এ ছাড়াও নানা অভিযোগ৷ অভিযোগ, তোলাবাজি, অপহরণের একাধিক কাণ্ডে তিনি জড়িত৷ 
এ হেন আরাবুলকেই আক্রমণের অস্ত্র করতে চাইছে সিপিএম৷ তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে তারা প্রচার করতে চাইছে আরাবুলই তৃণমূল৷ 

http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/32258-2013-01-08-15-02-38


লোবা-তেহট্টকাণ্ড থেকে বিরোধীদের উপর হামলার অভিযোগ৷ একের পর এক ইস্যুতে রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা৷ মঙ্গলবার ভাঙড়কাণ্ডের পর, সেই অভিযোগ তুলে একধাপ এগিয়ে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হওয়ার কথা বলল প্রদেশ কংগ্রেস৷ সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের অভিযোগ, রাজ্যে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে৷ এভাবে চললে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি দিয়ে রাজ্যে বিশেষ প্রতিনিধি দল পাঠানোর আর্জি জানাবেন তাঁরা৷


এদিকে, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকারও দাবি জানিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি৷ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, সংযত হতে হবে সব রাজনৈতিক দলকেই৷ কিন্তু, তৃণমূল যেহেতু ক্ষমতায় রয়েছে, তাই তাঁদের সবার আগে সংযত হতে হবে৷ পাশাপাশি, তাঁর মন্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলছেন, অরাজকতা বরদাস্ত করা হবে না৷ তাহলে সব ক্ষেত্রেই আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হোক৷ 
এদিকে, মঙ্গলবার রেজ্জাক কাণ্ড নিয়ে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হয় বামেরা৷ গোটা ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবি জানান তাঁরা৷ 
বিরোধী দলনেতার দাবি, রাজ্যপাল জানিয়েছেন, তিনি হিংসার বিরুদ্ধে৷ বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন৷ 
বিরোধী দলনেত্রী থাকাকালীন একাধিকবার রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার দাবি জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এখনও প্রদেশ কংগ্রেস সেরকম কোনও দাবি না জানালেও, কেন্দ্রের দ্বারস্থ হওয়ার কথা বলে, আসলে তারা রাজ্যের উপর চাপ বাড়ানোর কৌশলই নিচ্ছে৷ অন্যদিকে, চাপ বাড়ানোর কৌশল নিতেই বামেরাও নানা ইস্যুতে রাজ্যপালের দ্বারস্থ হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা৷ 

http://abpananda.newsbullet.in/state/34-more/32260-2013-01-08-15-21-12

 New
 0  0

॥ আবুল ওয়াফি॥
আওয়ামী লীগের আত্মপ্রতারণা, আত্মগরিমা ও রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব আজ বাংলাদেশকে কোন অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে খোদ দলটির অভ্যন্তরে এবং শুভাকাক্সীদের মধ্যেই নানা প্রশ্ন ও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গণতন্ত্রের কথা বললেও বা বিরোধী দলে থাকলেও গণতন্ত্রের পুরো সুযোগ ব্যবহার করলেও ক্ষমতায় বসার সাথে সাথেই গণতন্ত্রকে দলটি বিদায় জানিয়ে দেয়। মুসলিম লীগের দলছুটদের নিয়ে অনেকটা কংগ্রেসী আদর্শে আওয়ামী মুসলিম লীগ যাত্রা শুরু করে যা একপর্যায়ে মুসলিম শব্দ পরিহার করে আওয়ামী লীগে পরিণত হয়। আওয়ামী লীগের নেতারা কখনো সত্যনিষ্ঠভাবে দলটির জন্ম ইতিহাস বলে না। দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতেই ভারত বিভাগ হয় এবং ভারত ও পাকিস্তান জাতি রাষ্ট্র গঠিত হয়। পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যদিয়ে ভারতের সহযোগিতায় স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়। মুসলিম জাতীয়তার ভিত্তিতে পাকিস্তানের বাংলা ভাষাভাষী পূর্বাঞ্চল নিয়ে বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ সম্ভব হয়েছে। পশ্চিম বাংলা বাংলা ভাষাভাষী হওয়া সত্ত্বেও কোনো স্বাধীন দেশ হতে পারেনি। ভাষাই যদি রাষ্ট্র গঠনের একমাত্র নিয়ামক শক্তি হতো তাহলে আজকের ভারত কয়েক ডজন স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়াই সঙ্গত ছিল।

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বাধীন জাতিসত্তা অর্জনের একক কৃতিত্বের দাবিদার হতে গিয়ে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা সংগ্রামকেও দলীয়করণ করেছে।  একটি দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়েই যে বাংলাদেশ আজ একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও সেই ঘরানার লোকেরা তা সরলভাবে স্বীকার না করে আত্মপ্রতারণা করছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করেছে তারা এবং শেখ মুজিবের জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না এবং হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে প্রচারণা চালিয়েও তারা আত্মপ্রতারণা করছে। শেখ হাসিনা নিজে তার এক লেখায় দাবি করেছেন যে, তাদের পূর্ব পুরুষরা এ দেশে এসেছিল আরব দেশ থেকে। শেখ মুজিব তার রাজনৈতিক ভূমিকার জন্য এ দেশের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেউ চাইলেই তাকে ছোট করতে পারবে না। কিন্তু বেশি বড় বানাতে গিয়ে আইন-সংবিধান দিয়ে কিংবা প্রতিদিন প্রচারণা চালিয়ে বা মূর্তি নির্মাণ ও ছবির প্রসার  ঘটিয়ে তার আসল বড়ত্বকেই মনে হয় প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত কোনো কিছুই যে শেষ পর্যন্ত ভালো হয় না তা কি বলার অপেক্ষা রাখে। খাদ্যে লবণ অতি প্রয়োজনীয়। কিন্তু অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার করলে ভালো খাদ্যও অখাদ্য হয়ে যায়। চিনি মিষ্টি সাধের জন্য দরকার কিন্তু অতিরিক্ত চিনি ব্যবহার করলে তা খাদ্যের অযোগ্য হয়ে পড়ে।

আওয়ামী লীগই বাংলাদেশ বানিয়েছে। শেখ মুজিবই বাংলাদেশ, বাংলাদেশই শেখ মুজিব। এসব বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে যে আত্মঅহঙ্কার ও আত্মগরিমা সৃষ্টি কার্যত তাই জনগণ থেকে দলটিকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। আওয়ামী রাজনীতির ছয় দশকের ইতিহাস তারই প্রমাণ বহন করে। আত্মগরিমার কারণেই জনগণের মতামতকে উপেক্ষা ও অবজ্ঞা করা এবং সমালোচনাকে প্রত্যাখ্যান করার মানসিকতা গড়ে উঠে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে যে জনগণ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করলো ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে যে জনতা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করলো, তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালেই আওয়ামী লীগ সেই জনতার অধিকার হরণ করলো, ভোটের অধিকার কেড়ে নিল, দল গঠন করার অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করলো। দেশের সকল শ্রেণীর মানুষের মতামত উপেক্ষা করে পদদলিত করে একদলীয় শাসন জাতির উপর চাপিয়ে দিল। জনগণ কি চায় তা উপেক্ষা করে জনগণের উপর ফ্যাসিবাদী কায়দায় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া আওয়ামী লীগের বড় ধরনের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব। ১৯৭২ সালে সংবিধান রচনাকালে জনগণের মতামত না নিয়েই ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র চাপিয়ে দেয় আওয়ামী লীগ। ১৯৭৫ সালে চাপিয়ে দেয় একদলীয় বাকশালী শাসন। ইতিহাস প্রমাণ করেছে জনগণ এসব গ্রহণ করে নাই এবং আওয়ামী লীগ যে জনগণের মতামতকে সম্মান করে না তারই সাক্ষী হয়ে রয়েছে।

মরহুম শেখ মুজিবও আত্মঅহঙ্কারে দেশের জনগণ কি চায় তার তোয়াক্কা না করে একদলীয় শাসন চাপিয়ে দিয়েছিলেন দেশবাসীর ওপর। আওয়ামী লীগের এই সিদ্ধান্তই বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিকাশের পথকে রুদ্ধ করে দেয় এবং পরিণতি যে কতটা ভয়ঙ্কর হয়েছে তা সবারই জানা। শেখ মুজিব গণতন্ত্র হত্যা করে তুঘলকি কায়দায় দেশের সকল শিল্পকারখানা জাতীয়করণ করে সরকারি মালিকানায় নেন এবং সারাদেশে জেলায় জেলায় অনির্বাচিত গভর্নর নিযুক্ত করেন। সেনাবাহিনী  উপেক্ষা করে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে জাতীয় রক্ষী বাহিনী গঠন করেন। দ্বিতীয়  দফায় ক্ষমতায় এসে শেখ মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা পিতার মতোই আত্মগরিমার পথেই হাঁটছেন। তিনিও জনগণের মতামতের কোনো তোয়াক্কা করছেন না। এর জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হচ্ছে কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা বাতিল সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিল পাস। সুপ্রিমকোর্টের রায়ের অজুহাত দিয়ে তড়িঘড়ি করে জনগণের বৃহত্তর অংশের মতামত সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়। প্রধান বিরোধী দলসহ দেশের সকল রাজনৈতিক দল এমনকি মহাজোটের শরীক দলগুলোও কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা বাতিলের বিপক্ষে ছিল। সুশীল সমাজও দেশের পত্রপত্রিকাও বিপক্ষে ছিল। এ ব্যাপারে গঠিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি রাজনৈতিক দল, আইন-বিশেষজ্ঞ, বিচারপতি, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন মহলের সাথে মতবিনিময় করে। প্রায় সকলেই কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা রাখা অথবা আদালতের রায় মোতাবেক কমপক্ষে আরও দুটো নির্বাচন এই ব্যবস্থার অধীনে করার পক্ষে মতামত দেন। কিন্তু শেখ হাসিনা কোনো মতামত গ্রহণ করেননি। এমনকি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশও গ্রহণ করেননি। তিনি যেভাবে চেয়েছেন ঠিক সেভাবেই সংশোধনী এনে কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা ব্রুট মেজরিটির জোরেই বাতিল করে দিয়েছেন। অথচ আওয়ামী লীগ আন্দোলন করে এই কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা বহাল করেছিল। এখন যেহেতু ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ এবং তারা ভাবছে যা ইচ্ছা তাই তারা করবে জনগণ কোন শালা! যে রায়ের ভিত্তিতে কেয়ারটেকার সরকার বাতিল করা হলো সে রায়টি এখনও পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশিত হয়নি বা বিচারপতিরা রায়টি এখনও লেখেননি। রায়ের পূর্ণ বিবরণ প্রকাশের সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ অপেক্ষা করলো না। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পারবে না এই ভয় আওয়ামী লীগকে কতটা তাড়া করছে এই একটি ঘটনাই তার বড় প্রমাণ।

কোন সরকার যখন ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয় এবং ব্যর্থতা ও অদক্ষতার কারণে বেসামাল হয়ে পড়ে তখন উটপাখীর মতো আচরণ করে এবং একটার পর একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিতে থাকে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের পর ঢাকা সিটির নির্বাচন দেয়ার ব্যাপারে সরকার পিছু হটে আসে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বিলম্বিত করে নিজেদের দুর্বলতাই প্রকাশ করে এবং প্রশ্নের সৃষ্টি করে। শেষ রক্ষা অবলম্বন হিসেবে সরকার গোয়ার্তুমি করে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দুই ভাগ করার বিল পাস করলো গত ২৯ নভেম্বর মঙ্গলবার ২০১১। মাত্র ৪ মিনিটেই নজিরবিহীন এই বিলটি পাস করা হলো গোটা দেশের জনমত উপেক্ষা করে। ঢাকাবাসী বা কেউ দাবি তোলেনি কর্পোরেশন দুইভাগ করার। দেশের আওয়ামী লীগ ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল এই দুইভাগকে সমর্থন  করেনি। দেশের একটি পত্রিকাও ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বিভক্ত করার পক্ষে লেখেনি। বরং এই 'উদ্ভট' বিল পাস হওয়ার পর সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারীরা ঘোষণা দিয়েছে তারা এটা সমর্থন করে না এবং সিদ্ধান্ত বাতিল করা না হলে ঢাকাকে অচল করে দেবে। ঢাকা ভাগের প্রতিবাদে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিক্ষোভ করছে। এ ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী বলছেন জনগণের সেবার জন্যই এটা করা হয়েছে। খরচ বৃদ্ধি, নানা জটিলতা, সমন্বয়হীনতা ছাড়া এই বিভক্তির ফলে কোনো কল্যাণ বয়ে আনার সম্ভাবনা নেই। সবচাইতে বড় কথা জনমতের প্রতি আওয়ামী লীগের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন।

মন্ত্রীর দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে দেয় এবং মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি ওঠে সর্বত্র এবং  সরকার ও দলের অভ্যন্তরেও। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রহস্যজনকভাবে মন্ত্রীর পক্ষ নেন। আরো বেশ ক'জন মন্ত্রীর অযোগ্যতা নিয়ে জনগণ ও সরকারের শুভাকাক্সীরাও সমালোচনামুখর। অথচ দুইজন নতুন মন্ত্রীর শপথের পর বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের কাছে তার মন্ত্রিসভার পক্ষে সাফাই গাইলেন এবং তাদের কাজের প্রশংসা করলেন। মজার ব্যাপার যে, যে দুইজন নেতা সরকার ও মন্ত্রিসভার বিভিন্ন কাজের খোলামেলা সমালোচনা করতেন তাদেরকেই প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী বানালেন। অনেকে মনে করছেন তাদের সমালোচনার মুখ বন্ধ করতেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে তাদের এই সংযোজন সরকার বা মন্ত্রিসভার কাজের ব্যাপারে কোনো গতিশীলতা বা পরিবর্তন আনবে না এবং সে দৃষ্টিভঙ্গিতে তাদের মন্ত্রীও করা হয়নি। কারণ প্রধানমন্ত্রী তার সরকার ও মন্ত্রিসভার কাজে খুবই সন্তুষ্ট রয়েছেন এবং এই  আত্মতৃপ্তির ব্যাপারে তার কোনো রাখঢাক নেই। তিনি লিখেছেন, আমরা ভালো করছি, আর কত বেশি ভালো চান?

জনগণ কি চায় সেটা শেখ হাসিনার কাছে মোটেই বিবেচ্য নয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর পক্ষে ছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত একজন গডফাদারকেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী করলেন। সম্ভবত অতিরিক্ত আত্মগরিমার কারণে এখানেও শেখ হাসিনা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যতভাবেই তা জোড়াতালি দেয়ার চেষ্টা হোক না কেন এর খেসারত আওয়ামী লীগকেই দিতে হবে।

আওয়ামী লীগ দাবি করে যে, ২০০৮-এর নির্বাচনে জনগণ তাদের বিশাল ম্যান্ডেট দিয়েছে। কিন্তু এই বিশাল ম্যান্ডেট পাওয়া দল বিরোধী দল বিএনপিকে জনসভা করতে পল্টন ময়দান দিতে কেন ভয় করে অথবা জামায়াতের মতো একটি দল তাদের ভাষায় জামায়াতের কোনো জনসমর্থন নেই সেই জামায়াতকে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল-সমাবেশে বাধা দেয় কেন? আবার বিরোধী দলের কেউ অথবা কোনো পত্রিকার সম্পাদক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের উচ্চ পর্যাযের কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বললে বা দুর্নীতির কথা উল্লেখ করলে সরকারি দলের লোকেরা সারাদেশব্যাপী তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাদের হয়রানি করে কেন? একজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করেছে আওয়ামী লীগের লোকেরা। জামিন পেলে জেল গেট থেকে নতুন মিথ্যা মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখিয়ে গ্রেফতার করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের। পুলিশকে ব্যবহার করা হচ্ছে রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ বানচাল করার জন্য এবং রাজনৈতিক কর্মীদের উপর নিপীড়ন চালানোর জন্য। এ সবই হচ্ছে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা। সরকারের গ্রিন সিগন্যাল না পাওয়ায় পুলিশ মেয়র লোকমান হত্যার এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেফতার না করে তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে।

আরো অনেক ব্যাপারে দেউলিয়াত্ব, দ্বিচারিতা এবং সুবিধাবাদের স্বাক্ষর রাখছে আওয়ামী লীগ। অনির্বাচিত কেয়ারটেকার সরকার দেশ  চালাবে এবং নির্বাচন করবে এটা গণতন্ত্রসম্মত নয় এবং সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক- এই যুক্তি দিয়ে কেয়ারটেকার সরকার বাতিল করেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন বাতিল করে অনির্বাচিত প্রশাসন নিয়োগের আইন করেছে তারা। ৯০ দিনের কেয়ারটেকার সরকার নির্বাচন পরিচালনা করলে গণতন্ত্র থাকে না, সংবিধান লংঘন হয়ে যায় এবং আমরা অসভ্য জাতিতে পরিণত হয়ে যাই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে অনির্বাচিত প্রশাসক সিটি কর্পোরেশন চালাবেন এটা জায়েজ হয়ে গেল কিভাবে? আবার শোনা যাচ্ছে সরকার ৬১টি জেলায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনোনয়ন দিবে এবং এজন্য তালিকা প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে। অনির্বাচিত ব্যক্তিরা জেলা চেয়ারম্যান হবেন এটা কি সংবিধান সম্মত না সভ্য কাজ? সভ্যতা ও অসভ্যতার প্রশ্নটি এজন্য এলো যে আজকাল সরকারের লোকরা বা সমর্থকরা কথায় কথায় শব্দটা ব্যবহার করছেন যে সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা নেই। আমাদের দেশে একজন অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি যিনি নিজে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন সাবেক প্রধান উপদেষ্টা তিনি বলেছেন, "আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতির জন্য তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা সম্মানের নয়।" সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা গৃহীত হওয়ার পর তিনিই প্রথম প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন এবং দায়িত্ব পালন করেছেন এবং সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। তখন যদি মান্যবর প্রধান উপদেষ্টা এই কথাটা বলতেন এবং জাতির ভুল ভাঙিয়ে দিতেন তাহলে হয়তো এই অসম্মানজনক ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের এতটা পেরেশান হতে হতো না। আওয়ামী লীগও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বেনিফিশিয়ারি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনে ক্ষমতায় বসে সেই ব্যবস্থাকেই আওয়ামী লীগ বাতিল করে দিল। এটা রাজনৈতিক সুবিধাবাদ ও দেউলিয়াত্ব ছাড়া আর কি হতে পারে? কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও আওয়ামী লীগ দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিয়ে চলেছে। ট্রানজিট সুবিধা এবং উলফা নেতাদের ধরে ভারতের হাতে অর্পণ করাসহ আগাম সুবিধা দিয়ে দেয়ার পর সরকার বেকায়দায় পড়েছে। তিনবিঘা ২৪ ঘণ্টা ঘোলা নিয়ে হৈ চৈ করলেও ভারত ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে তিনবিঘা করিডোর স্থায়ীভাবে লিজ দেয়নি এবং এর উপর বিএসএফের নিয়ন্ত্রণই রয়ে গিয়েছে। ক'দিন আগে সেখানে দুই বাংলাদেশী ছাত্রকে বিএসএফ নাকে খত দেয়ার শাস্তি দিয়েছে। ওদিকে স্বরাষ্ট্র সচিব নয়াদিল্লীতে দু'দিন বৈঠক করে খালি হাতে ফিরেছেন। ছিটমহল বিনিময় হচ্ছে না। তিস্তার পানি নিয়ে দীর্ঘ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। উপরন্তু বাংলাদেশকে না জানিয়েই টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশের ৪৬টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশের সুবিধার কথা ঘোষণা করা হলেও এখন নন-ট্যারিফ বা প্যারাট্যারিফ বাধা দূর করা হয়নি। অর্থাৎ বাংলাদেশের উপর দিয়ে  ভারত ট্রানজিট সুবিধা আদায় করে নিলেও বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করতে পারেনি।

টিকা : কদমবুচি সমাচার! ২৮ নভেম্বর দুইজন নতুন মন্ত্রীসহ তিন মন্ত্রীর শপথ গ্রহণ শেষে বঙ্গভবনে এক অভিনব ও চমকপ্রদ কদমবুচির দৃশ্যের অবতারণা হয়। যারা উপস্থিত ছিলেন তারা কেমন উপলব্ধি করেছেন সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে পত্রিকায় বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, ওবায়দুল কাদের ও হাসান মাহমুদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কদমবুচি করার খবর পাঠ করে লেখকের অনুভূতি হয়েছে এই কদমবুচিটা মুরব্বী হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের প্রাপ্য ছিল। আমাদের দেশে মুরব্বীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য কদমবুচির রেওয়াজ আছে। তবে মন্ত্রী হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীকে কদমবুচি করার নতুন রেওয়াজ চালু হলো। তবে অনেকে এই কদমবুচিকে তোষামোদী রাজনীতির বিকৃত প্রকাশ বলে মনে করেন।

http://www.weeklysonarbangla.net/news_details.php?newsid=3592

ক্ষমতা ও সম্পদের লড়াই

 

অদিতি প্রসাদ | Issue Dated: ডিসেম্বর 9, 2012 
 


পা

টলিপুত্রের সিংহাসন দখল করার জন্য অশোক নিজের নিরানব্বই জন ভাইকে হত্যা করতে এতটুকুও দ্বিধা করেন নিঅনেক শতাব্দী পরের ঘটনা মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব দিল্লির মসনদ দখল করার জন্য নিজের পিতাকে আটক করেন ও ভাইদের হত্যা করেন৷ অনেক অনেক সময় পার হয়ে গেছে কিন্তু এখনও ভারতীয় রাজনীতির অন্দরে ক্ষমতার জন্য গুপ্ত শত্রুতা আজও ঘটে৷ একই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতার জন্য রত্তুক্ষয়ী লড়াইয়ে নেমে পড়তে দেখা যায়৷ পরিচিত পারিবারিক বৃত্তই হয়ে ওঠে শত্রুতার পরিমণ্ডল৷

পাশ্চাত্যের বর্তমান রাজনীতিতে অবশ্য এই ধরণের ভ্রাতৃঘাতী লড়াই দেখা যায় না৷ যেমন জর্জ ডাবলিউ বুশ  এবং জেব বুশ দুজনেই ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকার 41 তম প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সিনিয়রের ছেলে৷ তারা দুজনে যথাক্রমে টেক্সাস ও ফ্লোরিডার গভর্ণর ছিলেন৷ কিন্তু যখন বড়ভাই জর্জ ডাবলিউ বুশ বাবার পথে এগিয়ে চলতে শুরু করলেন এবং দেশের 43 তম প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হলেন তখন কিন্তু জেব বুশ জনসমক্ষে তাঁর দাদার ভাবমূর্তি খারাপ করতে উঠে পড়ে লাগেন নি৷ বরং জেব বুশ দাদার হয়ে ফ্লোরিডা ও অন্যান্য প্রদেশে প্রচারাভিযান করেন৷

 ভারতীয় রাজনীতিতে এমন পারস্পরিক সহযোগিতার চিত্র কোথাও নেই৷ বরং দেখা যায় এখানকার রাজনৈতিক পরিবারগুলি পূর্বপুরুষের পর উত্তরপুরুষের মধ্যে বেঁধে যায় ক্ষমতার লড়াই৷ কে পাবে ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার সেই নিয়ে রত্তেুর সম্পর্কের মধ্যে শুরু হয় রত্তুক্ষয়৷

 

 

আলাগিরি বনাম স্ট্যালিন

দক্ষিণের দুই ভাই আলাগিরি ও স্ট্যালিন দুজনেই আজ পরস্পরের প্রতি মারমুখী – তাঁর প্রত্যেকেই নিজেকে দাবি করতে থাকেন তাদের বাবা করুণানিধির রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের সফল উত্তরসূরী৷ গত বছরে করুণানিধিকে বড় ধরণের শারীরিক অসুস্থতার মধ্যে পড়তে হয়তাঁর স্পাইনাল কর্ডে অপারেশন হয়৷ এখন তিনি সম্পূর্ণত হুইলচেয়ারে বন্দি৷ সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসন নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন৷ আর তার পরেই তার দুই ছেলের মধ্যে উত্তরাধিকার কে পাবে সেই নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে৷

এদের দুজনের মধ্যে উত্তরাধিকারের লড়াইয়ের সূত্রপাত 2007 সালে৷ তখন দিনকরণ পত্রিকা আলাগিরি ও স্ট্যালিনের মধ্যে জনপ্রিয়তার সমীক্ষা চালায় – এই পত্রিকা পরিচালিত হয় করুণানিধির আত্মীয় মারান ভাইদের হাতে৷ এই পত্রিকার মতে করুণানিধি পরিবারে রাজনীতির রত্ন হল স্ট্যালিন৷2009 সালে যখন করুণানিধি স্ট্যালিনকে রাজ্যের ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী পদে নিয়োগ করেন তখন এই উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়৷ যদিও তাঁর বড় ভাইকে তখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসাবে স্থান করে দিয়েছিলেন করুণানিধি৷ বিধানসভা নির্বাচনে ডিএমকে-র সাফল্য স্ট্যালিনের অনুগামীদের এবার অধীর করে তোলে রাজ্যে ও দলে তাদের নেতার ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করার জন্য৷ অন্যদিকে আলাগিরি সমর্থকরাও কম যান নাতারাও আলাগরির সমর্থনে তার আরও বড় ক্ষমতা লাভের জন্য চাপ বৃদ্ধি করতে থাকে৷

