যে -কলকাতার ছবি আঁকতে চাইছেন জয়ন্ত কৃপালনি , সেখানে কি পৌঁছতে পারছেন না তিনি ? নাকি সেই কলকাতা আসলে অধরা ? কোনওটাই না , বা হয়তো দু'টোই৷ নিউ মার্কেটটেল্স্পাঠেরউপলব্ধিশোনালেন অয়নগঙ্গোপাধ্যায়৷
গত শতাব্দীর পাঁচের দশকের শেষ থেকে শুরু করে ছয়ের দশকের পুরোটা আর তার পর সাতের দশকের গোড়া , বা তারও কিছু পর , যে অবাঙালি মানুষেরা কলকাতা শহরটায় ছিলেন , কলকাতাতেই জীবনের অনেকগুলো দিন কাটিয়েছিলেন --- কিন্ত্ত এই মুহূর্তে, ২০১৩ -য় , আর এখানে থাকেন না --- অথচ ভুলতে পারেননি নিজের জীবনের সেই শহরটাকে , সময়ের কাঁটায় লাল রং দিয়ে দাগানো সেই উত্তাল দিনগুলোকে , যাকে হয়তো আর এখনকার প্রাত্যহিকতায় ফিরে পাওয়া যাবে না , হয়তো তা সম্ভবও না , তবুও এক বরং অমোঘ লিখন প্রক্রিয়ায় ফিরে পড়তে চান সেই দিনগুলো , অমোঘ কারণ লেখাটা ইংরাজিতে , পুরনো সেই দিনগুলো তো বটেই, তার স্মৃতিমেদুরতা কাটিয়ে যেটা বেশি করে বেরিয়ে আসে , অন্তত জয়ন্তর এই বইতে , সেটা , পাঠক হিসেবে আমার কাছে , হল একটা জায়গা বা 'স্থান ', একটা ভূগোল যেটা ভয়ানক রকমের 'মানুষিক ', একটা নিছক কোনও কার্টোগ্রাফি বা প্রাণহীন কোনও মানচিত্র মাত্র না৷
নাইজেরিয়ার ঔপন্যাসিক , চিনুয়া আচেবে , তাঁর এক স্মৃতিচারণায় লিখেছেন তাঁর বাবার 'অফিসিয়াল ' বাংলো থেকে নিজের গ্রামে ফেরার কথা৷ বলছেন , সব কেমন যেন উল্টো দিকে ঘুরছে , ঘোরার গাড়িতে বসে উনি দেখছেন যে , স্থান -কাল -পাত্র -মিত্র যেন সব্বাই উল্টো দিকে চলেছে , আর তাদের সঙ্গে পাঁচ বছরের পিছছি , উনিও , যেন যেখানে সবাই যায় , যেখানে সক্কলকার যাবার কথা ছিল অমোঘ নিয়তির মতো , তার উল্টো দিকে চলেছেন৷ আসলে কথাটা 'বাড়ি ' বা 'বাসা '-র ধারণা নিয়ে৷ উনি তো নিজের পিতৃপুরুষের গ্রামে ফিরছেন , সেইখানে যেখানে ওনার ঠাকুরদা , ঠাকুমা অপেক্ষা করছেন নিজেদের ছেলে -বউ -নাতিকে দেখবেন বলে৷ জন্মানোর পর সেই কবে যেন শেষ বার গিয়েছিলাম ওখানে৷ তার পর আজ , আর এক বার যখন তাঁর পাঁচ বছর বয়স৷ সেখানে তো উত্তেজনা হবার কথা৷ অথচ আচেবের ভাষণে একটা উত্কণ্ঠা , আর ভয় বা অ্যাঙ্গজাইটি৷ কেন ? নিজের বাসর বাড়িতে ফেরা নিয়ে নিয়ে এমন উত্কণ্ঠার মানে কী !