সপার ৯ সাংসদ সহ অনুপস্থিত থাকবেন ইডেনে খেলতে আসা মনোনীত সাংসদ সচিন তেন্ডুলকরও। ফলে ম্যাজিক ফিগার ১২৩ থেকে কমে দাঁড়াবে ১১৭। বসপার ১৫ সাংসদের সমর্থন পেলে ইউপিএ-র পক্ষে মোট ভোট দাঁড়াবে ১১৯।
সীতের সকাল৷ রবিবার৷ সাংবাদিকতায় ২৭টা বছর পার করেও ছুটি পাননি টুলি৷ দেশ-বিদেশের অনেক পোড়খাওয়া সাংবাদিকেরই ছুটি বাতিল হয়েছিল সেই রবিবার৷ অয্যোধ্যার বাবরি মসজিদ চত্বরে ওই দিনই কর সেবা করার পরিকল্পনা করেছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টি ও সঙ্ঘ পরিবারের অন্যতম অংশীদার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরা৷
মসজিদ সংলগ্ন একটি বাড়ির ছাদে ঘাপটি মেরে বসে দেখছিলেন মার্ক টুলি৷ বিবিসি-র নয়াদিল্লি অফিসের কর্ণধার তখন তিনিই৷ ভারতীয় জনতা পার্টি পক্ষ থেকে প্রশাসনকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল, রামলালার পুজো সীমাবদ্ধ থাকবে একেবারেই প্রতীকিস্তরে৷ এমন সময়েই অঘটন৷ মাথায় হলুদ ফেট্টি পরা একদল অল্পবয়েসি সমর্থক হঠাত্ই পুলিশি বেড়া ভেঙে ঢুকে পড়ল মসজিদ চত্বরে৷
পুলিশের ওপর প্রশাসনিক নির্দেশ ছিল গুলি না চালানোর৷ তাই রামজন্মভূমির যে এলাকায় রামমন্দিরের ইট গেঁথে প্রতীকী করসেবা হবে ঠিক হয়েছিল সেই পর্যন্ত অনায়াসেই ঢুকে যেতে পেরেছিলেন ওই কট্টরপন্থী হিন্দু সমর্থকরা৷ এর পরের ঘটনা চেষ্টা করেও ভুলতে পারেননি বিবিসি'র দিল্লি ব্যুরোর ওই কর্ণধার৷
'প্রথমেই আক্রমণ করা হল টিভি সাংবাদিকদের৷ নির্বিচারে একে একে ভাঙা পড়ল দেশি-বিদেশি সব সংবাদমাধ্যমেরই ক্যামেরা৷' করসেবা যদি প্রতীকিই হবে, তা হলে কেন ক্যামেরা ভাঙা? কিছুটা ধন্ধে ছিলেন টুলি৷ উত্তর মিলতে সময় লাগেনি৷ বাবরি মসজিদের গোম্বুজের ওপর ততক্ষণে হাঁচোড়-পাঁচোড় করে উঠে পড়েছেন দুই সমর্থক৷ হাতে শাবল৷ চোখের নিমেষে উঠে পড়েন আরও কয়েকজন৷ শুরু হয়ে গেল মসজিদ ভাঙার কাজ৷
লন্ডনে এই খবর পাঠাতে সেদিন মার্ক টুলিকে অযোধ্যা থেকে ফৈজাবাদ আসতে হয়েছিল৷ গোটা শহরের টেলিফোন কাটা ছিল সেদিন, তাই 'স্টোরি ফাইল' করতে সেদিন যে পরিশ্রম করতে হয়েছিল তা কোনওদিন ভুলবেন না তিনি৷ তবে, ফৈজাবাদ থেকে অযোধ্যা ফিরতে আরও বেশি কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছিল সেদিন৷ মার্ক টুলি যখন ফৈজাবাদ থেকে অয্যোধ্যায় ঢুকেছেন ততক্ষণে বিবিসি-তে মসজিদে হামলার খবর সম্প্রচারিত হতে শুরু করেছে৷ অযোধ্যায় করসেবকরা মার্ক টুলিকে খুঁজতে শুরু করে দিয়েছে৷ শেষ পর্যন্ত তাঁকে আটকে রাখা হয়েছিল এক মন্দিরে৷ যখন ছাড়া পেলেন, ততক্ষণে ধূলিস্যাত্ হয়ে গিয়েছে পাঁচ শতাব্দী প্রাচীন মসজিদ৷ আন্তজার্তিক ক্ষেত্রে মসজিদ ভাঙার ঘটনায় ভারতের ভাবমূর্তি ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল৷ যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভারত আবার সেই স্মৃতি ভুলে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে৷ টুলি বিশ্বাস করেন না, বাবরি মসজিদের পতন ঘটিয়েই এ দেশের রাজনীতিতে 'বিজেপি'-র উত্থান ঘটেছে৷ কংগ্রেসের সার্বিক অধঃপতনও অটলবিহারী বাজপেয়ি ও তাঁর নেতৃত্বকে প্রকট হতে সাহায্য করেছিল৷
১৯৮৪-তে রাজীব গান্ধীর হাত ধরে কংগ্রেস রেকর্ড জয় পেলেও পাঁচ বছর পরই ক্ষমতাচ্যুত হয়৷ শাহ বানু মামলাও প্রশাসক হিসেবে রাজীবের অপদার্থতাই প্রমাণ করে৷ ১৯৯১ সালে রাজীব গান্ধী নিহত হলে কংগ্রেসের চিরন্তন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমন আকার নিয়েছিল যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পিভি নরসিংহ রাও অক্ষম দর্শকের ভূমিকা পালন করতে বাধ্য হয়েছিলেন৷
বাবরি মামলা মিটল না কুড়ি বছর পরেও৷ টুলির অভিযোগের আঙুল ভারতের বিচারব্যবস্থার প্রতি৷ বিজেপি'র ভবিষ্যত্ ? দক্ষিণপন্থী দল হিসেবে থাকলেই ভালো বলে মনে করেন প্রাক্তন এই সাংবাদিক৷ তবে অবশ্যই দেশের উন্নয়ন যেন মাথায় থাকে বিজেপি নেতাদের৷ হিন্দুত্বের আশ্রয় নিলে আরও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে হবে মূলত গো-বলয় নির্ভর এই রাজনৈতিক দলকে৷
পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কি নরেন্দ্র মোদি? তেমন আশা দেখছেন না, তবে মোদি যেমন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জনকল্যাণের যে পথ ধরেছেন মোদি, তাতে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যত্ মজবুতই হবে৷
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২০ বছর পূর্তি। এদিন উত্তরপ্রদেশ জুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে অখিলেশ যাদবের সরকার। অযোধ্যা, ফৈজাবাদ, বারাণসী, লখনউ, রায়বেরিলিসহ গুরুত্বপূর্ণ শহর গুলোতে সংঘর্ষ এড়াতে এবং শান্তি বজায় রাখতে রাজ্যের সর্বত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যে কোনও নাশকতা রুখতে 'স্পেশাল রিঅ্যাকশন টিম'-কে তৈরি রাখা হয়েছে। সমস্ত অযোধ্যা জুড়েই বসানো হয়েছে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা।
এদিকে বৃহস্পতিবার এই দিনটিকে 'কালো দিবস' হিসেবে পালন করার পাশাপাশি দিনটিতে তাদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ।
অন্যদিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এই দিনটিকে সাহসিকতা ও জয়ের দিন হিসেবে পালন করবে বলে স্থির করেছে।
অন্যান্য রাজ্যের পাশাপাশি কলকাতাসহ রাজ্যের সর্বত্র ধর্মনিরপেক্ষতার সপক্ষে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী প্রচার কর্মসূচী পালন করবে বামফ্রন্ট। কলকাতার রানী রাসমনি এভিনিউতে আয়োজিত কেন্দ্রীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন, রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বাম নেতা ক্ষিতি গোস্বামীসহ শীর্ষ বাম নেতারা। এছাড়া জেলায় জেলায় পালিত হবে নানা কর্মসূচী।
উল্লেখ্য ধর্মের জিগির তুলে ২০ বছর আগে আধুনিক ভারতের ইতিহাসে ১৯৯২ সালের এই দিনটিতেই ভারতীয় জনতা পার্টি, রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘ এবং সঙ্ঘ পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাবাহিনীর চোখের সামনেই গুঁড়িয়ে দিয়েছিল বাবরি মসজিদ। সেই সঙ্গে ধুলোয় মিশেছিল গণতান্ত্রিক ভারতের ধর্ম নিরপেক্ষতার অহংকার। শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সেদিন এই মারাত্মক কর্মকান্ডে বাধা দেয়ার পরিবর্তে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ও শীর্ষস্থানীয় বিজেপি নেতা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেইে ক্ষান্ত থাকেননি, প্ররোচনাও দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেদিনের সেই ধ্বংসলীলা সমগ্র ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামোর ওপর আক্রমণের ইঙ্গিত দিয়েছিল। বাবরি ধংসের মধ্যে দিয়ে যে নতুন বিপদের আগুন সেদিন অযোধ্যার বুকে জ্বলে উঠেছিল, তা আজও দাউদাউ করে সমগ্র দেশকে বার বার গ্রাস করতে চাইছে। বিশ্বের সামনে সেদিন সভ্য, ধর্মনিরপেক্ষ ও যুক্তরাষ্ট্রীয় দেশ বলে পরিচিত ভারতের সাধারণ মানুষের মাথা লজ্জায় হেঁট হয়ে গিয়েছিল।
মসজিদ রক্ষায় সরকারের ব্যর্থতা নিয় দেশজুড়ে ঝড় ওঠায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পি.ভি.নরসিমা রাও বাবরি ধ্বংসের দশদিন পর গঠন করেছিলেন লিবেরহান কমিশন। এরও সতেরো বছর পর গত ২০০৯ সালের ৩০ নভেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের তদন্তে গঠিত লিবেরহান কমিশন প্রধানমন্ত্রী ড: মনমোহন সিং-এর কাছে তার রিপোর্ট পেশ করে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী এটাই দেশের সর্বোচ্চ মেয়াদী তদন্ত কমিশন। তদন্তের স্বার্থে এই কমিশনের পেছনে সরকারের খরচ হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। চার খন্ডে ১ হাজার পৃষ্ঠার এই রিপোর্টে যাদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নত করা হয়েছে, তাদের এখনও দৃষ্টান্তকমূলক শাস্তি হয়নি। অভিযুক্তদের তালিকায় লালকৃষ্ণ আদবানী, মুরলীমনোহর যোশী, বিনয় কাটিহার, অশোক সিঙ্ঘাল, উমা ভারতীর মতো বিজেপি, আরএসএসসহ বেশ কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের বড় বড় নেতার নাম রয়েছে। এরা প্রত্যেকেই মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় কোন না কোন ভাবে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ছবি প্রকাশ করে একটি বিবৃতিতে নাসা জানিয়েছে, '১২ নভেম্বর, ২০১২ তারিখে সুয়োমি এনপিপি উপগ্রহের ভিজিবল ইনফ্রারেড ইমেজিং রেডিওমিটার স্যুইট (ভিআইআইআরএস) রাতের ছবিগুলি তুলেছে। ভিআইআইআরএস-এর ডে-নাইট ব্যান্ডে ছবিগুলি ধরা পড়েছে। ছবিগুলি আরও উজ্জ্বল করা হয়েছে যাতে রাতে শহরগুলির আলো স্পষ্ট হয়।'