এম কে আলাগিরির তুলনায় এন করুণানিধির মনোগত অভিপ্রায় ছিল স্ট্যালিনকেই রাজনৈতিক উত্তরাধিকার দিয়ে যেতে৷ রাজনীতির বিশেষজ্ঞরাও সেকথা মনে করেন৷ এদিকে করুণানিধি টুজি কেলেঙ্কারি থেকে মেয়ে কানিমোঝিকে বাঁচাতে ব্যস্ত হয়ে রয়েছেন৷ অন্যদিকে আলাগিরি দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক সামলাতে ব্যস্ত এর মধ্যে স্ট্যালিন রাজ্যে নিজের ক্ষমতা ক্রমশ বৃদ্ধি করে চলেছে৷ দলের মধ্যে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচেছ স্ট্যালিনের ক্ষমতা৷ অন্যদিকে করুণানিধিরও এতে প্রচছন্ন সায় রয়েছে৷ কিন্তু সবথেকে বড় ভয়ের কথা এটাই যেযদি স্ট্যালিন দলের সুপ্রিমো পদটাকে দখল করে নিতে পারে তাহলে আলাগিরিও ছেড়ে কথা বলবে না৷ সেও চেষ্টা করবে স্ট্যালিনের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার৷ দলের পুরনো কর্মীদের মতামত হল এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে জয়ললিতা তার সুযোগ নিয়ে ডিএমকে-কে নিয়ন্ত্রণহীন করে দেওয়ার চেষ্টা করবে৷

রাজনৈতিক পরিবারগুলোতে উত্তরাধিকারের লড়াই এখন আর শুধু ছেলে-মেয়েদের মধেই সীমাবদ্ধ থাকে না৷ ভাইভাইপোভাইঝিজামাই প্রভৃতির মধ্যেও রয়েছে৷ অনেক ক্ষেত্রে এমন সম্পর্কিত কোনও ব্যত্তিু উত্তরাধিকার লড়াইয়ে সামিল হচেছন দেখা যায়৷ মনে করে দেখুন মাত্র কয়েক মাস আগেই ভারতের এক নম্বর রাজনৈতিক পরিবারের জামাই নিজের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের কথা প্রচার করলেন৷ গান্ধি পরিবারের পারিবারিক সাম্রাজ্য রায় বরেলিতে মোটর বাইকে চড়ে প্রচার করার সময় গানি পরিবারের জামাই বলে বসেন, "যদি জনতা চায় তাহলে আমিও রাজনীতিতে আসতে পারি৷" এই ঘটনা বছরখানেক আগেকার৷ আশা করা যায় সম্প্রতি জমি কেলঙ্কারির পর তিনি হয়ত আর রাজনীতিতে অংশ নিতে চাইবেন না৷ রাজনীতিে এখন আর তাই নেতার পরিবারের মধ্যে বা নেতার মধ্যেও চক্ষুলজ্জার মত কোনও বস্তু নেই৷ রাজনীতি এখন বংশানুক্রমিক৷

পাওয়ার বনাম সুলে

অবশ্য অজিত পাওয়ারের ঘটনাটা ভিন্ন প্রকৃতির৷ এনসিপি সুপ্রিমো শরদ পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ার একটা সময়ে উত্তরাধিকার পাবেন এটা সকলেই মোটামুটি ধরে নিয়েছিল৷ কাকা শরদ পাওয়ারের অনুসারেই  অজিত চলছিলেন৷ কিন্তু বর্তমানে ক্ষমতার উত্তরাধিকার তুলে দেওয়া হয়েছে শরদ পাওয়ারের নিজের মেয়ে সুপ্রিয়া সুলের হাতে৷ স্বাভাবিক ভাবেই দুই খুড়তুতো ভাই-বোনের মধ্যে চাপা উত্তেজনার সূত্রপাত ঘটেছে৷ এখন রাজ্য রাজনীতিতে সুপ্রিয়া সুলের তুলনায় দীর্ঘদিন ধরে অজিত পাওয়ার রয়েছেন৷ এখন সাধারণ সমর্থকের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে তোলার জন্য সুপ্রিয়া সুলে গত কয়েক মাস ধরে মহারাষ্ট্রের গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন – 'যুবতী মেলাভা' এই প্রচার শুরু করেছেন৷ সকলেই এটা বুঝতে পারছেন যে এনসিপি তার পুরুষতান্ত্রিকতার জায়গায় এবার মেয়েকেই রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসাবে তুলে আনতে চাইছে৷

শরদ পাওয়ারের কলেজ জীবনের সঙ্গী ও মহারাষ্ট্র গান্ধি স্মারক নিধির প্রেসিডেন্ট কুমার সপ্তর্ষি জানান, "তিনি (শরদ পাওয়ার) তাঁর মেয়েকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসানো নিশ্চিত করার জন্য সব ধরণের কাজ করবেন৷ কিন্তু তাঁর এই ইচছায় প্রধান বাঁধা হয়ে  দাঁড়াবে তাঁরই ভাইপো অজিত পাওয়ার৷ কারণ তারও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ইচছা রয়েছে৷" সপ্তর্ষি আরও জানান যেঅজিত পাওয়ার নাকি তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামীদের কাছে বলে থাকেন যে, 'আমার কাকা মাত্র 38 বছর বয়সেই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেনআর আমার বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে গেল এখনও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ ঘটল না৷'

শরদ পাওয়ার বর্তমানে সুলেকে যশবন্তরাও চ্যবন প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নমিনেশন করেছেন৷ এখানে এখনও পর্যন্ত শরদ পাওয়ারের সরাসরি যোগ রয়েছে৷ এমনও শোনা যাচেছ যে হয়ত পরবর্তী নির্বাচনে অজিত পাওয়ার টিকিটই পাবেন না৷ এই সমস্ত সমস্যার সূত্রপাত ঘটে মহারাষ্ট্রের ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে অজিতকে 20,000 টাকার কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে যেতে হয়তারই কারণে তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়৷ তখন তিনি সেচ দফতরের দায়িত্বে ছিলেন৷ এখন ভাইপোর রাজনৈতিক জীবনটাই যেন প্রান্তসীমায় এসে দাঁড়িয়েছে৷

ভারতের রাজনীতির বড় বৈশিষ্ট্য হল এখানে পূর্বপুরুষের হাত থেকে উত্তর পুরুষের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিপত্তি ও অর্থসম্পদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে হস্তান্তরিত হয়৷ 1989 সালে যখন দেবী লাল ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী পদে যোগ দিলেন তখন নিজের রাজ্য হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী পদটাকে দ্রুত নিজের ছেলে ওমপ্রকাশ চৌটালার হাতে হস্তান্তরীত করে দিলেন৷ আবার দেখুন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ কিন্তু যখন তিনি পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে গেলেন তখন নিজের মুখ্যমন্ত্রী পদটাকে নিজের অশিক্ষিত স্ত্রী রাবড়ি দেবীকে হস্তান্তরিত করে দিলেন৷ যদিও পরবর্তীকালে বিহারের রাজনীতিতে তারা দুজনেই বাতিল হয়ে গেছেন৷

ভারতের রাজনৈতিক পরিবারগুলোকে অনেকটা মনে হয় পারিবারিক ব্যবসার মতো বাবার দোকান ছেলে গিয়ে বসবেতারপর নাতি পুতি চৌদ্দপুরুষ ওই ব্যবসাই করে যাবে৷ আবার ব্যবসাতেও কিন্তু একই রকম সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে ঝামেলা বাঁধেকে কম কে বেশি সেই নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা হয়ে যায়৷ এখন তো রাজনীতিটাও এক ধরণের ব্যবসা৷ বিশেষ করে যেসব কেলেঙ্কারির কথা প্রকাশ পাচেছতাতে দেখা যাচেছ এখন আর শুধু কোটি এখন হাজার হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি৷ এই অর্থমূল্যই তো বুঝিয়ে দেয় রাজনীতি কতখানি লাভজনক ব্যবসা৷ তাই সেখানে নিজের গদিতে ছেলেকে বসিয়ে দিয়ে যাওয়ার প্রতি প্রগাঢ় আগ্রহ থাকবে সেটাই স্বাভাবিক৷ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ যশবন্ত দেশমুখ জানান, "ব্যবসা ও রাজনীতির উত্তরাধিকারীর মধ্যে পার্থক্য একটাই ব্যবসায় শেয়ার ধারকদের মধ্যে মুনাফা সমান অনুপাতে ভাগ হয় আর রাজনীতিতে সেটা ঘটে না৷

রাজনীতির ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারের ঝামেলা সহজে মেটে না৷ অনেক সময় রাজনীতিক তিনি জীবিত থাকতে থাকতে কাউকে নিজের জায়গায় তুলে দিয়ে যান না তখন তাঁর মৃতু্যর পর তার সব উত্তরাধিকারীর মধ্যে লড়াই শুরু হয়ে যায়৷ যেমন দেখুন এআইএডিএমকে-র প্রতিষ্ঠাতা এমজিআর যখন মারা গেলেন তখন একদিকে তাঁর সিনেমা অভিনেত্রী থেকে রাজনীতিতে আসা স্ত্রী আর অন্যদিকে দলে প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি জয়ললিতা দাবি করে বসলেন নেতা নাকি তাকে উত্তরাধিকার দিয়ে গেছেন৷ সব মিলিয়ে দুই মহিলার মধ্যে লড়াই এতটাই চরমে পৌছল যে পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন তারা পৃথক পৃথক ভাবে লড়লেন৷

 

অখিলেশ যাদব বনাম অন্যরা

সমাজবাদী পার্টিতেও এখন সকলেই ক্ষমতার দৌড়ে এগিয়ে আসতে চাইছে৷ মুলায়ম সিং যাদব এই বছরের শুরুতে ছেলে অখিলেশের হাতে নিজের উত্তরাধিকার তুলে দিয়েছেন৷ এবং তারপরবর্তী হিসাবে সাফল্যের সঙ্গে অখিলেশ বিধানসভা নির্বাচনে সাফল্য পেয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন৷ কিন্তু গত আট মাস কেটে যাওয়ার পর এখন একে একে প্রকাশ পাচেছ৷ প্রথম দিকে মুলায়ম সিং ভেবেছিলেন যে তাঁর হাত থেকে ছেলের কাছে ক্ষমতার হস্তান্তর বেশ সহযেই সম্ভব হবে৷ কিন্তু এখন দেখা যাচেছ পরিবারের বৃত্তের মধ্যেই  এমন অনেকে রয়েছেন যারা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার উচচাকাঙ্খা রাখেন৷ একথাই জানা গেল লালজি ট্যান্ডনের মুখ থেকে৷ তাঁর মতে এই কারণেই নতুন সরকার কোনও কাজ করতেই পারছে না৷ অখিলেশের বিপক্ষে রয়েছে তাঁরই কাকা রাম গোপাল যাদব ও শিবপাল যাদব৷ এরা এতদিন মুলায়ম সিং যাদবের সঙ্গেই ছিল৷ শিবপাল যাদবের মধ্যে উচচাকাঙ্খা ছিল যে মুলায়মের পর সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হবে৷ অন্যদিকে রামগোপাল অখিলেশকেই সমর্থণ করেছেন৷ তাই এখন অখিলেশের সৌজন্যে দলে ও রাজ্যে রামগোপালের প্রভাব-প্রতিপত্তি অনেক বেশি৷ অন্যদিকে মুলায়মের রাজনীতির উত্তরাধিকারীর হিসাবে দাবিদার আরও একজন রয়েছেনতিনি হলেন মুলায়মের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী সাধনা গুপ্তার ছেলে  প্রতীক৷

 

সুখবীর বনাম মনপ্রীত

রাজনীতিবিদরা যখন দেখেন তাদের দুজন উত্তরাধিকারী রয়েছেএবং দুজনেই উচচকাঙ্খী তখন তাদের একজনকে রাজ্য ও অপর জনকে কেন্দ্রের ক্ষমতা বন্টন করে দেওয়া হয়৷ মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী রবি শঙ্কর শুক্লা তাঁর দুই ছেলে এস.সি শুক্লা ও ভি.সি শুক্লার মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন৷ করুণানিধি সেই চেষ্টা করেছেন আলাগিরি ও স্ট্যালিনের মধ্যে৷ একই অবস্থা পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদলের ক্ষেত্রে৷ তিনিও ছেলে সুখবীর ও ভাইপো মনপ্রীত বাদলের মধ্যে আটকে গেছেন৷

ভাইপো মনপ্রীতকে রাজনীতিতে নিয়ে এসেছে শিরোমণি আকালি দল৷ প্রকাশ সিং বাদল যখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী 1995 সালে তখন ছেলে সুখবীর সিং রাজনীতিতে সবে আগ্রহ বোধ করতে শুরু করেছে৷ এরপর কেন্দ্রতে ও সর্বভারতীয় স্তরেই সুখবীরের আানাগোন অনেক বেশি৷ সে তুলনায় এখন মনপ্রীত বরাবর আঞ্চলিক কাজকর্মে জোর দিয়ে রাজ্যে অনেক বেশি পরিচিত মুখ৷ 2007 সালে বিজেপির সঙ্গে শিরোমণি আকালি দল ক্ষমতায় এলে তখন সুখবীর বুঝতে পারেন রাজ্যেই আসল ক্ষমতা রয়েছে৷ 2009 সালে তাই প্রকাশ সিং বাদল অবশেষে রাজ্যের ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী পদে ছেলে সুখবীরকে বসালে ভাইপো মনপ্রীত বুঝতে পারে আকালি দল নিজের উত্তরাধিকারী ঠিক করে ফেলেছে৷ তখন থেকে মনপ্রীত এর বিরোধিতা করতে শুরু করেছে৷ এমনকি পিপলস পার্টি অফ পাঞ্জাব বলে একটা দলও শুরু করেছে৷

এই সমস্ত উত্তরাধিকারের পথ দেখিয়েছে আমাদের চাচা নেহরু৷ নিজে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মেয়ে ইন্দিরাকেও প্রধানমন্ত্রী হিসাবেই দেখতে চেয়েছিলেন৷ তার পরিণাম হল ইন্দিরা চাইলেন রাজীবকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে যখন এই অবস্থা তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদগুলিতেও একই ঘটনা ঘটবে সেটাই স্বাভাবিক৷    

http://www.thesundayindian.com/bn/story/%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%93-%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B2%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%87-/7/1819/    

বাংলায় মুসলিম আগমন, সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণ ও হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক (পর্ব দুই)

 
 
 
 
 
 
Rate This


বাংলায় মুসলিম অধিকার প্রতিষ্ঠার ইতিহাস অনুধাবন করতে হলে এদেশে মুসলমানদের আগমনের ধারাটি প্রথম বুঝতে হবে। বাংলায় মুসলমানদের সামরিক সাফল্য প্রতিষ্ঠার পূর্বে মুসলমানদের আগমন ও মুসলিম সমাজ প্রতিষ্ঠা তিনটি পর্বে সংঘটিত হয়েছিল। প্রথম পর্বটির শুরু আট শতক থেকে। এসময় আরব বণিকরা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালির সমুদ্র তীরে নোঙর ফেলেন। বাণিজ্যিক কারণে মুসলমান বণিকরা ধীরে ধীরে পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারত হয়ে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের সমুদ্র তীরাঞ্চলে এসে পৌঁছেছিলেন। এই আরব বণিকরা বাণিজ্যিক কারণে দীর্ঘদিন উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থান করেন। এদের কেউ কেউ স্থানীয় রমণী বিয়ে করেন। এভাবে সীমিত আকারে ঐ অঞ্চলে একটি মুসলিম সমাজ প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়। অবশ্য এই বণিক শ্রেণির মধ্যে ধর্মপ্রচারের কোনো উদ্দেশ্য কাজ না করায় এ পর্বে মুসলিম সমাজ বিস্তার তেমন গতি পায়নি। তবে এই বণিক মুসলমানদের রচিত পথ ধরেই একদিন সুফি সাধকদের আগমণ মুসলিম সমাজ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি রচনা এবং তারই ধারাবাহিকতায় তের শতকের শুরুতে বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পথ প্রস্তুত হয়। দ্বিতীয় পর্বে বাংলায় ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে সুফি সাধকদের আগমন ঘটে। এই পর্বের সময়কাল ১১ থেকে ১৩ শতক। সেন শাসন যুগে তাঁরা খুব নির্বিঘেœধর্ম প্রচার করতে পারেন নি। তৃতীয় পর্বের শুরু ১৩ শতক থেকে। এসময় বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার যাত্রা শুরু হয়।

বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পেছনে মুসলমান সেনাপতিদের সামরিক কৌশল আর যোগ্যতা যতটা না কাজ  করেছিল তার থেকে শতগুণ বেশি ভূমিকা ছিল এদেশের তৎকালীন সমাজ সংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের। মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বে বাংলার সমাজ সংস্কৃতির প্রকৃত অবস্থা অনুসন্ধানে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে আরো বেশ কিছুকাল পূর্বে। প্রকৃত অর্থে বাংলার সমাজ ব্যবস্থার ভিত্তি রচিত হয়েছিল হিন্দু-বৌদ্ধ এক মিশ্র সংস্কৃতির সাথে মুসলিম সংস্কৃতির সংস্পর্শ সৃষ্টির মাধ্যমে। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় দেখা যায় সাত শতকের শুরুতে রাজা শশাঙ্কের বৌদ্ধ দলনের প্রতিবাদে বাংলায় বৌদ্ধরা ক্রমে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় বৌদ্ধরা শক্তি সঞ্চয় করতে করতে এক সময় আট শতকের দিকে রাজ ক্ষমতায় বৌদ্ধ ধর্মীয় পাল শাসকদের উত্থান ঘটে। তবে অনেকটাই উদারনৈতিক পাল শাসকদের প্রশাসনিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাংলার রাজদণ্ডে দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকের অধিবাসী সেন রাজারা অধিষ্ঠিত হন। বাংলার প্রশাসনিক কাঠামোতে মুসলিম শক্তির অধিষ্ঠান আলোচনা করতে গেলে এই প্রেক্ষাপটটি বোঝা বেশ জরুরী। পাল রাজারা বাংলার মাটির সন্তান ছিলেন। তাঁরা দেশের মানুষের  চাওয়া পাওয়াকে মূল্য দিতেন। তাদের সময়ে মানুষ অনেকটা শান্তিতেই ছিল। কিন্তু সুদূর দক্ষিণাত্য থেকে আগত সেন শাসকগণ বাংলার মাণুষের চাওয়া পাওয়ার প্রতি ততটা গুরুত্ব দিতে না পারায় তাদের উপরে দিনের পর দিন বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়তে থাকে এদেশবাসী। একদিকে বৌদ্ধ ধর্মীয় পাল রাজাদের শাসন নীতি যেমন ছিল উদার ও মানবিক, বিপরীতে সেন শাসকদের শাসন নীতি ছিল অনুদার, সঙ্কীর্ণ ও দমনমূলক।
আর তাদের এই দমনমূলক শাসনের সময় মানুষ যখন অতিষ্ঠ ঠিক তখনই বিদেশী সুফিরা এদেশে আসতে থাকেন। সুফিদের মূল উদ্দেশ্য ধর্ম প্রচার হলেও প্রথমত জনগণের সাথে তাঁরা মিশে যেতে থাকেন। আর অত্যাচারে অতিষ্ঠ মানুষ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ঠাঁই পেয়ে যান সুফিদের  খানকাহয়। সুফিদের সাফল্যে তৎকালীন তুর্কি যোদ্ধারাও অনুপ্রাণিত হতে থাকেন। ইতিহাসের একটু পেছনের দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা দেখি সেন শাসন আমলে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় হিন্দু-বৌদ্ধ নির্বিশেষে বাংলার সর্বস্তরের মানুষের উপর তাদের একাধিপত্য সাধারণ মানুষকে হতাশ করেছিল। ধর্মচর্চা আর শাস্ত্রজ্ঞানের ক্ষেত্রেও ছিল তাদের একচ্ছত্র দাপট। এ অঞ্চলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। পরবর্তীকালে মুসলিম আধিপত্য বিস্তারের পর ভারতের হিন্দু সমাজ নিভু নিভু অবস্থায় কোনো রকম টিকে ছিল। শ্রী চৈতন্যদেব যখন শাস্ত্রচর্চায় আমজনতাকে অধিকার প্রদান করেন তখনো তাঁর বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণ সমাজ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। একটি বিষয় বলা যায়, তৎকালীণ ব্রাহ্মণ শ্রেণী অন্তজ শ্রেণীকে সমাজে অবহেলিত নিগৃহীত করে রেখেছিল। তাই তাদের কাছে হিন্দু ধর্মের সেন রাজাদের পতনে ভিনদেশী ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মুসলিম শাসকদের অনাহূত মনে হয়নি। বরঞ্চ সেন শাসনে অত্যাচারিত জনগণ নতুন একটি শাসকগোষ্ঠীর আগমনের পর তাদের আচরণ পরীক্ষা করার সুযোগই যেন নিতে চাইছিল। এই সেন মদদপুষ্ট ব্রাহ্মণরা শুধু ধর্মীয় আর সামাজিক বিধিনিষেধ আরোপ করেই তাদের কাজে ক্ষান্ত দেয়নি বরং মানুষের জীবন যাত্রায় সরাসরি নাক গলিয়ে তাদের সামাজিক জীবনের পাশাপাশি রাতের ঘুম দিনের স্বস্তিটুকু কেড়ে নিতেই যেন বদ্ধপরিকর হয়েছিল। ইতিহাসের সূত্র থেকে পাওয়া যায় সাধারণ হিন্দুদের সহায় সম্পত্তি গ্রাস করা এমনি তাদের হত্যা করলেও ব্রাহ্মণগণ বিচারের আওতায় আসতেন না। শেক শুভোদয়ার সূত্র থেকে অত্যাচারী লক্ষণসেনের শাসনামলে তার স্ত্রী বল্লভা আর তার শ্যলক কুমার দত্ত কর্তৃক সাধারণ মানুষের প্রতি নির্মম আচরণের কথা জানা যায়। পাশাপাশি বল্লাল সেনের তান্ত্রিক মতবাদের প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ আর কৌলিণ্য প্রথা জনগণ ও রাজশক্তিকে অনেকটাই বিপরীতমুখী অবস্থানে এসে দাঁড় করায়। এই শ্রেণীভেদ ইসলাম বিস্তারের জন্য একটি পটভূমি রচনা করে যার উপরে দাঁড়িয়েই ধর্ম প্রচার করেছিলেন সুফি সাধকরা। তাদের কর্মে প্রাথমিক সফলতা চূড়ান্ত সফলতায় রূপ নেয় সেন রাজবংশের পতনের পর থেকে।
বাস্তবতা বিচার করতে গিয়ে দেখা গেছে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় বাধা, ধর্ম পালনে  নানাবিধ বিধিনিষেধ  আর সমাজে লাঞ্ছনার পাশাপাশি সামন্তবাদী অর্থনীতি নিম্ন শ্রেণির মানুষকে আর্থিকভাবেও সর্বশান্ত করতে থাকে। জনমনে বিভ্রান্তির  ঠিক এই সময়েই আগমন ঘটতে থাকে সুফি সাধকদের। মুসলিম শক্তির রাজ্য বিস্তারের সাথে সাথে সুফি-সাধকদের  বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ধর্ম প্রচারের পথ অনেক বেশি সুগম হয়। যদিও তাঁদের কর্মকাণ্ডই রাজ্য বিস্তারের প্রামমিক ভিত্তি রচনা করেছিল। প্রকৃত অর্থে সুফিদের জীবনযাত্রার সরলতা আর মানবতার জয়গান শুনে দলে দলে মানুষ জমায়েত হতে থাকে সুফিদের পতাকাতলে। ভারতের প্রেক্ষাপটে বিচার করতে গেলে ইসলাম প্রচার ঘটেছিল মূলত দুইভাবে। এর একটি সুফিয়ানা তরিকা আর অন্যটি তুর্কানা তরিকা। সুফিয়ানা তরিকা হচ্ছে সুফিসাধক কর্তৃক আল্লাহর প্রেমবাণী প্রচার করে ইসলামের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করা। অন্যদিকে তুর্কানা তরিকা হচ্ছে তুর্কি যোদ্ধাদের ধর্ম প্রচারে বল প্রয়োগ করা। বাংলায় মূলত সুফিয়ানা তরিকার মাধ্যমেই ইসলাম ধর্ম প্রচারিত হয়েছে। মানবতার বাণীতে আকৃষ্ট করে মানুষকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করার প্রমাণ রয়েছে অনেক। বার শতকের শেষ বা তের শতকের শুরুর দিকে ভারতের রাজদণ্ড মুসলমান শাসকদের হাতে চলে আসলে তাঁরা বিভিন্ন দূরবর্তী প্রদেশ দখল করার চেষ্টা করতে থাকেন। তারই ধারাবাহিকতা হিসেবে মুহাম্মদ বিন সাম বা মুহাম্মদ ঘোরীর  সেনাপতি বখতিয়ার খলজী নদীয়া আক্রমণ করেন। তাঁর নদীয়া আক্রমণ ও লক্ষণ সেনের পরাজয়কে দেশের প্রচলিত ইতিহাসে বখতিয়ার খলজীর বাংলা বিজয় বলা হলেও একে বাংলা বিজয় বলাটা একদমই ঠিক হবে না। কারণ তাঁর নদীয়া ও লখনৌতি বিজয় পশ্চিম ও উত্তর বাংলার কিয়দংশই জয় করা। বাংলার বাকী অংশে সেন রাজা ও স্থানীয় হিন্দু রাজাদের ক্ষমতাই প্রতিষ্ঠিত ছিল। বখতিয়ারের নদীয়া বিজয়ের তারিখ ও শাসক হিসেবে তাঁর মর্যাদা জানার সুযোগ এতকাল তেমন ছিল না। পরে বখতিয়ারের মুদ্রা বলে শনাক্ত করা মোহাম্মদ বিন সাম নামাঙ্কিত গৌড় বিজয়ের স্মারক মুদ্রা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১২০৪ সালে নদীয়া বিজয়ের পরের বছর বখতিয়ার লখনৌতি বা গৌড় দখল করেন। তিনি শাসন ব্যবস্থার সুবিধার জন্য তার অধিকারকৃত পুরো অঞ্চলগুলোকে কয়েকটি ইকতা বা প্রদেশে বিভক্ত করেছিলেন। সামাাজিক কর্মকাণ্ডের অংশ  হিসেবে বখতিয়ার খলজি মসজিদ, মাদ্রাসা  নির্মাণ করেন।।
বখতিয়ার খলজির হাত ধরে বাংলার প্রচলিত সংস্কৃতির সাথে বিদেশী সংস্কৃতির সংমিশ্রণে নতুন ধারার চর্চার যে পথ রচিত হলো তা চলেছিল দীর্ঘদিন। এরপর বখতিয়ার খলজির মৃত্যুর পর তার অনুসারী খলজিরা নিজেদের মধ্যে হানাহানিতে লিপ্ত হয়ে শাসন ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়। তারপর ১২২৭ সালের দিকে সুলতান শাসস উদ্দিন ইলতুতমিশের বড় ছেলে নাসির উদ্দিন মাহমুদ গিয়াস উদ্দিন ইওয়াজ খলজিকে পরাজিত ও হত্যা করে বাংলা দখল করেন। ১২৮৭ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান গিয়াস উদ্দিন বলবনের মৃত্যু পর্যন্ত বাংলা দিল্লীর অধীনে ছিল। এই অবস্থায় লখনৌতির কোনো কোনো শাসক স্বাধীনতা ঘোষণার চেষ্টা করলেও তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। পরবর্তিকালে বলবনের মৃত্যুর পর বুগরা খানের পুত্র কায়কাউস রুকন উদ্দীন কায়কাউস উপাধি ধারণ করে অনেকটা দিল্লির সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলা শাসন করতে থাকেন। এরপর বাংলার শাসন ক্ষমতায় আসেন শাসস উদ্দিন ফিরুজ শাহ।
বাংলার মধ্যযুগের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটা ঘটে ১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ফখরুদ্দিন মুবারক শাহের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্যদিয়ে। যা মোগল অধিকারে পূর্ব পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। পরবর্তীকালে বাংলার শাসন কাঠামোতে কয়েকজন বিখ্যাত সুলতানের আবির্ভাব লক্ষ করা যায়। শামস উদ্দিন ইলিয়াস শাহ, সিকান্দর শাহ, গিয়াস উদ্দিন আযম শাহ ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। পরবর্তীকালে হিন্দু রাজা গণেশ বাংলার শাসন ক্ষমতায় কিছুদিনের জন্য অধিষ্ঠিত থাকলেও জৌনপুরের ইব্রাহীম শর্কির হস্তক্ষেপে গণেশ পরাভূত হন। এরপর পরবর্তী ইলিয়াসশাহী বংশের শাসনকালে আমরা রুকন উদ্দীন বারবক শাহ, শামস উদ্দিন ইউসুফ শাহ, জালাল উদ্দিন ফতেহ শাহ প্রমুখ সুলতানের শাসনের পর হাবশী দাস বংশীয় শাসনের ফলে বাংলার শাসনকাঠামো অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। এরপর হুসেন শাহী বংশের চারজন সুলতান রাজত্ব করেন। তাদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন আলাউদ্দিন হুসেন শাহ ও নাসির উদ্দিন নুসরত শাহ। শাসক হিসেবে তাঁরা তাঁদের  খ্যাতি ছড়িয়ে দেন।
আমাদের প্রচলিত ইতিহাস গ্রন্থে রাজনৈতিক ইতিহাস বেশ সহজলভ্য বলে বর্তমান লেখাগুলোতে রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদলের কাহিনী বাদ দিয়ে সমাজ সংস্কৃতিকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। এর ধারবাহিক পরবর্তী পর্বে বাংলায় মুসলিম সমাজ প্রতিষ্ঠায় সুফিদের ভূমিকা কেমন ছিল, শ্রী চৈতন্যদেবের ভক্তি আন্দোলন কিভাবে বাংলার হিন্দু সমাজকে জাগ্রত করাতে পেরেছিল, শ্রী চৈতন্য হিন্দু ব্রাহ্মণ্যবাদের যাঁতাকল ভেঙে বের হয়ে এসে কিভাবে ভক্তি আন্দেলনকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন তা আলোচিত হবে।
মুসলিম আগমনের আদিপর্বে মুসলিম সংস্কৃতির সাথে হিন্দু সামাজিক রীতি ও প্রথার সংমিশ্রণের ফলে একটি নতুন ধারার সমাজ কাঠামো গড়ে উঠতে দেখা যায়। এখানে একটি বিষয় সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে। তা হল গ্রহণ বর্জনের উদারতা। হিন্দু ধর্মে ব্রাহ্মণদের একচ্ছত্র আধিপত্য আর শ্রেণি ভেদের বিপরীতে মুসলিম সমাজের সাম্য আর ভ্রাতৃত্বের বন্ধন হিন্দু সমাজকেও আলোড়িত করে। অন্যদিকে ভারতের বৈচিত্রময় হিন্দু সংস্কৃতি মুসলিম শাসকবর্গসহ অন্যান্যদের প্রভাবিত করে। রাজদণ্ড ধারণের পর মুসলিম শাসকবর্গের সভাসদ, রাজদরবারের কর্মচারী, অমাত্যসহ নানাপদ অলংকৃত করার মাধ্যমে হিন্দু জনগোষ্ঠী মুসলিম শাসকদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ পায়। অন্যদিকে মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতিবেশী হিসেবেও হিন্দুগণ মুসলমানদের সংস্পর্শে আসেন। বাস্তবতার নিরীখে পর্যবেক্ষণ করলে  দেখা যায় শাসকগোষ্ঠী শাসিত শ্রেণিকে তাদের আদর্শ, সংস্কৃতি আর জীবনধারার নানাদিকে প্রভাবিত করে থাকেন। উদাহরণ হিসেবে বৃটিশ শাসন আমলে এদেশীয় সংস্কৃতির উপর নানামুখী প্রভাবের কথা বলা যেতে পারে। একই ভাবে ভারতে মুসলিম শাসকগোষ্ঠীর রাজদণ্ড ধারণের পর এদেশীয় হিন্দুদের অনেকেই তাদের বৈচিত্রময় সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হন। তৎকালীন কবি জয়ানন্দের বিবরণ হতে এর সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। মধ্যযুগের কবি জয়ানন্দ লিখেছেন 'জগাই ও মাধাই নামক দুইজন ব্রাহ্মণ ফারসি কবিতা আবৃত্তি করতো এবং মাংস ভক্ষণ করতো'। তিনি আফসোস করে বলেছেন 'বিধবা রমনীরা এখন মাছ মাংস ভালবাসতে শিখেছে পাশাপাশি অগুণিত ব্রাহ্মণগোষ্ঠীর ও মাছ মাংসের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি রয়েছে'। আমরা গোড়া মতাদর্শের কবি জয়ানন্দের দেয়া সূত্র থেকে তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা করতে পারি। এখানে আমরা দেখি মুসলিম শাসকগোষ্ঠীর রাজদণ্ড ধারণ তৎকালীন গোড়া মতাদর্শের হিন্দু সমাজের সংস্কৃতির নানা দিক, খাদ্যাভাস, শ্রেণিভেদ, নারীর সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদা, পোশাক-পরিচ্ছদসহ নানা আঙ্গিকে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছিল। মানিক চন্দ্র রাজার গানে একজন হিন্দু রাজপুত্রের পাগড়ী পরিধান করার কথা জানা যায়। অন্যদিকে নতুন কলিঙ্গ শহর পত্তনের পর সেখানকার কালকেতুর রাজদরবারে যাওয়ার সময় জনৈক কায়স্থ ভাড়ুদত্তও পাগড়ি পরেছিলেন বলে জানা যায়। এছাড়া মুসলিম ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানে আগত হিন্দু অতিথিদের অনেকে মুসলমানদের মতো পোশাক পরিধান করতেন। মুহাম্মদ কবির রচিত বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থে মধুমালতীতে যুবরাজ মনোহরের পাগড়ি ও আবা নামক ঢিলা জামা পরিধানের তথ্য রয়েছে যা একান্তই মুসলিম সমাজে প্রচলিত ছিল। অন্যদিকে প্রখ্যাত হিন্দু কবি রামায়ণের রচয়িতা কৃত্তিবাস, মনসা মঙ্গলের রচয়িতা বিজয়গুপ্ত, মনসা বিজয়ের রচয়িতা বিপ্রদাস পিপিলাই এবং বৃন্দাবন দাস ঠাকুরের চৈতন্য ভাগবতের মধ্যে তৎকালীন সম্ভ্রান্ত হিন্দু রমণীদের মুসলমানি পোশাক পরতে দেখা যায়। বিবরণীতে তাঁদের ঘাগরা, কামিজ, সালোয়ার, ওড়না এবং চোলি ব্যাবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। পাশাপাশি অনেকে মুসলমান সমাজে প্রচলিত নানা ধরণের সুগন্ধিও ব্যবহার করতেন। এই সকল তথ্যসূত্রের আলোকে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ দীনেশ চন্দ্র সেন মন্তব্য করেছেন 'মুসলিম আমলে হিন্দু অভিজাত সম্প্রদায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মতোই পোশাক পরিধান ও কেশবিন্যাস করতেন। শুধু সিঁথিতে সিঁদুর আর কপালে তিলক বা চন্দনের ফোঁটার উপস্থিতিতে তাদের হিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব হতো। অন্যদিকে হিন্দু সমাজ থেকে সাধারণ মুসলিম সমাজে লুঙ্গি, ফতুয়া, ধুতি পাঞ্জাবীর মতো পোশাক প্রচলিত হতে দেখা যায়। অনেক মুসলিম রমণীকে ভারতীয়দের আদলে শাড়িতে অভ্যস্ত হতে দেখা যায়। পরবর্তিকালে শাড়িই হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে প্রায় সকল ভারতীয় রমণীদের সাধারণ পোশাকে পরিণত হয়। তবে হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের  মানুষই এই দেশের আবহাওয়া জলবায়ুর কথা বিবেচনা করে আঁটসাঁট পোশাক পরিধান করতো না বললেই চলে। প্রায় সবাই ঢোলা  পোশাকে অভ্যস্ত ছিল।
দুই ধর্মের পারস্পরিক সংস্পর্শের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে দেখতে পারি হিন্দু সমাজে প্রচলিত লক্ষ্মীসরার মতো মুসলিম সমাজে কদমরসূল এর প্রচলন। যদিও বিষয়টি বিশ্লেষণ করার অবকাশ রয়েছ্।ে গবেষণালব্ধ তথ্যে অনুমান করা যায় এদেশে মাজারের জনপ্রিয়তা হিন্দু সমাজের পুজা থেকে চলে আসতে পারে। যদিও বিষয়টি নিয়ে বিশ্লেষণ করার অবকাশ আছে। হিন্দু সমাজে প্রচলিত পণ প্রথা থেকে মুসলিম সমাজের রক্ত রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে যৌতুক নামক ভয়াবহ এক সামাজিক ব্যাধি। তৎকালীন ভারতের হিন্দু আর মুসলিম রাজদরবারের মধ্যে একটা বিষয়ই কেবল ভিন্ন ছিল আর তা হচ্ছে মুসলিম প্রশাসনে প্রাধাণ্য ছিল কাজি বা বিচারকদের এবং হিন্দু প্রশাসনে প্রাধান্য ছিল ব্রাহ্মণদের। হিন্দু জমিদারগণ মুসলিম আচার অনুষ্ঠান পালন করার পাশাপাশি সুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ রাজকার্যে নিয়োগ করতেন। মুকুন্দরামের চণ্ডিমঙ্গল কাব্যের তথ্যে জানা যায় গুজরাটের নতুন শহরের রাজা কালকেতু তার সৈন্যদলের অশ্বারোহী বাহিনীর জন্য বেশ কয়েকজন মুসলিম সৈন্য নিয়োগ করেন। এ থেকে ধারণা করা যায় হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক সময়ের আবর্তে অনেকটা নৈকট্য লাভ করে।
ইতিহাস ও সাহিত্যিক নানা সূত্র থেকে দেখা যায় সেন শাসনামলে এসে হিন্দু সম্প্রদায় ব্রাহ্মণদের মাধ্যমে নানা শোষণ নির্যাতনের শিকার হতো। কিন্তু মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পর মুসলমানদের সমাজের সংস্পর্শে এসে হিন্দু সমাজে ব্রাহ্মণদের সেই একধিপত্য অনেকাংশে খর্ব হয়। তাদের অধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে সাধারণ হিন্দু জনগোষ্ঠী অনেকাংশেই মুক্তিলাভ করতে সক্ষম হয়। প্রেক্ষাপট বিচার করলে আমরা বলতে পারি মুসলিম শাসকদের ভূমিকায় ব্রাহ্মণদের একাধিপত্য খর্ব করার পরেই সাধারণ শ্রেণীর হিন্দুরা তাদের ধর্মগ্রন্থগুলো পাঠ করা, বিশ্লেষণ করা কিংবা সমালোচনা করার সুযোগ পায়। গোয়ালা রামনারায়ণ গোপ, ভাগ্যমন্ত ধুপি প্রমুখ নিচু শ্রেণীর হিন্দুর পাশাপাশি নাপিত, হাড়ি ও সাহারাও কাব্যচর্চা ও বিদ্যালাভের সুযোগ পায়। আমরা এর অনুষঙ্গ হিসেবে গণমানুষের দেবী মণসাকে নিয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কাব্য লিখিত হতে দেখি। তবে হিন্দু সমাজের এহেন পরিবর্তনের পেছনে মুসলিম শাসকবর্গের ভূমিকাকে নেহায়েত ত্চ্ছু করে দেখার অবকাশ ছিল না। ইতিহাস যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায় বাংলায় হিন্দুদের সমাজ সংগঠনে সুলতানদের রাজদরবারে কর্মরত হিন্দু কর্মকর্তা কর্মচারীদের একটা বিশেষ ভূমিকা ছিল। আলাউদ্দিন হুসেন শাহ এই দিক দিয়ে সবার চেয়ে বেশি এগিয়ে ছিলেন। দবির খাস ও সাকর মল্লিক উপাধি খ্যাত দুই ভাই রূপ-সনাতন ছিলেন হুসেন শাহের দরবারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। সুখময় মুখোপাধ্যায়ের দেয়া (বাংলার ইতিহাসের দুশো বছরÑস্বাধীন সুলতানদের আমল) কিছু খোঁড়া যুক্তিকে কেন্দ্র করে পরবর্তিকালের ইতিহাসবিদ রিচার্ড ইটন (ঞযব জরংব ড়ভ ওংষধস ধহফ ঃযব ইবহমধষ ঋৎড়হঃরবৎ) একটু তর্ক করার অবকাশ খুঁজে পান। তাঁর মতে এই রূপ-সনাতন-এর উচ্চপদে নিয়োগ তৎকালীন সময়ে হিন্দু মুসলিম সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক প্রমাণে যথেষ্ট নয়। তাঁরা এটিকে নিছক রাজনৈতিক কৌশল বলে দাবি করেছেন। কিন্তু তথ্যপ্রমাণ থেকে জানা যায় আলাউদ্দিন হুসের শাহের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন মুকুন্দ দাস। আলাউদ্দিন হুসেন আর যাই হোক রাজনৈতিক কৌশল প্রয়োগ করতে গিয়ে কখনই নিজের জীবন নিয়ে খেলবেন না। হুসেন শাহের তাই আমরা যুক্তিবিচার আর তথ্যপ্রমাণের আলোকে রিচার্ড ইটনের খোঁড়া যুক্তিকে প্রত্যাখ্যান করতে পারছি। পরবর্তিকালে রিচার্ড ইটনের মতো ইতিহাস লেখকদের প্রভাবে আচ্ছন্ন কোনো কোনো রচনাও মধ্যযুগের সমাজ ইতিহাসের সত্য খণ্ডিত করেছে।
নিজেদের আভিজাত্যের অচলায়তনের ভেঙ্গে যাওয়ায় বৈষ্ণব প্রভাবিত নিম্নশ্রেণীর হিন্দুদের প্রতি ব্রাহ্মণরা খর্গহস্ত হয়ে পরে। কারণ তাদের মনে এক ভীতির সঞ্চার হয় যে এই নিুশ্রেণি যাদের তারা চিরকাল পায়ের নিচে দলিত মথিত করেছে তাঁরা যদি একবার শিক্ষা-দীক্ষা আর সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্্রাহ্মণদের থেকে এগিয়ে যায় তাহলে কোনদিনই আর ব্রাহ্মণরা সমাজে তাদের অবস্থান ফিরে পাবে না। দারুন হতাশায় জর্জরিত ব্রাহ্মণদের তূণ থেকে বের করা একেকটি তীর যখন ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসছিল তখন তারা সিদ্ধান্ত নেয় একটি অভিনব পদ্ধতি অনুসরণ করে বাঙলার সামাজিক সাংস্কৃতিক ইতিহাসকে সাম্প্রদায়িকতার বিষে নীল করতে হবে। তারা এই প্রচারও চালায় নিু শ্রেণীর মানুষ যদি ধর্মগ্রন্থ পাঠ করে তাহলে এর ক্রিয়া শক্তি বিনষ্ট হবে। কিন্তু তৎকালীন হিন্দুদের সামনে জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেল মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ আল-কুরআন। যদি স্বয়ং সুলতান থেকে শুরু করে সবাই পড়লে জাত না যায়, হিন্দু ধর্মগ্রন্থ তাহলে এক ব্রাহ্মণ বাদে অন্যরা পড়লে বা চর্চা করলে বা বিশ্লেষণ করলেও কোন জাত যাবে না।
মুসলমান শাসকদের কৌশলে বিভিন্ন নিুশ্রেণীর হিন্দুরা যেখানে নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পেয়ে তাদের সামাজিক সাংস্কৃতিক মর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছিলেন সেখানে অনেক  ব্রাহ্মণও পরিস্থিতির চাপে পড়ে তাদের নীতিগত দিকে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হন। এই সময়ে ব্রাহ্মণ্যবাদে সাধারণ হিন্দুদের মধ্যে বিশেষত কায়স্থ শ্রেণির হিন্দুরা শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রগতি সাধনে সক্ষম হয়েছিল। বিদ্যাচর্চার দ্বার উন্মুক্ত হওয়াতে এই সকল ব্যক্তিবর্গ তাদের প্রতিভার সাক্ষর রেখে বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যের বিশেষ উন্নতি সাধনে সহায়তা করেছিল। প্রখ্যাত কবি গুণরাজ খান বা মালাধর বসু, কবীন্দ্র পরমেশ্বর, শ্রীকর নন্দী, যশোরাজ খান, কাশীরাম দেব, বিজয় গুপ্ত, লোচনদাস, কৃষ্ণদাস  কবিরাজ, গোবিন্দ দাস প্রমুখ কবি সাহিত্যিকদের প্রায় সবাই ছিলেন বৈদ্য কিংবা কায়স্থ শ্রেণীর।
বাংলার রাজদণ্ডে মুসলিম শক্তির আগমনের পর সব থেকে উল্লেখযোগ্য সামাজিক সংস্কার ছিল কুলীন বা কৌলিণ্য প্রথার উচ্ছেদকরণ। কুলীন প্রথার মাধ্যমে একটি শ্রেণিকে সমাজের সিংহাসনে বসানো ও অপর জাতিগোষ্ঠীর সম্মান ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছিল সেন শাসক বল্লাল সেনের আমলে। সেন রাজা লক্ষণ সেনের আমলে হিন্দু ব্রাহ্মণদের একধিপত্য, মাত্রাতিরিক্ত গোঁড়ামি আর অনুদার ধর্মনীতি হিন্দু সমাজের ভিত্তিকে একেবারেই দুর্বল করে দিয়েছিল। ব্রাহ্মণদের ভূমিকার কারণে এসময় হিন্দু ধর্ম একটি বিশেষ শ্রেণির প্রধান্য আর কিছু আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের সারসংক্ষেপ হয়ে যায়। তথাকথিত সুবিধাভোগী লোভী আর সুবিধাবাদী ব্রাহ্মণগণ যেখানে তাদের নিচু শ্রেণীকে ঘৃণার পাশাপাশি মুসলিম শাসকদের ম্লেচ্ছ এবং অস্পৃশ্য বলে কৃত্রিমভাবে দূরে থাকার ভান করতো সেখানে নিচু শ্রেণির হিন্দুরা সামাজিকভাবে একটি মর্যাদা লাভের আশায় ধীরে ধীরে মুসলমানদের সাহচর্যে আসতে শুরু করে।
ব্রাহ্মণ্যবাদ বিকাশে পুরোহিতদের একধিপত্য সমাজে নারীর অবস্থানের সাথে কোনো ভোগ্যপণ্য কিংবা পশুর অবস্থানের তেমন পার্থক্য রাখেনি। কিন্তু মুসলিম সমাজ প্রতিষ্ঠার পর নারীরাও তাদের কৃতিত্বের যথাযথ মর্যাদা পেতে শুরু করে। আসলে তখনকার সমাজকে মুসলিম সমাজ বলাটা ঠিক হবে না। তখন আসলে গ্রহণ বর্জনের উদারতার মধ্য দিয়ে হিন্দু মুসলিম সংস্কৃতির একটি মডারেট রূপ বাংলায় বিরাজ করছিল। কুলীন উপাধিধারী ক্ষমতালোভী আর স্বার্থান্বেষী ব্রাহ্মণদের নানামুখী চোখরাঙানি এমনি সমাজচ্যুত করার হুমকিকেও অগ্রাহ্য করে নিচু শ্রেণির হিন্দুরা মুসলমানদের সাহচার্যে আসতে থাকে। ফলে তারা বিভিন্নভাবে লাভবান হয়। অন্যদিকে মুসলমানরাও একান্ত বিশ্বস্ত এদেশীয় একটি শ্রেণির সহায়তা লাভ করে তাদের শাসন কাঠামোর ভিত্তি মজবুত করার পথ পেয়েছিল। বিশেষত ব্রাহ্মণদের সাথে বিরোধের ফলে সমাজচ্যুত হয়ে হিন্দু বেশ কয়েকটি নতুন দলের জন্ম দেয়। তারা পরবর্তিকালে মুসলমানদের সাথেই যুক্ত হয়েছিল। বিশেষত এই সব সমাজচ্যুত হিন্দুদের মধ্যে শেরখানী, শ্রীমন্তখানী আর পিরালি শ্রেণীর প্রভাবেই কৌলিণ্য প্রথা তিরোহিত করা সম্ভব হয়। তবে অবাক করার বিষয় হলো এই গোঁড়া ব্রাহ্মণদের কেউ কেউ সামাজিক অবস্থান সংহত করতে মুসলিম শাসকবর্গ এমনকি নিচু শ্রেণীর হিন্দুদের সাথে পর্যন্ত আপোস করেছে। দেবীবর ঘটক নামক এক ব্রাহ্মণের পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যকে ব্রাহ্মণরা সমাজচ্যুত করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত  পরিবার রক্ষার্থে তিনি একটি নিয়ম বের করেন। যার আওতায় তারা তাদের প্রাক্তন সামাজিক অবস্থান উদ্ধার করতে সক্ষম হন। ঠিক এর পাশাপাশি কায়স্থ সমাজেও একটি সংস্কারের ছোঁয়া লাগে। একজন কায়স্থ প্রধান পরমানন্দ বসু কায়স্থদের সমাজে প্রচলিত কৌলিণ্য প্রথার উপর ভিত্তি করে বিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিয়ম কানুনে বেশ কিছু পরিবর্তন সাধন করেন। তৎকালীন বাংলার সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্কারের ফসল হিসেবে সকল সাম্প্রদায়িকতার নাগপাশ ছিন্ন করে কবি চণ্ডিদাস-এর কন্ঠে উচ্চারিত হয়Ñ
' শুনহে মানুষ ভাই, সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই '॥
ধর্মপুজা নামে একটি লৌকিক ধর্মীয় বিশ্বাস হিন্দু সমাজের উপর মুসলিম সমাজ ও জীবনাচারণের প্রভাব প্রমাণের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠা সম্প্রদায়ের মূল বৈশিষ্ট্য এরা একেশ্বরবাদী ছিলেন। ধর্মঠাকুর নামে পরিচিত এই সম্প্রদায় সকল ধর্মমতের মানুষের একাতœ হয়ে ও মিলেমিশে বসবাস করার পক্ষপাতী ছিলেন। এই বিশেষ সম্প্রদায়ের উত্থান পরবর্তীকালে হিন্দু সমাজে ভেদাভেদ  ও বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণি বিন্যাস রোহিতকরণে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। পরবর্তীকালে অনেকটাই মুসলিম সুফি মতবাদের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত  বৈষ্ণব মতবাদেও শ্রেণীভেদের বদলে মানুষের ঐক্যের প্রতি জোর দেয়া হয়। প্রকৃত অর্থে মুসলিম সমাজের দৌর্দণ্ড প্রতাপের মাঝে শ্রী চৈতণ্যদেবের মানব ধর্ম প্রচারের জন্যই হিন্দু ধর্ম ও হিন্দু সমাজ টিকে যায়। বৈষ্ণব মতাদর্শী কীর্তনীয়ারা তাই যত বেশি মুসলিম সমাজের সাথে বিরোধিতায় জড়িয়েছিলেন তার থেকে ঢের চক্ষুশূল হন ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুদের। বর্তমান সময়ের মধ্যযুগের আঁকর সূত্র বিশ্লেষণ না করা কোনো কোনো ইতিহাস চর্চাকারী বিশেষত ভারতের সাবঅল্টার্ণগ্র"প-এর চোখে দুই একটি অংসঙ্গতি অনেক বড় হয়ে ধরা পড়েছে। তারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বলার চেষ্টা করেছেন মুসলিম শাসকবর্গ কীর্তনীয়াদের অবাধ কীর্তনে বাধা দিয়েছেন। কিন্তু ইতিহাসের সূত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে গভীর রাত্রে মানুষের ঘুমানোর সময় সমস্যা করে 'হরে কৃষ্ণ হরে রাম বলে ঢোল করতাল পিটে চিৎকার করায়' সমাজের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের অনুরোধে কাজি এই ধরণের কোন আদেশ দিতে বাধ্য হয়ে থাকতে পারেন। এই ধরণের বিষয়কে সামনে রেখে সাবঅল্টার্ণ গ্র"প যেভাবে চোখ বন্ধ করে বর্তমান সময়ের হিন্দু মুসলিম দা-কুমড়া সম্পর্কের বিপরীতে অতীতের সেকুলার ইতিহাসকে একটি নির্মিত আদিকল্প বলে উপস্থাপনের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে তা নিতান্তই অমূলক, বিভ্রান্তিকর এবং সাম্প্রদায়িকতার বিষে বিষাক্ত। বরঞ্চ চৈতণ্য চরিত কাব্যে হিন্দু কবিদের জবানী থেকেই জানা যায় চৈতণ্য বিরোধী অভিযোগ যাচাই করে নদীয়ার কাজী কোনো দোষ দেখতে পাননি। তাই তিনি চৈতণ্যদেবকে স্বাধীনভাবে তাঁর কীর্তন প্রচারের অনুমতি দিয়েছিলেন।
মুসলিম অধিকারের  আদিপর্বে বখতিয়ার খলজীর মুদ্রা আবিষ্কারের পর থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে হিন্দু প্রতীকের ব্যবহার, মসজিদের নামকরণ, তোঘরা লিপিতে স্বরস্বতীর বাহন রাজহাঁসের সাঁতার কাটার দৃশ্যে হিন্দু প্রভাবের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। পাশাপাশি হিন্দু সমাজে নানা ধর্ম সম্প্রদায়ের উত্থান তৎকালীন সময়ে হিন্দু মুসলিম সুম্পর্কের প্রতিই ইঙ্গিত করে। দুই একটি বিচ্ছিন্ন বিতর্ক কখনই ইতিহাস হিসেবে স্বীকৃতি পায় না। এগুলো শুধু বিতর্কের টেবিল আর বক্তৃতার মঞ্চে ঝড় তুলতে পারে মাত্র।
বিচ্ছিন্ন দুই একটি শত্র"তার বিষয় বাদ দিলে হিন্দু মুসলিম সমাজে উন্নত একটি সামাজিক সম্পর্ক ছিল।  মোঘল আক্রমণের সময় বারভুঁইয়াদের নেতৃত্বে হিন্দু মুসলিম সম্মিলিত বাহিনীর প্রতিরোধেই মোঘল বাহিনী বার বার পর্যুদস্ত হয়। বিশেষত শ্রীপুরের রাজা চাঁদ রায় ও কেদার রায় সোলায়মান লোহানীকে তাদের সেনাবাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করেন। এগুলো আর কিছুই নয় হিন্দু-মুসলিম বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক বিশ্বাসের প্রমাণ। ভুলুয়া তথা বর্তমান নোয়াখালীর হিন্দু জমিদার অনন্ত মাণিক্য তার বাহিনীর প্রধান নিযুক্ত করেছিলেন মির্জা ইউসুফ বারলাসকে। কবি বিজয়গুপ্তের মনসামঙ্গল কাব্য হতে জানা যায় চাঁদ সওদাগরের জাহাজে অনেক মুসলমান কর্মচারী ছিলেন। পাশাপাশি চাঁদ সওদাগরের ছেলে লক্ষীন্দরের বিয়েতে নয়শত মুসলিম গায়ক যোগদান করেছিলেন। আর চাঁদ সওদাগর তার ছেলের বিয়েতে হাসনাহাটির কাজিকে প্রচুর পান প্রদান করেছিলেন। এই রকম আরো অনেক বিষয় আছে যা তৎকালীন সমাজে হিন্দু মুসলিম সুসম্পর্কের প্রতি ইঙ্গিত করে। পাশাপাশি হিন্দু ব্রাহ্মণদের অধিকার হরণ করে গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়াতে ব্রাহ্মণগোষ্ঠী কোনদিনই মুসলিম সম্প্রদায় কিংবা মুসলিম শাসকদের মেনে নিতে পারেনি। তারা মুসলমানদের প্রতি যবন ও ম্লেচ্ছ শব্দ প্রয়োগে একটি চিরস্থায়ী বিবাদের বিষবৃক্ষ রোপন করেছিলেন তা আজ অবধি তাদের অনুসারীরা জারি রেখেছে। আর বাংলার ইতিহাসের পাঠপ্রেক্ষিত বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখি এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুদের হাতেই রচিত। এখানে বর্ণিত হিন্দু মুসলিম সম্পর্ক আর তথাকথিত নিচু শ্রেণীর কাহিনী মনসা মঙ্গলের কাহিনীতে আকাশ পাতাল ফারাক স্পষ্টত ধরা পড়ে। আমরা রমেশ চন্দ্র মজুমদারের মতো একজন বিখ্যাত ইতিহাসবিদকেও সাম্প্রদায়িক মানসিকতার উর্ধে উঠতে দেখিনি যা কখনই কাম্য ছিল না। তিনি বখতিয়ার খলজির বাংলা জয়কে খাট করেন লিখেন '…বখতিয়ার নামক একজন তুর্কি জায়গীরদার বাঙলা দখল করে'। তিনি এখানে আর একটি বিষয় বেমালুম ভুল করেন। বখতিয়ার জয় করেছিলেন নদীয়া ও লখনৌতি, সমগ্র বাংলা নয়। এখন রমেশ চন্দ্র মজুমদারের পথ ধরে যদি কোন মুসলিম উগ্রপন্থি ইতিহাসবিদ বর্ণণা দিতে শুরু করেন 'লক্ষণ সেন নামক একজন সেন বংশীয় বৃদ্ধ রাজাকে পর্যুদস্ত করে তুর্কি বীর বখতিয়ার মাত্র সতের জন সৈন্যের সহায়তায় রূপকথার কাহিনীকে হার মানিয়ে নদীয়া জয় করেন' তখন আমাদের আর বিশ্লেষণ করে বলার অপেক্ষা রাখে না। পাঠক আপনারাই বুঝবেন এই ইতিহাস আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলার প্রদত্ত বাণীর মাঝে কোন তফাৎ থাকছে না।
আমাদের বুঝতে হবে ইতিহাসের তথ্যসূত্রের আলোকে বের হয়ে আসা মূল বাস্তবতাকেই গ্রহণ করতে হয়। নতুন নতুন তথ্যসূত্র প্রাপ্তি ও বিশ্লেষণের মাধ্যমেই ইতিহাস  স্থান, কাল ও পাত্র ভেদে পরিবর্তিত হয়, হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। তাই বর্তমানের দৃষ্টিভঙ্গিতে অতীত ব্যাখ্যা করা হলে তা হবে নিতান্তই বিভ্রান্তিকর ও অযৌক্তিক। একজন ইতিহাস গবেষকের মূল দায়িত্ব আঁকর বা প্রতœতাত্ত্বিক সূত্রের সহায়তায় ইতিহাসের ঘটনাগুলোকে বিশ্লেষণ করে মূল সত্যের কাছাকাছি উপনীত হতে চেষ্টা করা। তবেই ইতিহাসের পাতায় বাস্তবতার যোগসূত্র স্থাপন করা সম্ভব।
লেখকদ্বয়ঃ
এ কে এম শাহনাওয়াজ
অধ্যাপক,প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
shahnawazju@yahoo.com
 