গোলমালটা বোধ হয় ওই বাড়ির ধারণা নিয়েই৷ যা সময়কে , স্থানকে , আর এক বার , আরও বহু বার যত বার কেউ একটু ভাববেন এ নিয়ে , গুলিয়ে দেয়৷ সহজ নস্টালজিয়া না --- এ তো সব থেকে সোজা , আর যে কারণে আচেবে এমন ক্ষমতাধর গদ্যকার --- না কোনও বোকা , নাল -ঝোল ফেলা সেন্টিমেন্টালিজম না , কিন্ত্ত এটা বুঝতে আর বোঝাতে পারা যে বাসা আর বাড়ি আসলে একটা কনসেপচুয়াল ক্যাটাগরি , যে দিয়ে আমি আমাকে আর বাকি সকলকে চেনার আর বোঝার চেষ্টা করি , আমার নিজের জীবনের একটা মানের আদল গড়ে তুলি , আমার নিজস্ব আমিটা ঠিক কোথায় আছে ? সামাজিক সংগঠনের ঠিক কোন জায়গায় সেটা আছে ? কী তার 'লোকেশন '?, সেটা বুঝে নিতে দেয় এক প্রায় নিষ্ঠুর কোনও নৈর্ব্যক্তিকতাই৷ এই যে সব কিছু উল্টো দিকে ঘুরছে , যে দিকে আমার যাবার কথা --- বাড়ির দিকে , ঘরের দিকে , পৈর্তৃক বসত ভিটের দিকে --- সেটা না হয়ে , অথচ সে দিকে যেতে যেতেই , সব কিছুর ওলোট -পালোট , ঘড়ির কাঁটা যেন সুকুমার রায়ের নিদান মেনে উল্টো দিকে ঘুরছে , সেটার তা হলে কী মানে করব ? নিজের বাড়ি তা হলে সেই দিকে যেদিকে আমার যাবার কথা না ? লোকে তো দিনের সব কাজ সেরে বাড়িতেই ফেরে ! যখন যত কাজই থাক , সব সেরে বাড়িতেই তো ফিরতে হয় ? তা হলে আচেবের সব উল্টেপাল্টে যাচ্ছে কেন ?আসলে জন্মের পর এক বারই যাওয়া 'নিজের ' বাড়ি আচেবের সম্পূর্ণ অচেনা৷ অচেনা সেখানকার পাত্র -মিত্র -আসবাব -উঠোন -পাতকুয়ো -দালান -বাড়ির পেছনের খেত৷ পুরো জায়গাটাই অচেনা৷ কী চরম নিষ্ঠুর নৈর্বক্তিকতায় আচেবে বলে দিতে পারেন যে বাসা তেমন সহজ বস্ত্ত না৷ আমার মতো --- যারা প্রত্যক্ষ চাকরির কারণে --- আরও অনেকের মতো --- নানান কারণে যারা জন্ম উদ্বাস্ত্ত , তাদের কাছে এই সত্য রুঢ় বাস্তব৷ যখন যেখানে আছি সেটাই আমার বাড়ি , এমনটাই ভাবতাম এককালে ; ভেবে নিজেকে ভীষণ র্যাডিকালও মনে হত৷ জয়ন্তর লেখা , আচেবের স্মৃতিচারণের সূত্রে আবার এ সব মনে পড়ে গেল৷ আসলে বাড়ি একটা সময়ের ব্যাপার৷ এডওয়ার্ড সয়িদও লিখেছেন এ নিয়ে৷ ঘরের একটা নিজস্ব টেম্পোরালিটি থাকে৷ তাকে আলাদা করে চিনেও নেওয়া যায় : 'হোম ' আর 'হাউস '-এর আসলে বাড়ি একটা সময়ের ব্যাপার৷ ঘরের একটা নিজস্ব টেম্পোরালিটি থাকে৷ তাকে আলাদা করে চিনেও নেওয়া যায় : 'হোম ' আর 'হাউস '-এর মধ্যে যে কারণে তফাত করা হয়৷ হাউস একটা ফিজিক্যাল স্ট্রাকচার মাত্র , আর হোম একটা স্টেট অফ মাইন্ড৷
