Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Monday, October 6, 2014

'আওয়ামী মন্ত্রীদের যতো বেফাঁস মন্তব্য': এস এম নূর মোহাম্মদ

'আওয়ামী মন্ত্রীদের যতো বেফাঁস মন্তব্য': 

এস এম নূর মোহাম্মদ


'আওয়ামী মন্ত্রীদের যতো বেফাঁস মন্তব্য'














 বেফাঁস মন্তব্যের জন্য বরাবরই চ্যাম্পিয়ন আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা। বিভিন্ন সময় মন্ত্রীরা অপ্রয়োজনীয় ও বিতর্কিত মন্তব্য করে খবরের শিরোনাম হয়েছেন। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে মহাজোট সরকারের কিছু মন্ত্রী নানা সময়ই অশালীন ও অনাকাঙ্খিত মন্তব্য করেছেন। অনেক দায়িত্বশীল মন্ত্রীর অশালীন মন্তব্যে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে সরকার ও দলকে। আর এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে সমালোচনাও হয়েছে বেশ।

সর্বশেষ গত ২৮ সেপ্টেম্বর  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হজ, হযরত মুহাম্মদ (সা:), জামায়াতে ইসলামী ও তাবলীগ জামাতকে নিয়ে কটূক্তি করে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য (সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম) এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। তার ওই দিনের বক্তব্যে আক্রমণ করতে ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার আইটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কেও। ফলে ওই দিন থেকে এখনো বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। ক্ষোভে উত্তাল সমগ্র বাংলাদেশ।

আজ শুক্রবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর ফাঁসির দাবিতে রাস্তায় বেড়িয়ে এসেছে। তাকে গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় না আনা পর্যন্ত সাধারণ মানুষরা ঘরে ফিরে যাবে না বলেও সরকারকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

তবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানায় মন্ত্রিসভা থেকে লতিফ সিদ্দিকীকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে, মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে মুরতাদ আখ্যা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। আর তার কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছে বিএনপি-জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোট। অন্যদিকে ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।  

কিন্তু মন্ত্রী হিসেবে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর এটাই প্রথম ঘটনা নয়। এর আগেও বহু বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এবং কথা বলে সমালোচিত হন এ নেতা।  

তবে শুধুমাত্র লতিফ সিদ্দিকীই নন। তার আগেও নানা বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন মহাজোট সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। মাত্র কয়েকদিন আগেই ধানমন্ডিতে এক সমাবেশে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদকে স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ বেয়াদব বলে আখ্যা দেন দলের ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পদ্ধতিকে ত্রুটি পূর্ণ আখ্যা দিয়ে সমালোচিত হন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

এর কিছুদিন আগেই সিলেটে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বক্তব্য দেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। পরে তার ওই বক্তব্যে সমালোচনার ঝড় উঠলে ক্ষমা চেয়ে ওই যাত্রায় রক্ষা পান তিনি। তবে আগেও এ মন্ত্রীর বেশ কিছু কর্মকাণ্ডে দলকে বিব্রত হতে হয়েছে একাধিকবার। যৌন কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আলেমদের শাস্তির কথা বলে এর আগেও রোষাণলে পড়েন মহসীন আলী। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে এতিমখানায় পরিদর্শনের সময় শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুনে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো অভিযুক্তদের পক্ষে সাফাই গেয়ে সমালোচনায় পড়েন তিনি।    

গত ৪ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের এক সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, মানুষ বাপ-মার ঘরে জন্ম নিলে তার একটি জন্মদিন থাকে এবং মানুষ তা জানে। পক্ষান্তরে ডাস্টবিনে জন্ম নিলে তার জন্মদিন ৩/৪টা কেন আরো বেশিও থাকতে পারে। এতে কোনো সমস্যা নেই।

তবে সবচেয়ে হাস্যরস বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। গত ২০ জুলাই গাজায় হামলার ঘটনায় ইসরাইলি ইহুদিদের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ থাকতে পারে বলে মন্তব্য করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন তিনি।  সাবেক ওই মন্ত্রী বলেন, গতবার যখন ইসরাইল গাজায় হামলা চালালো তখন তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় ছিল। আমরা বিরোধী দলে থেকে সংসদে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করতে আহ্বান জানাই। কিন্তু তারা রাজি হয়নি। এখন আবারো হামলা হচ্ছে। আর সেই বিষয়েও তারা নীরব ভূমিকা পালন করছে, যা ইহুদিদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার প্রমাণ দিচ্ছে।

এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা সদরের সরকারি পাবলিক মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। সে সময় জাতীয় সংসদের হুইপ বলেন, "ক্রেস্ট না, ক্যাশ চাই"। যদি কারো উপঢৌকন দেওয়ার ইচ্ছা থাকে, দলীয় কার্যালয়ে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বসব। নিয়ে আসবেন। প্রকাশ্যে এমন বক্তব্য দেওয়ায় সমালোচনার ঝড় ওঠে তার বিরুদ্ধে। পরে অবশ্য চিফ হুইপ তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।

বেফাঁস মন্তব্য থেকে বিরত নন সিনিয়র অনেক মন্ত্রীও। কথায় কথায় 'স্টুপিড', 'বোগাস' 'ফটকাবাজ' ও 'রাবিশ' উচ্চারণে অভ্যস্ত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতেরও অনেক অনভিপ্রেত বক্তব্য রয়েছে। মন্ত্রী শেয়ারবাজারকে কখনো 'দুষ্ট বাজার', কখনো বিনিয়োগকারীদের 'ফটকাবাজ' মন্তব্য করেন। আর বহুল আলোচিত হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে শুধু সোনালী ব্যাংক থেকেই চার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হলে অর্থমন্ত্রী বিষয়টিকে হালকা করে বলেন, 'ব্যাংকিং খাতে আমরা ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেই। আর মাত্র চার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি তেমন কিছু নয়'।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানাপ্লাজা ধসের পর আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর বলেন, বিএনপি-জামায়াতের হরতালকারীরা গেট ধরে ধাক্কা-ধাক্কি করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। পরে তার বক্তব্য নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে দেশে-বিদেশে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাকে নিয়ে বেশ সমালোচিত কার্টুনও প্রকাশ করেন অনেকে।

২০১২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন মাছরাঙা টিভির বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার এবং এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। ১১ ফেব্রুয়ারি লাশ উদ্ধারের পর সেখানে ছুটে যান তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এডভোকেট সাহারা খাতুন, পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার এবং র‌্যাবের ডিজি মোখলেছুর রহমানসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সে সময় খুনিদের গ্রেফতারে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেধে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও খুনিরা গ্রেফতার না হলে সাংবাদিক মহল এ নিয়ে তার কড়া সমালোচনা করেন।

এর আগে ২০১০ সালের ১৬ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সাম্প্রদায়িকতা' শীর্ষক আলোচনা সভায় তখনকার সময়ের আইনপ্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, 'জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের চর হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। জিয়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না।' আইন প্রতিমন্ত্রীর এমন বক্তব্যও সমালোচিত হয় সারাদেশে।

২০০৯ সালের ২৯ এপ্রিল তৎকালীন পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনের বেফাঁস বক্তব্যও ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল। ওই সময় মন্ত্রী বলেন, 'ভারত আগে টিপাইমুখ ড্যাম চালু করুক। ড্যামের কারণে বাংলাদেশের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়-সেসব দেখার পর সরকার সিদ্ধান্ত নেবে, ভারতের কাছে প্রতিবাদ জানানো হবে কি-না।'

এদিকে, সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এমন বেফাঁস মন্তব্যে দলের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে বলেই মনে করছেন নেতা-কর্মীরা। অনেককে আবার ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা গেছে।

তবে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেছেন 'মুখফোড়' লোকদের কথার গ্রহণযোগ্যতা নেই।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, মন্ত্রী হলে সবাইকে কৌশলী ও খুব ঠান্ডা মাথার হতে হবে। চট করে উত্তেজিত হলে চলবে না। আগের দিন গরম কথা বলে পরের দিন দুঃখ প্রকাশ করলাম এটা তো কোনো কথা হলো না।

এছাড়া আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও মন্ত্রীদের চিন্তাভাবনা করে কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন।
- See more at: http://www.sheershanews.com/2014/10/03/53630#sthash.mvydIMJs.dpuf

__._,_.___

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Welcome

Website counter

Followers

Blog Archive

Contributors