মোঃ আদনান আরিফ সালিম অর্ণব
শিক্ষার্থ-গবেষক,প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
aurnabmaas@gmail.com

আপনি দেখছেন নাটকটির এক ঝলক
  • বিসর্জন

  • নাট্য গোষ্ঠী: তৃতীয় সূত্র
    নির্দেশক: সুমন মুখোপাধ্যায়
    কলাকুশলী: মূল নাটক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সম্পাদনা ও নির্দেশনায় - সুমন মুখোপাধ্যায়, আলো - বাদল দাস, সঙ্গীত - দেবজ্যোতি মিশ্র, মঞ্চ - সঞ্চয়ন ঘোষ, মঞ্চ নির্মাণ – মদন ও টিঙ্কু, অভিনয়: রঘুপতি- গৌতম হালদার, জয়সিংহ - কৌশিক সেন, অপর্ণা - তুর্ণা দাশ, গোবিন্দমানিক্য - বিপ্লব বন্দোপাধ্যায়, নক্ষত্র - জয়রাজ ভট্টাচার্য, মিশকা হালিম, গৌতম মৃধা, শোভেন গঙ্গোপাধ্যায়, সুমন নন্দী, মৌমি মাইতি, সুমন্ত দাশ।
  • উত্তরাধুনিক বাংলা থিয়েটারের আলোয় এই মুহূর্তে সুমন মুখোপাধ্যায়ের নাটক এক বিশেষ ঘরানার ভাষা। 'তৃতীয় সূত্র'-র প্রযোজনায় 'বিসর্জন' নাটকের নব-নির্মাণই তার সবটুকু পরিচয় দিতে পারে। এই নাটক আদতে রবীন্দ্রনাথকে এই সময়ের রাজনৈতিক আর সামাজিক অবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে অনুঘটকের কাজ করে। সুমনের নিজের কথায়, এ নাটক তাঁকে সমসাময়িক সময়ের রক্তাক্ত পরিস্থিতি এবং অস্থিরতায় যেন অক্সিজেন জুগিয়েছে। আসলে মানুষের নিজের চিন্তায় স্থিত হতে না পারার অস্থিরতাকেই নাটকে দেখান নির্দেশক। একদিকে রঘুপতির ভূমিকায় গৌতম হালদারের দাপট, অন্যদিকে সংশয়ে আচ্ছন্ন চিরপ্রেমিক জয়সিংহ চরিত্রে কৌশিক সেনের যুগলবন্দী নাটককে ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছে দেয়। যে অস্থিরতার ভাবনা নিয়ে নাটক তৈরি করেন সুমন, তার ছাপ ধরে রাখে আলো, সুর দিয়ে মনকে টেনে রাখেন দেবজ্যোতি মিশ্র। নাটকের শেষে ত্রিপুর রাজ্য আর মহানগর মিলে যায়, সুমন মিলিয়ে দিতে পারেন...রবীন্দ্রনাথের প্রেমের বাণীও আকাশে মেশে, নতুন কবির কলম লেখে, 'থেমে নয়, প্রেমে প্রেমে থেকো'।


    http://natok.anandabazar.com/node/6


    বাংলাদেশের রাজনীতির চল্লিশ বছর

     

     

    আবদুল মান্নান 

    দেশ বিভাগের পর মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও তার সহকর্মীরা বলে বেড়াতেন পাকিস্তানে মুসলীম লীগ ছাড়া আর কোন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন নেই এবং থাকবেও না । ব্যক্তিগত ভাবে জিন্নাহ ছিলেন অত্যন্ত স্বৈরাচারী মনোভাবাপন্ন একজন ব্যক্তি যিনি নিজের মতের বাইরে আর কারো মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করতেন না । এর ফলে তার সাথে আবুল হাসিম বা সোহরোওয়ার্দিও মতো বাংলার মুসলীম লীগ নেতাদের প্রায়শঃ মতভেদ দেখা দিত যা জিন্নাহ কখনো সহজে নেননি । জিন্নাহর এমন চিন্তাধারা পাঞ্জাবের অন্যান্য মুসলীম লীগ নেতাদের মধ্যেও সংক্রমিত হয়েছিল । জিন্নাহর দূর্ভাগ্য দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে সৃষ্ট তার শখের পাকিস্তানে তিনি বেশীদিন বেঁচে ছিলেন না । ১৯৪৮ সনের ১১ সেপ্টম্বর অনেকটা বিনা চিকিৎসায় যক্ষা রোগে আক্রান্ত জিন্নাহর মৃত্যু হয়েছিল সুদূর কোয়েটায়। তবে জিন্নাহর মৃত্যুর পরও তার উত্তরসূরীদের রাজনৈতিক চিন্তাধারার তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি । পূর্ব বঙ্গের বাঙালিদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করার জন্য ১৯৪৯ সনে যখন মওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দি, শাসুল হক প্রমুখের প্রচেষ্টায় পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল আওয়ামী মুসলীম লীগের জন্ম হয় তখন পাঞ্জাবী শাসক গোষ্টির মতে এটি ভারতীয় চক্রান্তের একটি ফসল এবং এই ধরণের রাজনৈতিক সংগঠন পাকিস্তানকে দূর্বল করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না । 
    ১৯৫৫ সনে আওয়ামী মুসলীম লীগকে একটি অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ নাম করণ করা হয় । ১৯৫৭ সনে কাগমারি সম্মেলনের পর আওয়ামী লীগ হতে মওলানা ভাসানী পৃথক হয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন যা আবার পরবর্তীকালে দুই ভাগ হয়ে মস্কো পন্থী (নেতৃত্বে পাখতুন নেতা খান আবদুল ওয়ালী খান) আর পিকিং পন্থী (নেতৃত্বে মওলানা ভাসানী) হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে । ১৯৭১ সনের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের পর মওলানা ভাসানীর ন্যাপ দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল থাকলেও তিনি ভোটের রাজনীতিতে তেমন একটা বিশ্বাসী ছিলেন না । তিনি স্বপ্ন দেখতেন পাকিস্তানে গণচীনের মাও সে তুং এর সর্বহারাদের বিপ্লবের আদলে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব করে দেশে কৃষক শ্রমিকদের শাসন কায়েম করবেন । মওলানা ভাসানী আবার সমাজতন্ত্রের সাথে ইসলাম যোগ করে তার নাম দিলেন ইসলামি সমাজতন্ত্র । মস্কোপন্থীদের ন্যাপ পূর্ব পাকিস্তানে পরিচিত ছিল মোজাফ্ফর ন্যাপ হিসাবে কারণ পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের প্রধান ছিলেন অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ । তিনি আবার কিছুটা উদারপন্থী হিসাবে পরিচিত এবং তিনিও সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী হলেও মতবাদ হিসাবে নিলেন 'ধর্ম কর্ম সমাজতন্ত্র' । যেহেতু পাকিস্তান আমলে কমিউনিষ্ট পার্টি নিষিদ্ধ ছিল সেহেতু অধিকাংশ কমিউনিষ্ট মতাদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এই দুই ন্যাপের ছত্রছায়ায় তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতো । 
    ১৯৫৪ সনের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের কাছে শোচনীয় পরাজয়ের পর মুসলীম লীগ অনেকাংশে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল । এই দলটি এর পরে আর কখনো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি । না পশ্চিম পাকিস্তানে না পূর্ব পাকিস্তানে । এ ছাড়াও যে কয়েকটি রাজনৈতিক দল পূর্ব বাংলায় ক্রিয়াশীল ছিল তার মধ্যে কৃষক শ্রমকি প্রজা পার্টি, জামায়াতে ইসলামি, নেজামে ইসলামি অন্যতম । তবে পূর্ব বঙ্গে সব দলের রাজনীতির সাথে যারা জড়িত ছিলেন তাদের বেশীর ভাগই পেশায় ছিলেন আইনজীবী ও শিক্ষক । পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রাধান্য ছিল সামরিক বেসামরিক আমলা, ভূস্বামী, সামন্তপ্রভূ আর কোন কোন ক্ষেত্রে শিল্পপতি । 
    ১৯৭১ সনে বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখনও বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার পূর্বের বৈশিষ্ট্য অনেকটা বজায় ছিল । তবে একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার সহযোগিতার কারণে বঙ্গবন্ধু সরকার সাংবিধানিক ভাবে নিষিদ্ধ করেছিল জামায়াত, মুসলীম লীগ, নেজামে ইসলামের মতো ধর্মাশ্রয়ী দলগুলিকে এবং এই সব দল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল । বঙ্গবন্ধু সরকার কমিউনিষ্ট পার্টির উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার পর তারা আবার নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করে । আর যে সকল দলকে নিষিদ্ধ করা হয়ছিল তারা রাতারাতি অতি বামপন্থীদের সাথে গিয়ে মিলিত হয় এবং সিরাজ সিকদার, আবদুল হক, মোহাম্মদ তোহা, আবদুল মতিন, আলাউদ্দিনের মতো কট্টর বামপন্থী নেতাদের সহায়তায় বাংলাদেশে বেশ কিছু হঠকারী রাজনৈতিক দলের জন্ম দেয় যার মধ্যে পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি, পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিষ্ট পার্টি (তারা বাংলাদেশ মেনে নিতে অস্বীকার করে), বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি (এম-এল) অন্যতম । বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর তার শাসনামলে যে সকল ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ছিল সামরিক শাসক জেনারেল জিয়ার বদান্যতায় তার সবকটির আবার পূনর্জন্ম হয় । 
    বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে একটি নব্য ধনিক শ্রেনীর সৃষ্টি হয় যাদের উত্থান মূলতঃ স্বাধীনতা পরবর্তীকালে পারমিট লাইসেন্স ব্যবসার মাধ্যমে । এদের কেউ কেউ আবার মজুদদারী আর চোরাকারবারী করেও অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে । তবে এদের অর্থবিত্ত থাকলেও ছিলনা তেমন একটা সামাজিক মর্যাদা বা গ্রহণযোগ্যতা । উপমহাদেশে সামাজিক মর্যাদা বা গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার বা সমাজে ক্ষমতাবান হওয়ার একটি সহজ উপায় হচ্ছে রাজনীতিতে প্রবেশ করা তবে সেই রাজনীতি হতে হবে ক্ষমতার রাজনীতি অথবা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার রাজনীতি । যারা এই উপায়ে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছেন তাদের কখনো তৃণমূল রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হতে হয়নি, উঠে আসতে হয়নি রাজনীতির সিঁড়ির একেবারে নীচের ধাপ হতে যেমনটি বঙ্গবন্ধু বা মওলানা ভাসানীকে হতে হয়েছিল । অর্থবিত্ত থাকলেও আবার অনেক ক্ষেত্রে এদের সহায়তা নিতে হয়েছে পেশী শক্তির । এই দু'টির যোগফলে একদিন হঠাৎ করেই দেখা গেল এলাকার সব চাইতে দুশ্চরিত্র অথবা বিত্তশালী ব্যক্তিটি হয়ে গেছেন তাদের এলাকার একেবারে 'ফুলের মতো পবিত্র চরিত্রের' রাজনৈতিক নেতা । বিত্তশালীদের আবার রাজনীতিতে আসার ভিন্ন মতলবও থাকে যার অন্যতম হচ্ছে নিজ ধন সম্পদ রক্ষা এবং তাকে আরো সম্প্রসারিত করা । ক্ষমতার কাছাকাছি থাকলে এই কাজগুলিকে সহজে করা যায় । এই বৈশিষ্ট্যগুলি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশ ভাল ভাবে প্রবেশ করেছে এবং বর্তমানে শক্তভাবে জাঁকিয়ে বসেছে । বর্তমান সংসদের প্রায় সত্তর ভাগ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী সম্প্রদায় হতে আসা । অর্থবিত্ত আর পেশী শক্তির দাপটে এখন আর তৃণমূল হতে উঠে আসা শিক্ষিত, মার্জিত আর জনসম্পৃক্ত রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের বেশী দূর যাওয়া তেমন একটা সম্ভব হয়না । এটিযে শুধু বাংলাদেশে ঘটছে তা নয় ভারত-পাকিস্তানেও ঘটছে । ভারতের লোক সভায় বর্তমানে প্রায় একশত সদস্য আছেন যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা আছে । এক কথায় বলতে গেলে এই উপমহাদেশের রাজনীতি অনেকাংশে বর্তমানে একধরণের দুবৃর্ত্তায়নের স্বীকার হয়েছে । 
    বাংলাদেশের রাজনীতিতে গত চল্লিশ বছরে আরো একটি বৈশিষ্ট্যের জন্ম হয়েছে আর তা হচ্ছে স্তাবকতন্ত্র । তৃণমূলের সাথে সম্পর্কহীন এই সব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা সব সময় স্তাবক পরিবেষ্টিত হয়ে থাকতে পছন্দ করেন যার ফলে তারা যাদের প্রতিনিধিত্ব করার কথা তাদের কাছে তারা সহজে পৌঁছাতে পারেন না । এর মধ্যে ব্যতিক্রম একেবারেযে নেই তা নয় । তবে এদের সংখ্যা দিন দিন কমছে এবং তাতে শেষপর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে রাজনীতি । সুস্থ রাজনীতিকে দূরে হঠিয়ে অপরাজনীতি জায়গা করে নিচ্ছে । এর ফলে সব সময় বিকল্প শক্তি ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ খুজতে থাকে এবং তা একবার করতে পারলে তারা দেশটাকে এক ধাক্কায় দু'এক যুগ পিছিয়ে দিতে পারে যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ পাকিস্তান । অতীতে বাংলাদেশেও তেমনটি ঘটতে দেখা গেছে । 
    গত চল্লিশ বছরে বাংলাদেশের রাজনীতি অনেক দূর যেতে পারতো যদি না ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হতো । তিনি তৃণমূল হতে উঠে এসেছিলেন । জনমানুষের সাথে তার সম্পর্ক ছিল । রাজনীতির শিখড়ে উঠতে তার অর্থবিত্ত আর পেশী শক্তিরও প্রয়োজন হয়নি । যেহেতু তিনি স্তাবক পরিবেষ্টিত থাকতেন না সেহেতু সাধারণ মানুষ তার কাছে তাদের সুখ দুঃখের কথা নিয়ে সহজে পৌঁছে যেতে পারতেন । চল্লিশ বছর পর দেশের মানুষের প্রত্যাশা আবার ফিরে আসুক দেশের রাজনীতি সত্যিকার অর্থে জনপ্রতিনিধিদের কাছে যারা আক্ষরিক অর্থে জনগণের প্রতিনিধি হবেন । গড়ে তুলতে পারবেন সত্যিকার অর্থে একবিংশ শতকের আধুনিক, অসাম্প্রদায়িক আর গণমানুষের বাংলাদেশ ।


    সকল পাঠককে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা। 

    লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ডিসেম্বর ১৬, ২০১২


    http://community.skynetjp.com/id546.htm


    স্বৈরতন্ত্র ও দলবাজির বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের রায় -ফতেহ আলি টিপু

