Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Sunday, August 4, 2013

অসীম মমতাময় গদ্যে পুরানো সেই কলকাতার দিনের অন্তবিহীন খোঁজ

অসীম মমতাময় গদ্যে পুরানো সেই কলকাতার দিনের অন্তবিহীন খোঁজ

অসীম মমতাময় গদ্যে পুরানো সেই কলকাতার দিনের অন্তবিহীন খোঁজ
যে -কলকাতার ছবি আঁকতে চাইছেন জয়ন্ত কৃপালনি , সেখানে কি পৌঁছতে পারছেন না তিনি ? নাকি সেই কলকাতা আসলে অধরা ? কোনওটাই না , বা হয়তো দু'টোই৷ নিউ মার্কেটটেল্স্পাঠেরউপলব্ধিশোনালেন অয়নগঙ্গোপাধ্যায়৷ 

গত শতাব্দীর পাঁচের দশকের শেষ থেকে শুরু করে ছয়ের দশকের পুরোটা আর তার পর সাতের দশকের গোড়া , বা তারও কিছু পর , যে অবাঙালি মানুষেরা কলকাতা শহরটায় ছিলেন , কলকাতাতেই জীবনের অনেকগুলো দিন কাটিয়েছিলেন --- কিন্ত্ত এই মুহূর্তে, ২০১৩ -য় , আর এখানে থাকেন না --- অথচ ভুলতে পারেননি নিজের জীবনের সেই শহরটাকে , সময়ের কাঁটায় লাল রং দিয়ে দাগানো সেই উত্তাল দিনগুলোকে , যাকে হয়তো আর এখনকার প্রাত্যহিকতায় ফিরে পাওয়া যাবে না , হয়তো তা সম্ভবও না , তবুও এক বরং অমোঘ লিখন প্রক্রিয়ায় ফিরে পড়তে চান সেই দিনগুলো , অমোঘ কারণ লেখাটা ইংরাজিতে , পুরনো সেই দিনগুলো তো বটেই, তার স্মৃতিমেদুরতা কাটিয়ে যেটা বেশি করে বেরিয়ে আসে , অন্তত জয়ন্তর এই বইতে , সেটা , পাঠক হিসেবে আমার কাছে , হল একটা জায়গা বা 'স্থান ', একটা ভূগোল যেটা ভয়ানক রকমের 'মানুষিক ', একটা নিছক কোনও কার্টোগ্রাফি বা প্রাণহীন কোনও মানচিত্র মাত্র না৷ 