সবচেয়ে উজ্জ্বল ছবিগুলি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের যেখানে দীপাবলি পালন করা হচ্ছিল। ভারতের পাশাপাশি নেপাল, বাংলাদেশ, চিন এবং পাকিস্তানের অংশবিষেশও ছবিতে দেখা গিয়েছে। জালিয়াতি সম্পর্কে নাসার সতর্কবার্তা, 'সম্প্রতি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলিতে নাসার তোলা ছবি বলে বেশ কিছু ভুয়ো ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সেগুলি দীপাবলির রাতে ভারতের ছবি।'
বাবরি মসজিদ ধ্বংস করেছিল মৌলবাদী হিন্দুরা আজ থেকে ২০ বছর আগে, ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর৷ রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্কের চূড়ান্ত সমাধান না হলেও এর প্রাসঙ্গিকতা ধীরে ধীরে অনেক ক্ষীণ হয়ে আসছে সময়ের ব্যবধানে৷
বিজেপিতে ফেরার মুহূর্তে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দায় স্বীকার করে নিলেন কল্যাণ সিং। ইটাতে এক সংবাদ সম্মেলনে কল্যাণ জানান, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর রাম জন্মভূমি বিতর্কে ঘৃতাহুতি দিতে ষোড়শ শতকের ওই মসজিদটি ধ্বংসের সব দায়ই তার। তার কথায়, ১৯৯২ সালে রাম মন্দির আন্দোলনের সময় যে সব রামভক্তরা অযোধ্যায় জড়ো হয়েছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আমিই তাদের ওপর পুলিশকে গুলি চালাতে বারণ করেছিলাম, যা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের অন্যতম কারণ। তাই, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সব দায় আমি নিচ্ছি। এক সময়ের হিন্দুত্বের পোস্টার বয় কল্যাণ সিং বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ১৯৯৯ সালে দল ছেড়েছিলেন। কিন্তু ফের ২০০৪ সালে বিজেপিতে ফিরে আসেন। যদিও ফের ২০০৯ সালে শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তাকে অবহেলা এবং অবমাননার অভিযোগে পুনরায় বিজেপি ছাড়েন তিনি।
ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের অযোধ্যায় ষোড়শ শতাব্দীর বাবরি মসজিদ ভাঙার পর, ধর্মীয় আবেগের আগুনে পুড়েছিল গোটা দেশ৷ এতবড় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দেশভাগের পর উপমহাদেশে আর হয়নি৷ ধুলোয় মিশে গিয়েছিল গণতান্ত্রিক ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার অহঙ্কার৷ অযোধ্যায় রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্কের সন্তোষজনক সমাধান আজও হয়নি৷ উভয় সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য সমাধান দিতে পারেনি এলাহাবাদ হাইকোর্টের লক্ষ্ণৌ বেঞ্চ৷
ঐ রায়ে বিতর্কিত জমির ২/৩ ভাগ দেয়া হয় হিন্দু সম্প্রদায়কে যাঁদের ধর্মবিশ্বাস, ঐ স্থানেই জন্মেছিলেন হিন্দুদের আরাধ্য দেবতা শ্রীরাম৷ মুসলিম সম্প্রদায় পায় ১/৩ ভাগ৷ বাদবাকি জমি সরকারের৷ পাছে এই রায় নিয়ে আবার কোনো ধর্মীয় সংঘাত দেখা না দেয়, তার জন্য বিতর্কিত এলাকায় রয়েছে কড়া সশস্ত্র পাহারা৷ এখনও বিষয়টি শীর্ষ আদালতে ঝুলে আছে৷
কী হয়েছিল সেদিন? ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর৷ তৎকালীন বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা শহরে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলির করসেবকরা (স্বেচ্ছাসেবক ) মাত্র ৬ ঘণ্টার মধ্যে বাবরি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয৷ তাতে সামিল হয়েছিলেন এল.কে আডবানিসহ বিজেপি'র নেতা কর্মীরা৷ এই ধ্বংসযজ্ঞে অবশ্য বিজেপি'র রাজনৈতিক ফায়দা হয়৷ তারা ক্ষমতায় আসে ১৯৯৮ সালে৷
কিন্ত কেন? হিন্দুদের বিশ্বাস প্রায় ৫০০ বছর আগে রাম জন্মস্থানে রাম মন্দির ভেঙে সেখানেই তৈরি করা হয়েছিল বাবরি মসজিদ৷ তৈরি করেছিল মোগল বাদশা বাবরের সেনাপতি মীর বাকি ১৫২৮ সালে৷ প্রত্নতাত্বিকরা মসজিদের নীচে মন্দিরের কিছু নিদর্শন পেয়েছিল, এমনটাই দাবি৷
এখন কেমন আছে অযোধ্যা? ২০ বছর পর আজ আর অযোধ্যার সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক দলের কাছে এর প্রাসঙ্গিকতা তেমন নেই৷ ধর্মের জিগির তুলে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা বিভেদ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, তাদের সেই চেষ্টা সফল হয়নি৷ অযোধ্যার মন্দির-মসজিদ শহরে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল৷ অন্তত রুজি রোজগারের তাগিদে৷ অশান্তির আগুন জ্বললে এই তীর্থভূমিতে পুণ্যার্থী এবং পর্যটকদের আসা বন্ধ হবে৷ এটা স্থানীয় মানুষ বুঝেছে৷ তবে ভয় তাঁদের রাজনৈতিক কারবারিদের৷
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্য দায়ী রাজীব গান্ধী : ফরাসি বিশেষজ্ঞ
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্য দায়ী ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। অযোধ্যা তথা রাম জন্মভূমি মামলার রায় প্রকাশের ঠিক আগে এই মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের নামজাদা ভারত বিশেষজ্ঞ ও লেখক ক্রিস্তফ জেফ্রলে। এই মামলার রায় ভারতীয় নেতাদের সামনে মুসলিম সম্প্রদায়কে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার একটা সুযোগ বলেই মনে করেন তিনি। আবার ভারতের রাজনৈতিক ভবিষ্যত্ প্রসঙ্গে নেহরু-গান্ধী পরিবারের ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে এই ফরাসি বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন, রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর ওই পরিবারের কেউ কংগ্রেসের নেতৃত্বে না থাকার কারণেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়েছিলেন। একই সঙ্গে ভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাহুল গান্ধীকেই কংগ্রেস তুলে ধরতে চায় বলেও জেফ্রলের ধারণা।
প্যারিসের সায়েন্সেস পো প্রতিষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি ও ইতিহাসের অধ্যাপক ক্রিস্তফ। ভারতের রাজনীতি নিয়ে একাধিক বই লিখেছেন তিনি। তার মতে, শাহ বানু মামলা থেকে শুরু করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দাবি মেনে অযোধ্যার মসজিদ খুলে দেয়া, একের পর এক জটিল সিদ্ধান্তে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ফাটল তৈরি করেছিলেন রাজীব। তাছাড়া ফৈজাবাদে নিজের নির্বাচনী প্রচার শুরুর সময় ওই শহরকে 'রামের জন্মভূমি' বলে ঘোষণা করেন তিনি। তাই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্য তাকেও পরোক্ষভাবে দায়ী বলাই যায়।
ক্রিস্তফের ধারণা, অযোধ্যা মামলার রায় বেরুনের পর রাম জন্মভূমি আন্দোলন শুরুর আগে নতুনভাবে নানা দিক বিবেচনা করা উচিত সংঘ পরিবারের। কারণ, তার মতে, ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনেই এই আন্দোলনের ব্যাপারে নিজেদের বিরক্তি স্পষ্ট করে দিয়েছে ভারতর মধ্যবিত্ত শ্রেণী। অন্যদিকে এই মামলায় মুসলিম পক্ষ পরাজিত হলে তাদেরও ফের পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করে নিতে হবে। সেক্ষেত্রেও সমস্যা জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