মধ্যে যে কারণে তফাত করা হয়৷ হাউস একটা ফিজিক্যাল স্ট্রাকচার মাত্র , আর হোম একটা স্টেট অফ মাইন্ড৷ একটু পেঁচিয়ে বললে , একটা স্পেস অফ টাইমও , বা টাইম অফ স্পেস৷ যে স্থান -কালের একটা নিজের , ব্যক্তি -অতিরিক্ত , অভিঘাত থাকে৷ আচেবের সেই 'কখন সাদা আর কখন কালো , কখন মন্দ যে কখন ভালো ' পাঁচ বয়সী মনের ভাবটা , বা জয়ন্তর বইয়ের ছোটো ছোটো টুকরো লেখাগুলো , সেই একই কথা বলে৷ 'আমি চাই ফিরে যেতে সেই গাঁয় , বাঁধানো বটের ছায় ... সেই লোক -গীতি , হাওয়া ঝিরঝির '...এ বারও সহজ গল্প ; এ সামুহিক কল্পগাথায় কোনও এক বিপ্রযশের চোরাস্রোত লাগতে বাধ্য৷
নানান পাত্র -চরিত্র ভিড় করেন জয়ন্তর বইতে , পুরনো সেটা উত্তাল কলকাতার নানান জায়গা হাজিরা দেয় পাতার পর পাতায়৷ আমরা প্রত্যক্ষ করি সেই অ্যানিমেট আর ইনঅ্যানিমেট প্রাণের সমাহারকে --- যার সব কিছু কিন্ত্ত অনেক মানুষের হাতের ছোঁয়ায় ভীষণ মানুষিক , পুরনো তাই স্বাদু৷ 'ফ্রান্সিস ', 'হোমি ', 'অমল ', 'রথিকান্ত ', 'গোপা ', 'মিতা ', 'হরিশ ', 'জ্যাকস ', 'অনুষ্টুপ ' এবং 'মামলু', 'অনিলা ', 'মেশো '--- এই সব মিলিয়ে সেই কলকাতার এক একটা টুকরো ছবি বুনে তোলেন জয়ন্ত , আর আমরা পেয়ে যাই সেই টুকরোগুলোকে সাজিয়ে নিয়ে একটা গোটা গল্প বানিয়ে নেবার অজুহাত৷ আর এইখানেই এই ছোটো বইটার কৃতিত্ব৷ যত বার এগোই গোটা গল্পটার দিকে , পিঠ আটকে দাঁড়াই 'হঠাত্ ট্রাফিক আটকে দেওয়া রাজার মতো ষাঁড় '-এর মতো টুকরো সংলাপ -গুচ্ছ বা একটা কোনও স্নিগ্ধ অবজারভেশন , যা বইয়ের পাতায় পাতায়৷ তা হলে কী যে -কলকাতার ছবি আঁকছেন জয়ন্ত , সেখানে পৌঁছতে পারছেন না ? নাকি সেই কলকাতা আসলে অধরা ? কোনওটাই না , বা হয়তো দু'টোই৷ পুরনো সেই দিনগুলো , বাঁধানো বটের ছায়া , বলে আসলে কিছু হয় না৷ 'ফিরব বললে ফেরা যায় নাকি , পেরিয়েছ দেশ -কাল জানো নাকি নিশ্চয়ই ' (নজর -টান আমার )... এই যে চরম বিপ্রযশ , এই যে নিদারুণ প্রেম বা প্রকৃত প্রস্তাবে অনিশেষ কাম , যা গায়ে লাগায় পুলক আর চোখে ঘনায় ঘোর , সব কিছু গুলিয়ে যাওয়া পাঁচ বছরের আচেবের সাত বছরের উপলব্ধি যে ঘর -বাড়ি আসলে আজীবন খোঁজার জিনিস , 'ঠিক যেন পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা ' কোনও প্রত্যক্ষ বস্ত্ত না , এই ছোট্ট পরিসরে সেটা আর একবার মনে করিয়ে দিল জয়ন্তর এই প্রথম বই৷ সত্যি ভালো লাগল এই অসীম মমতাময় গদ্যে লেখা বইটা পড়ে ! সবাই পড়ুন৷ নিউ মার্কেট টেল্স্জয়ন্ত কৃপালনিপিকাডোর ইন্ডিয়া ৷ মূল্য অনুল্লেখিত৷