    ভারতের আরও কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের সাথে বাংলাদেশের সন্নিকটবর্তী পশ্চিম বাংলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাসব্যাপী ছয়পর্বে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল কংগ্রেস একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হয়েছে। কংগ্রেস সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পশ্চিম বাংলা প্রদেশ কংগ্রেস নেতা প্রণব মুখার্জীর আগ্রহ ও নিরন্তর চেষ্টায় কংগ্রেসের সাথে তৃণমূলের নির্বাচনী সমঝোতা হলেও তা সব আসনে ফলপ্রসূ হয়নি। তৃণমূল কংগ্রেস জোটবদ্ধতার বাইরেও বেশ কিছু বিদ্রোহীপ্রার্থী দলীয় সিদ্ধান্ত নাকচ করে নির্বাচন করেছেন। তবে নির্বাচনের ফল মমতার তৃণমূলকে এককভাবে সরকার গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে। তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যনার্জি কেন্দ্রে কংগ্রেস-ইউপিএ জোটের অংশীদার হিসেবে ভারতের রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। সুতরাং সরকার গঠনের সময় কংগ্রেসের ভাগেও মন্ত্রিত্বের আসন জুটতে যাচ্ছে।
    ৩৪ বছরের একটানা ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্ট এবার মমতা ব্যানার্জীর কাছে হেরে গেল। মমতা বলেছেন, পশ্চিম বাংলা এবার স্বাধীন হলো, দলতন্ত্রের পতনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। এদিকে বামফ্রন্টের পরাজয়কে পশ্চিম বাংলার মিডিয়া 'ইন্দ্রপতনের' সাথে তুলনা করেছেন। বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী 'ক্লিনম্যান' বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও তৃণমূলপ্রার্থী সাবেক এক আমলার কাছে ১০ হাজারেরও বেশি ভোটে হেরে গেছেন। এছাড়া বামফ্রন্ট সরকারের অধিকাংশ সাবেক মন্ত্রী ও হ্যাভিওয়েট প্রার্থীদেরও ভরাডুবি ঘটেছে। বামফ্রন্ট তাদের এই পরাজয়কে 'অপ্রত্যাশিত' বললেও তারা পরাজয় মেনে নিয়ে জনরায়ের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছেন, তাদের মূল্যায়নে ভুল ছিল।
    এদিকে ভূমিধস বিজয় পাওয়া মমতা ব্যানার্জী বলেছেন, তার দলের এ বিজয় 'মা, মাটি ও মানুষের' বিজয়। এ বিজয়কে তিনি পশ্চিম বাংলার জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছেন। বলেছেন, জনগণই তার পরিবার এবং জনগণই তার আরাধ্য ও প্রেরণার উৎস। রাজ্যপালের সাথে দেখা করার পর মমতা ব্যানার্জীকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই মমতা ব্যানার্জী পশ্চিম বাংলার প্রথম নারী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন। এই সাথে বামদের লালদুর্গের পতনের মধ্য দিয়ে মমতাযুগের সূচনা হবে। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ইতোমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন। নয়া সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত রাজ্যপাল নারায়ণ বুদ্ধকে সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে যেতে বলেছেন। মমতা ব্যনার্জী বিজয়ের আনন্দে কর্মীদের সংযত ও শান্ত থাকতে বলেছেন। বিরোধীদের শান্তি কামনা করছেন। 
    প্রতিবেশী ভারতের একটি রাজ্যের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের বেশ কিছু মিডিয়ার প্রচারণার ঘটা দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এটা ভিন্ন দেশের কোন একটি রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন। হতে পারে ভারতের পশ্চিম বাংলা বাংলাদেশের অতি নিকটবর্তী এবং একটি সন্নিহিত ভূখন্ড। 
    দ্বিতীয়ত পশ্চিম বাংলার অধিবাসীরা বাংলাভাষী। তবে নাগরিক সত্তায় তারা ভারতীয়। বাংলাদেশের একশ্রেণীর মিডিয়ার উচ্ছবাসের পাশাপাশি সরকারি পর্যায় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে মমতা ব্যানার্জীকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। প্রথমত শেখ হাসিনা একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। দ্বিতীয়ত মমতা এখনও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেননি। তৃতীয়ত কূটনৈতিক প্রটোকল অনুযায়ী সরকার-টু-সরকার সম্পর্ক রক্ষা কিংবা ভাব বিনিময়ের রেওয়াজ আছে। সে হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক ভাববিনিময় যখন দিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকারের বদলে ভারতের একটি উপেক্ষিত রাজ্যের ভাবী মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বাধ না মানা উচ্ছবাসের সাথে চলে, তখন তাকে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বা কূটনৈতিক প্রটোকলের শোভনতার সংজ্ঞায় ফেলা যায় না। বিশেষ করে দিল্লী সরকার সেখানে বাংলাদেশের সাথে তাদের সম্পর্কে ভায়া কলকাতার বদলে ঢাকা-দিল্লী সরাসরি হ্যান্ডেল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে, সেখানে কলকাতার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশের প্রত্যাশার মাজেজা কী? পশ্চিম বাংলার আঞ্চলিক নেতৃত্বকে দিল্লী কখনও বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তি এবং সার্বভৌম ক্ষমতার সহাবস্থানের নীতি গ্রহণে দিল্লীকে উদ্বুদ্ধ করতে পারেনি। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকারের সাথে ভারতের কেন্দ্রীয় দেবগৌড়া সরকারের যে ৩০ সালা পানিচুক্তি সম্পাদিত হয়, তাতে তদানীন্তন পশ্চিম বাংলা বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা দৃশ্যমান হলেও ওই চুক্তিতে ভারতের স্বার্থই সংরক্ষিত হয়েছে। গঙ্গার আন্তর্জাতিক অভিন্ন পানি প্রবাহের ওপর ভারতের একচেটিয়া প্রাপ্যতাকে মেনে নিয়ে বাংলাদেশ ভারতের স্বার্থে ওই চুক্তি করেছে। যার ফলে বাংলাদেশ ফারাক্কা পয়েন্ট থেকে কোন পানি পাচ্ছে না। জ্যোতিবসু ঢাকার সোনারগাঁওয়ের সন্তান হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি একটা মানবিক আবেগ অনুভব করলেও সেটা বাংলাদেশের প্রতি দিল্লীর মনোভাব পরিবর্তনে কখনও ফ্যাক্টর হয়নি। জ্যোতিবসুর বাম সরকারের উত্তরসূরি সদ্য বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেবের পূর্বপুরুষের বাড়ি বাংলাদেশের ফরিদপুরে এবং তিনি বিপ্লবী কবি সুকান্তের ভ্রাতুুত্র। তাছাড়া বুদ্ধদেব একজন কবি ও সংস্কৃতিমনা মানুষ হলেও তাঁর শাসনকালে তিনি বাংলাদেশের প্রতি কঠোর ও বৈরী আচরণ করেছেন। বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ দমনে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দিল্লী সরকারের কাছে সামরিক অভিযান চালানোর অনুরোধ পর্যন্ত করেছেন। ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুযায়ী আমাদের বেরুবাড়ির বদলে তিন বিঘা করিডোর হস্তান্তরের বিরুদ্ধে বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই কলকাতা হাইকোর্ট রীট মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার দোহাই দিয়ে ভারত আজও তিন বিঘা করিডোর বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেনি। বামফ্রন্ট সরকারের সাড়ে তিন দশক ধরে বাংলাদেশ সন্নিহিত পশ্চিম বাংলা সীমান্তে 'স্বাধীন' বঙ্গভূমিওয়ালাদের তৎপরতা চলে আসছে। যদিও চিত্ত সুতার ও ডাঃ কালীদাস বৈদ্যের নেতৃত্বে পশ্চিম বাংলায় বঙ্গভূমি আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর কংগ্রেস শাসনামলে। ১৯৪৭-এর স্বাধীনতার পর পশ্চিম বাংলায় বাম শাসনের ৩৪ বছর বাদ দিলে বাকী সময় ছিল কংগ্রেস শাসনের যুগ। কিন্তু কংগ্রেস বা বাম কোনো আমলেই বাংলাদেশ পশ্চিম বাংলার রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সৎ প্রতিবেশী সুলভ ন্যায্য আচরণ পায়নি। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বি এস এফ প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশী নাগরিকদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে আসছে। এ নিয়ে কলকাতার রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, মানবতাবাদী, 'বাঙ্গালি স্বজনদের' কোনো প্রতিবাদ চোখে পড়েনি। বরং রাজ্য সরকারগুলো তাদের সীমান্ত নিরাপত্তা এবং তথাকথিত 'অনুপ্রবেশ' প্রতিরোধে বাংলাদেশ সীমান্তের বিপরীতে পশ্চিম বাংলা সীমান্ত জুড়ে নিশ্ছিদ্র কাঁটাতারের বেড়া দেয়া এবং সীমান্ত প্রহরাকে কঠোর ও নিষ্ঠুরভাবে দায়িত্ব পালনে উৎসাহ দিয়ে এসেছে। পশ্চিম বাংলার রাজনীতিক বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঢালাও অভিযোগ করে থাকেন। পশ্চিম বাংলার সীমান্ত পথে ফেনসিডিলসহ অন্যান্য মাদক ও চোরাচালানি পণ্য এসে বাংলাদেশের যুব চরিত্র ও অর্থনীতি ধ্বংস করে দিচ্ছে। পশ্চিম বাংলার সীমান্ত এলাকায় ফেনসিডিল উৎপাদন বন্ধে রাজ্য সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। বাংলাদেশ সরকারীভাবে এ ব্যাপারে উপর্যুপরি অনুরোধ করেও পশ্চিম বাংলার সরকারের সহযোগিতা পায়নি। 
    এ নিয়ে দিল্লী সরকারের প্রতিশ্রুতি কলকাতার রাজ্য সরকারের সদ্বিচ্ছার অভাব ও আমলাতান্ত্রিক লালফিতায় বন্দী হয়ে আছে। বাংলাদেশের চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত শীর্ষ অপরাধীরা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে গিয়ে জামাই আদরে বসবাস করে, তারা সেখানে বিনিয়োগ ব্যবসাপাতি করে রাজার হালে থাকে। কলকাতা ও পশ্চিম বাংলার অন্যান্য স্থান থেকে বাংলাদেশি শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশে চাঁদাবাজিসহ নানা অন্তর্ঘাতমূলক অপরাধ চালায়। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের মাধ্যমে পশ্চিম বাংলা রাজ্য সরকারকে এসব অবহিত করে ওইসব শীর্ষ বাংলাদেশী সন্ত্রাসীদের ফেরৎ দেবার দাবি জানালেও তাতে তারা কর্ণপাত করেননি। আজও পশ্চিম বাংলাসহ ভারতের কোথাও বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল দেখানো হয় না।
    ভারতের আঞ্চলিক ও জাতীয় রাজনীতির অন্তর্দর্শন ও গতি প্রকৃতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মাত্রই জানেন যে, ভারতীয় রাজনীতিক-বুদ্ধিজীবী ও আমলারা তাদের জাতীয় স্বার্থের বাইরে এক চুলও সরেন না। সুতরাং বাঙালিত্বের আবেগ কোনো কোনো রাজনীতিককে সুঁড়সুঁড়ি দিলেও সেটা রাজনীতি ও জাতীয় সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে না।
    অনেকেরই মনে থাকার কথা, বছর কয়েক আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন কলকাতার বই মেলার অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন, তখন তাকে 'মুখ্যমন্ত্রী' হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছিল। সম্প্রতি শেখ হাসিনা দিল্লীতে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ডাঃ মনমোহন সিংয়ের সাথে ৫০ দফা সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সম্পাদনের পর ভারত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় যোগাযোগ রক্ষায় বাংলাদেশের ভেতর থেকে স্থল করিডোর ও নৌ ট্রানজিট পাওয়ায় দিল্লীর কাছে পশ্চিম বাংলার গুরুত্ব আরো কমেছে। বিশেষ করে ভারত বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে আসামকে ওই অঞ্চলের অর্থনীতি ও বাণিজ্যের নয়া কেন্দ্রাবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এতেও কলকাতা বন্দরকেন্দ্রিক পশ্চিম বাংলার গুরুত্বহানির আশংকা রয়েছে। এদিকে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে ত্রিপুরার সাথে ভারতের নয়া যোগসূত্র ত্রিপুরাকে পশ্চিম বাংলার ওপর নির্ভরতা থেকে মুক্তি দেবে।
    পশ্চিম বাংলায় ৩৪ বছরের বাম শাসনের পরাজয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উচ্ছবসিত হবার আরো একটি কারণ এই হতে পারে যে, মহাজোটের বাংলাদেশি বাম শরীকদের লম্ফ-ঝম্ফ হয়তো একটু কমবে। মেনন-ইনুরা দাদা বুদ্ধদেবের পরাজয়ে আগের মতো শেখ হাসিনা সরকারের ওপর হম্বি-তম্বি করার জোর হয়তো পাবেন না। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবশ্যই মনে আছে যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহনের সাথে দেখা করে তিনি কলকাতা হয়ে মমতা বুদ্ধের সাথে দেখা করে আসার বাসনা ব্যক্ত করেও দিল্লীর বারণে তা পূরণ করতে পারেননি। দুই বাংলার রাখীবন্ধনের অলীক স্বপ্নে যারা পুলকিত, তাদেরকে দিল্লীর ইচ্ছা ও ছকের বৃত্তটাও বুঝতে হবে। পশ্চিম বাংলার হবু মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেছেন, 'হাসিনাদির ফোন পেয়ে ভালো লাগছে।' মমতা আরো বলেছেন, 'আমাদের জয় এপার ওপার বাংলা ভাগ করে নিচ্ছে।'
    মমতাকে অভিনন্দন জানিয়ে শেখ হাসিনা তাকে দিয়ে দু'কথা বলিয়ে পুলকিত হলেও মমতা ব্যানার্জী কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের প্রধানমন্ত্রীর বদলে ঘরোয়া উচ্চারণ : 'হাসিনাদি' বলে তার প্রতিদান দিয়েছে। এটা বছর কয়েক আগে কলকাতা বইমেলায় শেখ হাসিনাকে 'মুখ্যমন্ত্রী' সম্বোধনের কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। মমতা ব্যানার্জী বলেছেন : তিনি বাংলা ও বাঙালির উন্নয়নে একযোগে কাজ করবেন। তার এই মনোভাব প্রশংসনীয়। কিন্তু তার সীমাবদ্ধতা ও রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের অচলায়তন তিনি ভাঙ্গবেন কীভাবে? নাকি তেমন ক্ষমতা ও ইচ্ছা তার রয়েছে? মমতা কংগ্রেসের রাজনৈতিক ঘরানা ও সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছিল। তৃণমূল কংগ্রেস সর্বভারতীয় কংগ্রেসেরই দলছুট। আর সর্বভারতীয় কংগ্রেস আজও 'অখন্ড' ভারত তত্ত্ব থেকে সরে আসেনি। সুতরাং মমতা যদি 'দুই বাংলার আরও উন্নতি' চান, তাহলে তা কীভাবে সম্ভব হবে? রাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ব্যাপারে পশ্চিম বাংলা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কী একক ভূমিকা নিতে পারেন? ভারতের রাজ্য সরকারগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরা দিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি অবস্থান নিয়ন্ত্রণে কতটুকু ক্ষমতা রাখেন? রাজ্য প্রশাসন, রাজ্যের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিশাল কর্মকান্ড ফেলে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর খবরদারি করার সুযোগ বা অনুমতি পাবেন? নাকি কোন মুখ্যমন্ত্রীকে দিল্লীর প্রধানমন্ত্রীর দফতর নাক গলানোর সুযোগ দেবে? মমতা ব্যানার্জী বাংলাদেশী জনৈক সাংবাদিককে বলেছেন : ''দুই বাংলার বন্ধন তো ভালোই আছে। দুই বাংলার সম্পর্কের আরও উন্নতিই আশা করি।'' বিভক্ত বাংলার পশ্চিমাংশ বাঙালি হয়েও তারা নাগরিকত্বে ভারতীয়। তাহলে মেলবন্ধন কীভাবে? এখানেই রাষ্ট্রীয় প্রটৌকলের প্রশ্ন আসে। পূর্ববাংলার বাঙালিরা ২৩ বছরের মাথায় পাকিস্তান ভেঙ্গে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। ওপারের বাঙালিরা তাতে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থান বদলায়নি। বরং সার্বভৌম রাষ্ট্রসত্তা বিলোপ বরে আমাদেরকে 'অখন্ড' রামরাজ্যের মাঝে 'লীন' হবার রবীন্দ্র সংগীতের মূর্চ্ছনায় সম্মোহিত করার সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র চলছে।
    ৩৪ বছরের বামফ্রন্টের বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনের কারণ বিশ্লেষণে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। তবে বামফ্রন্ট নেতারা এখন বলছেন, মানুষ পরিবর্তন চেয়েছে। পরিবর্তনের এই স্লোগান দিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জী জনসংযোগ করলেও বামফ্রন্ট নেতারা তার গুরুত্ব দেননি। কিন্তু সাধারণ মানুষের এই পরিবর্তনের অনুচ্চারিত আবেগ ও প্রত্যাশ্যাকে মমতা অনুধাবন করেছেন। জনগণও তাই মমতাকে বিপুল ম্যান্ডেন্ট দিয়ে বিজয়ী করেছেন। কিন্তু পশ্চিম বাংলার মানুষ কেন পরিবর্তন চেয়েছেন? কেন তারা বামফ্রন্টের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন? মমতার বক্তব্যে এর যে জবাব, তাতে দেখা যায়, মানুষ দলতন্ত্রের তান্ডবের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক সুশাসনের প্রত্যাশ্যায় পরিবর্তন চেয়েছেন। বামশাসন বিগত কয়েক বছর দলীয় ফ্যাসিবাদী তান্ডব ও তৃণমূল পর্যায়ে ক্যাডারদের সন্ত্রাসে জনমনে ভীতি ও ঘৃণার সঞ্চার করে। বাম সরকার ও জোট ক্রমশঃ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ভাসমান কচুরিপানায় রূপ নিলেও লালদুর্গের বাম তত্ত্ববিলাসীরা তা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বাম-জোটের নেতাকর্মীরা মনে করেছেন, ক্ষমতা তাদের চিরস্থায়ী এবং তৃণমূলের মমতা তাদের কোন উপযুক্ত প্রতিপক্ষ নন। এ জন্য বাম নেতারা মমতাকে বিদ্রূপ-কটাক্ষ করেছেন, অশোভন ভাষায় আক্রমণ করেছেন। জনগণ বাম-জোটকে পরাজিত করে ঔদ্ধত্যের জবাব দিয়েছেন।
    পশ্চিম বাংলার নির্বাচনটা এবারও যদি স্থানীয় রাজ্য পুলিশের তদারকীতে অনুষ্ঠিত হতো, তাহলে বামদের কাছ থেকে নির্বাচনী বিজয় ছিনিয়ে নেয়া দুরূহ হতো। সেখানে ৬ পর্বে মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন হয়েছে একটি স্বাধীন ও দক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে। আর নির্বাচনের সময় আইন-শৃক্মখলা রক্ষার দায়িত্ব ন্যাস্ত ছিল কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর। ফলে রাজ্য পর্যায়ে ক্ষমতাসীন বামফ্রন্টের কোন ম্যানিপুলেসনের সুযোগ ছিল না। রাজ্য প্রশাসন তাদের পুলিশবাহিনী ব্যবহার করতে পারেনি। সকল পক্ষই নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সততা ও দক্ষতার ওপর আস্থা রেখেছে। নির্বাচনের পর প্রায় একমাস ব্যালট বাক্স তালাবদ্ধ ছিল। আমাদের দেশে যেখানে নির্বাচনী কারচুপির কুশীলবরা এ সময়ের মধ্যে গোটা ভোটের বাক্স বদলিয়ে ফেলে ফলাফল পাল্টে দিতে পারে, সেখানে ভারতে কেন্দ্রীয় রিজার্ভ ফোর্সের পাহারায় নির্বাচন কমিশনের তদারকীতে ব্যালট বাক্সের সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে এবং এ নিয়ে কোন প্রশ্ন দেখা দেয়নি। 
    প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মমতা ব্যানার্জীর নির্বাচনী বিজয়ে উচ্ছবসিত অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে এই নির্বাচনের রাজনৈতিক তাৎপর্য ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে তার অনেক কিছু শিক্ষা নেবারও রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। প্রথমত গণতান্ত্রিক সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বদলে সরকার যখন দলতন্ত্র, দলীয়করণ, দলীয় ফ্যাসিবাদ, অবাধ দুর্নীতি, গুন্ডাবাজির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে, তখন জনবিচ্ছিন্ন সরকারকে পরিবেষ্টন করে রাখে। ক্ষমতার অন্ধমোহে এটা ক্ষমতাসীনরা উপলব্ধি করতে পারেন না। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জনগণ এর উপযুক্ত জবাব দিয়ে প্রতিশোধ নেন। পশ্চিম বাংলায় জনবিচ্ছিন্ন আত্মম্ভরী-গুন্ডাবাজ বাম-দের পরাজিত করে জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক শক্তির প্রমাণ দিয়েছেন। নির্বাচনী ফলাফল প্রভাবিত করার জন্য ফ্যাসিবাদী সরকার নির্বাচন কমিশন নিয়ন্ত্রণসহ নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়ে থাকে। বাংলাদেশে এই প্রবণতা দৃশ্যমান। বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন কমিশন রেখে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার কথাবার্তা চলছে। বিশেষ করে নির্বাচনকালে শান্তি-শৃক্মখলা রক্ষা ও মাঠপর্যায়ে নির্বাচনী দস্যুতা প্রতিরোধে সেনাবাহিনী নিয়োগেও আওয়ামী লীগ সরকার অনিচ্ছুক। পশ্চিম বাংলার নির্বাচনকে সামনে রাখলে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন ও সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনা ছাড়া অর্থবহ কোন নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। বর্তমান সরকার যদি এ শিক্ষাটুকু গ্রহণ করে, তাহলেই মঙ্গল।

    জ্যোতি বসু

    উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
    জ্যোতি বসু
    জ্যোতি বসু
    পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী
    কার্যালয়ে
    ২১ জুন ১৯৭৭৬ নভেম্বর ২০০০
    পূর্বসূরীসিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়
    উত্তরসূরীবুদ্ধদেব ভট্টাচার্য
    ব্যক্তিগত বিবরণ
    জন্মজ্যোতিরিন্দ্র বসু
    জুলাই ৮১৯১৪
    কলকাতাবাংলা প্রেসিডেন্সিব্রিটিশ ভারত
    মৃত্যুজানুয়ারি ১৭২০১০ (৯৫ বছর)
    বিধাননগরপশ্চিমবঙ্গভারত
    জাতীয়তাভারতীয়
    রাজনৈতিক দলভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (১৯৪০ - ১৯৬৪)
    ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) (১৯৬৪-২০১০)
    দাম্পত্য সঙ্গীবাসন্তী বসু (১৯৪০-৪২)
    কমল বসু (১৯৪৮-২০০৩)
    সন্তান চন্দন বসু
    বাসস্থানইন্দিরা ভবন, বিধাননগরকলকাতা
    ধর্মনাস্তিক
    ওয়েব সাইটhttp://www.jyotibasu.net/
    January 17 তে , 2010
    উত্স: [১]

    জ্যোতি বসু (৮ জুলাই১৯১৪ - ১৭ জানুয়ারি২০১০) একজন ভারতীয় বাঙালি রাজনীতিবিদ। তিনি সিপিআই (এম) দলের সদস্য। ১৯৭৭ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একটানা তেইশ বছর জ্যোতি বসু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনিই ছিলেন ভারতের দীর্ঘতম মেয়াদের মুখ্যমন্ত্রী।[১] এছাড়াও ১৯৬৪ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি সিপিআই(এম) দলের পলিটব্যুরো সদস্য ছিলেন।[২][৩]

    ছাত্রাবস্থায় উচ্চশিক্ষার্থে ইংল্যান্ডে গিয়ে কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ হন বসু। ১৯৪০ সালে গ্রহণ করেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ। ১৯৪৬ সালে অবিভক্ত বাংলা প্রদেশের প্রাদেশিক আইনসভায় কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি রূপে নির্বাচিত হন। দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভারপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন বসু। ড. বিধানচন্দ্র রায়ের মুখ্যমন্ত্রীত্বে তিনি হন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা। ১৯৬৪ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির বিভাজনের পর বসু যোগ দেন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) দলে। ১৯৬৭ সালের যুক্তফ্রন্ট সরকারের উপমুখ্যমন্ত্রী হন জ্যোতি বসু। এরপর ১৯৭৭ সালের ২১ জুন শপথ নেন পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে। ১৯৯৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নাম বিবেচিত হলেও, তিনি পার্টির সিদ্ধান্তে সেই পদ প্রত্যাখ্যান করেন। টানা ২৩ বছর মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০০০ সালের ৬ নভেম্বরবুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের হাতে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব অর্পণ করে অবসর নেন বসু। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জ্যোতি বসুর শাসনকাল সাফল্য ও ব্যর্থতায় মিশ্রিত। তবে বিলেত-ফেরত বাঙালি ভদ্রলোক সমাজের প্রতিনিধি বসু ছিলেন এক অবিসংবাদী জননেতা ও নিজের দল এবং দলের বাইরেও এক বিশিষ্ট সম্মানের অধিকারী।

    পরিচ্ছেদসমূহ

      [আড়ালে রাখো

    [সম্পাদনা]জীবনী

    [সম্পাদনা]প্রারম্ভিক জীবন

    নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার অন্তর্গত বারদী গ্রামে জ্যোতি বসু'র পৈত্রিক বাসভবন

    ডা: নিশিকান্ত বসু ও হেমলতা বসুর তৃতীয় সন্তান জ্যোতি বসুর জন্ম ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ৮ জুলাইকলকাতার ৪৩/১ হ্যারিসন রোডস্থ (বর্তমান মহাত্মা গান্ধী রোড) বাসভবনে।[৪] তাঁর প্রকৃত নাম ছিল জ্যোতিরিন্দ্র বসু; ডাকনাম ছিল গনা। পিতা নিশিকান্ত ছিলেন এক প্রথিতযশা ডাক্তার এবং মা হেমলতা ছিলেন এক গৃহবধূ।[৫] ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর পিতামাতা ওল্ড হিন্দুস্তান বিল্ডিং-এর (বর্তমান ফুটনানি চেম্বার) একটি ভাড়াবাড়িতে উঠে আসেন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতারই ৫৫এ হিন্দুস্তান রোডস্থ নিজস্ব বাসভবনে উঠে আসেন তাঁরা। উল্লেখ্য, বসু পরিবারের আদিনিবাস ছিলব্রিটিশ বাংলা প্রদেশের ঢাকা জেলার (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার বারদী গ্রামে।)[ক]

    ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ছয় বছর বয়সে ধর্মতলার লোরেটো স্কুলে ভর্তি হন বসু। এই সময় নিশিকান্ত বসু পুত্রের নামটি সংক্ষিপ্ত করে রাখেন জ্যোতি বসু।[৬] লোরেটোর কিন্টারগার্টেনের পাঠক্রমটি ছিল চার বছরের। কিন্তু একটি "ডাবল প্রোমোশন" পাওয়ায় বসু তিন বছরেই এই পাঠক্রম সমাপ্ত করেন। প্রথম শ্রেণি থেকে লোরেটো পুরোদস্তুর বালিকা বিদ্যালয়। কিন্তু সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হতে না পেরে আরও এক বছর লোরেটোতেই মেয়েদের সঙ্গে এক বছর পড়েন বসু। এরপর ১৯২৫ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে ভর্তি হন তিনি। এই স্কুল থেকেই সিনিয়র কেমব্রিজ (নবম শ্রেণি) পাস করেন তিনি। ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে সাম্মানিক (অনার্স) সহ প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন তিনি। জানা যায়, কলেজে পিছনের বেঞ্চে বন্ধু রহমানের সঙ্গে বসতে পছন্দ করতেন তিনি।[৭] গ্র্যাজুয়েশন সম্পূর্ণ করার পর ১৯৩৫ সালে আইন বিষয়ে উচ্চশিক্ষার্থে তিনি যুক্তরাজ্যে গমন করেন। এই সময় পিতার ইচ্ছায় তিনি ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাতেও অবতীর্ণ হন; তবে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। কিন্তু ব্যারিস্টারি পড়া অব্যাহত থাকে। লন্ডনে অবস্থানকালে সেখানকার ভারতীয় ছাত্রদের নিয়ে গড়ে ওঠা লন্ডন মজলিশের তিনি ছিলেন প্রথম সম্পাদক। কথিত আছে, ১৯৩০-এর দশকের শেষভাগে হ্যারল্ড ল্যাস্কির বক্তৃতা শুনতে যেতেন তিনি। ইংল্যান্ডে গ্রেট ব্রিটেনের কমিউনিস্ট পার্টির কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত হন তিনি। বিশিষ্ট কমিউনিস্ট দার্শনিক ও লেখক রজনী পাম দত্ত কর্তৃক কমিউনিস্ট মতাদর্শে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত হন বসু। মিডল টেম্পলে ব্যারিস্টারি পাঠ ও যোগ্যতা অর্জনের পর ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি তিনি ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি।[৮]

    কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতির জন্য নাম লেখালেন। পিতার আগ্রহে বাসন্তী ঘোষের সঙ্গে বিবাহ সম্পন্ন হলো অচিরেই। কিন্তু অল্পদিন পরেই স্ত্রী বিয়োগ হয়। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে মাতার মৃত্যু হলো। পরবর্তীতে বিয়ে হয় কমল বসুর সঙ্গে, ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে।[৯]

    [সম্পাদনা]রাজনৈতিক কর্মজীবন

    তাঁর বাবা নিশিকান্ত বসু ছিলেন ডাক্তার। দুই জ্যাঠামশাই ওকালতি করতেন। রাজনীতিরসঙ্গে এ পরিবারের তেমন সংযোগ ছিল না। তবে ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সহমর্মিতা ছিল।[১০] ১৯১৩-১৪ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবী মদনমোহন ভৌমিক নিশিকান্ত বসুর বারদির বাড়িতে বেশ কিছুদিন আত্মগোপন করেছিলেন। এখানে অস্ত্রও লুকিয়ে রাখতেন। পুলিশের খানা-তল্লাশীর সময় জ্যোতি বসুর মা তাঁর শাড়ীর ভাঁজে অস্ত্রটি লুকয়ে রেখেছিলেন। এই যোগসূত্র জ্যোতি বসুর মধ্যে জাগিয়ে তোলে দেশপ্রেম; একসময়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত করে ফেলে। ১৯৩০ দশকের শুরুর দিকে গান্ধিজীর অনশনের সময় একদিন তিনি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছিলেন স্বত:প্রবৃত্ত হয়ে। এ সময়ই অক্টরলোনি মনুমেন্টে (শহীদ মিনার ময়দান) সুভাষ বসুর ভাষণ শুনতে গেলেন খদ্দর পরে। সেদিন পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করলে তাঁর মনে পলায়নের পরিবর্তে মোকাবেলার অনুভূতি জেগে উঠেছিল। আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, "সেটাই বোধহয় রাজশক্তির বিরুদ্ধে প্রথম প্রকাশ্য প্রতিবাদ।"[১১]