ভারতীয় রাজনীতিতে বিজেপি'র গুরুত্ব একেবারে শেষ হয়ে গেছে বলে মানতে নারাজ ক্রিস্তফ। তার মতে, কেবল সংখ্যালঘু বিরোধিতার এজেন্ডা দিয়েই বিজেপিকে বিচার করা যায় না। কংগ্রেসের দুর্বলতার কারণে বিজেপি দিল্লির ক্ষমতায় ফিরতে পারে। এ অবস্থায় বিহারের আগামী বিধানসভার নির্বাচন ওই দলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ইউপিএ জোট ভবিষ্যতে ফের দিল্লির ক্ষমতায় এলে রাহুল গান্ধীই প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন বলে অনুমান এই ফরাসি লেখকের। তার কথায়, কংগ্রেসের এখন আবার নেহরু-গান্ধী পরিবারের একজনকে প্রয়োজন। ওই পরিবারের সদস্যরা নেতৃত্ব না দিলে কংগ্রেসে গোষ্ঠীকোন্দল বেঁধে যায়। আর এ প্রসঙ্গেই ক্রিস্তফ উল্লেখ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম।
তার দাবি, আত্মঘাতী হামলায় রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর নেহরু-গান্ধী পরিবারের কেউ নেতৃত্বে ছিলেন না বলেই মমতা ও শারদ পাওয়ার কংগ্রেস ছেড়েছিলেন।
অযোধ্যায় 'বাবরি মসজিদ' ধ্বংসের দীর্ঘ ১৭ বছর পর তদন্ত রিপোর্ট পেশ ...
কংগ্রেসের ১২৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত পুস্তিকা 'কংগ্রেস অ্যান্ড দ্য মেকিং অফ দ্য ইন্ডিয়ান নেশনস'-এ বাবরি মসজিদ ধ্বংস ও সেই সময়কার কার্যকলাপের জন্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ, বিজেপি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদকেই দায়ী করা হয়েছে, তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিংহ রাওয়ের ভূমিকাকে লঘু করে দেখানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির সম্পাদনা করা বইয়ে লেখা হয়েছে ১৯৮০ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রচারে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার ডাক এবং সেস্থানে রামমন্দির করার আহ্বান জানানো হয়। এরপর বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানীর রাম রথযাত্রায় দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ায়।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ডাকে এক সমাবেশে উত্তর প্রদেশের তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং প্রথম উত্তেজক ভাষণ দেন। এরপর এলকে আদভানী, উমা ভারতী, মুরলী মনোহর যোশীর মতো বিজেপি নেতাদের বক্তব্য রাখার মধ্য দিয়ে এমন উত্তেজনা ছড়ায় যে, 'করসেবক' নামধারী উগ্র হিন্দুরা শাবল, গাইতি ইত্যাদি নিয়ে মসজিদের মিনারসহ অন্যান্য স্থানে উঠে পড়ে এবং মসজিদকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়।
বইয়ে লেখা হয়েছে, সুপ্রিমকোর্ট বলেছিল, মসজিদ সুরক্ষার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং সে দায়িত্ব পালনের কথা দিলেও তিনি তা পালন করেননি।
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধে এবং প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও ১৯৯২ সালের ৭ ডিসেম্বর দেশের সব সাম্প্রদায়িক সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন বলে পুস্তিকায় উল্লেখ করা হয়েছে।
পুস্তিকাটিতে রাজীব গান্ধীর প্রশংসা করা হলেও তার ভাই সঞ্জয় গান্ধীর নিন্দা করা হয়েছে। দেশে জরুরি অবস্থার মূল্যায়ন করতে গিয়ে স্বীকার করা হয়েছে, ওই সময়ে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার খর্ব হয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকলাপ তো বটেই বিচার ব্যবস্থাও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাও খর্ব করা হয়েছিল।
তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধী সীমাহীন ক্ষমতা ভোগ করেছিলেন বললেও সমালোচনার প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিলেন তার পুত্র সঞ্জয় গান্ধীই। পরিবার পরিকল্পনা থেকে বস্তি উচ্ছেদ তার স্বৈরাচারী মনোভাবের কথাই খোলাখুলি স্বীকার করেছে কংগ্রেস। আত্মসমীক্ষার ওই বইয়ে বোঝানো হয়েছে ক্ষমতার উত্স ছিলেন সঞ্জয়ই। কংগ্রেসের এই মূল্যায়নে মোটেই সন্তুষ্ট নয় বিজেপি। তাদের বক্তব্য, নিজেদের ভুল অন্যের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন প্রণব মুখার্জিরা।
প্রসঙ্গত, প্রয়াত সঞ্জয় গান্ধীর স্ত্রী মানেকা গান্ধী ও পুত্র বরুণ এখন বিজেপির সংসদ সদস্য। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সঞ্জয়কে এবং বাবরি মসজিদ ইস্যুতে নেতাদের ভূমিকা কি আড়াল করতে চাইছে বিজেপি। দলের মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন কংগ্রেসের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন।
কথিত আছে রোম নগরী যখন পুড়ছিল, সম্রাট নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। এমনই অভিযোগ ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাওয়ের বিরুদ্ধে। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় হাজার হাজার হিন্দু মৌলবাদী করসেবক যখন সাড়ে চারশ' বছরের প্রাচীন বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিচ্ছিল, তখন কংগ্রেসের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমা রাও নাকি পূজায় ব্যস্ত ছিলেন। মসজিদ ভাঙা শেষ হলে তিনি পূজা শেষ করেন। ভারতের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার কুলদীপ নায়ারের আত্মজীবনী 'বিয়ন্ড দ্য লাইনস-এ তিনি এ কথা উল্লেখ করেছেন। গ্রন্থটি শিগ্গিরই প্রকাশিক হবে। খবর : জিনিউজ।
বাবরি মসজিদ ধ্বংসে তার বিরুদ্ধে পরোক্ষ মদতের অভিযোগ উঠেছে আগেও। কুলদীপ নায়ারের বইটিতে বলা হয়েছে, আদালতে অযোধ্যার বিতর্কিত রাম জন্মভূমি এলাকার বাইরে প্রতীকী করসেবার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও হিন্দু মৌলবাদী করসেবকরা যখন পুলিশি বেষ্টনী ভেঙে বাবরি মসজিদ ধ্বংস শুরু করে তখনই নয়াদিলি্লতে খবর পান নরসিমা রাও। উন্মত্ত করসেবকদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না মঞ্চে থাকা লালকৃষ্ণ আদভানি-মুরলি মনোহর যোশি_ সে ব্যাপারে অবহিত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। কিন্তু উত্তর প্রদেশের বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিংয়ের কথায় নির্ভর করে নিশ্চিন্ত ছিলেন নরসিমা রাও। তিনি কোনো হস্তক্ষেপ করেননি। মসজিদ ধ্বংসের পর নিয়মরক্ষার খাতিরে কল্যাণ সরকারকে বরখাস্ত করেন তিনি। কুলদীপ নায়ারের অভিযোগ, ৬ ডিসেম্বর দুপুরে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস শুরু হওয়ার খবর পেয়েই নিজের বাসভবনে পুজোয় বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ৫ ঘণ্টা পর বিকেলে প্রথম মোগল সম্রাটের সেনাপতি মীর বাকির তৈরি সৌধের তৃতীয় গম্বুজটির পতনের পরই পুজো ছেড়ে উঠেছিলেন তিনি। প্রয়াত সোশ্যালিস্ট নেতা মধু লিমায়েকে উদ্ধৃত করে কুলদীপ লিখেছেন, পুজো চলাকালীন বারবারই প্রধানমন্ত্রীর কানে কানে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানিয়ে যাচ্ছিলেন তার শিষ্যরা। তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর সাফাই দিতে গিয়ে নরসিমা রাও ও তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এস বি চৌহান জানিয়েছিলেন, সরজু-তীরের ঐতিহাসিক সৌধ রক্ষার জন্য দিলি্ল থেকে বিমানযোগে সিআরপিএফের বিশেষ দল পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছিল কেন্দ্র কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে নাকি এ পরিকল্পনা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। বাবরি মসজিদ রক্ষায় নরসিমা রাও সরকারের এ 'চেষ্টা'র কথা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বিয়ন্ড দ্য লাইনস'-এর রাও-জমানা সংক্রান্ত পরিচ্ছেদে।
তবে কুলদীপ নায়ারের বইয়ে উলি্লখিত অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে বর্ণনা করেছেন নরসিমা রাওয়ের ছেলে পি ভি রঙ্গা রাও। তবে কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ খ নের কোনো চেষ্টাই করা হয়নি। সম্ভবত সেটা হবেও না। কারণ, বছর কয়েক আগে উত্তর প্রদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্য নরসিমা রাওকে দায়ী করে স্বয়ং রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, নেহরু-গান্ধী পরিবারের কোনো সদস্য প্রধানমন্ত্রী পদে থাকলে এ ঘটনা ঘটতো না।
বাবরি মসজিদ ধ্বংসে নরসীমা সম্পৃক্ত!