গত শতাব্দীর পাঁচের দশকের শেষ থেকে শুরু করে ছয়ের দশকের পুরোটা আর তার পর সাতের দশকের গোড়া , বা তারও কিছু পর , যে অবাঙালি মানুষেরা কলকাতা শহরটায় ছিলেন , কলকাতাতেই জীবনের অনেকগুলো দিন কাটিয়েছিলেন --- কিন্ত্ত এই মুহূর্তে, ২০১৩ -য় , আর এখানে থাকেন না --- অথচ ভুলতে পারেননি নিজের জীবনের সেই শহরটাকে , সময়ের কাঁটায় লাল রং দিয়ে দাগানো সেই উত্তাল দিনগুলোকে , যাকে হয়তো আর এখনকার প্রাত্যহিকতায় ফিরে পাওয়া যাবে না , হয়তো তা সম্ভবও না , তবুও এক বরং অমোঘ লিখন প্রক্রিয়ায় ফিরে পড়তে চান সেই দিনগুলো , অমোঘ কারণ লেখাটা ইংরাজিতে , পুরনো সেই দিনগুলো তো বটেই, তার স্মৃতিমেদুরতা কাটিয়ে যেটা বেশি করে বেরিয়ে আসে , অন্তত জয়ন্তর এই বইতে , সেটা , পাঠক হিসেবে আমার কাছে , হল একটা জায়গা বা 'স্থান ', একটা ভূগোল যেটা ভয়ানক রকমের 'মানুষিক ', একটা নিছক কোনও কার্টোগ্রাফি বা প্রাণহীন কোনও মানচিত্র মাত্র না৷
নাইজেরিয়ার ঔপন্যাসিক , চিনুয়া আচেবে , তাঁর এক স্মৃতিচারণায় লিখেছেন তাঁর বাবার 'অফিসিয়াল ' বাংলো থেকে নিজের গ্রামে ফেরার কথা৷ বলছেন , সব কেমন যেন উল্টো দিকে ঘুরছে , ঘোরার গাড়িতে বসে উনি দেখছেন যে , স্থান -কাল -পাত্র -মিত্র যেন সব্বাই উল্টো দিকে চলেছে , আর তাদের সঙ্গে পাঁচ বছরের পিছছি , উনিও , যেন যেখানে সবাই যায় , যেখানে সক্কলকার যাবার কথা ছিল অমোঘ নিয়তির মতো , তার উল্টো দিকে চলেছেন৷ আসলে কথাটা 'বাড়ি ' বা 'বাসা '-র ধারণা নিয়ে৷ উনি তো নিজের পিতৃপুরুষের গ্রামে ফিরছেন , সেইখানে যেখানে ওনার ঠাকুরদা , ঠাকুমা অপেক্ষা করছেন নিজেদের ছেলে -বউ -নাতিকে দেখবেন বলে৷ জন্মানোর পর সেই কবে যেন শেষ বার গিয়েছিলাম ওখানে৷ তার পর আজ , আর এক বার যখন তাঁর পাঁচ বছর বয়স৷ সেখানে তো উত্তেজনা হবার কথা৷ অথচ আচেবের ভাষণে একটা উত্কণ্ঠা , আর ভয় বা অ্যাঙ্গজাইটি৷ কেন ? নিজের বাসর বাড়িতে ফেরা নিয়ে নিয়ে এমন উত্কণ্ঠার মানে কী !