নাইজেরিয়ার ঔপন্যাসিক , চিনুয়া আচেবে , তাঁর এক স্মৃতিচারণায় লিখেছেন তাঁর বাবার 'অফিসিয়াল ' বাংলো থেকে নিজের গ্রামে ফেরার কথা৷ বলছেন , সব কেমন যেন উল্টো দিকে ঘুরছে , ঘোরার গাড়িতে বসে উনি দেখছেন যে , স্থান -কাল -পাত্র -মিত্র যেন সব্বাই উল্টো দিকে চলেছে , আর তাদের সঙ্গে পাঁচ বছরের পিছছি , উনিও , যেন যেখানে সবাই যায় , যেখানে সক্কলকার যাবার কথা ছিল অমোঘ নিয়তির মতো , তার উল্টো দিকে চলেছেন৷ আসলে কথাটা 'বাড়ি ' বা 'বাসা '-র ধারণা নিয়ে৷ উনি তো নিজের পিতৃপুরুষের গ্রামে ফিরছেন , সেইখানে যেখানে ওনার ঠাকুরদা , ঠাকুমা অপেক্ষা করছেন নিজেদের ছেলে -বউ -নাতিকে দেখবেন বলে৷ জন্মানোর পর সেই কবে যেন শেষ বার গিয়েছিলাম ওখানে৷ তার পর আজ , আর এক বার যখন তাঁর পাঁচ বছর বয়স৷ সেখানে তো উত্তেজনা হবার কথা৷ অথচ আচেবের ভাষণে একটা উত্কণ্ঠা , আর ভয় বা অ্যাঙ্গজাইটি৷ কেন ? নিজের বাসর বাড়িতে ফেরা নিয়ে নিয়ে এমন উত্কণ্ঠার মানে কী !গোলমালটা বোধ হয় ওই বাড়ির ধারণা নিয়েই৷ যা সময়কে , স্থানকে , আর এক বার , আরও বহু বার যত বার কেউ একটু ভাববেন এ নিয়ে , গুলিয়ে দেয়৷ সহজ নস্টালজিয়া না --- এ তো সব থেকে সোজা , আর যে কারণে আচেবে এমন ক্ষমতাধর গদ্যকার --- না কোনও বোকা , নাল -ঝোল ফেলা সেন্টিমেন্টালিজম না , কিন্ত্ত এটা বুঝতে আর বোঝাতে পারা যে বাসা আর বাড়ি আসলে একটা কনসেপচুয়াল ক্যাটাগরি , যে দিয়ে আমি আমাকে আর বাকি সকলকে চেনার আর বোঝার চেষ্টা করি , আমার নিজের জীবনের একটা মানের আদল গড়ে তুলি , আমার নিজস্ব আমিটা ঠিক কোথায় আছে ? সামাজিক সংগঠনের ঠিক কোন জায়গায় সেটা আছে ? কী তার 'লোকেশন '?, সেটা বুঝে নিতে দেয় এক প্রায় নিষ্ঠুর কোনও নৈর্ব্যক্তিকতাই৷ এই যে সব কিছু উল্টো দিকে ঘুরছে , যে দিকে আমার যাবার কথা --- বাড়ির দিকে , ঘরের দিকে , পৈর্তৃক বসত ভিটের দিকে --- সেটা না হয়ে , অথচ সে দিকে যেতে যেতেই , সব কিছুর ওলোট -পালোট , ঘড়ির কাঁটা যেন সুকুমার রায়ের নিদান মেনে উল্টো দিকে ঘুরছে , সেটার তা হলে কী মানে করব ? নিজের বাড়ি তা হলে সেই দিকে যেদিকে আমার যাবার কথা না ? লোকে তো দিনের সব কাজ সেরে বাড়িতেই ফেরে ! যখন যত কাজই থাক , সব সেরে বাড়িতেই তো ফিরতে হয় ? তা হলে আচেবের সব উল্টেপাল্টে যাচ্ছে কেন ?আসলে জন্মের পর এক বারই যাওয়া 'নিজের ' বাড়ি আচেবের সম্পূর্ণ অচেনা৷ অচেনা সেখানকার পাত্র -মিত্র -আসবাব -উঠোন -পাতকুয়ো -দালান -বাড়ির পেছনের খেত৷ পুরো জায়গাটাই অচেনা৷ কী চরম নিষ্ঠুর নৈর্বক্তিকতায় আচেবে বলে দিতে পারেন যে বাসা তেমন সহজ বস্ত্ত না৷ আমার মতো --- যারা প্রত্যক্ষ চাকরির কারণে --- আরও অনেকের মতো --- নানান কারণে যারা জন্ম উদ্বাস্ত্ত , তাদের কাছে এই সত্য রুঢ় বাস্তব৷ যখন যেখানে আছি সেটাই আমার বাড়ি , এমনটাই ভাবতাম এককালে ; ভেবে নিজেকে ভীষণ র্যাডিকালও মনে হত৷ জয়ন্তর লেখা , আচেবের স্মৃতিচারণের সূত্রে আবার এ সব মনে পড়ে গেল৷ আসলে বাড়ি একটা সময়ের ব্যাপার৷ এডওয়ার্ড সয়িদও লিখেছেন এ নিয়ে৷ ঘরের একটা নিজস্ব টেম্পোরালিটি থাকে৷ তাকে আলাদা করে চিনেও নেওয়া যায় : 'হোম ' আর 'হাউস '-এর আসলে বাড়ি একটা সময়ের ব্যাপার৷ ঘরের একটা নিজস্ব টেম্পোরালিটি থাকে৷ তাকে আলাদা করে চিনেও নেওয়া যায় : 'হোম ' আর 'হাউস '-এর মধ্যে যে কারণে তফাত করা হয়৷ হাউস একটা ফিজিক্যাল স্ট্রাকচার মাত্র , আর হোম একটা স্টেট অফ মাইন্ড৷ 