দাঙ্গার পড়েই মুখ থুবড়ে পড়েছিল ধর্মনগরী অযোধ্যার অর্থনীতি। অশান্তির আশঙ্কায় দিনে দিনে কমেছে পর্যটকের সংখ্যা। তুলসীর মালা বা সাদা পাথরের মূর্তি কিনতে আজ আর ভিড় চোখে পড়ে না দোকানের সামনে। স্বচ্ছল থেকে ক্রমশ সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন এইসব শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন। এক সময় পর্যটকরা আসতেন। মন্দির নগরীতে তাঁরা থাকতেন, ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করতেন দেব-দেবীর মূর্তি, তুলসী বা রূদ্রাক্ষের মালা। কিন্তু ৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের পর সবই অতীত। এখন আর পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় নেই অযোধ্যা।
তুলসীর মালা আজও অবশ্য বিক্রি হয় অযোধ্যা শহরের পথের ধারের দোকানে। কিন্তু আগের তুলনায় চাহিদা অনেকটাই কম। তাই ব্যবসায়িদের মধ্যে অনেককেই গ্রাস করেছে হতাশা। এঁরা প্রত্যাকেই চান, এগিয়ে আসুক সরকার।
এই শিল্পীদের বাঁচাতে, অযোধ্যার শিল্পগুলিকে বাঁচাতে প্রশাসনের অবশ্য কোনও হেলদোল নেই। এক সময় এই শিল্পীরা মনে করতেন, রাম মন্দির তৈরি হলে তাঁদের অবস্থার উন্নতি হবে। কিন্তু বাবরি-কাণ্ডের বিশ বছর পরে রাম মন্দির বিশ বাঁও জলে। মানুষ বুঝতে পেরেছেন, আসল রাজনীতিটা ঠিক কোথায়। রাজনৈতিক ইস্যুই যে প্রভাব ফেলেছে তাঁদের জীবন এবং জীবিকার ওপর।
ধর্মের জিগির তুলে যারা দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে চেয়েছিল, অযোধ্যা তাদের সফল হতে দেয়নি। মন্দির-মসজিদের শহরে হিন্দু-মুসলিম উভয়েই পরস্পর পরস্পরের ওপর নির্ভরশীলতায় বেঁচে রয়েছেন। ধর্মনগরী অযোধ্যা। পর্যটক, তীর্থযাত্রী থেকে শুরু করে সাধু-সন্ত, পুজারী-পুরোহিতদের নিত্য আসা-যাওয়া। এসবের জেরে জমে উঠেছে ব্যবসাও। দীর্ঘদিন ধরেই অযোধ্যায় মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ খড়ম তৈরি করে আসছেন। মালা গাঁথেন মন্দিরের জন্য। অযোধ্যায় এ সবে কোনও বাধা নেই। সমস্যা তৈরি করে শুধু বাইরের লোকেরা। রাজনীতির কারবারিরা। এখানকার মানুষ আর মন্দির-মসজিদের নামে ধর্মের জিগির তোলার পক্ষে নন। অযোধ্যায় অশান্তির আগুন জ্বললে মানুষ আর এ মুখো হবেন না। পর্যটকরা না এলে ব্যবসাও যে মার খাবে একথা বিলক্ষণ জানেন এখানকার সাধারণ অধিবাসীরা।
শুধু অযোধ্যায় নয়, ১৯৯২-এ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রভাব পড়ে গোটা ভারতে। ধাক্কা খায় দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তি। আজ কুড়ি বছর পর প্রশ্ন উঠছে, শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যেই কি সেদিন অযোধ্যায় ধর্মের জিগির তুলেছিল বিজেপি ? উত্তর খুঁজছেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষই।
দুদশক পরেও বন্ধ হয়নি কমুণ্ডলের রাজনীতি। গো-বলয়ে তাদের পৃথক অস্তিত্বের লড়াইয়ে বিজেপি এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ রাম মন্দির ইস্যুকে এখনও জাগিয়ে রাখতে চাইছে। যদিও, তারা স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দুদশক আগের আন্দোলন বর্তমানে অনেকটাই প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। রাম মন্দির একসময় ছিল বিজেপির অন্যতম প্রধান ইস্যু। ধর্মের ভিত্তিতে ভোটারদের মেরুকরণ ঘটানোর উদ্দেশ্যও অনেকটাই সফল হয়েছিল। মসজিদ ভেঙে মন্দির নির্মাণের উন্মাদনা উস্কে দিয়ে একসময় যে তারা রাজনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছিল, তা মেনে নিচ্ছে বিজেপি।
এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখনউ বেঞ্চের রায়ে বর্তমানে তিনভাগে বিভক্ত অযোধ্যার বিতর্কিত জমি। যদিও, এই রায়ে সন্তুষ্ট নয় বিজেপি, ভিএইচপি। তারা চাইছে সর্বোচ্চ আদালতে যত দ্রুত সম্ভব চূড়ান্ত মীমাংসা।
আর, মন্দির-মসজিদ বিতর্কের মধ্যে না গিয়ে অযোধ্যার সাধারণ মানুষ চাইছেন শান্তি। তাঁরা আর চাইছেন না স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের হাতের পুতুল হতে।
গত ২০ বছর ধরে নিরাপত্তার চাদরে মোড়া ধর্মনগরী অযোধ্যা। বিতর্কিত জমি থেকে অনেক দূরেও ব্যারিকেডের বাধা। সমস্যায় তীর্থযাত্রী থেকে শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা। দুদশক ধরে নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনি দেখতে দেখতে হাঁফিয়ে উঠেছেন তাঁরা। মন্দির-মসজিদ নয়। চাই একটু শান্তিতে বাঁচার সুযোগ। উন্নয়ন। কর্মসংস্থান। বলছে নতুন শতকের অযোধ্যা। কেন অযোধ্যায় ভাল কলেজ নেই ? কেন যেতে হবে লখনউ ? প্রশ্ন তুলছে অযোধ্যার যুবসমাজ।
অযোধ্যা বদলে যাচ্ছে। কিন্তু, রাষ্ট্র যাঁরা চালান, তাঁদের মনে ভয় দূর হয়নি। হঠাত্ করে যদি জ্বলে ওঠে অশান্তির আগুন ? তাই সর্বত্র নিরাপত্তার কড়াকড়ি। ভারী বুটের শব্দ। বিতর্কিত জমির চারপাশে পাঁচিল। অসংখ্য নিরাপত্তারক্ষী। জমি থেকে৫ কিলোমিটার পর্যন্ত ঘোষিত হয়েছে ইয়োলো জোন। এই এলাকায় ঢুকতে গেলে পেরোতে হবে ব্যারিকেডের বাধা।
ধর্মের জিগির তুলে সেদিন যাঁরা ধ্বংসের খেলায় মেতেছিলেন সময়ের সঙ্গে তাঁদের অনেকেই মত বদলেছেন । বিতর্কিত জমিও আদালতের বিচারধীন। তবু, আজও চলছে মন্দিরের জন্য পাথর খোদাইয়ের কাজ। কিন্তু কেন? সবই রাজনীতি,বলছে অযোধ্যা। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের আগে ১৯৯০ সালে শিলান্যাস হয়েছিল রামমন্দিরের। সেসময় দেশজুড়ে প্রচারে নেমেছিল বিজেপি ও ভিএইচপি। রামমন্দির সমর্থকদের প্রত্যেককে একটি করে ইট সঙ্গে আনার আহ্বান জানানো হয়। সারাদেশ থেকে রামমন্দির সমর্থকদের বয়ে আনা ইট স্তুপাকারে জমতে থাকে বিতর্কিত জমির আশেপাশে। শুধু ইট নয়, মন্দির তৈরির জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে রাজস্থান থেকে আনা হয় পাথর। আসেন খোদাই শিল্পীরাও। মন্দিরের জন্য তৈরি হয় অসংখ্য স্তম্ভ। সেই স্তম্ভের গায়ে এখন শুধুই শ্যাওলার পুরু আস্তরণ।
অযোধ্যায় বহু শতাব্দী ধরে পাশাপাশি শান্তিতে বাস করেছিল দুই সম্প্রদায়। কোনওরকম বিরোধ ছাড়াই। সেই কালো শুক্রবারেও সম্প্রীতির বন্ধন ছিল অটুট। তাহলে কী করে রাতারাতি বদলে গেল সেই শান্তির পরিবেশ? অযোধ্যাবাসীর ধারণা, এর পিছনে কাজ করেছিল গভীর কোনও ষড়যন্ত্র। তবে কুড়ি বছর আগের সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি আর নেই। ধীরে ধীরে ফিরে এসেছে শান্তি। ফিরেছে সম্প্রীতি। মসজিদের দাবি ছাড়েননি মুসলিমরা। হিন্দুরাও অনড় তাঁদের মন্দিদের দাবিতে। তবে এই সমস্যার এখন আইনি সমাধানই চায় দুই সম্প্রদায়। আরেকটা কালো শুক্রবার চান না অযোধ্যাবাসী।
অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বিশ বছর পালন
কাল রাজ্যে সংহতি-সম্প্রীতি দিবস
নিজস্ব প্রতিনিধি
