যা পারো কামাই করো
চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি মাদক ব্যবসা চোরাচালান জমি দখলসহ নানা অপকর্মে এমপি-নেতারা
ক্ষমতাসীন দলের এমপিসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, চোরাচালান, জমি দখলসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তা-ই নয়, এদের কারও কারও বিরুদ্ধে রয়েছে খুনের অভিযোগও। পাশাপাশি টিআর-কাবিখা প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে লুটপাট, অনিয়ম, দুর্নীতিসহ দলের ভিতর কোন্দল জিইয়ে রাখছেন তারা। এসব ঘটনায় কখনো কখনো সংসদ সদস্যরা সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছেন, আবার কখনো ছেলেমেয়ে, নিকটাত্মীয় ও দলের নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে ঘটাচ্ছেন তারা।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের চাঁদাবাজি, লুটপাট, অন্যায় প্রভাব খাটানোর জোয়ার যেন রেকর্ড গড়তে চাইছে। তাদের লাগামহীন অপকর্ম কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। তৃণমূল পর্যায়ের এমন কোনো আর্থিক খাত নেই, যেখান থেকে জনপ্রতিনিধিদের নামে টাকার ভাগ যাচ্ছে না। হাটবাজার ইজারা, জলমহাল, বালুমহাল বরাদ্দের খাত থেকে শুরু করে বাস-ট্রাক টার্মিনাল, এমনকি টেম্পোস্ট্যান্ডের চাঁদাবাজির টাকাও পাঠানো হচ্ছে এমপিদের নামে। এসবের সঙ্গে যোগ হয়েছে নানা কর্মকাণ্ডে তদবিরবাজির মোটা টাকা। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি দেওয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারিকরণ, শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি, এমনকি বেসরকারি স্কুলে নৈশপ্রহরী নিয়োগের ক্ষেত্রেও এমপি সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন। 'যা পারো কামাই করো'- এমন নীতি-আদর্শ নিয়েই ছুটে চলেছেন জনপ্রতিনিধিরা। নেতারা এখন টাকা চিনেছেন, তাই জনস্বার্থ ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়েছে। পদে পদে বেড়েছে টাকার খেলা। হাসপাতাল থেকে আহত ব্যক্তির ডাক্তারি সার্টিফিকেট নিতে, এমনকি নিছক জন্ম নিবন্ধন করাতেও এখন টাকা লাগছে। সে টাকা এমপির নিযুক্ত লোকের হাত ঘুরে পৌঁছে যাচ্ছে নির্দিষ্ট স্থানে। এসব ক্ষেত্রে রাখঢাকেরও কোনো বালাই নেই। সব কিছুই চলছে খোলামেলাভাবে। দমন-পীড়ন, কমিশন-বাণিজ্য, জমি দখলসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে বারবার বিতর্কিত হয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক এমপি। এ ছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মেয়রসহ আরও শতাধিক জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধেও রয়েছে অন্তহীন অভিযোগ। সরকারের দুই মেয়াদে টানা ছয় বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা এমপিরা অনেকেই ক্ষমতা অপব্যবহারের মাধ্যমে নিজ এলাকায় পরিণত হয়েছেন 'মুকুটবিহীন সম্রাটে'। জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপ গ্রহণের পরিবর্তে এলাকায় কায়েম করেছেন ত্রাসের রাজত্ব। বিতর্কিত এসব এমপির কর্মকাণ্ডে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে, অন্যদিকে বারবারই বেকায়দায় পড়তে হয়েছে সরকারকে। এমপি ও তাদের আশীর্বাদপুষ্টদের এসব অপকর্ম ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা ভালো চোখে দেখছেন না। বিব্রত হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, বিতর্কিত হচ্ছে সরকার। এসব নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সংসদীয় দলের একাধিক সভায় বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কড়া ভাষায় সতর্ক করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং অনেকেই দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