গোলমালটা বোধ হয় ওই বাড়ির ধারণা নিয়েই৷ যা সময়কে , স্থানকে , আর এক বার , আরও বহু বার যত বার কেউ একটু ভাববেন এ নিয়ে , গুলিয়ে দেয়৷ সহজ নস্টালজিয়া না --- এ তো সব থেকে সোজা , আর যে কারণে আচেবে এমন ক্ষমতাধর গদ্যকার --- না কোনও বোকা , নাল -ঝোল ফেলা সেন্টিমেন্টালিজম না , কিন্ত্ত এটা বুঝতে আর বোঝাতে পারা যে বাসা আর বাড়ি আসলে একটা কনসেপচুয়াল ক্যাটাগরি , যে দিয়ে আমি আমাকে আর বাকি সকলকে চেনার আর বোঝার চেষ্টা করি , আমার নিজের জীবনের একটা মানের আদল গড়ে তুলি , আমার নিজস্ব আমিটা ঠিক কোথায় আছে ? সামাজিক সংগঠনের ঠিক কোন জায়গায় সেটা আছে ? কী তার 'লোকেশন '?, সেটা বুঝে নিতে দেয় এক প্রায় নিষ্ঠুর কোনও নৈর্ব্যক্তিকতাই৷ এই যে সব কিছু উল্টো দিকে ঘুরছে , যে দিকে আমার যাবার কথা --- বাড়ির দিকে , ঘরের দিকে , পৈর্তৃক বসত ভিটের দিকে --- সেটা না হয়ে , অথচ সে দিকে যেতে যেতেই , সব কিছুর ওলোট -পালোট , ঘড়ির কাঁটা যেন সুকুমার রায়ের নিদান মেনে উল্টো দিকে ঘুরছে , সেটার তা হলে কী মানে করব ? নিজের বাড়ি তা হলে সেই দিকে যেদিকে আমার যাবার কথা না ? লোকে তো দিনের সব কাজ সেরে বাড়িতেই ফেরে ! যখন যত কাজই থাক , সব সেরে বাড়িতেই তো ফিরতে হয় ? তা হলে আচেবের সব উল্টেপাল্টে যাচ্ছে কেন ?আসলে জন্মের পর এক বারই যাওয়া 'নিজের ' বাড়ি আচেবের সম্পূর্ণ অচেনা৷ অচেনা সেখানকার পাত্র -মিত্র -আসবাব -উঠোন -পাতকুয়ো -দালান -বাড়ির পেছনের খেত৷ পুরো জায়গাটাই অচেনা৷ কী চরম নিষ্ঠুর নৈর্বক্তিকতায় আচেবে বলে দিতে পারেন যে বাসা তেমন সহজ বস্ত্ত না৷ আমার মতো --- যারা প্রত্যক্ষ চাকরির কারণে --- আরও অনেকের মতো --- নানান কারণে যারা জন্ম উদ্বাস্ত্ত , তাদের কাছে এই সত্য রুঢ় বাস্তব৷ যখন যেখানে আছি সেটাই আমার বাড়ি , এমনটাই ভাবতাম এককালে ; ভেবে নিজেকে ভীষণ র্যাডিকালও মনে হত৷ জয়ন্তর লেখা , আচেবের স্মৃতিচারণের সূত্রে আবার এ সব মনে পড়ে গেল৷ আসলে বাড়ি একটা সময়ের ব্যাপার৷ এডওয়ার্ড সয়িদও লিখেছেন এ নিয়ে৷ ঘরের একটা নিজস্ব টেম্পোরালিটি থাকে৷ তাকে আলাদা করে চিনেও নেওয়া যায় : 'হোম ' আর 'হাউস '-এর আসলে বাড়ি একটা সময়ের ব্যাপার৷ ঘরের একটা নিজস্ব টেম্পোরালিটি থাকে৷ তাকে আলাদা করে চিনেও নেওয়া যায় : 'হোম ' আর 'হাউস '-এর মধ্যে যে কারণে তফাত করা হয়৷ হাউস একটা ফিজিক্যাল স্ট্রাকচার মাত্র , আর হোম একটা স্টেট অফ মাইন্ড৷