কলকাতা, ৪ঠা ডিসেম্বর— সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তির ক্রমবর্ধমান তৎপরতা সম্পর্কে সজাগ থেকে ধারাবাহিকভাবে এর বিরুদ্ধে প্রচার আহ্বান জানালো বামফ্রন্ট। উল্লেখ্য, আগামী ৬ই ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২০বছর উপলক্ষে রাজ্যের সর্বত্র জাতীয় সংহতি, ঐক্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দিবস হিসাবে পালন করার কর্মসূচী ইতোমধ্যেই নিয়েছে বামফ্রন্ট। ওইদিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শতবার্ষিকী হলে বিকাল ৫টায় এই উপলক্ষে কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে। কনভেনশনে বক্তব্য রাখবেন জননেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যসহ বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ। কলকাতায় কেন্দ্রীয় সভা ছাড়াও জেলায় জেলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির লক্ষ্যে ওইদিন সভা, কনভেনশন সংগঠিত করা হবে।
মঙ্গলবার রাজ্য বামফ্রন্টের বৈঠক শেষে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান এবং সি পি আই (এম) রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু এই আহ্বান জানিয়ে বলেন, ২০বছর আগে ৬ই ডিসেম্বর তারিখেই বাবরি মসজিদ ধ্বংসকে কেন্দ্র করে গোটা দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হয়েছিল। প্রতীকী বলেই এই দিনটিতে আমরা জাতীয় সংহতি, ঐক্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দিবস হিসাবে পালন করছি। কিন্তু শুধু ৬ই ডিসেম্বর এই দিবস পালন করেই এই প্রচার থেমে থাকবে না। কারণ সারা দেশেই সাম্প্রদায়িকতার বিপদ ক্রমশ বাড়ছে। এমনকি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তেই সাম্প্রদায়িকীকরণের প্রক্রিয়া চলছে। যদি আমরা সিরিয়া, লেবানন, জর্ডন, তুরস্কসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের দিকে নজর রাখি, তাহলে দেখবো কিভাবে মানুষকে বিভাজনের জন্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মৌলবাদীদের ব্যবহার করছে। ভারতেও সাম্রাজ্যবাদীদের এই চক্রান্ত অব্যাহত রয়েছে। সেকারণেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক শক্তির কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিমান বসু এরাজ্যে নতুন করে মৌলবাদী শক্তির তৎপরতা বৃদ্ধি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমরা খবর পাচ্ছি, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় উভয় সম্প্রদায়ের মৌলবাদীরাই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন জায়গায় তাদের মিটিং হচ্ছে, সাম্প্রদায়িক শক্তি সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। উভয় সম্প্রদায়ের মৌলবাদীদের এই তৎপরতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা প্রয়োজন। সেজন্যই ধারাবাহিকভাবে এই প্রচার চালিয়ে যেতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে ঐতিহ্য আছে তাকে অক্ষুন্ন রাখতে হবে। একে ম্লান করার সমস্ত রকম ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে হবে। সেজন্যেই ধারাবাহিক প্রচার প্রয়োজন।
এদিন বামফ্রন্টের বৈঠকে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বিমান বসু এদিন বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচন কখন হবে তা এখনো নির্দিষ্ট হয়নি। তবে যখনই হোক, আমরা সার্বিক নির্বাচনী প্রস্তুতি অব্যাহত রাখতে জেলা বামফ্রন্টগুলিকে বলেছি। ইতোমধ্যেই এবিষয়ে জেলা বামফ্রন্টগুলির বৈঠক হয়েছে। বুথ সংগঠন গড়ে তোলা এবং প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও সেরে ফেলার জন্য আমরা বলেছি, যাতে মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে পঞ্চায়েত নির্বাচন হলেও আমাদের পক্ষ থেকে নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি থাকে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এলাকায় পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা আছে এবং তুলনামূলকভাবে কম বয়স্কদেরই মনোনীত করতে বলা হয়েছে। জেলাগুলিতে বামফ্রন্টের শরিক দলগুলির মধ্যে প্রয়োজনে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করার কথা বলা হয়েছে। এদিন বিমান বসু পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় সরকারী মঞ্চ থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার চালানোর তীব্র সমালোচনাও করেন। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী সরকারী খরচে নির্বাচনের প্রচার চালাচ্ছেন। আদিবাসী উন্নয়নের ৭০লক্ষ টাকা খরচ করে এই সব প্রচার হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এদিন বিমান বসু বলেন, এ নিয়ে অষ্টমবার রাজ্যে পঞ্চায়েত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। জেলা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকেই এতদিন এই নির্বাচনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলি করা হয়েছে। এবারেই একইভাবে করার কথা রাজ্য বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত ভোটার তালিকার খসড়া আগামী ৫ই জানুয়ারি প্রকাশ করা হবে। তারপর সংশোধন, সংযোজন বা সংবর্জনের জন্য যে কাজ চলবে, তাতে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে মনোনিবেশ করার জন্য বামফ্রন্টকর্মীদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন বিমান বসু।
কৃষক আত্মহত্যা নিয়ে রাজ্যের এক মন্ত্রীর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এক প্রশ্নের উত্তরে বিমান বসু বলেন, আত্মহত্যায় মৃত কৃষক কী করে প্রমাণ করবেন যে তিনি কৃষক ছিলেন এবং ঋণের জ্বালাতেই আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন? এ তো উদ্ভট মন্তব্য করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী! সরকারেরই দায়িত্ব হলো কৃষকরা আত্মহত্যা করেছে কিনা এবং কেন করতে বাধ্য হলো তার যথাযথ তদন্ত করা। সরকার যদি সাহায্য চায় তবে আমরা নাম ঠিকানা ও অন্যান্য বিবরণসহ তালিকা দিতে পারি। গত বছরের ১২ই অক্টোবর থেকে এবছরের ২৮শে নভেম্বর পর্যন্ত আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন এমন ৭৪জন কৃষকের তালিকা আমাদের কাছে রয়েছে। সরকারের উচিত এই ধরনের তির্যক মন্তব্য না করে নিহত কৃষকদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করা।
মোদীকে 'না' করুন, ওবামার কাছে
মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের দাবি