মধ্যে যে কারণে তফাত করা হয়৷ হাউস একটা ফিজিক্যাল স্ট্রাকচার মাত্র , আর হোম একটা স্টেট অফ মাইন্ড৷ একটু পেঁচিয়ে বললে , একটা স্পেস অফ টাইমও , বা টাইম অফ স্পেস৷ যে স্থান -কালের একটা নিজের , ব্যক্তি -অতিরিক্ত , অভিঘাত থাকে৷ আচেবের সেই 'কখন সাদা আর কখন কালো , কখন মন্দ যে কখন ভালো ' পাঁচ বয়সী মনের ভাবটা , বা জয়ন্তর বইয়ের ছোটো ছোটো টুকরো লেখাগুলো , সেই একই কথা বলে৷ 'আমি চাই ফিরে যেতে সেই গাঁয় , বাঁধানো বটের ছায় ... সেই লোক -গীতি , হাওয়া ঝিরঝির '...এ বারও সহজ গল্প ; এ সামুহিক কল্পগাথায় কোনও এক বিপ্রযশের চোরাস্রোত লাগতে বাধ্য৷ 

নানান পাত্র -চরিত্র ভিড় করেন জয়ন্তর বইতে , পুরনো সেটা উত্তাল কলকাতার নানান জায়গা হাজিরা দেয় পাতার পর পাতায়৷ আমরা প্রত্যক্ষ করি সেই অ্যানিমেট আর ইনঅ্যানিমেট প্রাণের সমাহারকে --- যার সব কিছু কিন্ত্ত অনেক মানুষের হাতের ছোঁয়ায় ভীষণ মানুষিক , পুরনো তাই স্বাদু৷ 'ফ্রান্সিস ', 'হোমি ', 'অমল ', 'রথিকান্ত ', 'গোপা ', 'মিতা ', 'হরিশ ', 'জ্যাকস ', 'অনুষ্টুপ ' এবং 'মামলু', 'অনিলা ', 'মেশো '--- এই সব মিলিয়ে সেই কলকাতার এক একটা টুকরো ছবি বুনে তোলেন জয়ন্ত , আর আমরা পেয়ে যাই সেই টুকরোগুলোকে সাজিয়ে নিয়ে একটা গোটা গল্প বানিয়ে নেবার অজুহাত৷ আর এইখানেই এই ছোটো বইটার কৃতিত্ব৷ যত বার এগোই গোটা গল্পটার দিকে , পিঠ আটকে দাঁড়াই 'হঠাত্ ট্রাফিক আটকে দেওয়া রাজার মতো ষাঁড় '-এর মতো টুকরো সংলাপ -গুচ্ছ বা একটা কোনও স্নিগ্ধ অবজারভেশন , যা বইয়ের পাতায় পাতায়৷ তা হলে কী যে -কলকাতার ছবি আঁকছেন জয়ন্ত , সেখানে পৌঁছতে পারছেন না ? নাকি সেই কলকাতা আসলে অধরা ? কোনওটাই না , বা হয়তো দু'টোই৷ পুরনো সেই দিনগুলো , বাঁধানো বটের ছায়া , বলে আসলে কিছু হয় না৷ 'ফিরব বললে ফেরা যায় নাকি , পেরিয়েছ দেশ -কাল জানো নাকি নিশ্চয়ই ' (নজর -টান আমার )... এই যে চরম বিপ্রযশ , এই যে নিদারুণ প্রেম বা প্রকৃত প্রস্তাবে অনিশেষ কাম , যা গায়ে লাগায় পুলক আর চোখে ঘনায় ঘোর , সব কিছু গুলিয়ে যাওয়া পাঁচ বছরের আচেবের সাত বছরের উপলব্ধি যে ঘর -বাড়ি আসলে আজীবন খোঁজার জিনিস , 'ঠিক যেন পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা ' কোনও প্রত্যক্ষ বস্ত্ত না , এই ছোট্ট পরিসরে সেটা আর একবার মনে করিয়ে দিল জয়ন্তর এই প্রথম বই৷ সত্যি ভালো লাগল এই অসীম মমতাময় গদ্যে লেখা বইটা পড়ে ! সবাই পড়ুন৷ নিউ মার্কেট টেল্স্জয়ন্ত কৃপালনিপিকাডোর ইন্ডিয়া ৷ মূল্য অনুল্লেখিত৷ 

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Welcome

Website counter

Followers

Blog Archive

Contributors