সেনগুপ্তর থলের বেড়ালঃ 'সংখ্যালঘুর নতুন রাজনৈতিক ধারা'?
মাসুদ রানা
বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে জন্মাষ্টমীর এক অনুষ্ঠানে তাৎপর্য্যপূর্ণ কিছু কথা বলেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার পঙ্কজ শরণের উপস্থিতিতে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ থেকে যে ক'টি বিষয় আমার কাছে তাৎপর্য্যপূর্ণ মনে হয়েছে, তা হচ্ছে নিম্নরূপঃ
(১) সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, আওয়ামী লীগের প্রয়াত দুই নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজ উদ্দিনের পর একমাত্র শেখ হাসিনাই সেক্যুলার এবং বাকিরা তা নন।(২) তিনি বলেছেন, হিন্দুদেরকে আওয়ামী লীগের শুধু ভৌটব্যাঙ্ক ভাবলেই চলবে না, তাদের অধিকার দিতে হবে।
(৩) তিনি হিন্দুদেরকে বলেছেন, শেখ হাসিনার কাছে হাত না কচলিয়ে মাথা উঁচু করে দাবী জানাতে হবে।(৪) সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংখ্যালঘুর ব্যাঙ্ক ও টেলিভিশন চেয়েছেন এবং বলেছেন, এর অর্থায়ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকেরাই করবেন।(৫) তিনি দাবী করেছেন রাষ্ট্র ও প্রশাসনে ধর্মীয় সংখ্যালঘুর সমান অধিকার ও নিরাপত্তা দিতে হবে এবং না দিলে তাঁরা নতুন রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টি করবেন। (http://www.banglatribune.com/news/show/109948/)
আমি জানি, সংখ্যালঘুর মর্মবেদনা ও নিরাপত্তাহীনতার প্রকৃত রূপ সংখ্যাগুরুর পক্ষে উপলদ্ধি করা সত্যি কঠিন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের না হলেও অন্ততঃ হিন্দু সম্প্রদায়ের মর্মবেদনা বুঝতে পারেন এবং পারেন বলেই উপরের কথাগুলো বলেছেন।তাঁর কাছে মনে হতেই পারে, আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা (ধরে নিতে পারি, তিনিও) ছাড়া আর কোনো সেক্যুলার ব্যক্তি নেই। তাঁর ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার কারও নেই।তিনি সংখ্যালঘুর জন্য ব্যাঙ্ক ও টেলিভিশন চ্যানেলও চাইতে পারেন। দেশে যদি ইসলামের নামে ব্যাঙ্ক ও টেলিভিশন হতে পারে, তাহলে হিন্দু ব্যাঙ্ক ও টিভি, ক্রিশ্চিয়ান ব্যাঙ্ক ও টিভি, বৌদ্ধ ব্যাঙ্ক ও টিভি, জৈন ব্যাঙ্ক ও টিভি থাকতে পারবে না কেনো? এমনকি নাস্তিকদেরও নিজস্ব ব্যাঙ্ক ও টিভি থাকার যুক্তি থাকতে পারে।রাষ্ট্র ও প্রশাসনে আগের চেয়ে সংখ্যালঘুর - বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের - কর্মকর্তার সংখ্যা তাৎপর্য্যপূর্ণভাবে বেড়েছে বলেই প্রতিভাত। তারপরও, তা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের কাছে পর্যাপ্ত মনে নাও হতে পারে।এসব তিনি হয়তো ঠিকই বলেছেন, কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, ক্ষমতাসীন দলের উপদেষ্টা হিসেবে এ-কথাগুলো তাঁর ভারতীয় হাইকমিশনারকে শোনানোর কথা, নাকি তাঁর দলের নেতৃত্বকে শোনানোর কথা?ভারতীয় হাইকমিশনারও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সুরে সুর মিলিয়ে তাঁর প্রত্যাশার কথা বলেছেন। তিনি বিদেশী কূটনীতিক বলে সরকারের সমালোচনা করতে পারেন না। তাই তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের সব নাগরিক গণতান্ত্রিক সমান সুযোগ সুবিধা ভোগ করবেন, এমনটি তিনি প্রত্যাশা করেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মনে তাঁর দল আওয়ামী লীগের ওপর সন্দেহ আছে। এমনকি শেখ হাসিনার ওপরও ভরসার ঘাটতি থাকতে পারে। তিনি অধিকার আদায় না হলে নতুন রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টির হুমকি দিয়েছেন।আমার প্রশ্ন হচ্ছে সেটি কী? কোন সেই রাজনৈতিক ধারা, যার হুমকি সুরঞ্জিত সেন ভারতীয় হাইকমিশনারের সামনে শেখ হাসিনাকে দিলেন?সন্দেহ নেই যে, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের খুঁটির জোর অনেক বেশি, যা চ্যালেইঞ্জ করার ক্ষমতা শেখ হাসিনার নেই। তাই, টাকার ব্যাগ নিয়ে ধরা পড়ার পর রেইল মন্ত্রীত্ব হারালেও, অচিরেই সুরঞ্জিত সেনকে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসিত করতে হয়েছে। আর, সেই থেকে সুরঞ্জিত সেন সুযোগ পেলেই এমন সব কথা বলছেন, তাতে আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, তিনি শেখ হাসিনাকে চ্যালেইঞ্জ করেই কথা বলেছেন। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দেওয়া ভাষণে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত স্পষ্টতঃ ইঙ্গিত দিলে যে, তাঁর থলের ভেতর একটি কালো বেড়াল আছে, যা আমরা এখনও দেখিনি। প্রকৃতপ্রস্তাবে, তিনি সংখ্যালঘুর নতুন রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টি করা হবে বলে সেই বেড়ালের উপস্থিতির কথাই ঘোষণা করলেন।
শনিবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫লণ্ডন, ইংল্যাণ্ড
Pl see my blogs;
Feel free -- and I request you -- to forward this newsletter to your lists and friends!
No comments:
Post a Comment