পর্যাপ্ত বরাদ্দ, জনবল, সরঞ্জামাদি থাকার পরও অভিযোগের শেষ নেই দুই পাখাওয়ালার বিরুদ্ধে!
চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের কারণে থমকে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকার মশক নিধন কর্মসূচি। নিয়মিত মশক নিধন করতে না পারায় দিনের পর দিন মশার যন্ত্রণা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।মশাঘটিত রোগ-ব্যাধির প্রকোপও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। থমকে গেছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম। বেড়ে গেছে মশার উপদ্রব।
রাজধানীর মশা নিধনে গড়ে প্রতিমাসে এক কোটি ৯৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু পাড়া মহল্লা থেকে শুরু করে অভিজাত এলাকার কোথাও মশার উৎপাত কমছে না। দিন দিনমশা বাড়লেও কর্তৃপক্ষ বলছে নিয়মিত ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।
মশার কামড়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ। মসজিদে নামায-কালামে রত মুসল্লীদের একাগ্রতায় হুল ফুটাচ্ছে মশা। কয়েল দিয়ে মশা যাচ্ছে না। এক সময় কয়েলে কাজ হলেও এখন স্প্রে করেওকাজ হয় না। আগে শুধু রাতে উৎপাত থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে দিনেও সমানতালে হামলে পড়ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছে, মশা নিধনে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তবে বর্তমানে দেশে লাগাতার হরতাল-অবরোধ চলার কারণেআমাদের নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম চালাতে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু নগরবাসী বলছে, নিয়মিত মশা নিধনের ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না।
অথচ প্রতি বছরই মশা নিধনের জন্য বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ রাখে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণ কাজে ২৩ কোটি ৫০ লাখটাকা বরাদ্দ করে উভয় সিটি কর্পোরেশন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বরাদ্দ ১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বাজেট ৯ কোটি টাকা। সে অনুযায়ীগড়ে প্রতি মাসে বাজেট দাঁড়ায় ১ কোটি ৯৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। রাজধানীর কথিত অভিজাত এলাকা উত্তরা, বনানী, বারিধারা, গুলশান ১ ও ২, মহাখালী, খিলগাঁও, তেজগাঁও শিল্পএলাকা, সাততলা বস্তি, রামপুরা, বাড্ডা, মধ্যবাড্ডা, বনশ্রী, টিটিপাড়া, মদিনাবাগ, মাদারটেক, আহমদবাগ, মুগদাপাড়া, গোড়ান, কুড়িল, গাবতলী, পাইকপাড়া, রূপনগর, মিরপুর-১, ২, ১০ও ১২ নম্বর, কালশী, পল্লবী, কাফরুল, ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটা, ধানমন্ডি, মুহম্মদপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুর, পুরান ঢাকা, সদরঘাট, পল্টন, মতিঝিল, গোপীবাগ, মানিকনগর, কমলাপুর,মগবাজার, যাত্রাবাড়ী, ওয়াপদা কলোনি, দনিয়া, জুরাইন, সায়েদাবাদ, শাহজাহানপুর, আজিমপুর, লালবাগ ও বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকা, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীরচর এলাকাবাসীর মশা নিয়েঅভিযোগের শেষ নেই।