    লন্ডনে আইন পড়তে এসে রাজনীতিতে তাঁর দীক্ষা হয়। ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনে আইন পড়তে পড়তেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, আইন নয় রাজনীতিই হবে জীবনের ব্রত। তখন বিশ্বে ফ্যাসীবাদী অভ্যূত্থান শুরু হয়েছে। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ। লন্ডন স্কুল ইকনমিক্সে হ্যারল্ড লাস্কির বক্তৃতা শুনতে শুনতে তিনি উদ্দীপ্ত হয়ে পড়তেন। এসময় কার্ল মার্কস দাস ক্যাপিটাল এবং এঙ্গেলসের কমিউনিস্ট মেনিফেস্টো ইত্যাতি পড়তে শুরু করলেন। সে সময়কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে লন্ডনে আইন পড়তে এসেছিলেন মার্কসবাদে দীক্ষিত ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ভূপেশ গুপ্ত। ভূপেশ গুপ্ত এবং স্নেহাংশু আচার্যের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপিত হলো কমিউনিস্ট পার্টি অব গ্রেট বিটেনের সঙ্গে। রজনী পাম দত্ত, বেন ব্রাডলি, হ্যারি পলিট প্রমুখ কমিউনিস্ট নেতাদের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য তাঁকে উজ্জীবিত করেছিল প্রবলভাবে। মজলিশের সদস্য হিসেবে নানা দায়িত্ব পালন করে যেতে লাগলেন। ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্টুডেন্টস-এর পুনসংর্গঠনে নিযুক্ত করলেন নিজেকে। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ১৯৩৮-এ লন্ডনে এলে তাঁর সংবর্ধনা আয়োজনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। নেহরুর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই জ্যোতি বসু তাঁর অভিপ্রায় ব্যক্ত করে জানিয়ে দেন তাঁরা ভারতে সমাজতন্ত্রপ্রতিষ্ঠা করতে চান। নেহরু জবাব দিয়েছিলেন, 'আগে ভারতবর্ষ স্বাধীন হোক পরে সমাজতন্ত্রের কথা ভাববো'। এসময় নেতাজী সুভাষ বোসও লন্ডনে এসেছিলেন। তাঁর ভাষণ জ্যোতি বসুর বিশেষ ভালো লেগেছিল। সাক্ষাতে তিনি বলেছিলেন দেশে ফিরে তিনি রাজনীতি করতে চান। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। মিডল টেম্পল থেকে বার অ্যাট ল হয়ে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে জ্যোতি বসু দেশে ফিরে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হলেন। আর রাজনৈতিক জীবন শুরু হলো শ্রমিক নেতা হিসাবে।[১২]

    [সম্পাদনা]বিরোধী রাজনীতি

    ১৯৪৬ সালে মাত্র বত্রিশ বছর অবিভক্ত বাংলার শেষ প্রাদেশিক আইনসভায় নির্বাচিত হন জ্যোতি বসু। এই সময় থেকেই আইনসভায় বিরোধী নেতার ভূমিকা পালন করতে থাকেন বসু। ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বামপন্থীরাই বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতার পূর্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, তেভাগা আন্দোলন ও বঙ্গবিভাগ নিয়ে আইনসভায় বিভিন্ন আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন তিনি। স্বাধীনোত্তর পশ্চিমবঙ্গেখাদ্য আন্দোলন, শিক্ষক আন্দোলন, বন্দীমুক্তি, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত আন্দোলনের পুরোভাগে থাকেন জ্যোতি বসু। এই সময় একাধিকবার বিভিন্ন কারণে কারারুদ্ধও হতে হয় বসু সহ তৎকালীন শীর্ষস্থানীয় বিরোধী নেতাদের।[১৩]

    [সম্পাদনা]প্রথম নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতা

    ১৯৪০-এর দশকে জলপাইগুড়ি শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে দোমহনিতে[১৪] রেল শ্রমিকদের সংগঠিত করার কাজ শুরু করেন জ্যোতি বসু। এখানকার কৃষক ও চা শ্রমিকদের সংগঠন তৈরি ও তেভাগা আন্দোলনেও তাঁর অবদান ছিল। দোমহনি থেকেই বেঙ্গল আসাম রেল রোড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নেতা বসু ১৯৪৬ সালের গোড়ার দিকে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় কংগ্রেসের হুমায়ুন কবিরকে মাত্র আট ভোটে পরাজিত করে বিধায়ক নির্বাচিত হন বসু।[১৫] এই নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি মোট তিনটি আসন পেয়েছিল। জ্যোতি বসুর সঙ্গে দার্জিলিং কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন অপর কমিউনিস্ট নেতা রতনলাল ব্রাহ্মণ[১৬][১৭]

    [সম্পাদনা]বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভা (১৯৪৬-৪৭)

    ১৯৪৬ সালের ১৪ মে নবগঠিত প্রাদেশিক আইনসভার প্রথম বৈঠক বসে। এই দিন রাজবন্দীদের মুক্তির বিষয়ে জ্যোতি বসু একটি মুলতুবি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। পরে সেই মুলতুবি প্রস্তাব পুনর্বিচারের জন্য অস্থায়ী স্পিকার ডি গ্ল্যাডিং-এর নিকট আবেদন জানান, কিন্তু গ্ল্যাডিং এই প্রস্তাব গ্রহণে অসম্মতি জানান।[১৮]

    জুলাই মাসে বাজেট অধিবেশন বসলে প্রথমেই বন্দী মুক্তির প্রসঙ্গে আইনসভা সোচ্চার হয়। জ্যোতি বসু পুনরায় এই প্রসঙ্গে একটি মুলতুবি প্রস্তাব উত্থাপন করলে স্পিকার তা প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ জানতে চাইলে, মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী কিছু বলতে যান। বসু উত্তরে বলেন যে তিনি স্পিকারের রুলিং মেনে চলবেন, মুখ্যমন্ত্রীর নয়। কংগ্রেসের কিরণশঙ্কর রায়ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখ সদস্য বসুকে সমর্থন করেন এবং বাইরে অপেক্ষমান হিন্দু-মুসলমান ছাত্র শোভাযাত্রার কাছে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বক্তব্য রাখতে অনুরোধ জানান। এই নিয়ে বিধানসভায় বেশ উত্তেজনা হয়।[১৯]সোহ্‌রাওয়ার্দী এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ১৫ অগস্টের মধ্যে রাজবন্দীদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি দেন। বন্দীরাও মুক্তি পান। উল্লেখ্য, এই বন্দীমুক্তির ব্যাপারে জ্যোতি বসু ও কমিউনিস্ট পার্টিই মূলত উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন এবং আইনসভায় তাঁরা কংগ্রেসের সহায়তাও পেয়েছিল।[২০]

    এই বাজেট বক্তৃতায় জ্যোতি বসু পাটশিল্প, কয়লাশিল্প ইত্যাদির রাষ্ট্রায়াত্ত্বকরণ এবং জমিদারি প্রথার উচ্ছেদের সুপারিশ করেন।[২১] আসাম প্রদেশে মুসলিম অনুপ্রবেশ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বসু বলেন জমিদারদের অত্যাচারের ফলেই দরিদ্র মুসলমানগণ বাস্তুভিটে ত্যাগ করে আসামে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এইজন্য জমিদারি প্রথার উচ্ছেদের পাশাপাশি ভূমিহীনদের মধ্যে জমিবণ্টন ও শিল্পবিকাশ ত্বরান্বিত করে বাস্তুত্যাগ বন্ধ করার জন্যও সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আবেদন জানান তিনি।

    ৬ অগস্ট আইনসভায় প্রবেশের পথে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার সামসুদ্দোহা কর্তৃক নিগৃহীত ও পরে গ্রেফতার হন বসু। কিরণশঙ্কর রায় স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অবিলম্বে যথোচিত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়। স্পিকারের নির্দেশে সোহ্‌রাওয়ার্দী সামসুদ্দোহাকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন। সোহ্‌রাওয়ার্দী এ নিয়ে তদন্তেরও নির্দেশ দেন। আইনসভায় দলমত নির্বিশেষে সকল সদস্যই পুলিশের এ হেন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্পিকারও পুলিশের এই ধরনের আচরণের বিরুদ্ধে সরকারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন।[২২]

    [সম্পাদনা]রাজনৈতিক জীবন ১৯৪৭-১৯৬৪

    ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ঔপনিবেশক শাসনের অবসান হলো, স্বাধীন হলো ভারত। স্বাধীনতা লাভের উৎসব শেষ হলে নতুন উদ্যমে সংগঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করলেন জ্যোতি বসু। কমিউনিস্ট পার্টির নতুন বঙ্গীয় প্রাদেশিক কমিটি বা 'পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি' গঠন করা হলো - জ্যোতি বসু এ কমিটির অন্যতম সদস্য নির্বাচিত হলেন। ২১শে নভেম্বর পুনর্গঠিত পশ্চিম বঙ্গ বিধান সভার অধিবেশন। এ সময় এসপ্ল্যানেডে মিছিলের ওপর লাঠি চালালো পুলিশ, নিক্ষেপ করলো কাঁদানে গ্যাস। কংগ্রেস আবির্ভূত হলো জনগণের শত্রু হিসেবে। এ সময় 'পশ্চিম বঙ্গ বিশেষ ক্ষমতা আইন' নামে একটি জনবিরোধী প্রণয়ন করা হয়। জ্যোতি বসু এর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। এই কালা কানুনের বিরূদ্ধে সংগঠিত আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করলেন তিনি। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে মার্চ তারিখে কংগ্রেস সরকার কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো। পরদিন জ্যোতি বসুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলো। প্রেসিডেন্সী জেলে শুরু হলো জ্যোতি বসুর প্রথম কারাজীবন। তিন মাস পর মুক্তি পেলেন তিনি। কারামুক্ত হয়ে আবার রেলওয়ে ট্রেড ইউনিয়নের কাজে মনোনিবেশ করলেন তিনি। বম্বে যাওয়ার পথে ট্রেনে উঠে পুলিশ তাকে আবার গ্রেপ্তার করলো। আলিপুর কোর্টে জামিন মিললো না; তাঁকে যেতে হলো আলীপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে। তবে অচিরেই খালাস পেলেন তিনি। ৫ই ডিসেম্বর ১৯৪৮ আলিপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বীরেন্দ্রনাথ বসুর কন্যা কমল বসুর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন তিনি। বিয়ের পর তিন মাস পুরো হওয়ার আগেই আবার তাঁকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নিল পুলিশ। তাকেঁ এবার আত্মগোপন করে থাকতে হলো, ছদ্মবেশ নিয়ে পথে বেরুতেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন তিনি।হেবিয়াস কর্পাস করে হাইকোর্টের আদেশে ১৯৫১তে মুক্তি পেলেন তিনি। মুক্তি পেযে কমিউনিস্ট পার্টি পুনর্সংগঠনের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেন জ্যোতি বসু। ইতিমধ্যে কমিউনিস্ট পার্টির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। তেলেঙ্গানায় কারাগারে আটক রাজবন্দীদের মুক্তির জন্য দিল্লী গিয়ে নেহরুর সঙ্গে দেখা করলেন তিনি। ১৮ই জানুয়ারী ১৯৫২'র বিধানসভার নির্বাচনে বরাননগর থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে জিতে গেলেন জ্যোতি বসু। এবার বিধানসভায় তিনি বিরোধী পক্ষের নেতা মনোনীত হলেন। বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক আইনের বিরূদ্ধে তিনি শক্ত অবস্থান নিয়ে অটল ছিলেন। ১৯৫৩-এ কমিউনিস্ট পার্টির পশ্চিম বঙ্গ রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন তিনি। পার্টি সংগঠনের দায়িত্ব বেড়ে গেল অনেক।

    [সম্পাদনা]রাজনৈতিক জীবন ১৯৬৪-১৯৭৭

    ১৯৬০-এর দশকে জ্যোতি বসুর ওপর বেশ কয়েক বার হামলা হয়। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে মে দিবসের আগের দিন বরাননগরে এক শ্রমিক সমাবেশে যাওয়ার পথে কংগ্রেসী পতাকা হাতে একদল সন্ত্রাসী তাঁর গাড়ীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ৩য় সাধারণ নির্বাচনের প্রচারের কাজে কাকদ্বীপযাওয়ার পথে শতখানেক লোক তাঁর পথ আগলে হামলা করে। ১৬ ফ্রেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি বরাননগর এলাকা থেকে ধীরেন্দ্রনাথ চ্যাটার্জিকে পরাজিত করে বিধানসভার সদস্য হলেন; বিধানসভায় বিরোধীয় দলীয় নেতাও হলেন তিনি।[২৩]

    ১৯৬২'র ২০শে জুন চীন-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষ শুরু হলে সারা ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির ওপর নেমে আসে নির্যাতন। কালীঘাটে কুশপুত্তিলিকার দোকানে জ্যোতি বসুর কুশপুত্তলিকা বিক্রয় হতো। তাঁকে "চীনের দালাল", "দেশদ্রোহী" ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত করে রাস্তায় সেগুলো পোড়ানো হতো।গোয়েন্দা পুলিশ সর্বত্র অনুসরণ করতো তাকে। যুদ্ধ স্থায়ী হলো মাত্র ১৪ দিন; কিন্তু ইত্যবসরে জ্যোতি বসুকে এক কাকডাকা ভোরে গ্রেপ্তার করে টানা ১ বছর কারাবন্দী করে রাখা হলো। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১৯শে ডিসেম্বর তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয়। ১৯৬৫-৬৬ এ খাদ্য আন্দোলন, বন্দীমুক্তি আন্দোলন, ট্রামভাড়াবৃদ্ধি আন্দোলনে উত্তাল এক সময়। এ সময় জ্যোতি বসুকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৬৬'র ১৪ মার্চ তিনি মুক্তি পেলেন।[২৪]

    ইতিমধ্যে পশ্চিম বঙ্গে কংগ্রেস সম্পর্কে জনগণের মোহভঙ্গ হয়েছে। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দের ৪র্থ সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসের আধিপত্য খর্ব হলো। গঠিত হলো অ-কংগ্রেসী কোয়ালিশন সরকার। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দের ২রা মার্চ জ্যোতি বসু দ্বিতীয় বারের মতো পশ্চিম বঙ্গের উপ-মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। শুরু হলো ট্রেজারী বেঞ্চের জীবন; শুরু হলো বুর্জোয়া রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে থেকে বামপন্থী সরকার পরিচালনার দুরূহ সংগ্রাম। জ্যোতি বসুর মূল পুঁজি তাঁর নেতৃত্বের ওর সাধারণ মানুষের আস্থা। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের ৯ই ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে জ্যোতি বসু পুনর্বার বরাননগন থেকে নির্বাচিত হলেন, আবার বামফ্রন্ট ক্ষমতায় এলো; জ্যোতি বসু আবারো উপ মুখ্যমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্র দায়িত্ব পেয়ে তিনি পুলিশকে "জনগণের বন্ধু" হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করলেন। কংগ্রেসের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা এবং যুক্তফ্রন্টের ঐক্য বজায় রাখা এই দ্বিবিধ সমস্যার মধ্য দিয়ে পথ চলতে হচ্ছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নকশাল আন্দোলন। অজয় মুখার্জিকে হারিয়ে জ্যোতি বসু নির্বাচিত হলেন। মাত্র তের মাসের মাথায় ২১শে মার্চ ১৯৭০ দ্বিতীয় যুক্তফ্রন্ট সরকারের পতন হয়।[২৫]

    ৯ই মার্চ ১৯৭১-এ অনুষ্ঠিত হলো মধ্যবর্তী নির্বাচন। কিন্তু রাজনীতি বিশৃঙ্খল হয়ে পড়েছে। সরকার গঠন হতে না-হতেই জারী করা হলো রাষ্ট্রপতির শাসন। পরবর্তী নির্বাচন ১১ মার্চ ১৯৭২। জ্যোতি বসুর ভাষায় "বাহাত্তরের নির্বাচনটা ছিল সংসদীয় গণতন্ত্রের এক নির্লজ্জ প্রহসন। ... আমি সেদিন আমার নির্বাচনী এলাকা বরাননগরে ঢুকতেই পারিনি।"[২৬] এসময় প্রশাসন ছিল সম্পূর্ণ বৈরী। অভিযোগ আছে জালিয়াতির মাধ্যমে শিবপদ ভট্টাচার্য জিতে গেলেন। জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টি বিধান সভা বর্জন করে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার কৌশল বেছে নিল।

    ১৯৭৭ পর্যন্ত কয়েকটি বছর দুঃসময়ের কাল। এরই মধ্যে ইংল্যান্ডের কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে বিলেত ভ্রমণ করলেন জ্যোতি বসুর। লন্ডনে নানা সভা-সমিতি করে তিনি সফর করলেন বেলজিয়ামজার্মানীহল্যান্ড প্রভৃতি কয়েকটি দেশ। ভারতে তখন নানা সমস্য। একদিকে খাদ্যঘাটতি, অন্যদিকে কংগ্রেসের আভ্যন্তরীণ কলহ। পশ্চিমবঙ্গে নকশালবাদীদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য নানা পুলিশী কার্যক্রম। এছাড়া জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে গণআন্দোলন চলছে। ১২ই জুন ১৯৭৫ তারিখে নির্বাচনী বিধি ভাঙ্গার দায়ে ইন্দিরা গান্ধীর লোকসভার সদস্যপদ বাতিল করে দেয় এলাহাবাদ হাই কোর্ট। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জুন সারা দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়। বহু রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হলো। জ্যোতি বসু জনসমর্থনের জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যেতে লাগলেন।

    [সম্পাদনা]পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ১৯৭৭-২০০০

    ১৬ই মার্চ ১৯৭৭-এ অনুষ্ঠিত লোকসভার নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিধ্বস পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ভারতীয় রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়ের সূত্রপাত। সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে জনতা দল সরকার গঠন করলো। প্রধানমন্ত্রী হলেন মোরারজি দেশাই। পশ্চিম বঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনেও সার্বিক রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখা গেল। সাতগাছিয়া থেকে প্রতিদ্বন্দীতা করে জ্যোতি বসু নির্বাচিত হলেন। তাঁর দল সিপিআই-এম পরিষ্কার সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলো। পশ্চিমবঙ্গে গঠিত হলো বামফ্রন্ট সরকার ; মুখ্যমন্ত্রী হলেন জ্যোতি বসু। বামফ্রন্টের ৩৬ দফা কর্মসূচীর ওপর জোর দিলেন তিনি। মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠকে দেশ শাসনের দর্শন ব্যক্ত করলেন জ্যোতি বসু: "আমরা রাইটার্স বিল্ডিং থেকে ক্ষমতা প্রয়োগ করব না, আমরা আমাদের কর্মসূচী রূপায়ণ করব মাঠ আর কারখানা থেকে, জণগণের সহায়তা নিয়ে, কারণ এরাই আমাদের ক্ষমতার উৎস।" ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠান তাঁর একটি প্রধান অর্জন। এছাড়া গ্রামীন বাংলায় ভূমিসংস্কারও একটি বিরাট সাফল্য। ১৯৭৯-এর গোড়ার দিখে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেন। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের লোকসভার নির্বাচনে জিতে ইন্দিরা গান্ধী আবার ক্ষমতায় এলেন। কেন্দ্রের অসহযোগতিা সত্ত্বেও জ্যোতি বসু সরকার পরিচালনা করে গেলেন দৃঢ়তার সাথে। তাঁর সাফল্য পরবর্তী নির্বাচনে বিজয়ের পথ সুগম করে দিল।

    [সম্পাদনা]অবসর জীবন

    ২০০০ সালের ২৮ জুলাই সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক চলাকালীন হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন জ্যোতি বসু। তাঁকে প্রথমে ভর্তি করা হয়রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে; পরে নিয়ে যাওয়া হয় অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসে। চিকিৎসার পর পরদিন সন্ধ্যায় ছাড়া পান বসু। ১৫ অগস্ট নিজেই জানান ১৫ সেপ্টেম্বরের পর অবসর নিতে চলেছেন তিনি। তবে পার্টির চাপে অবসরের তারিখ নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পিছিয়ে যায়। ৩ নভেম্বর শেষ বারের মতো পশ্চিমবঙ্গ সচিবালয় মহাকরণে আসেন বসু। ৫ নভেম্বর রাজারহাট নিউটাউনে একটি আবাসিক ভবনের অনুষ্ঠানে যান; এটিই ছিল তাঁর জীবনের শেষ সরকারি অনুষ্ঠান। একটানা ৮৫৪০ দিন মুখ্যমন্ত্রীত্বের দায়িত্বভার পরিচালনার পর ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বিদায় সংবর্ধনা সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নিলেন বসু।[১৪]

    ৭ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের বন্যাত্রাণে কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্যের দাবিতে দিল্লির বিঠলভাই প্যাটেল হাউসে ধরনায় বসলেন বসু। ১০ ডিসেম্বর বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহএইচ. ডি. দেবেগৌড়ারাবড়ি দেবীপ্রফুল্ল মহন্ত প্রমুখ নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে রাজ্য বামফ্রন্ট কমিটির উদ্যোগে জ্যোতি বসুর সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হল। ১২ ডিসেম্বর জলপাইগুড়ি শহরে অনুষ্ঠিত হল সংবর্ধনা সভা। উল্লেখ্য, এই শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে দোমহনিতে রেলশ্রমিক আন্দোলনে যোগদানের মাধ্যমেই তিনি প্রথম বার প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক সংগ্রামে নেমেছিলেন। ২০০১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্যপদ ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে বিধানসভার সঙ্গে বসুর ৫৫ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন হল। বিধানসভায় বসুর শেষ বার্তা ছিল 'প্রশংসা বিষবৎ, নিন্দা অমৃতসমান'।[১৪] তবে অবসর গ্রহণের পরও বিধাননগরের মুখ্যমন্ত্রী আবাস ইন্দিরা ভবনেই তাঁর আজীবন বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়।

    ২০০৪ সালের ১৬ অক্টোবর উত্তরবঙ্গ সফরে যান বসু। ২৪ ডিসেম্বর যান সিঙ্গাপুর সফরে। ২০০৫ সালের ২৩ জুলাই বাথরুমে পড়ে গিয়ে আহত হন বর্ষীয়ান এই নেতা। এই বছরই নতুন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সিপিআই(এম)-এর অষ্টাদশ পার্টি কংগ্রেস জ্যোতি বসুকে দলের পলিটব্যুরো সদস্য হিসেবে পুনর্নির্বাচিত করে। যদিও বসু নিজে শারীরিক অসুস্থতার কারণে এই পদটি থেকে অব্যহতি চেয়েছিলেন। ২০০৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি পুণরায় বার্ধক্যের কারণে দলীয় পদ থেকে অব্যহতি চান। কিন্তু সেই সময় তাঁর এই অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হয়। সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট জানিয়েছিলেন, ২০০৮ সালের পার্টি কংগ্রেস পর্যন্ত তাঁরা বসুকে দলীয় পদে চান। তারপর এই কংগ্রেসেই তাঁর অনুরোধ বিবেচনা করা হবে।[২৭] ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত ঊনবিংশ পার্টি কংগ্রেসে বসুকে আর পলিটব্যুরোয় অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। যদিও তাঁকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পলিটব্যুরোর বিশেষ অতিথির মর্যাদা দেওয়া হয়।[২][৩] ২৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন প্রদান করতে চাইলে তা গ্রহণে অসম্মত হন বসু।[১৪] ২০০৬ সালের ১৪ নভেম্বর আবার বাড়িতে পড়ে গিয়ে কোমরে চোট পান তিনি।

    ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় জ্যোতি বসুকে সাম্মানিক ডি. লিট. সম্মান প্রদান করে। ২০০৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বাড়িতে পড়ে গিয়ে কপালে ও মাথায় আঘাত পান বসু। ৭ সেপ্টেম্বর ভর্তি হন হাসপাতালে। ১২ নভেম্বর আবার বাড়িতে পড়ে গিয়ে আহত হন বসু। ৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনারপ্রাক্তন ফুটবলার দিয়েগো মারাদোনা এসে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ২০০৯ সালের ১৩ মে বাথরুমে পড়ে গিয়ে বাঁ পায়ে আঘাত পান বসু। জুন মাসে নির্বাচনী সাফল্যের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। ১২ জুলাই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন অ্যাডভান্সড মেডিকেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (আমরি হসপিটাল)। সেবার সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন বসু।[১৪]

    [সম্পাদনা]জীবনাবসান

    নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হলে ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি বসু বিধাননগরের অ্যাডভান্সড মেডিকেয়ার অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (আমরি হসপিটাল) ভর্তি হন।[২৮][২৯] ১৬ জানুয়ারি তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়ে এবং তাঁর একাধিক অঙ্গ বিকল হয়ে যেতে থাকে।[৩০][৩১]সতের দিনের দীর্ঘ অসুস্থতার পর ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি ভারতীয় সময় সকাল ১১টা ৪৭ মিনিটে জ্যোতি বসুর জীবনাবসান হয়।[৩২] তাঁর দেহের সৎকার হয়নি - তিনি তাঁর চোখ দান করে গেছেন; তাঁর মরদেহ ব্যবহৃত হবে মেডিক্যাল কলেজের গবেষণায়। তাঁর মৃত্যু উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গে ১৮ জানুযারী ২০১০ সোমবার সরকারী ছুটি পালিত হয়। ২০ জানুযারী তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।

    [সম্পাদনা]সমালোচনা

    বিভাগোত্তর ভারতে অতুলনীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী রাষ্ট্রনায়ক জ্যোতি বসুর জীবনের প্রকৃত অর্জন কী এ নিয়ে রাজনৈতিক সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছেন। কমিউনিস্ট পার্টির নেতা হিসেবে তাঁর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ১৯৭০-এর দশকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাট থেকে কংগ্রেসকে তিনি কেবল উৎখাতই করেন নি, পরবর্তী তিন যুগে কংগ্রেসের প্রভাব তিনি বহুলাংশে খর্ব করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এ কথা সত্য যে তিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকে স্থিতিশীল করত: কর্দমমুক্ত করতে সক্ষম হন। তবে আপাদমস্তক মার্ক্সবাদী জ্যোতি বসুর পক্ষে পশ্চিমবঙ্গে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয় নি। দীর্ঘ ২৩ বছর তিনি নাগাড়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সরকার পরিচালনা করেছেন। রাষ্ট্রযন্ত্রে তাঁর নেতৃত্বের সাফল্য কী সে নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। তাঁর শাসনামলে পশ্চিমবঙ্গের উল্লেখ করবার মতো কোন অর্জন নেই এমন ইঙ্গিতও করা হয়েছে। বলা হয়েছে তাঁর আমলে পশ্চিমবঙ্গে স্থিতাবস্থা বিরাজ কররেও তেমন কোন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটেনি।[৩৩]