মধ্যে যে কারণে তফাত করা হয়৷ হাউস একটা ফিজিক্যাল স্ট্রাকচার মাত্র , আর হোম একটা স্টেট অফ মাইন্ড৷ একটু পেঁচিয়ে বললে , একটা স্পেস অফ টাইমও , বা টাইম অফ স্পেস৷ যে স্থান -কালের একটা নিজের , ব্যক্তি -অতিরিক্ত , অভিঘাত থাকে৷ আচেবের সেই 'কখন সাদা আর কখন কালো , কখন মন্দ যে কখন ভালো ' পাঁচ বয়সী মনের ভাবটা , বা জয়ন্তর বইয়ের ছোটো ছোটো টুকরো লেখাগুলো , সেই একই কথা বলে৷ 'আমি চাই ফিরে যেতে সেই গাঁয় , বাঁধানো বটের ছায় ... সেই লোক -গীতি , হাওয়া ঝিরঝির '...এ বারও সহজ গল্প ; এ সামুহিক কল্পগাথায় কোনও এক বিপ্রযশের চোরাস্রোত লাগতে বাধ্য৷
নানান পাত্র -চরিত্র ভিড় করেন জয়ন্তর বইতে , পুরনো সেটা উত্তাল কলকাতার নানান জায়গা হাজিরা দেয় পাতার পর পাতায়৷ আমরা প্রত্যক্ষ করি সেই অ্যানিমেট আর ইনঅ্যানিমেট প্রাণের সমাহারকে --- যার সব কিছু কিন্ত্ত অনেক মানুষের হাতের ছোঁয়ায় ভীষণ মানুষিক , পুরনো তাই স্বাদু৷ 'ফ্রান্সিস ', 'হোমি ', 'অমল ', 'রথিকান্ত ', 'গোপা ', 'মিতা ', 'হরিশ ', 'জ্যাকস ', 'অনুষ্টুপ ' এবং 'মামলু', 'অনিলা ', 'মেশো '--- এই সব মিলিয়ে সেই কলকাতার এক একটা টুকরো ছবি বুনে তোলেন জয়ন্ত , আর আমরা পেয়ে যাই সেই টুকরোগুলোকে সাজিয়ে নিয়ে একটা গোটা গল্প বানিয়ে নেবার অজুহাত৷ আর এইখানেই এই ছোটো বইটার কৃতিত্ব৷ যত বার এগোই গোটা গল্পটার দিকে , পিঠ আটকে দাঁড়াই 'হঠাত্ ট্রাফিক আটকে দেওয়া রাজার মতো ষাঁড় '-এর মতো টুকরো সংলাপ -গুচ্ছ বা একটা কোনও স্নিগ্ধ অবজারভেশন , যা বইয়ের পাতায় পাতায়৷ তা হলে কী যে -কলকাতার ছবি আঁকছেন জয়ন্ত , সেখানে পৌঁছতে পারছেন না ? নাকি সেই কলকাতা আসলে অধরা ? কোনওটাই না , বা হয়তো দু'টোই৷ পুরনো সেই দিনগুলো , বাঁধানো বটের ছায়া , বলে আসলে কিছু হয় না৷ 'ফিরব বললে ফেরা যায় নাকি , পেরিয়েছ দেশ -কাল জানো নাকি নিশ্চয়ই ' (নজর -টান আমার )... এই যে চরম বিপ্রযশ , এই যে নিদারুণ প্রেম বা প্রকৃত প্রস্তাবে অনিশেষ কাম , যা গায়ে লাগায় পুলক আর চোখে ঘনায় ঘোর , সব কিছু গুলিয়ে যাওয়া পাঁচ বছরের আচেবের সাত বছরের উপলব্ধি যে ঘর -বাড়ি আসলে আজীবন খোঁজার জিনিস , 'ঠিক যেন পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা ' কোনও প্রত্যক্ষ বস্ত্ত না , এই ছোট্ট পরিসরে সেটা আর একবার মনে করিয়ে দিল জয়ন্তর এই প্রথম বই৷ সত্যি ভালো লাগল এই অসীম মমতাময় গদ্যে লেখা বইটা পড়ে ! সবাই পড়ুন৷ নিউ মার্কেট টেল্স্জয়ন্ত কৃপালনিপিকাডোর ইন্ডিয়া ৷ মূল্য অনুল্লেখিত৷
No comments:
Post a Comment