অন্তহীন অপকর্ম : আওয়ামী লীগের যেসব এমপি নিজেদের অপকর্ম বা তাদের আত্মীয়স্বজন ও নিজস্ব ক্যাডার বাহিনীর সন্ত্রাসী কার্যকলাপে বিতর্কিত হয়েছেন, তারা হলেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (চাঁদপুর-২), সৈয়দ মহসিন আলী (মৌলভীবাজার-৩), আবদুর রহমান বদি (কক্সবাজার-৪), আমানুর রহমান খান রানা (টাঙ্গাইল-৩), দবিরুল ইসলাম (ঠাকুরগাঁও-২), নিজাম উদ্দিন হাজারী (ফেনী-২), আ স ম ফিরোজ (পটুয়াখালী-২), মাহবুবুর রহমান (পটুয়াখালী-৪), এ কে এম এ আউয়াল (পিরোজপুর-১), নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন (ভোলা-৩), মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস (সিলেট-৩), শেখ আফিল উদ্দিন (যশোর-১), রণজিত কুমার রায় (যশোর-৪), গোলাম রব্বানী (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১), মো. এনামুল হক (রাজশাহী-৪), সুকুমার রঞ্জন ঘোষ (মুন্সীগঞ্জ-১), ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির (ময়মনসিংহ-৩), আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী (চট্টগ্রাম-১৫ লোহাগাড়া-সাতকানিয়া), সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য পিনু খান প্রমুখ। এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আলোচিত হয়েছেন তরুণ এমপি ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল (ময়মনসিংহ-১০)। এ ছাড়া বিতর্কিত নানা কর্মকাণ্ডে বারবার সমালোচিত হচ্ছেন ঢাকা-১৬ আসনের ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা, যশোর-১ আসনের শেখ আফিল উদ্দিন ও পাবনা-৫ আসনের গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য ও মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পিনু খান তার ছেলে বখতিয়ার আলম রনিকে নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। এমপিপুত্র রনি ১৩ এপ্রিল রাতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দুই নিরীহ ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছেন। নিউ ইস্কাটন রোডে এমপি-মায়ের প্রাডো জিপে থাকা অবস্থায় নির্বিচারে গুলি চালান রনি। এতে সিএনজিচালক ইয়াকুব ও রিকশাচালক হাকিম গুরুতর আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা দুজনই মারা যান। ঘটনা ধামাচাপা দিতে মা পিনু খান সব ধরনের চেষ্টা-তদবির চালান বলে অভিযোগ ওঠে। তিনি সরকার ও দলের হাইকমান্ডের কাছেও ধরনা দেন। কিন্তু ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। 'পচা গম কেলেঙ্কারি'তে বেকায়দায় পড়েছেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। শুধু ব্রাজিল নয়, ফ্রান্স থেকে কেনা গমও পচা বলে জানা গেছে। এ নিয়ে তার মতো দলও পড়েছে অস্বস্তিতে। আওয়ামী লীগের দুই মেয়াদেই আলোচনায় রয়েছেন কক্সবাজার-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এমপি আবদুর রহমান বদি। অবৈধ সম্পদ উপার্জনের অভিযোগে তার ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইয়াবার গডফাদারের পর এবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে মানব পাচারের। সন্ত্রাসী তৎপরতা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, চোরাচালান, জমি দখল- প্রায় সব অভিযোগের আঙ্গুল তার দিকে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রশাসনের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা তার ভয়ে তটস্থ থাকেন সব সময়। একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন সরকারদলীয় এই সংসদ সদস্য। স্থানীয় সাংবাদিকরাও রক্ষা পাননি তার হাত থেকে। এমপি বদির মতো সরাসরি চোরাচালানের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি গোয়েন্দা সংস্থাও তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে প্রতিবেদন দিয়েছে। যশোরের শার্শায় প্রশাসনের কর্মকর্তা নয়, স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের কথাতেই চলছে সব কাজ। এমপি ও তার ক্যাডাররা যা বলবেন তা-ই শেষ কথা। যশোর-১ আসনে এমপি আফিলের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন ক্ষমতাসীন দলেরই আরেক নেতা বেনাপোল পৌরসভার মেয়র লিটন। উভয়ই পরস্পরবিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের শায়েস্তা করতে বেজায় ব্যস্ত। পার্শ্ববর্তী আসন যশোর-৪ এর সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়ও বসে নেই। তার বিরুদ্ধেও নিজ দলের নেতা হত্যাকাণ্ডে মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে যশোর জেলায় একাধিক সংসদীয় আসন এলাকার বাসিন্দারা তাদের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিপীড়ন, নির্যাতন, নিষ্পেষণে ধরাশায়ী হয়ে পড়েছেন। এখানকার সব জনপ্রতিনিধিই চোরাচালান, মানব পাচার, টেন্ডারবাজি, বালুমহাল, ঘাটমহাল, জলমহাল ইজারায় সীমাহীন চাঁদাবাজিতে মত্ত বলেও অভিযোগ রয়েছে। সরকারের বিগত মেয়াদে কর্তব্য