    [সম্পাদনা]সম্মাননা

    তাঁর মৃত্যুর পর বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে আহ্বায়ক করে বাংলাদেশে ২০১ সদস্যবিশিষ্ট "কমরেড জ্যোতি বসু স্মরণে নাগরিক পর্ষদ" গঠন করা হয়।[৩৪]

    [সম্পাদনা]রচনাবলি

    [সম্পাদনা]পাদটীকা

    1. ^ জ্যোতি বসুর যখন জন্ম হয় তখন নারায়ণগঞ্জ ছিল ঢাকা জেলার অন্তর্গত একটি মহকুমা। ১৯৮০-র দশকে নারায়ণগঞ্জকে পৃথক একটি জেলায় উন্নীত করা হয়। ঢাকা শহর থেকে সরাসরি বাসে সোনারগাঁও মোগরাপাড়া বাসস্ট্যান্ড নেমে রিকশা অথবা স্কুটারে বারদী যাওয়া যায়।

    [সম্পাদনা]তথ্যসূত্র

    1.  Jyoti Basu: India's longest-serving Cheif Minister
    2. ↑ ২.০ ২.১ "Jyoti Basu will continue on Central Committee"The Hindu, April 4, 2008.
    3. ↑ ৩.০ ৩.১ "Nine to none, founders' era ends in CPM"The Telegraph (Calcutta), April 3, 2008.
    4.  Life Sketch of Jyoti Basu, Life Sketch of Jyoti Basu
    5.  Basu, Jyoti. Jatadur Mone Pare: Rajnaitik Atmakathan. প্রকাশক: National Book Agency. (Calcutta).
    6.  সুরভি বন্দ্যোপাধ্যায়: জ্যোতি বসু : অনুমোদিত জীবনী, ১৯৯৭, হারপারকলিনস পাবলিশার্স ইন্ডিয়া, নতুন দিল্লী, ভারত।
    7.  JYOTI BASU : BRIEF LIFE-SKETCH
    8.  Political biography : Jyoti Basu
    9.  সুরভি বন্দ্যোপাধ্যায়: জ্যোতি বসু : অনুমোদিত জীবনী, ১৯৯৭, হারপারকলিনস পাবলিশার্স ইন্ডিয়া, নতুন দিল্লী, ভারত।
    10.  জ্যোতি বসু : যতদূর মনে পড়ে, ২০০৫, কলকাতা। পৃষ্ঠা:১-২
    11.  জ্যোতি বসু : যতদূর মনে পড়ে, ২০০৫, কলকাতা।পৃষ্ঠা:২-৪।
    12.  সুরভি বন্দ্যোপাধ্যায়: জ্যোতি বসু : অনুমোদিত জীবনী, ১৯৯৭, হারপারকলিনস পাবলিশার্স ইন্ডিয়া, নতুন দিল্লী, ভারত। পৃষ্ঠা ২১-২৮।
    13.  "যখন ছিলেন বিরোধী নেতা", গণশক্তি, সোমবার ১৮ জানুয়ারি ২০১০
    14. ↑ ১৪.০ ১৪.১ ১৪.২ ১৪.৩ ১৪.৪ "জ্যোতি বসু: বর্ণময় ৯৬ বছর", সংবাদ প্রতিদিন, সোমবার ১৮ জানুয়ারি ২০১০
    15.  "তিস্তাপাড়ের দোমহনী কেঁদেই উঠলো", পার্থ ভট্টাচার্য, গণশক্তি, সোমবার ১৮ জানুয়ারি ২০১০
    16.  সুমন সেনগুপ্ত, "ফ্রন্ট রানার"; দেশ, ১৭ জানুয়ারি, ২০১০
    17.  বাংলার বিধানসভা ও সংসদীয় রাজনীতি (১৮৬২ – ১৯৫১), সত্যব্রত দত্ত, বুক সিন্ডিকেট প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ১৯৯৫, পৃ. ১৫১
    18.  Proceedings of the Bengal Legislative Council, 1946, Vol. 70, p. 7-9
    19.  Proceedings of the Bengal Legislative Council, 1946, Vol. 71, No 1, p. 21-23
    20.  বাংলার বিধানসভা ও সংসদীয় রাজনীতি, পৃ. ১৫৩
    21.  Proceedings of the Bengal Legislative Council, 1946, Vol. 71, No 2, p. 140-141
    22.  Proceedings of the Bengal Legislative Council, 1946, Vol. 71, No 2, p. 82
    23.  সুরভি বন্দ্যোপাধ্যায়: জ্যোতি বসু : অনুমোদিত জীবনী, ১৯৯৭, হারপারকলিনস পাবলিশার্স ইন্ডিয়া, নতুন দিল্লী, ভারত। পৃ:৮৩-৮৪।
    24.  সুরভি বন্দ্যোপাধ্যায়: জ্যোতি বসু : অনুমোদিত জীবনী, ১৯৯৭, হারপারকলিনস পাবলিশার্স ইন্ডিয়া, নতুন দিল্লী, ভারত। পৃ:৮৪-৮৭।
    25.  সুরভি বন্দ্যোপাধ্যায়: জ্যোতি বসু : অনুমোদিত জীবনী, ১৯৯৭, হারপারকলিনস পাবলিশার্স ইন্ডিয়া, নতুন দিল্লী, ভারত। পৃ:৮৮, ৯২-৯৩ ৯৮-৯৯।
    26.  সুরভি বন্দ্যোপাধ্যায়: জ্যোতি বসু : অনুমোদিত জীবনী, ১৯৯৭, হারপারকলিনস পাবলিশার্স ইন্ডিয়া, নতুন দিল্লী, ভারত। পৃ:১০৬।
    27.  Bhaumik, Subir (September 11, 2006). "Left veteran just wants to retire"BBC News (CalcuttaBBC)। সংগৃহীত হয়েছে: January 6, 2010.
    28.  "Jyoti Basu admitted to hospital"NDTV (KolkataNDTV). January 1, 2010। সংগৃহীত হয়েছে: January 6, 2010.
    29.  "Jyoti Basu put on ventilator, condition serious"Hindustan TimesPress Trust Of India (KolkataHT Media). January 06, 2010। সংগৃহীত হয়েছে: January 6, 2010.
    30.  "Former West Bengal CM Jyoti Basu on ventilator due to breathing trouble"The Times of India (KolkataBennett, Coleman & Co). January 6, 2010,। সংগৃহীত হয়েছে: January 6, 2010.
    31.  "Basu's on ventilator, condition 'very critical'"The Press Trust of India (KolkataThe Press Trust of India). January 6, 2010। সংগৃহীত হয়েছে: January 6, 2010.
    32.  "CPM patriarch Jyoti Basu passes away"The Economic Times (KolkataThe Economic Times). January 17, 2010। সংগৃহীত হয়েছে: January 17, 2010.
    33.  Patriarch who embodied stable stagnation
    34.  দৈনিক ইত্তেফাক, ঢাকা, ২৬ জানুয়ারী সংখ্যা। পৃ. ২০-১৯।

    [সম্পাদনা]আরো দেখুন

    [সম্পাদনা]গ্রন্থপঞ্জি

    • জ্যোতি বসু: যতদূর মনে পড়ে: রাজনৈতিক আত্মকথন, ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাঃ লিঃ, কলকাতা, ভারত; ২০০৬ (২য় সংশোধিত সংস্করণ)
    • রেহমান শামস: রাজনীতির জ্যোতি বসু, অবসর প্রকাশনী, ঢাকা, বাংলাদেশ; ২০০৪
    • সুরভি বন্দ্যোপাধ্যায়: জ্যোতি বাসু: দি অথরাইজড বায়োগ্রাফি, হারপার কলিনস পাবলিশার্স ইন্ডিয়া, নতুন দিল্লি, ভারত; ১৯৯৭

    পূর্বসূরী
    সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়
    পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী
    জ্যোতি বসু

    ১৯৭৭–২০০০


    উত্তরসূরী
    বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য


    জনতা জনার্দনকোনো দলরেই ভালো কওয়ার উপায় নাই সব ক্ষমতার জইন্যে লড়াই করেমো. বাবুল ভ্রাম্যমাণ মাটির পাত্র বিক্রেতা
    চাচা কেমন আছেন?
    আছি বাপু, ভালোই আছি। আল্লায় যেভাবে রাখে তাতেই সন্তুষ্ট।

    বিক্রি কেমন? কত দিন ধরে এ কাজ করেন?
    হয়, সারা দিন টুকটুক কইরা ভালোই বিক্রি হয়। জিনিসপাতির দাম বাড়ছে, আগে যেইডা ১০০ ট্যাকা শ কিনছি এখন সেইডা ১৫০০ ট্যাকা শ কিনি। এখন আর মাটির জিনিসপাতি তেমন কেউ নিতে চায় না। উন্নত পদ্ধতি বারাইছে। নিতান্তই প্রয়োজন ছাড়া নেয় না। আমার বয়স ধরেন ৪৭-৪৮ বছর তো হইব। এক্কেবারে ছোটকাল থাইকা এই ফেরি করি। আমার বাপেও এই কাম করছে।

    এই ব্যবসা দিয়ে সংসার চলে?
    চলে, চালাইয়া নিতে হয়। এখন আপনার ইনকামের ওপর তো আপনি চলবেন, তাই না! চাইলেই তো আপনি অনেক বেশি খরচা করতে পারবেন না। দুই মাইয়া আর এক পোলাসহ সব্বাই শরীয়তপুর গ্যারামের বাড়ি থাকে। পোলা-মাইয়ারা ছোড, সব্বাই পড়াশোনা করতাছে। দেরিতে বিয়া করছি তো (হেসে)।

    জীবনে তো অনেক কিছুই দেখেছেন। দেশের কি উন্নতি হয়েছে মনে হয়?
    হ, হইছে। যাদের হওয়ার কথা তাদের হইছে। এই যে দেখতাছেন, আমি ছোডবেলা যা ছিলাম, তাই আছি। ট্যাকা আলাগো ট্যাকা হয়, আমারও বেশি পুঁজি থাকলে আমিও পারতাম। আর ধরেন, জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করছি লেখাপড়া না শিইখা। বাপে অনেক পিটাইছে, পড়ার জইন্যে, পড়ি নাই, নিজের কপাল নিজেই পোড়াইছি।

    আপনি কোন রাজনৈতিক দলকে পছন্দ করেন?
    সারা জীবন আমি আওয়ামী লীগরে ভোট দিছি। আর দলের ভালোমন্দর কথা যদি কন, তাইলে সব দলই সমান। এই দেখেন বিশ্বজিৎ পোলাডারে মাইরা ফালাইল, হেতে কোনো দল করে কি? করে না। আর দল করলেই মাইরাফালাইতে হইব! বিএনপির আমলেও দেখছি এইভাবে মানুষ মারতে। কোনো দলরেই ভালো কওয়ার উপায় নাই। সব ক্ষমতার জইন্যে লড়াই করে! আমাগো এই সব ভাইবা কাজ নাই, কাম করলে খাইতে পামু, না করলে কেউ আইসা দুই মুঠা খাবার দিব না।
    সাক্ষাৎকার ও ছবি : বিপ্লব মিত্র
    http://www.kalerkantho.com/index.php?view=details&type=gold&data=Soccer&pub_no=1095&cat_id=3&menu_id=151&news_type_id=1&index=7&archiev=yes&arch_date=18-12-2012#.UOxTTOSE2Bk
    ইউসুফ জামিল ইভান

    ইউসুফ জামিল ইভান › বিস্তারিত পোস্টঃ

    আমার প্রতিবাদের ভাষা কি ?

    ১৫ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১০:২৩

     
    আমার প্রতিবাদের ভাষা নিম্নে,




    তারা আসলে পুলিশ না। তার সত্য দাবি দমনের হাতিয়ার।তারা এই সমাজের নিম্ন পর্যায় থেকে উঠে আসা কীট।এই কীট গুলো সময় ভেদে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি রাজনৈতিক নেতার সত্য দমনের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়।আমি আমাদের নারী সত্ত্বাহীন নারী নামধারি নারী মন্ত্রীদের বলছি , আপনরা বাঙ্গালী নারী জাতির কালো অধ্যায়।কুকুর যেমন এক খন্ড মাংসের উপর ঝাপিয়ে পড়ে,ঠিক সেই রকম করে সরকারি পোশাক পড়া পুলিশ নামিধারি পশু আন্দোলনরত মা বোনদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। আর আমাদের নারী সত্ত্বাহীন নারী মন্ত্রীগণ মুখে তালা লাগিয়ে মন্ত্রাণলয় চালায়। আমরা আর কত আমাদের মা বোনদের সম্মান হরণ করবো।এখন তো দেশে ৭১ নেই।৭১ রে পাকসেনাদের হাতে আমাদের মা-বোনদের সম্মান হরণ হত।আর ২০১১ সালে আমাদের প্রাণের বাংলার মাটিতে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি রাজনৈতিক নেতার পালিত পশু দ্বারা আমাদের মা-বোনদের সম্মান হরণ হয়। আমাদের আসলে মূল পরিবর্তনটা হয় নাই।শুধু ক্ষমতার পরির্বতন হয়েছে। ক্ষমতার লড়াই আর কত কাল চলবে।দুই রাজ্যের দুই পশুদের এই ক্ষমতার লড়াই আর চলতে দেয়া যায় না।বুদ্ধি প্রতিবন্ধি রাজনৈতিক নেতাদের আর যাই হোক সম্মান করা যায় না ।

    আপনার প্রতিবাদের চোখটা খুলুন। আর কত দেখোও না দেখার ভান করবেন ।আমাদের মেরুদন্ড কি ভেঙ্গে গিয়েছে। আমরা কি আর কখন মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবো নাআমার প্রতিবাদের ভাষা নিম্নে,

    তারা আসলে পুলিশ না। তার সত্য দাবি দমনের হাতিয়ার।তারা এই সমাজের নিম্ন পর্যায় থেকে উঠে আসা কীট।এই কীট গুলো সময় ভেদে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি রাজনৈতিক নেতার সত্য দমনের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়।আমি আমাদের নারী সত্ত্বাহীন নারী নামধারি নারী মন্ত্রীদের বলছি , আপনরা বাঙ্গালী নারী জাতির কালো অধ্যায়।কুকুর যেমন এক খন্ড মাংসের উপর ঝাপিয়ে পড়ে,ঠিক সেই রকম করে সরকারি পোশাক পড়া পুলিশ নামিধারি পশু আন্দোলনরত মা বোনদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। আর আমাদের নারী সত্ত্বাহীন নারী মন্ত্রীগণ মুখে তালা লাগিয়ে মন্ত্রাণলয় চালায়। আমরা আর কত আমাদের মা বোনদের সম্মান হরণ করবো।এখন তো দেশে ৭১ নেই।৭১ রে পাকসেনাদের হাতে আমাদের মা-বোনদের সম্মান হরণ হত।আর ২০১১ সালে আমাদের প্রাণের বাংলার মাটিতে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি রাজনৈতিক নেতার পালিত পশু দ্বারা আমাদের মা-বোনদের সম্মান হরণ হয়। আমাদের আসলে মূল পরিবর্তনটা হয় নাই।শুধু ক্ষমতার পরির্বতন হয়েছে। ক্ষমতার লড়াই আর কত কাল চলবে।দুই রাজ্যের দুই পশুদের এই ক্ষমতার লড়াই আর চলতে দেয়া যায় না।বুদ্ধি প্রতিবন্ধি রাজনৈতিক নেতাদের আর যাই হোক সম্মান করা যায় না ।

    আপনার প্রতিবাদের চোখটা খুলুন। আর কত দেখোও না দেখার ভান করবেন ।আমাদের মেরুদন্ড কি ভেঙ্গে গিয়েছে। আমরা কি আর কখন মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবো না।

    http://m.somewhereinblog.net/blog/Yjevan/29413662


    নিত্যজাতম্‌মমতা-অভিজিতের শিষ্টাচার ও বাংলাদেশের পেছন ফিরে চলামহসীন হাবিব
    এই দেশের মানুষের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় কাঁটাতারের বেড়া ছাড়া পশ্চিম বাংলার মানুষের বিশেষ কোনো নৃতাত্তি্বক পার্থক্য নেই। একই ভাষা, একই সংস্কৃতি, একই গায়ের রং। একই মাছ-ভাত, শাক, একই ইলিশ মাছের নেশা। একই পারিবারিক জীবনব্যবস্থা। কিন্তু শুক্রবার ওই বাংলায় যে শুভ সূচনা আমরা দেখলাম, তা এই বাংলায় ঘটাতে মোট কত জেনারেশন লাগবে, বলা মুশকিল। কিছুদিন আগে পশ্চিম বাংলায় ক্ষমতার পালাবদল হয়েছে। ভারতের সমাজতান্ত্রিক চেতনার প্রাণপুরুষ জ্যোতি বসুর দল সিপিআইএম এখন আর ক্ষমতায় নেই। নির্বাচনে হেরে গিয়ে বিরোধী দলের আসনে বসেছে। দীর্ঘ ৩৪ বছরের সিপিআইএমের শাসনের অনেক দুর্বলতার, অনেক ব্যর্থতার কথা গলা ফাটিয়ে জনগণকে বলে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী পশ্চিম বাংলার মানুষের জন্য নতুন স্বপ্নকে মাটিতে টেনে নামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী এবং পশ্চিম বাংলার নয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই এক নজির দেখালেন তিনি শুক্রবার। প্রয়াত সিপিআইএম নেতা জ্যোতি বসুর জন্মদিন প্রথমবারের মতো পালন হলো তৃণমূল সরকারের আমলে। মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী দল সিপিআইএমের প্রয়াত নেতার ছবিতে মাল্যদান করলেন অকৃত্রিম শ্রদ্ধায়। ক্ষমতা গ্রহণ করে মমতা বলেছিলেন, 'আমরা-ওরা'র ব্যবধান রাখবে না তাঁর সরকার। সেটাই যেন কাজে প্রমাণ করলেন তিনি। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে বিধানসভায় জ্যোতি বসুর তৈলচিত্রে মাল্যদান করেছেন সব দলের বিধায়ক। তৈরি হয়েছিল একটি মিলনমেলা। বিরোধী দল সিপিআইএম প্রধানমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জ্যোতি বসুর ছবিতে মালা দেওয়ায় অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানিয়েছে। আমাদের দেশের মতোই অসংখ্য অশিক্ষিত মানুষের বসবাস ওই বাংলায়। কিন্তু মমতা ভয় পাননি যে জ্যোতি বসু তাঁর চেয়ে বড় হয়ে যেতে পারেন। মমতা ভালো করেই জানেন, মানুষ ভোট দিয়ে সিপিআইএমকে তথা সিপিআইএমের পাণ্ডাদের প্রত্যাখ্যান করেছে, জ্যোতি বসুকে নয়। তাই জ্যোতি বসুকে শ্রদ্ধা জানাতে এতটুকু কার্পণ্য করেননি তিনি।
    এত গেল ঘরের ভেতরের একেবারে খাঁটি বাঙালি আরেকটি জনপদের কথা। এবার অন্য প্রতিবেশীর কথায় আসি। দেশটির নাম থাইল্যান্ড। বাংলায় যাকে আমরা ডাকি শ্যামদেশ বলে। বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে ফল থেকে শুরু করে চুলের শ্যাম্পু, গায়ের সাবানটাও ওই দেশ থেকে আমদানি হতে দেখি। এই থাইল্যান্ডেই অতি সম্প্রতি নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন ইংলাক সিনাওয়াত্রা। তিনি থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিলিওনিয়ার থাকসিন সিনাওয়াত্রার বোন। নিজেরা ধনী হলেও সিনাওয়াত্রার পুয়ে পার্টির মূল সমর্থক কিন্তু থাইল্যান্ডের দরিদ্র সাধারণ। যা হোক, পুয়ে পার্টির নির্বাচনে জয়ের পর পরই থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অভিজিৎ ভিজ্জাজিভা ইংলাককে অভিনন্দন জানালেন।
    তার মানে কি এই দুই পরিচিত জনপদের রাজনীতি রাতারাতি পাল্টে গেছে? হঠাৎ করে তারা গণতন্ত্রের চোখে সভ্য জাতিতে পরিণত হয়েছে? না। এই গত বছরও থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক সহিংসতায় অন্তত ৯১ জনের মৃত্যু হয়েছে। পশ্চিম বাংলায় বিভিন্ন অঞ্চলে তৃণমূলের নীরব দখল চলছে। সিপিআইএম এবং তৃণমূল_দুই দল পরস্পরের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগও তুলছে। এসব রাজনৈতিক কালচার এক দিনে বা এক বছরে সমাজ থেকে বা দেশ থেকে মুছে ফেলার নয়। কিন্তু রাজনৈতিক শিষ্টচার কী হওয়া উচিত, সেটি অন্তত শুরু করতে পেরেছেন মমতা ও অভিজিৎ ভিজ্জাজিভা। বিশ্বাস করার যথেষ্ট যুক্তি আছে যে মমতার এ পুষ্পমাল্য থেকে কম-বেশি সুগন্ধ ছড়াবেই। অভিজিতের থাইল্যান্ড অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত সামনের দিকে ধাবমান। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাও আসলে থাইল্যান্ড একটি ঈর্ষণীয় দেশ হয়ে উঠবে অনেক জাতির কাছে। সেই স্থিতিশীলতারই একটি সূচনা করেছেন অভিজিৎ। তাঁর অভিনন্দন জানানোর সঙ্গে সঙ্গে থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা থাইল্যান্ডের নির্বাচনের ফলের ব্যাপারে নাক গলাবে না। প্রধানমন্ত্রী অভিজিৎ যেখানে অভিনন্দন জানান, সেখানে সেনাবাহিনীর সুযোগ কোথায় নাক গালানোর?
    শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, আমার বিশ্বাস, যেকোনো পরিবেশে এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অন্য একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে ডেকে আনে; একটি হিংসা আরেকটি হিংসাকে ডেকে আনে। মানুষ হলো আয়নার মতো। আপনি যেমন চেহারা আয়নায় দেখাবেন, তেমনটিই দেখতে পাবেন।
    বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপরিপক্বতার কারণে কয়েকটি বিষয় অনুপস্থিত। দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের ধারণা, কোনোভাবে তাদের মুখ থেকে অন্য দলের প্রশংসা বের হলে সেই সার্টিফিকেটের কারণে দেশের সব মানুষ বিপক্ষ দলটিকে সমর্থন দিয়ে দেবে। নিজেকে বড় করার প্রধান শর্ত যে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো, এ সাধারণ হিসাবটিও কোনো রাজনৈতিক দল মানে না। বিগত দিনে আমরা দেখেছি, নিশ্চিতভাবে আগামী দিনেও দেখব, ক্ষমতার পালাবদলে দলগুলো কয়েকটি কাজ করে আসছে, যা দেশের সচেতন মানুষকে প্রথমেই হতাশ করে তোলে। নির্বাচনের ফল প্রকাশের আগেই, পরাজয়ের আভাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচনের দিন সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিং করে বলে দেন, এ নির্বাচন মানি না। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। অর্থাৎ একটি বিরোধী দল যদি নির্বাচনকেই স্বীকার না করে, তাহলে তো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা চিন্তাই করা যায় না। অন্যদিকে যে দল জয়লাভ করে, তারা কোনো রকমে ক্ষমতা গ্রহণ করেই প্রথম কয়েকটি কাজ শুরু করে, যা অতিহাস্যকর। আটার কল, মুদি দোকান থেকে শুরু করে রাস্তা, ব্রিজ সব কিছুর নাম পাল্টে তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতার নামে নতুন নামকরণ শুরু করে। অথচ তারা বোঝে না যে ওভাবে নাম টিকিয়ে রাখা যায় না। নামটি ব্রিজ বা রাস্তাসর্বস্ব হয়ে যায়। আমেরিকায় কয়টি কাঠামো আব্রাহাম লিংকনের নামে? দক্ষিণ আফ্রিকায় কয়টি স্থান নেলসন ম্যানডেলার নামে? ভারতে কত জায়গা মহাত্মা গান্ধীর নামে?
    এই নষ্ট সংস্কৃতি দূরে ঠেলে দিতে যেকোনো এক পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। দেখবেন অন্য পক্ষ অবশ্যই বাধ্য হয়েছে শিষ্টাচার প্রদর্শনে। ঠিক যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিপিআইএম 'অকুণ্ঠ ধন্যবাদ' জানাতে বাধ্য হয়েছে।
    পুনশ্চ : গণমাধ্যমে প্রকাশিত জয়নুল আবদিন ফারুকের কয়েকটি বিষয় কিন্তু ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারিনি। একটি হলো, তিনি সুর করে অন্যদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে গাইছিলেন 'সব শালারা ভাইসা যাবে বঙ্গোপসাগরে।' দ্বিতীয়টি হলো, তিনি নিজে ঢিল ছুড়ে মারছেন এবং তৃতীয়টি হলো, তিনি পুলিশ অফিসারকে 'তুই' সম্বোধন করছেন। তাঁর নিজের অবস্থানের সঙ্গে এই তিনটি কাজই সম্পূর্ণ বেমানান ছিল। নিশ্চয়ই রাজনৈতিক আন্দোলনে সংসদের বিরোধীদলীয় হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক এবং রাস্তার পিকেটারের ভূমিকা এক নয়। তবে অতিউৎসাহী পুলিশ তাঁকে প্রহার করে অসহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছে। সরকারকে খুশি করাই যে তাদের লক্ষ্য ছিল, সে কথা সবার মুখে মুখে ফিরছে।
    এ ঘটনা দেখে পাকিস্তানের সেই স্বৈরশাসনের সময়ের একটি কথা মনে পড়ল (নিজে দেখিনি, ইতিহাস পড়ে জেনেছি)। ১৯৬৯ সালে মওলানা ভাসানী ছিলেন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনি লাহোর থেকে করাচি যাওয়ার সময় বর্বর শাসকদের পাণ্ডারা শাহিওয়াল রেলস্টেশনে তাঁর ওপর হামলা চালায়। ৮৬ বছর বয়স্ক নেতাকে রেলওয়ের কম্পার্টমেন্ট থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে ফেলে সেই পাষণ্ডরা। তিনি শরীরের বেশ কয়েকটি স্থানে আঘাত পান। ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো, মওলানা মুলতান স্টেশনে এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে এ ঘটনায় সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। এই ধরনের বিশৃঙ্খলাকে তিনি পাত্তা দেননি। মওলানার কাছে তাঁর শরীর বা ওই পাণ্ডারা ফ্যাক্টর ছিল না, ফ্যাক্টর ছিল দেশের স্বৈরশাসন। আহারে, কোথায় হারিয়ে গেলেন তাঁরা আমাদের পঙ্কিল রাজনীতির মাঠে ফেলে রেখে?