ওয়াশিংটন, ৫ই ডিসেম্বর — মোদীকে 'না' করুন। কোনও পরিস্থিতিতেই গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ভিসা না দেওয়ার 'শোভনসুন্দর নীতি' ওবামা প্রশাসন যাতে পরিবর্তন না করে, তার জন্য প্রকাশ্যে আরজি জানালেন মার্কিন কংগ্রেসের ঝানু প্রতিনিধিরা। কারণ মোদীর বিরুদ্ধে রয়েছে 'মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের' গুরুতর অভিযোগ।'মুখ্যমন্ত্রী মোদী ও তাঁর সরকারের মদতে হয়েছে দাঙ্গা (আসলে একতরফা গণহত্যা), ন্যায়বিচারের অবরোধ, বেপরোয়া আক্রমণ (২০০২), যা আসলে মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন — মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে যার নিন্দা করে আসছে।' বলেছেন মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি জো পিটস। ক্যাপিটল হিলে এক সাংবাদিক বৈঠকে। তাঁর সঙ্গে তখন মার্কিন কংগ্রেসের আরও কয়েকজন প্রতিনিধি এবং গুজরাট গণহত্যার শিকার হওয়া পরিবারের সদস্যরা। আরও ২৪জন প্রতিনিধির সঙ্গে পিটসও এনিয়ে নভেম্বরের ২৯তারিখ চিঠি লিখেছেন মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনকে। তাতে তাঁরা বলেছেন, ভয়াবহ দাঙ্গা থেকে নিজের ভাবমূর্তি ফেরাতে এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনা নিয়ে এখন মার্কিনমুলুকে জনসংযোগ, প্রচারাভিযানে আসতে চাইছেন মোদী। এই অবস্থায় তাঁকে ভিসার অনুমোদন না দেওয়ার জন্য হিলারির কাছে অনুরোধ করেছেন তাঁরা।
চলতি মাসের ১৩ ও ১৭তারিখ গুজরাটে বিধানসভার নির্বাচন। তার আগে মোদীর গণহত্যার শিকার আমেদাবাদের কংগ্রেস সাংসদ আহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া ওয়াশিংটনে বলেছেন, মোদীর জমানায় কখনোই তাঁরা পাবেন না ন্যায়বিচার। 'যদি মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে যান, তবে আমার মতোই শয়ে শয়ে মানুষের ন্যায়বিচারের আশা শেষ হয়ে যাবে। আমি আশা করি, প্রার্থনা করি তা যেন কখনও না হয়।' সঙ্গে তিনি বলেছেন, 'তাঁকে অবাঞ্ছিত বলে অস্বীকার করার (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের) অবস্থান আমাদের কাছে ভীষণই গুরুত্বপূর্ণ, যা বাঁচিয়ে রেখেছে আমার, আমাদের সব আশাকে।'
'অতীতে বুশ প্রশাসন সঠিকভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসতে চেয়ে মোদীর ভিসার আবেদন অস্বীকার করেছে। আক্রমণে মদত দেওয়াই ছিল কারন। বর্তমান প্রশাসন, রাষ্ট্রপতি ওবামা, বিদেশসচিব ক্লিন্টনের কাছে আমাদের আবেদন, সেই আক্রমণের শিকার হওয়া পরিবারের পাশে দাঁড়ান। শোভনসুন্দর নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করুন।' বলেছেন পিটস। 'যতদিন ন্যায়বিচার হচ্ছে, ততদিন এখানে (আমেরিকায়) এসে অসত্য প্রচার এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে অর্থ সংগ্রহ করার অনুমতি না দেওয়ার জন্য আমরা ওবামা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছি।' সাংবাদিক বৈঠকে এছাড়াও ছিলেন মার্কিন কংগ্রেসের দাপুটে প্রতিনিধি ফ্র্যাঙ্ক উলফ, কিথ এলিসন। কিথ যেমন বলেছেন, 'উনি (মোদী) এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসতে চাইছেন। প্রশ্ন যখন মানবাধিকার লঙ্ঘন, আমাদের তখন দাঁড়াতে হবে বিশ্বাসযোগ্যতার উপর। আর এক্ষেত্রে আমাদের দাঁড়াতেই হবে। অস্বীকার করতে হবে মোদীর ভিসার আবেদন।
জাগতে রহো
অনিলকুমার সিংহ
বিশিষ্ট হিন্দি কবি এবং সামাজিক কর্মকর্তা
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২০বছর পূর্ণ হতে চলেছে আগামী ৬ই ডিসেম্বর। এই দুই দশকে বি জে পি, রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ এবং ওদের সহযোগী সংগঠনগুলি বাবরি মসজিদ ভাঙার দিনটিকে 'শৌর্য দিবস' হিসেবে উদ্যাপন করে আসছে। মনে হয় এই বছরেও 'শৌর্য দিবসে'র জয়ধ্বনিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে জাতীয় দুঃখবহ স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেবার কালো দিনটি নিজের কাঁপা কাঁপা ম্রিয়মাণ আওয়াজের সাথেই চাপা পড়ে যাবে। এতোগুলো বছর ধরে তাই তো হয়ে এসেছে। ব্যাপারটা তাতেই যদি থেমে থাকতো তাও তো মন্দের ভালো ছিল। কিন্তু অযোধ্যা-ফৈজাবাদে সাম্প্রতিক ঘটনা মানুষের মধ্যে এই আশঙ্কাই প্রবলতর করেছে যে, এই বছরের 'শৌর্য দিবস' শুধু আনুষ্ঠানিকতাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। সঙ্ঘ পরিবার আর তার অনুগামী সংগঠনগুলির এই প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে। ফৈজাবাদ শহর ও গ্রামীণ অঞ্চল এলাকায় গত ২৪শে অক্টোবরে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ আর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর বিনা প্ররোচনায় হামলাকে এই প্রস্তুতির মহড়া বলা যায়। গুজরাটে গোধরা কাণ্ড ও পরবর্তীকালে গুজরাতে সরকার এবং প্রশাসনের যৌথ হামলায় বর্বর নরসংহারের দগদগে ঘা এখনো মিলিয়ে যায়নি। এরাই এখন অযোধ্যা-ফৈজবাদে 'উত্তর প্রদেশ গুজরাট হবে, ফৈজাবাদ পথ দেখাবে'-র মতো আওয়াজ জোরালো করতে শুরু করেছে। ফৈজাবাদ জেলায় দশেরার সময়ে ২৪ ও ২৬শে অক্টোবরের অশান্তি ও আগুন লাগানোর ঘটনায় প্রশাসনিক আমলাদের অক্ষমতা (অথবা দু'পক্ষের একত্র ষড়যন্ত্র) এবং রাজ্য সরকারের সংবেদনশীলতার অভাব জনগণের মনে গুজরাটের স্মৃতিকে তাজা করে দেয়। পাঠকের নিশ্চয়ই মনে থাকবে যে ২০০২সালের গুজরাটের হিংসাত্মক ঘটনা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দশম বর্ষপূর্তিতে ঘটেছিল। এটাও স্মরণে আছে যে, অযোধ্যা-ফৈজাবাদ অতিক্রম করে যাওয়া সবরমতী এক্সপ্রেসে গোধরাতে তথাকথিত হামলা ও অগ্নিসংযোগের 'প্রতিহিংসা' নিতে গুজরাট গণহত্যা ঘটানো হয়েছিল। তবে বোধহয় অনেকেই জানেন না (কারণ জাতীয় সংবাদমাধ্যম এই তথ্য চেপে গিয়েছিল। শুধুমাত্র ফৈজাবাদে প্রকাশিত দৈনিক জনমোর্চা চিত্রসহ এই খবর প্রকাশ করেছিল) যে ২০০২-তে রাম জন্মভূমি আন্দোলনের পুরোধা মহন্ত রামচন্দ্র দাস পরমহংসের আহ্বানে অযোধ্যায় অনুষ্ঠিত শিলান্যাস অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসা করসেবকরা যাওয়ার সময় অযোধ্যাতেই ট্রেনের যাত্রী সংখ্যালঘু সম্প্রদায় লোকেদের মারধর, ছুরিকাহত করার কাজ শুরু করে দিয়েছিল। মহন্ত রামচন্দ্র পরমহংস আয়োজিত শিলান্যাস কার্যক্রমের তামাশা পুরোপুরি ফ্লপ হওয়ার হতাশায় করসেবকরা সবরমতী ট্রেনে ভালোরকম অশান্তি করেছিল। তারপর তথাকথিত আগুন লাগানোর মতো ঘটনা ঘটেছিল। এরপর গুরাজটে যা শুরু হয় তা ১৯৪৭সালে দেশভাগ হওয়ার পর থেকে স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গণহত্যার অধ্যায়।