পালনের সময় সাভারের ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. শরীফুল ইসলামকে মারধর করে ব্যাপক সমালোচিত হন এমপি ইলিয়াস মোল্লা। মিরপুরের রিফিউজি ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ১১ জনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়ও দায়ী করা হয় তাকে। সরকারি অফিসে লোক নিয়োগ, টেন্ডার-বাণিজ্য, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি নিয়ে অধ্যক্ষকে মারধর ও ভর্তি বন্ধ, শহীদ বুলবুল কলেজের অধ্যক্ষকে মারধর ও পাবনা সিভিল সার্জনকে জোর করে অফিস থেকে তুলে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন ঘটনার মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে পাবনা-৫ আসনের এমপি গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্সের বিরুদ্ধে। টাঙ্গাইল-৩ আসনের সরকারদলীয় সদস্য আমানুর রহমান খান রানার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ছাড়াও রয়েছে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগ। টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যায় জড়িত হিসেবে গ্রেফতার এড়াতে এমপি রানা ও তার চার ভাই সাত মাস ধরে পলাতক। অভিযোগ রয়েছে, টাঙ্গাইলে সব ধরনের উন্নয়নমূলক কাজের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি ও তার লোকজন। প্রসঙ্গত, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় টাঙ্গাইলে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেন প্রতিবাদী ফারুক। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, সেই মুক্তিযোদ্ধা ফারুককেও রেহাই দেয়নি খান পরিবার।
নৈশপ্রহরী নিয়োগেও হস্তক্ষেপ : রাজশাহীর-৪ (বাগামারা) আসনের এমপি এনামুল হকের বিরুদ্ধে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে 'দফতরি-কাম-প্রহরী' নিয়োগে বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসন এরই মধ্যে তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। প্রাপ্ত অভিযোগে জানা যায়, দুটি পর্যায়ে ৫০টি স্কুলে এমপি নিজ মনোনীত ব্যক্তিদের ওই পদে নিয়োগ দিতে অবৈধভাবে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ডিমান্ড অর্ডার (ডিও) লেটার দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি স্কুলের বিপরীতে 'দফতরি-কাম-প্রহরী' পদে গড়ে চারজন করে প্রার্থী থাকলেও এমপির ডিও লেটারের তালিকা ধরে নিয়োগ দিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বাধ্য করা হয়। প্রতিটি নিয়োগে চার থেকে ছয় লাখ টাকা করে আদায় করার অভিযোগ ওঠে এমপি এনামুল হকের বিরুদ্ধে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংসদ সদস্য এনামুল হক। ইউএনওকে এ-সংক্রান্ত ডিও লেটার দেওয়ার কথাও অস্বীকার করেন তিনি। ক্লিন ইমেজের যেসব এমপি সন্ত্রাস, জবরদখল, চাঁদাবাজির অভিযোগ থেকে মুক্ত রয়েছেন ক্ষমতার দাপট দেখাতে বিন্দুমাত্র পিছিয়ে থাকছেন না তারাও। চাঁদপুরের শাহরাস্তি এলাকায় ৪৩ বছরের পুরনো মেহের ডিগ্রি কলেজকে সরকারিকরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় এমপি। সরকার প্রতিটি উপজেলা সদরে সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত একটি করে কলেজকে সরকারিকরণের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট ছকে প্রস্তাবিত কলেজগুলোর তথ্য পাঠাতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। কিন্তু সেখানকার সংসদ সদস্য তার স্বজনের নামে গড়ে ওঠা মহিলা কলেজ ছাড়া অন্য কোনো কলেজের তালিকা পাঠাতে নিষেধ করে দিয়েছেন। জানা গেছে, শুধু চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে নয়, সারা দেশেই কলেজ সরকারিকরণের প্রস্তাবনা দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এমপিরা মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে বসছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে রীতিমতো চাঁদাবাজির নিরাপদ আখড়াস্থলে পরিণত করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীই এখন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ। জামায়াত-ঘরানার এই নেতা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলে নাম লিখিয়ে সংসদ সদস্য হন। এর পরই জামায়াতিদের কাছে টেনে সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করতে শুরু করেন তিনি। এ নিয়ে মাঝে-মধ্যেই সেখানে মারামারি হচ্ছে। 