    লেখক : সাংবাদিক
    সম্পাদক : ইমদাদুল হক মিলন, উপদেষ্টা সম্পাদক : অমিত হাবিব, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের পক্ষে ময়নাল হোসেন চৌধুরী কর্তৃক প্লট-৩৭১/এ, ব্লক-ডি, বসুন্ধরা, বারিধারা থেকে প্রকাশিত এবং প্লট-সি/৫২, ব্লক-কে, বসুন্ধরা, খিলক্ষেত, বাড্ডা, ঢাকা-১২২৯ থেকে মুদ্রিত।
    বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ : বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, প্লট-৩৭১/এ, ব্লক-ডি, বারিধারা, ঢাকা-১২২৯। পিএবিএক্স : ০২৮৪০২৩৭২-৭৫, ফ্যাক্স : ৮৪০২৩৬৮-৯, বিজ্ঞাপন ফোন : ৮১৫৮০১২, ৮৪০২০৪৮, বিজ্ঞাপন ফ্যাক্স : ৮১৫৮৮৬২, ৮৪০২০৪৭। E-mail : info@kalerkantho.com


    বঙ্গভঙ্গ রদের শতবর্ষ (১৬) ইতিহাসের পর্যালোচনা ও শিক্ষা বিংশ শতাব্দীর প্রথমে বঙ্গভঙ্গ পরবর্তীর্তে রদ (বাতিল) বাংলার ইতিহাসে দুইটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এতে ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে যেমনি জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাত তেমনি ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতায় ব

    • PDF

    বঙ্গভঙ্গ রদের শতবর্ষ (১৬)

    ইতিহাসের পর্যালোচনা ও শিক্ষা

    বিংশ শতাব্দীর প্রথমে বঙ্গভঙ্গ পরবর্তীর্তে রদ (বাতিল) বাংলার ইতিহাসে দুইটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। এতে ব্রিটিশ শাসকের বিরুদ্ধে যেমনি জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সূত্রপাত তেমনি ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতায় বিভাজনের সূত্রপাত।

    বৃহৎ বেঙ্গল প্রেসিডেন্সী থেকে চলে গেলো বিহার, উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশের কিছু জেলা, কলকাতা থেকে রাজধানী চলে গেলো নয়াদিল্লিতে (সূত্রপাত হলো বাংলার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পতন) মুসলিম লীগের ও দ্বিজাতিতত্ত্বে জন্ম হলো। বঙ্গভঙ্গ রদের ৩৫ বছর পর মূলে ভারতভঙ্গ।

    আসাম : পৃথক রাজ্য হলো (পূর্ব বাংলার শিক্ষিত ও বিত্তবান সিলেট জেলা আসামের অংশ হয়ে গেলো)। প্রশ্ন উঠেছে, এটা বাঙালি জাতির বড় জয় না বড় পরাজয়। শতবর্ষের ব্যবধানে বঙ্গভঙ্গের ও রদের ইতিহাসের কিছু পর্যালোচনা এখানে তুলে ধরা হলো :

    বঙ্গভঙ্গ না হলে কি হতো

    এবং হয়ে কি হয়েছে

    মূলত বঙ্গভঙ্গের ইতিহাস ভারত বর্ষের এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ না হলে ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ সৃষ্টি হতো না যেমন সত্য তেমনি ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব না হলে ১৯৪৭ এ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান জন্ম হতো না। তেমনিভাবে ৫২-এর ভাষা আন্দোলন বাংলা ভাষা, সাহিত্য সংস্কৃতি বাঙালি জাতিকে নতুনভাবে উজ্জীবিত করে। ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৬২ শিক্ষা আন্দোলন ও আইয়ুব বিরোধী, ৬৬ সালের শেখ মুজিবের ৬ দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি। বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে জন্ম দিয়েছে ভারত বর্ষে তিনটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের। বঙ্গভঙ্গ থেকে ভারত উপমহাদেশের তথ্যের স্মৃতির উত্তরাধিকার পরবর্তী প্রজন্মকে আর কতোকাল বহন করতে হবে। তবে আশার কথা বিলম্বে হলেও, সার্ক ও পররাষ্ট্রনীতির ফলে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করে অতীতের যে সৃষ্ট সঙ্কট রয়েছে তা সম্প্রীতির মাধ্যমে যতো তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান করা যায় ততোই জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।

    (মোহাম্মদ শামসুল কবির, আজকের কাগজ, ডিসেম্বর ১৬, ২০০৫)

    আবুল মনসুর আহমদ মনে করেন, বঙ্গভঙ্গ রদ, বঙ্গবিভক্তি (১৯৪৭) ও স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির ভেতর দিয়েও বাংলা ভাগ হয়নি (এখন সময়, অক্টো ১১, ২০০৫)

    বাংলা ভাগ হলেও

    বাঙালী ভাগ হয়নি

    কলকাতা থেকে : রাজনৈতিক কারণে বাংলা ভাগ হলেও বাঙালি ভাগ হয়নি। তাই বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারভাঙ্গা হলে সোমবার এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখানে বক্তা সাংসদ সেলিম বলেন, ধর্মের চেয়ে ভাষা বড় আর এর প্রমাণ স্বয়ং বাংলাদেশ। শুধু ভাষাকে কেন্দ্র করে আন্দোলন এবং এর থেকেই জন্ম ভাষাভিত্তিক দেশ বাংলাদেশের। বিচারপতি শ্যামল সেন বলেন, বাংলা ভাগ হয়েছে, কিন্তু বাঙালি ভাগ হয়নি। দুই বাংলার যোগসূত্র বজায় রয়েছে। একই সুরে অনুরূপ বক্তব্য ঐতিহাসিক প্রতাবচন্দ্র'র কণ্ঠে। অনুষ্ঠানে কবি আব্দুল খালেক, সাহিত্যিক অজিতকুমার চট্টোপাধ্যায় ও ড. আর আহমেদকে সংবর্ধনা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম প্রমুখ। (ইত্তেফাক, তারিখ লিখে রাখিনি)।

    সংযুক্ত বাংলার কথা কেউ কেউ ভাবেন

    প্রথম বঙ্গভঙ্গের শতবর্ষের সূচনা হল গত মাসে। বিপান চন্দ্র ওতার চার সহ-গবেষকের প্রামাণ্য ইন্ডিয়াজ স্ট্রাগল ফর ইন্ডিপেন্ডেল বইটিতে দেখা যাচ্ছে যে সব জায়গায় ব্রিটিশ সরকারের ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রবল গণআন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল তার তালিকায় রয়েছে দিনাজপুর, পাবনা, টাঙ্গাইল, যশোর, ঢাকা, বীরভূম, বরিশাল এবং কলকাতার নাম। তালিকা

     

     

    বঙ্গভঙ্গ রদের শতবর্ষ (১৬)

     

    থেকে ধরে নেয়া অসঙ্গত হবে না যে, অধুনা পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় অধুনা বাংলাদেশে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গকে কিঞ্চিৎ কঠোরতরভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।

    ১৯০৫ এর সিদ্ধান্ত ১৯১১ সালেই প্রত্যাহৃত হয়েছিল। ১৯৪৭ এ দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে বঙ্গ বিভাজন অপরিবর্তনীয় ঐতিহাসিক সত্য। তত্ত্বটি অবশ্য কতখানি গ্রহণযোগ্য তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ, ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম প্রমাণ করেছে যে রাষ্ট্রীয় সত্ত্বা গঠনে ধর্মের চেয়ে ভাষার শক্তি অনেক বেশি। ভাষাগত সংহতির কথা মাথায় রেখেই সংখ্যায় অতি নগণ্য হলেও বঙ্গভূমির দুই অংশেই ধর্মনিরপেক্ষ কিছু মানুষ এখনও সংযুক্ত বঙ্গের স্বপ্ন দেখেন। জনসংখ্যার অনুপাতে দেশবিভাগের পরে জন্মানো মানুষের সংখ্যা যতই বাড়ছে, ততই এই স্বপ্নবিলাসীদের সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে। কিন্তু স্বপ্ন সংজ্ঞা অনুসারেই এমন একটা জিনিস যা মরেও মরে না। বরং ব্যবসা বাণিজ্য সূত্রে পৃথিবীটা ছোট হয়ে আসা, সোবিয়েত রাশিয়ার পতনের পর দুই জার্মানির একীকরণ ইত্যাদি সম্ভব অসম্ভব সমস্ত সূত্র থেকে স্বপ্ন তার বাঁচার রসদ খুঁজে নেয়।

    এই ঐতিহাসিক পরিপ্রেকিএত এবং বাংলাদেশে অতি সম্প্রতি সফরের সুযোগে বঙ্গভঙ্গের শতবর্ষ পরেও বাঙালির ভাগ হওয়া নিয়ে, আবেগের স্পর্শ পাওয়ার সুবাদেই এই লেখার অবতারণা।

    (সুদীপ্ত সেনগুপ্ত, আজকাল নভেম্বর ৫, ২০০৪)

    মুসলিম জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোতা হোসেন ১৯৭১ সালে নাকি বিশেষ একটি দল বা লবি ২৫ বছরের গোলামী চুক্তি সই করেছিল।

    ১৯৭১ সালে এখানে যে ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ হয় এবং যাতে বহুল রক্তক্ষয় হয়, তার পেছনে বিশেষ একটি লবি এ জন্য কাজ করেছিল যে, ১৯১১ এর বঙ্গভঙ্গ বাতিলের মত ১৯৭১ সালেও ঢাকাকে বড়জোর নামমাত্র প্রাদেশিক রাজধানী রেখে দিলে অচিরেই দিল্লির অধীনে একাকার করা যাবে। কিন্তু তা যখন সাথে সাথেই বাস্তবে করা গেল না, ঢাকা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রাজধানী থেকেই গেল, তখন এই সার্বভৌমত্ব খর্ব করার জন্য তারা বিশেষ একটি দল বা লবিকে ভর করে পরোক্ষ পথ গ্রহণ করল। জাতির জন্য রচিত প্রথম শাসনতন্ত্রটিকে হুবহু দিল্লির ইচ্ছামাফিক তৈরি করা হল। দেশের ভৌগোলিক সীমানা এবং রাজধানী পূর্ববৎ ১৯৪৭ এর বিভক্তির মত রেখেই শাসনতান্ত্রিক চার মূলনীতি এবং ২৫ বছর মেয়াদের একটি গোলামী চুক্তির (১৯৭২ এর ১৯ মার্চ ঢাকায় সহিকৃত) যৌথ আওতায় বাংলাদেশ তার নিজস্ব স্বতন্ত্র বা মুসলিম জাতিসত্তাবিরোধী ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আটকে গেল। এই বেড়াজাল যেহেতু এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে বা ম্যান্ডেট দিয়ে গ্রহণ করেনি, তাই এই আশ্রিত অবস্থা বা সীমিত স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের জিঞ্জির থেকে তারা আজাদীর পথ খুঁজতে থাকল। ১৯০৫ সাল থেকে ২০০৫ একশ বছরের ব্যবধান।

    ইতিমধ্যে পদ্মা, মেঘনা, যমুনায় অনেক পানি গড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষেরও ইতিমধ্যে বেশকিছু শিক্ষা ও তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাই বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যে কোন মূল্যে নিজেদের আজাদী, স্বাতন্ত্র চেতনা এবং মুসলিম জাতিসত্ত্বা রক্ষা করার কারণে সেসব প্রেতাত্মা ও পঞ্চম বাহিনীকে পরাভূত করে সদর্পে সামনে এগিয়ে যাবে, তা নিয়ে কারোরই কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়।

    (এখন সময়, অক্টোবর ২৫, ২০০৫)

    নিজ নিজ অবস্থানে স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে দুই বাংলা এগুচ্ছে

    বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলা বঙ্গভঙ্গের পর নতুন বাংলা বিভাগের বৈশিষ্ট্য নিয়ে এগিয়েছে এবং এখনও এগিয়ে চলেছে। ইতিহাসের এই গতি থেকে সহসা কোন ফেরার বাস্তবতা নেই। প্রয়োজনও নেই। বর্তমানে এই দুই বাংলা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মৌলবাদের বিরুদ্ধে, সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অভিন্ন সংগ্রামে লিপ্ত। ঐ সংগ্রামের ধারা দুই দেশের জনগোষ্ঠীকে এবং গণতান্ত্রিক শক্তিকে কাছে আনছে, আরও কাছে আনবে। দুই দেশের এই জনগণের ঐক্য রাষ্ট্রীয় সীমানার ভেদ করে অমিত তেজে বলীয়ান করে তুলবে বাংলার অসিত্ত্ব, বাঙালির অস্তিত্বকে।

    (রাখা মেনন, পড়শী, শ্রাবণ ১৪১২ (২০০৫)

    ১৯৪৭ সালের বঙ্গভঙ্গের পর পূর্ব বাংলা ও

    পশ্চিম বাংলার রাজনৈতিক স্বরূপ

    বঙ্গভঙ্গের চারদশক শুরু না হতেই বাংলা আবার ভাগ হয়েছে। এবার সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিত্ত্বের ভিত্তিতে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল। অন্তর্ভুক্ত হয়েছে পাকিস্তানে এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল ভারত ইউনিয়ন। অবশ্য দেশভাগে যুক্তির চেয়ে সাম্প্রদায়িকতার চুরি কার্যকর ছিল। এই দেশভাগ দুই অংশের মানুষকেই তাদের ভিটে মাটি থেকে সমূলে উৎপাটিত করেছে।

    বাংলার মানুষ ব্রিটিশের হাত থেকে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করতে পারেনি। পাকিস্তানের যাত্রা শুরুতেই পূর্ব বাংলার মানুষ সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতিতত্ত্বের াসারতা উপলব্ধি করতে শুরু করে। যে অর্থনৈতিক শোষণ থেকে মুক্তি আকাক্সক্ষায় এই অংশের মানুষ বাংলার সাম্প্রদায়িক বিভক্তিকে সমর্থন করেছিল অচিরেই তা মিথ্যা প্রমানিত হয় এবং তারা একটি অর্থনৈতিক শোষণের বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছে সেই সত্যটি।

    তাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে। এ ধরনের উপলব্ধি থেকেই মাতৃভাষার অধিকারের প্রশ্নকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান অন্তর্ভুক্ত বাংলায় ভাষাভিত্তিক জাতীয় চেতনার দ্রুত বিকাশ ঘটে। ভাষা আন্দোলন, প্রাদেশিক শায়ত্বশাসনে সামরিক আইনের অবসান, সার্বজনীন ভোটাধিকার পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা, সাংস্কৃতিক স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা দাবি ও আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এই জাতীয় চেতনা ক্রমপুষ্টি লাভ করে এবং সর্বশেষ স্বাধিকার স্বাধীনতার দাবিতে রূপ লাভ করে। বাংলার এই অংশের মানুষের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষার সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটে একাত্তরের শসস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে। এই মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

    বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পশ্চিমবাংলা

    সহযোগিতা করেছিল

    বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে এই বাংলার মানুষ আরেকবার রাখির বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল উনিশশ' একাত্তরে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যে ভারত পাশে দাঁড়িয়েছিল তার মূল দায়ভার বহন করেছে ত্রিপুরা ও পশ্চিমবাংলা। এই দুই রাজ্য বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে পাওয়া শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে, খাবার দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের পশ্চাৎভূমি দিয়েছে, তাদের লড়াইয়ের জন্য। সমস্ত বাঙালি তখন তীব্র আবেগে ভেসেছে। কিন্তু এই আবেগের কারণে রাজনৈতিক বাস্তবতা তারা বিস্মৃত হয় নাই। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয় ঘটেছে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ ভারত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য হিসাবে তার অধিকার প্রয়োগের লড়াইয়ে লিপ্ত থেকেছে। (ঐ)

    পশ্চিমবঙ্গের অগ্রগতি

    অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গ কেবল ভারতের ক্ষেত্রেই নয়, বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বেও তার স্থান নিয়েছে। পশ্চাশের দশকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য যে পশ্চিমবঙ্গ মাথা ব্যথার কারণ ছিল, নেহেরুর ভাষায় কলকাতা ছিল দুঃখের নগরী, পশ্চিমবাংলা থেকে যেখানে শিল্প পুঁজি প্রত্যাহার করে নেয়া হচ্ছিল সেই পশ্চিম বাংলার শিল্পে অগ্রগামী ভারতের সামনের রাজ্যগুলির একটি। রাজ্য হিসেবেই বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে। তথ্য প্রযুক্তি ও পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রে আগুয়ান। কৃষির ক্ষেত্রে পশ্চিম বাংলা ভূমি সংস্কার নীতির স্বার্থক প্রয়োগ করে কেবল কৃষক ক্ষেতমজুরদের অধিকারই প্রতিষ্ঠা করেনি, কৃষি ও কৃষি শিল্প উভয় ক্ষেত্রেই বিশাল অগ্রগতি সাধন করেছে। বিষয়টা এ পর্যন্তই থেমে থাকেনি পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন করা হয়েছে পশ্চিম বাংলায়। কর্ম সংস্থান, শিক্ষা, নারী, প্রগতি সব ক্ষেত্রেই পশ্চিম বাংলা এগিয়ে। রাজ্য, রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা তো বটেই। ভারতের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর পরাজয় নিশ্চিত করে সেখানেও একটি স্থিতিশীল সরকার কায়েম করতে সাহায্য করেছে পশ্চিমবঙ্গ। ভারতের অখন্ডতা ও সংহতি রক্ষায় এবং স¤্রাজ্যবাদী চক্রান্তের বিরুদ্ধে পশ্চিম বাংলায় এক দুর্ভেদ্য দুর্ঘ গড়ে তুলেছে। আর এ সবই সম্ভব হয়েছে পশ্চিম বাংলার বামপন্থী আন্দোলন ও গত আটাশ বছরের বামফ্রন্ট শাসনে গৃহীত পদক্ষেপের কারণে।

    পাকিস্তান অন্তর্ভুক্ত পূর্ব বাংলায় যখন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে, অর্থনৈতিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়েছে পশ্চিম বাংলায় ১৯৭৫ এর স্বল্পসময়ের জরুরি শাসন ছাড়া সাধারণ গণতান্ত্রিক শাসন ও নির্বাচন অব্যাহত থেকেছে। অবশ্য কংগ্রেস সরকার সত্তরের প্রথমার্ধে সেখানে এক আধা ফ্যসিষ্ট কায়েম করেছিল। তার বিরুদ্ধে বামদের নেতৃত্বে পশ্চিম বাংলার মানুষ বীরোচিত সংগ্রাম করে বিজয়ী হয়েছে। এখনও সাম্প্রদায়িকতা ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে পশ্চিম বাংলার মানুষ লড়াই করছে। পশ্চিম বাংলার শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ডব্লুটিও বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এর নীতির বিরুদ্ধে ভারতের শ্রমিক শ্রেণীর সাহসী লড়াই। বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে পৃথিবীব্যাপী যে গণসংগ্রাম গড়ে উঠেছে এশিয়ায় তার কেন্দ্র পশ্চিম বাংলা। পশ্চিম বাংলার মানুষ বর্জনিভোষে ঘোষণা দিয়েছেন পুঁজিবাদই ইতিহাসের শেষ কথা নয়। আরেকটি পৃথিবী সম্ভব। (্ঐ)

    স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রগতি

    স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশে তার চৌত্রিশ বছর ময় অতিক্রান্ত করেছে। পৃথিবীর মানচিত্রে অবস্থান আলাদা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে একাত্তরের বাংলাদেশের সাথে বর্তমানের বাংলাদেশের মিল খুব সামান্যই। এই বছরগুলিতে বাংলাদেশের পিছুহটা তাকে বিভাগপূর্ব বাংলার পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এটা অতি কথন মনে হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সমস্যার সমাধান এখন পৃথক নির্বাসনের দাবি তোলা হয় তখন ব্রিটিশ যুদ্ধের সাম্প্রদায়িকতা রোয়েদাদকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ব্রিটিশ ভারতের সময়ে না হলেও বাংলাদেশে যে পাকিস্তান আমলে সময়ে পিছিয়ে গেছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার, সাম্প্রদায়িক যথেচ্ছার, ভাষা সংস্কৃতি, ধর্মীয় ঐতিহ্যের উপর আক্রমণ এবং সর্বোপরি একটি মুসলিম মডারেট দেশ হিসাবে বাংলাদেশের পরিচয়। এর সাথে যুক্ত হয়েছে গত দেড় দশকে মৌলবাদী রাজনীতির, উত্থান ও ইসলামিক জঙ্গিবাদী তৎপরতার ঘটনাবলী।

    অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগুতে পারেনি বরং প্রথমে বিশ্বব্যাংক আইএমএফ এর কাঠামোগত সংস্কারের কর্মসূচি এবং বর্তমানে দারিদ্র্য বিমোচনের নতুন কৌশল হিসাবে পিআরএসপি গ্রহণ বাংলাদেশকে তার নিজস্ব অর্থনৈতিক গতিপথে অতীতে এগুতে দেয়নি, বর্তমানেও দিচ্ছে না। বি-শিল্পায়ন, কৃষিতে সা¤্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী অনুপ্রবেশ, গরীব বড়লোক ও গ্রাম শহরের মধ্যে ধর্ম বৈষম্য এবং সর্বোপরি বিদেশ নির্ভরতার নীতি বাংলাদেশকে একটি প্রান্তিক দেশে পরিণত করেছে। বাংলাদেশে গ্যাস সম্পদ, বনজ ও সামুদ্রিক সম্পদ ও সর্বোপরি বিপুল জনশক্তির ভান্ডার থাকার পর তাকে নিজের মত করে ব্যবহার করতে পারছে না। বরং এসবই তার জন্য গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশের এশিয়ায় নতুন গড়ে উঠা বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ভূরাজনীতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় এ দেশকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে সা¤্রাজ্যবাদী চক্রান্ত মিলিয়ে বাংলাদেশের অস্তিত্বই সংকটের মুখে।

    তবে এসব প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, শিশুমৃত্যুতার হ্রাস, নারী শিক্ষা, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়সম্পূর্ণতা অর্জন, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, দুর্যোগ মোকাবিলা প্রকৃতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ ভালই সাফল্য অর্জন করেছে। তবে এসবই সম্ভব হয়েছে বাংলার জনগনের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং তাদের সৃজনশীলতার কারণে। রাজনীতিতে দুর্নীতি, দুবৃত্তায়ন ও সাম্প্রদায়িকতার দাপট এবং লুটপাট অপচয়ে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যবহ হওয়া সত্ত্বেও এ দেশের জনগণ তাদের আশা হারায়নি। এই চৌত্রিশ বছরের সময়কালে বাংলাদেশের সামরিক স্বৈরাচারী ব্যবস্থাকে পরাজিত করে গণতন্ত্রের কাছে প্রত্যাবর্তন করেছে। যদিও গণতন্ত্রের পথে এই যাত্রা এখন সংকটপূর্ণ এবং নানা অপশক্তি ওৎ পেতে আছে। তারপরও গণতন্ত্রের প্রতি এ দেশের মানুষের বিশ্বাস নষ্ট হয়নি। সাম্প্রদায়িকতা মৌলবাদ সা¤্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষের সংগ্রামী কাফেলা এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ তার সম্ভাবনার পূর্ণ বিকাশ ঘটিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে পৃথিবীতে তার জায়গা করে নেবে বলেই সকলের বিশ্বাস। (ঐ)

    পশ্চিমবঙ্গে একজন কলামিস্ট এর চোখে

    বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়ন কারও নজর এড়াতে পারে না। ঢাকা শহরে নির্মাণের গতির এখন দম ফেলার ফুরসত নেই। বিভিন্ন সরকারমুক্ত সংস্থা এবং এনজিও বাংলাদেশের গ্রামজীবনের ওপরও স্থায়ী রেখাপাত করেছে। শিল্প-বাণিজ্যেও বাংলাদেশে এখন ঘটমান বর্তমান টাটা শিল্পগোষ্ঠীর বিনিয়োগসহ অনেক কিছুই হচ্ছে। ঘুষ খাওয়া, দুর্নীতি, রাজনৈতিক যোগাযোগের সুবাদে অন্যায় ক্ষমতা ভোগ করা, পরশ্রীকাতারতা, সশস্ত্র বাহিনীর হাতে অবৈধ ক্ষমতা এ সবই আছে। বর্তমান বাংলাদেশে একটি নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হল, পুলিশের বিশেষ বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেয়িনের সঙ্গে তথাকথিত ক্রসফায়ার বা গুলি বিনিময়ে সমাজে ত্রাস সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসী বা মস্তানদের মৃত্যু। লক্ষ্যণীয়, মোটের ওপর বিষয়টি সমাজ অনুমোদন করে, মানবাধিকার লংঘন ইত্যাদি নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য হয় না। (সৃদীপ্ত সেনগুপ্ত, আজকাল (কলকাতা), নভে ৪, ২০০৪) (চলবে)

    পেলহ্যাম, নিউইয়র্ক, ডিসেম্বর ১৯, ২০০৫ মুক্তিসন ৩৫

    পেলহ্যাম, নিউইয়র্ক, আগস্ট ২০, ২০১২, মুক্তিসন

      

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Welcome

Website counter

Followers

Blog Archive

Contributors