হিন্দু ধর্মশাস্ত্র এবং দর্শনের ঐতিহ্যগত পরম্পরায় 'শিলান্যাস'-র মতো কোনো ঘটনা, প্রবাদ বা কর্মকাণ্ডের কোনো উদাহরণ পাওয়া যায় না। আজ আমরা অনায়াসে মেনে নিতে পারি যে, মহন্ত পরমহংস কর্তৃক মন্দির নির্মাণের জন্য অনুষ্ঠিত শিলান্যাস কার্যক্রম বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দশম বর্ষ পূর্তি দিবসে হিন্দুদের ক্ষমতা দেখানোর প্রয়াসকে মহিমান্বিত করার জন্য আয়োজন করা হয়েছিল। এর সঙ্গে হিন্দুশাস্ত্র ও এমনকি হিন্দু ধর্মের ক্রিয়াকলাপের কোনও যোগসূত্র ছিল না। মহন্ত পরমহংস কর্তৃক তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর কার্যালয়ে নিযুক্ত আই এ এস অফিসার শত্রুঘ্ন সিংহকে দান করা শিলাটি এখন কোথায় আছে, মানুষের সম্ভবত সেটাও মনে নেই। ওঁকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে শিলাদানের জন্যেই ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কারণ, ফৈজাবাদের তৎকালীন কমিশনার যাকে শিলাদান করার ছিল, তিনি শত্রুঘ্ন সিংহের জাতি থেকে নিম্নবর্গের ছিলেন। তাই জন্য মহন্ত তাঁকে শিলাদানের যোগ্য মানতে রাজি ছিলেন না। দিল্লি থেকে এসে শত্রুঘ্ন সিংহ — মহন্ত পরমহংসের থেকে শিলা নিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু সেই পাথর তো প্লেনে করে দিল্লি যেতে পারে না, তাই অতঃপর উনি অযোধ্যার বড়াস্থান মন্দিরের একটা ঘরে পাথরটা রেখে দেন। ওটা কয়েক সপ্তাহ ওখানেই পড়েছিল আর বড়াস্থান মন্দিরের পুরোহিতের আশঙ্কা হচ্ছিলো যে, তাঁর মন্দির নিয়ে যেন বিতর্ক না দানা বাঁধে! সেই সময়কার খবরের কাগজের ফাইল খুললে দেখতে পাওয়া যাবে কিভাবে অযোধ্যার কিছু মহন্ত জেলা প্রশাসনের দ্বারা দানস্বরূপ দেওয়া শিলাকে বড়াস্থান মন্দিরের থেকে সেই সময়ে না হটিয়ে দেওয়ায় তাকে মন্দির সংলগ্ন বয়ে যাওয়া নর্দমায় ফেলে দেবার হুমকি দিয়েছিলন। জেলা প্রশাসন তাড়াহুড়ো করে পাথরটা ওখান থেকে তুলে এনে জেলার ট্রেজারিতে জমা করে দিয়েছিল। অযোধ্যায় মন্দির নির্মাণের জন্য যে 'মহতি আন্দোলন'র দানস্বরূপ ওই শিলা দেওয়া হয়েছিল তা আজও ট্রেজারিতেই জমা হয়ে আছে, নাকি সরযূর তীরে গুপ্তার ঘাটে কোনো ধোপা এখন তার ওপর কাপড় কাচছে সে বিষয়ে কেউ-ই কিছু জানে না। কথিত আছে 'ভগবান' রাম এই গুপ্তার ঘাটেই জলসমাধি নিয়েছিলেন। ১৯৯২সালের ৬ই ডিসেম্বর নিজের তথাকথিত ভক্তদের দ্বারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রার্থনা গৃহকে ধ্বংস করার লজ্জাজনক ঘটনার আন্দাজ তো ওনার নিশ্চয় হয়েই গিয়েছিল। যতই হোক উনি তো 'ঈশ্বর' ছিলেন।
এতো কথা এই জন্য বললাম, কেন না এবারের ৬ই ডিসেম্বর হিন্দুত্ববাদী (হিন্দুরা নয়)-দের ক্ষমতার বীরত্ব প্রদর্শনের দিবসের বিংশতিতম পূর্তি হতে যাচ্ছে। ওরা চুপ করে থাকার পাত্র নয়। কোনো না কোনো ঘটনা ঘটানোর জন্য কোনো যুক্তির দরকার নেই ওদের। শিলাদানের মতো কার্যক্রম এই ধরনের মূর্খামির একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এটা মূর্খামি বা ধূর্ততা — ব্যাস এইটুকুই বোঝার দরকার। সাধারণ মানুষ প্রায়শই এদের ফাঁদে পা দেয়। যেমন ২০০২সালে শিলাদান কার্যক্রমের সময় হয়েছিল।
বাবরি মসজিদ ধ্বংস করার পর এই কুড়ি বছরে সরযূ নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। ৬ই ডিসেম্বরের কলঙ্কজনক ঘটনা সত্ত্বেও আমরা বলতে পারি যে, ভারতীয় মধ্যবিত্তের মানসিকতা পুরোপুরি সাম্প্রদায়িক হয়ে যায়নি। হিন্দিভাষী অঞ্চলে গৈরিক রাজনীতির প্রভাব ক্ষুণ্ণ করতে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণী এক বড় ভূমিকা পালন করেছিল। মণ্ডল রাজনীতি সাম্প্রদায়িকতার তীব্রতাকে লাগাম পরানোর কাজ করেছিল।
অন্যদিকে জাতীয় রাজনীতিতে বামপন্থীদের প্রভাবশালী উপস্থিতি ছিল। সংসদেও বামপন্থীদের যথেষ্ট শক্তি ছিল। ওই সময় থেকে আজ পর্যন্ত বি জে পি তথা সঙ্ঘ পরিবারের সাম্প্রদায়িক শক্তির মোকাবিলায় কমিউনিস্ট পার্টিগুলির শক্তিশালী ভূমিকা রয়েছে। তবে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ক্ষেত্রকে দুর্বল করেছে কংগ্রেস। মনমোহন সিং সরকার যেখানে একদিকে আমেরিকার সাথে পরমাণু সমঝোতা করে বামপন্থীদের পৃথক করার চেষ্টা করেছেন অন্যদিকে সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার বিশ্বব্যাপী যুদ্ধে দেশকে আমেরিকার অনুগত দাসে পরিণত করেছেন। যখন বাবরি মসজিদ ভাঙা হলো, সেই সময়ে সংবাদ মাধ্যমের একটা ভালোরকম অংশ ধর্মনিরপেক্ষ ছিল। তাই ৬ই ডিসেম্বর মসজিদ ভাঙার সময় করসেবকদের হাতে সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের আক্রান্ত হওয়া ছিল তাঁদের ধর্মনিরপেক্ষতার শাস্তি।
এই বিশ বছরে উত্তর ভারতে ক্ষীয়মাণ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও বি জে পি'র রাজনীতি দেশের বেশ কিছু রাজ্যে নিজের উপস্থিতি হাজির করেছে। গুজরাটের 'প্রয়োগ' ওদের মনোবল বেশ কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছে। ওখানকার মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উন্নয়নের কারিগর প্রমাণ করতে শুধু কর্পোরেট জগৎ আর ওদের তল্পিবাহক মিডিয়ার বৃহৎ অংশ একচেটিয়া প্রচার করছে। প্রচারের মাহাত্মে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটা বড় অংশ নরেন্দ্র মোদীর 'ছবি' দেখে অভিভূত হয়েছে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরার প্রয়াস করছে। গত কুড়ি বছরে আমরা এই প্রথম অযোধ্যা-ফৈজাবাদে লাগানো হোর্ডিং ও পোস্টারে মোদীর ছবি দেখলাম। তাই ফৈজাবাদের সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক অশান্তি নরেন্দ্র মোদীর গুজরাট কাণ্ডের প্রতিধ্বনি করার চেষ্টা বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২৪শে অক্টোবরে যখন ফৈজাবাদে অগ্নিসংযোগ, অশান্তি ছড়ানো হচ্ছে, ঠিক ওই সময়ে নাগপুরে সঙ্ঘের নেতা মোহন ভাগবত অযোধ্যায় মন্দির তৈরির আন্দোলনকে তীব্র করার কথা বলেছিলেন।
বি জে পি'র কাছে এই মুহূর্তে কোনো আর্থিক রাজনৈতিক নীতির অ্যাাজেন্ডা নেই। আর্থিক প্রশ্নে কংগ্রেসের সাথে ওদের কোনো বিরোধিতা নেই। রাজনৈতিক বিচক্ষণতার অভাব আর নীতিগত দেউলিয়াপনার কারণে জন্য ওদের কাছে মন্দির আন্দোলনের মতো সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করার পুরনো অ্যাজেন্ডায় ফেরত আসা ছাড়া উপায় নেই। অন্যদিকে, সংখ্যাগরিষ্ঠ সাম্প্রদায়িকতাকে মদত দিতে গিয়ে কংগ্রেসও অতি চালাকি করে। মন্দির ইস্যু যাতে বি জে পি'র হাতে চলে না যায় তাই নরম হিন্দুত্বের লাইনেই থাকাই পছন্দ কংগ্রেসের। এমনিতেই বাবরি মসজিদে মূর্তি রাখা থেকে তার তালা খোলানো — সবই কংগ্রেসের শাসনেই হয়েছিল। ১৯৯০-এর পর থেকে এখন পর্যন্ত উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টির মতো আঞ্চলিক দলের সরকারই হয়েছে। বি জে পি'র মন্দির আন্দোলনের চরম সময়ে উত্তর প্রদেশে মুসলিম-যাদব জোট সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের গতিকে থামিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু আজ সেই ঐক্যে ফাটল দেখা দিয়েছে। উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী পার্টির আট মাসের রাজত্বে ৮টি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা ঘটে গেছে। এখন মানুষ খোলাখুলি বলছেন সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের সব থেকে বেশি লাভ যে দুই রাজনৈতিক দলের (সমাজবাদী পার্টি আর বি জে পি) পাওয়া উচিত ছিল, তারাই একজোট হয়ে উত্তর প্রদেশে সাম্প্রদায়িক অশান্তি করছে। উত্তর