'এমপি সাহেবের দাপটে পুরনো কর্মীরা সংখ্যালঘু হয়ে গেছি। তার আশপাশে এখন জামায়াত নেতা-কর্মীদের ভিড়। উপজেলা নির্বাচনে নদভী বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী শাওনকে প্রভাব খাটিয়ে জিতিয়ে এনেছেন।' দাম্ভিক আচরণ, অশালীন কথাবার্তাসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সমালোচিত ময়মনসিংহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির। সরকারের বিগত মেয়াদে তিনি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হয়েই নিজের দাপট দেখাতে শুরু করেন। এখন প্রতিমন্ত্রিত্ব না থাকলেও তার আচরণ বদলায়নি। মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ তার ব্যবসায়িক অংশীদার ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলামকে স্কুল, কলেজ, মসজিদের জমি দখলে সহায়তা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ একাধিক যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে প্রমাণ আছে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার।
যারা বেশি বেপরোয়া : যেসব আসনের এমপিরা সরাসরি কোনো অপকর্মে জড়াচ্ছেন না, সেখানে তাদের আত্মীয়স্বজন, দলীয় চাঁই-চামুণ্ডারা আরও বেশি বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকছেন। আড়াইহাজারের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে অপরাধ-অপকর্মে সরাসরি জড়ানোর তেমন অভিযোগ না থাকলেও তার ভাগ্নে ইকবালের অত্যাচারে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তিনি কথায় কথায় পিস্তল বের করে গুলির ভয় দেখান। সামান্য কথাতেই চড়-থাপ্পড় মারেন। সর্বত্র চষে বেড়ান নিজস্ব অস্ত্রশস্ত্র ও ক্যাডার নিয়ে। তিনি আড়াইহাজারের কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। তার দলীয় কোনো পদ-পদবিও নেই। কিন্তু তার বেশুমার ক্ষমতার উৎস সবারই জানা। জমি দখল, চাঁদাবাজি, হুমকি-ধমকিসহ নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। তার ভয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা তো বটেই ক্ষমতাসীন দলের নেতারা পর্যন্ত তটস্থ থাকেন। কখন কাকে কীভাবে অপদস্থ করেন, কাকে চড়-থাপ্পড় মেরে বসেন, সেসব নিয়ে টেনশনের অন্ত নেই। গাজীপুর-২ আসন এলাকায় চলছে 'এমপির মুরব্বি মতি'র শাসন। জায়গা-জমি, বাড়িঘর দখল, টেন্ডারবাজি, ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, শিল্প-কারখানা জিম্মি করে চাঁদাবাজি, লুটপাটসহ মাদক-বাণিজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি মুরব্বি মতি এখন অপ্রতিরোধ্য। এমপি জাহিদ আহসান রাসেলকে অসহায় বানিয়ে যাচ্ছেতাই করে বেড়াচ্ছেন তারই চাচা মতিউর রহমান মতি। আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো রাতারাতি নিজের ভাগ্যও বদলে নিয়েছেন তিনি। কদিন আগেও হেঁটে চলা মতি মিয়া এখন অত্যাধুনিক মডেলের একাধিক গাড়ি হাঁকান। জীর্ণশীর্ণ কুটিরের স্থানে গড়ে তুলেছেন আলিশান মার্কেট, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। গাজীপুর-উত্তরায় গড়েছেন দুই শতাধিক কোটি টাকার সহায়সম্পদ। এতেও নিশ্চিত নিরাপত্তা বোধ না করায় মালয়েশিয়ায় কিনেছেন অভিজাত বাড়ি। সেখানে প্রবাসী বাঙালি বন্ধুর সঙ্গে যৌথভাবে শুরু করেছেন রেস্টুরেন্ট বাণিজ্য। ক্রসফায়ারের তালিকায় নাম থাকার কথা বলে ইদানীং তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি শুরু করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলামের প্রভাব-প্রতিপত্তিকেও হার মানিয়েছেন তারই ছেলে মাজহারুল ইসলাম সুজন। বাপ-বেটার বিরুদ্ধে নির্যাতন-নিপীড়ন ও সংখ্যালঘুদের জমি দখলের এন্তার অভিযোগ রয়েছে। বালিয়াডাঙ্গীর পাড়িয়া ইউনিয়নে রণবাগ ইসলাম টি-এস্টেট কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি চা-বাগান গড়ে তুলেছেন দবিরুল। ১০৬ একর আয়তনের ওই বাগানের মাঝখানে স্থানীয় সংখ্যালঘুদের আবাদি জমি রয়েছে। এরই মধ্যে বেশির ভাগ জমি জবরদখল করে নিয়েছেন তিনি। যারা জমি দিতে রাজি হচ্ছে না তাদের নানাভাবে করা হচ্ছে হেনস্থা আর দেওয়া হচ্ছে হুমকি।
Pl see my blogs;
Feel free -- and I request you -- to forward this newsletter to your lists and friends!
No comments:
Post a Comment