সিটি কর্পোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, নগরীতে পাঁচ শতাধিক খাল-ডোবা রয়েছে। কিন্তু এসব পরিষ্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। তাই এসব খাল-ডোবা মশার বংশবৃদ্ধির উর্বর ক্ষেত্রে পরিণতহয়েছে। আবার রাজধানীর বেশির ভাগ বাসিন্দা যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে পরিবেশকে নোংরা করে রাখে। তাছাড়া সিটি কর্পোরেশন সড়কে কনটেইনারে রাত-দিন সবসময়ই ময়লা-আবর্জনাজমা করে রাখে। অনেক দিন সেখানে ময়লা জমে থাকলে তা পচে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয় এবং জন্ম নেয় নতুন মশা। যে কারণে মশার উৎপাত যেন নগরবাসীর নিয়মিত ভোগান্তির কারণ হয়েদাঁড়িয়েছে। পর্যালোচনায় জানা যায়, মশক নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর প্রতিটি মহল্লাভিত্তিক মশক নিধন কর্মী রয়েছে। দুই সিটি কর্পোরেশনে মশক নিধন কর্মী রয়েছে ৬৩৮ জন। উড়ন্ত মশা মারারযন্ত্র বা ফগার মেশিন রয়েছে প্রায় ৫০০টি। ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়ে রয়েছে ১০ স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ প্রায় ১৫ কর্মকর্তা। পর্যাপ্ত বরাদ্দ, জনবল, সরঞ্জামাদি থাকার পরও মশক নিধনে পুরোপুরিব্যর্থ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন।
উল্লেখ্য, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষেও মশা মারার ওষুধ এবং যন্ত্রপাতি কেনা নিয়েও রয়েছে নানা দুর্নীতি-অনিয়মসহ লুটপাটের অভিযোগ। কম দামের ওষুধ কেনা হয়েছে বেশি দাম দেখিয়ে।তাতেও কতটা ওষুধ, কতটা ভেজাল কে জানে! যে দেশে প্রায় প্রতিটি খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশানো হয়, সে দেশে মশার ওষুধে ভেজাল দেয়া হবে না, এটা অবিশ্বাস্য! সুতরাং মশককুলের আর কিদোষ! ডিসিসি’র লোকদেখানো ভেজালমিশ্রিত ওষুধ কোথাও দেয়া হলেও তাতে মশা তো দূরে থাক, এমনকি লার্ভা, শুককীট, মুককীট কোনোটাই মরে না। মহানগরীর ৫ হাজার ১৪২ বিঘানীরাশয়ও ময়লা-নোংরা আবর্জনা ও কচুরিপানায় পরিপূর্ণ, অরক্ষিত, অবহেলিত, পরিত্যক্ত। এসব নীরাশয় পরিষ্কার করে মৎস্য চাষ করা হলেও মশা সহজে বংশ বিস্তার করতে পারতো না।তবে কথায় বলে, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? মশা মারতে কামান দাগার দায়িত্ব কার? অবশ্যই ডিসিসি’র। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তাদের নাকে মশা ঢুকলেও ঘুম ভাঙবে না।সরকার ও সংশ্লিষ্ট এলজিআরডি মন্ত্রণালয় কী সে দায়িত্ব নেবে?
পাশাপাশি উল্লেখ্য যে, মশক নিধন কার্যক্রম মোটামুটি সারা বছর ধরেই পরিচালিত হওয়া উচিত। ওষুধ স্প্রের পাশাপাশি নালা, নর্দমা, ডোবাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হলে মশার বংশবিস্তারের ক্ষেত্র ধ্বংস হবে। ডিসিসি’র ক্রাশ প্রোগ্রামে এসব কার্যক্রম থাকলেও মশক নিয়ন্ত্রণকারী কর্মীদের তৎপরতা এ ব্যাপারে খুব কমই দেখা যায়। কিছু কথিত ভিআইপি ও বিত্তশালী এলাকায়দু-তিন দিন পরপর ওষুধ ছিটাতে দেখা গেলেও অন্যান্য এলাকায় দেখা যায় কদাচিৎ। মশক নিধন কার্যক্রমে এ ধরনের বৈষম্যের অবসান আশু কাম্য। সব নাগরিকই সিটি কর্পোরেশনকে করদেয়। সব এলাকার প্রতিই ডিসিসি’র দৃষ্টি থাকতে হবে। তবে যেসব এলাকায় মশার উৎপাত বেশি, সেগুলো অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। এটাও ডিসিসি কর্মীদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে হবে।
No comments:
Post a Comment