প্রদেশে এবারই প্রথম সমাজবাদী পার্টি নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়েছে। রাজনৈতিক দল এবং ভোট বিশেষজ্ঞদের হিসেব মুসলিম ভোট একতরফা সমাজবাদী পার্টির পক্ষে যাওয়ার ফলেই এই বিপুল জয় এসেছে। কিন্তু এক বছর হওয়ার আগেই সমাজবাদী পার্টির সরকার মুসলিমদের পাশ থেকে সরে গেছে। সন্ত্রাসবাদের নামে হাজার হাজার মুসলিম যুবক জেলে মিথ্যা মোকদ্দমায় আটক রয়েছেন। সমাজবাদী পার্টি মিথ্যে মোকদ্দমাগুলি খারিজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অথচ তা কার্যকরী করেনি। উত্তর প্রদেশে যে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা সম্পর্কে বহুজন সমাজ পার্টির ভূমিকাও অবাক করার মতো। তারা এ বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়ার বদলে রাজ্যে যে অপরাধের ঘটনা বাড়ছে, তা নিয়েই বেশি চিন্তিত। যদিও মায়াবতীর সরকারের সময়ে রাজ্যে কেবল অপরাধই বাড়েনি, বরং এই দল দুষ্কৃতী এবং সমাজবিরোধীদের ভোটে দেদার টিকিটও দিয়েছিল। দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের মেডেল তো এই সরকারে কাছে প্রথম থেকেই ছিল। সম্ভবত মুসলিমরা সমাজবাদী পার্টিকে ভোট দিয়েছেন, এমন ধারনা থেকেই বহুজন সমাজ পার্টি এমন আচরণ করছে। তথাকথিত মুখ্য ধারার সব রাজনৈতিক দলই মুসলিমদের দেশের নাগরিকের স্থান থেকে নামিয়ে 'ভোট ব্যাঙ্কে' পরিণত করেছে।
সংসদ এবং বিধানসভার ভোটে টিকিট কেনাবেচা থেকে শুরু করে ভোটার কেনা পর্যন্ত সমস্ত কাজ উত্তর প্রদেশে খোলাখুলি হয়ে থাকে। সাম্প্রতিককালে উত্তর প্রদেশে সঙ্ঘ পরিবারের টার্গেট ছিলো দলিত এবং পশ্চাৎপদ অংশ। এই অংশকে সাম্প্রদায়িক বানাবার কাজ তারা করছিল। অযোধ্যার করসেবকপুরমে বাবাসাহেব আম্বেদকরের নাম করে দলিতদের মধ্যকালের স্বাধীনতা সংগ্রামী বলা হচ্ছিল। এর প্রভাব এখন দেখা দিতে শুরু করেছে। উত্তর প্রদেশে সম্প্রতি যে সাম্প্রদায়িক হিংসা হলো তার মধ্যে দলিত এবং পশ্চাৎপদ অংশের মুখ্য ভূমিকা ছিল। এই অংশের মধ্যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ অত্যন্ত চিন্তার বিষয়।
মন্দির তৈরির বিষয়কে ঘিরে গত বিশ বছরে অযোধ্যার একটি অত্যন্ত নেতিবাচক ছবি দেশ-দুনিয়ার সামনে উঠে এসেছে। যদিও এখানকার আম জনতা চিরকালই শান্তি ও সম্প্রীতির পক্ষেই থেকেছে। ১৯৯২সালের ৬ই ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা হোক অথবা ২০০২সালের শিলাদান, এখানকার মানুষ সেই হিংসার অঙ্গ হননি। বাইরে থেকে আসা করসেবকরাই হিংসা ও অশান্তি করতো। দশকের পর দশক দুই সম্প্রদায়ের মানুষের ঐক্য সংহতির ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত যমজ শহর অযোধ্যা-ফৈজাবাদ। উগ্র হিন্দুত্ববাদীরাই সেই ভাবমূর্তি বারংবার নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। ২০১৪সালের লোকসভা ভোটের আগে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বিশ বছর পূর্তির পরিপ্রেক্ষিতে বি জে পি ও সঙ্ঘ পরিবার নতুন করে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের চেষ্টা করবে বলেই শঙ্কা। রাজনৈতিক ফয়দা তুলতেই তারা ব্যাপক গণ্ডগোলও করতে পারে। এতদিন এটাই তাদের ইতিহাস। 'অযোধ্যায় কিছু কবর' নামে অসদ জৈদীর একটি কবিতা আছে —
এই নোংরা টিবির পেছনে কিছু দূর গিয়ে
নদীর ওদিকে কিছু কবর আছে
যেখানে চাপা দেওয়া আছে কিছু গল্প
মরচে ধরে যাওয়া একটা চিমটে
তাঁবার একটা পেয়ালা
একটা লুঙ্গি, একটা লাঠি, একটা শতরঞ্চি
মেহদী রং দেওয়া চুল
২/৩ ইঞ্চির নীল কাচের
চকচকে টুকরো
এরকমই আরো কিছু আছে বাজে জিনিস
সব কিছু শান্ত
কিন্তু নিজের জায়গা থেকে কিছুটা সরে যাওয়া
সবকিছু থেমে আছে
আমাদের মতো
কোনো কিছুর অপেক্ষায়।
-এই অপেক্ষা কিসের? সেই অন্ধকার রাত্রির দৃশ্যের নয় তো যা বি জে পি আর সঙ্ঘ পরিবার জোর করে অযোধ্যার উপর চাপিয়ে চলেছে এতদিন। সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে এর মোকাবিলার জন্য তৈরি থাকা দরকার।
আজ ভারতের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংশের ২০তম বার্ষিকীঃ পবিত্র মসজিদ ধ্বংশের হোতাদের নিন্দা জানাই ঘৃনাভরে
আজ ভারতের অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংশের ২০তম বার্ষিকী। ১৯৯২ সালের ৬
ডিসেম্বর ভারতীয় হিন্দু মৌলবাদীদের আক্রমনে অযোদ্ধার ষোল শতকের এই ঐতিহাসিক মসজিদটি ধ্বংস করা হয়।
১৯৯২-৯৩ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর শহরে হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গা বাধে। এই দাঙ্গায় আনুমানিক দুই হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হন যাদের অধিকাংশই মুসলমান। বিষয়টি মুসলিমরা কোনোদিনও ভুলতে পারবে না। সেদিন অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে সেদেশের আইন ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে হত্যা করা হয়েছিলো।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখ্নৌ বেঞ্চ এক রায়ে বাবরি মসজিদের ২.৭৭ একর বিতর্কিত জমিকে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে তিন ভাগে ভাগ করে দিয়েছিল। একটা ভাগ পায় মুসলিম সম্প্রদায় এবং দু' ভাগ পায় হিন্দুদের দুটি ধর্মীয় সংগঠন।
(Allahabad high court)
এলাহাবাদ হাইকোর্টের লখ্নৌ বেঞ্চ ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর যে রায় দিয়েছিল তার বিরুদ্ধে 'এইএমপিএলবি' সুপ্রিমকোর্টে আপিল করেছে। ভারতীয় রাজনৈতিক দল বিজেপির নির্বচনী ওয়াদা পুরনে হিন্দুরা পরে এখানে রাম মন্দির নির্মান করে।
(Ram temple issue on BJP's agenda in UP polls)
মজলিশ-এ-ইত্তেহাদুল-মুসলিমিনের (এমআইএম) সভাপতি ও সাংসদ আসাদউদ্দিন অবেসি বলেছেন, বাবরি মসজিদ ইসুতে মুসলিমদের সাথে প্রতিটি পদক্ষেপে প্রতারণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, "বাবরি মসজিদের এক ইঞ্চি জমিও ছাড়া যাবে না।" তিনি আরও বলেন, " আমাদের মনে হয়, দেশের আইন ব্যবস্থা ও শান্তি অক্ষুন্ন রাখতে বিষয়টির সুবিচার হওয়া দরকার। অবেসির অভিযোগ, ভারতীয় পুরাতত্ত্ব গবেষণার সঙ্গে যোগসাজশ করে সাম্প্রদায়িক শক্তি ঐতিহ্য সংরক্ষণের নিয়ম লঙ্ঘন করে এই মন্দির নির্মাণ করেছিল। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ২০তম বার্ষিকীর প্রাক্কালে হায়দরাবাদের এই সাংসদ আইনি লড়াইয়ে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল'(এইএমপিএলবি) বোর্ডকে মুসলিমদের দোয়া করা উচিত বলে তাদের পরামর্শ দেন।
১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা মুসলমানদের মন ভেঙে দিয়েছে। বাবরি মসজিদ ধ্বংশের ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সকল অপশক্তি এবং রামুর ঘটনাসহ পৃথিবীর সকল উগ্র মৌলবাদীদের নিকৃষ্ট ঘটনার সাথে জড়িত সবার প্রতি ঘৃনা জানাই।
| ||||||||||
|
No comments:
Post a Comment