Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Sunday, December 2, 2012

আত্মবিস্মৃত বাঙালি রাণি রাসমণির কথা ও মনে রাখেনি না জেলের মেয়েকে প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে অস্বীকার

আত্মবিস্মৃত  বাঙালি রাণি রাসমণির কথা ও মনে রাখেনি না জেলের মেয়েকে প্রাপ্য সম্মানটুকু দিতে অস্বীকার

পলাশ বিশ্বাস

দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দির আর ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সঙ্গে যার নাম আজও উচ্চারিত হয়, তিনি হলেন কলকাতার জানবাজারের রানি রাসমণি। স্বামী বিবেকানন্দকে বাঙালি মনে রেখেছে।আজও পুজার আসন অলন্কৃত করে আছেন শ্রীরামকৃষ্ণদেব।রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দকে ঘিরে যে রামকৃষ্ণ মিশন, সেখানেও রানি উপেক্ষিতকেন? এক সময় কলকাতার ষাট লক্ষ বিগা জমির মালিকানা ছিল রাণির।রাণির বাড়ির বউ শিউলি ক্ষতিপূরণের দাবিতে আদালতে আদালতে ঘুরছেন। রাজতন্ত্রের অবসান হয়েছে। রাজত্বও নেই।কিন্তু শেষ ভারতবর্ষে আজও রাজবংশেরই কর্তত্ব অক্ষুন্ন।সর্বত্রই রাজ পরিবার ও জমিদারির সম্পত্তি খাস হয়েছে, কিন্তু ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়েছে সমানে। একমাত্র ব্যতিক্রম রাণি রাসমণি।কেন? রাণির সম্পত্তি জাল দলিলের কল্যাণে বেহাত হয়েছে, রাজ্য সংরক্ষনে এগিয়ে আসেনি।পলাশী যুদ্ধের কথা, সেই পরাজয় ও বিশ্বাসঘাতকতার কথা বাঙালির প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসে জড়িযে আছে যেহেতু এই ইতিহাসে কর্তৃত্বের, আধিপাত্যবাদের, কায়েমি শ্রেণীস্বার্থের ব্যাঘাত হয় না। অথচ ইংরাজদের বিরুদ্ধে রাণির জেতা লড়াই বাঙালি মনে রাখেনিকলকাতার বনেদি বাড়ির পুজোর কথা উঠলেই এসে পরে ১৩ নং রানি রাসমনি রোডের রাসমনি কুঠির পুজোর কথা।দীর্ঘ ২৩৫ বছরের পথ অতিক্রম করে এই পুজো আজও বাঙালির ঐতিহ্যের পুজো।কথিত আছে রানির শ্বশুরমশাই প্রীতিরাম দাস ২৩৫ বছর আগে এই পুজোর প্রবর্তন করেন।কিন্তু গন্গায় কলাবউকে স্নান করানোর অধিকার আদায়ে, দক্ষিনেশ্বর মন্দির এলাকায় ইংরাজ সৈন্যর কুচকাওয়াজ বন্ধ করার এবং বাংলার জেলেদের মাছ ধরার অধিকার অব্যাহত রাখার জন্য গন্গায আড়াআড়ি লোহার শিকল পরিয়ে দেওয়ার স্পর্ধা বাঙালি মনে রাখেনিকলকাতার বনেদি বাড়ির পুজোর কথা উঠলেই এসে পরে ১৩ নং রানি রাসমনি রোডের রাসমনি কুঠির পুজোর কথা।দীর্ঘ ২৩৫ বছরের পথ অতিক্রম করে এই পুজো আজও বাঙালির ঐতিহ্যের পুজো।কথিত আছে রানি রাস্মণির শ্বশুরমশাই প্রীতিরাম দাস ২৩৫ বছর আগে এই পুজোর প্রবর্তন করেন।আজ মুড়ি মুড়কির সম্মানে আমরা অভ্যস্ত, তাই নামকরণের মহামিছিলে ব্রাত্য, অন্ত্যজ নামের, হোক না সে রানি রাসমণি, অনুপস্থিতিতে আমরা ব্যথিত হইনা। সম্পত্তির ক্ষতিপূরণের দাবি আদায়ে বাণিবাড়ির বউএর মানসিক সুস্থতাই বরং কৌতুক হয়ে যায় 

রানি রাসমণির ২২০তম জন্মদিবসে কার্জন পার্কে তাঁর ব্রোঞ্জ মূর্তির আবরণ উন্মোচন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেলুরমঠের সম্পাদক মহারাজ, পরিবহন মন্ত্রী মদন মিত্র, সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।এচুকুই পাওনা।তারপর রানিকে নিয়ে উচ্চবাচ্য শোনা যায়নি।বেলুরমঠে রাণিকে তাঁর যথাযোগ্য সম্মান দেওয়া হয়েছে এমন খবরও পাওয়া যায়নি

রানি রাসমণির বড মেয়ের নাতবৌ শ্যামলী দাস ও উার থত্র অমিতাভ দাসকে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের সেবায়েত করার জন্য নির্দিদেশ য়েছে কলকাতা হাইকোট 2004 সালে। রাণির বংসধর হওয়া সত্বেও তাঁদের সেবায়েত করা হচ্ছিল না।এই নাতবৌ এখন সাত আলমারি ভর্তি রাণির সম্পত্তির আসল দলিল নিয়ে, পুজোর ঘরে জেরক্স মেসিন বসিয়ে 60 লক্ষ বিঘা সম্পত্তির মোকদ্দমা লড়ে চলেছেন


রাসমণি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রাণী রাসমণির প্রতিমূর্তি, এসপ্ল্যানেড, কলকাতা

রাণী রাসমণি (১৭৯৩ – ১৮৬১) ছিলেন কলকাতার জানবাজারের বাসিন্দা প্রসিদ্ধ মানবদরদিজমিদার। তিনি দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ির প্রতিষ্ঠাত্রী এবং রামকৃষ্ণ পরমহংসের অন্যতমা পৃষ্ঠপোষক। রাণী রাসমণি তাঁর বিবিধ জনহিতৈষী কাজের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি তীর্থযাত্রীদের সুবিধার্থে সুবর্ণরেখা নদী থেকে পুরী পর্যন্ত একটি সড়ক পথ নির্মাণ করেন। কলকাতার অধিবাসীদের গঙ্গাস্নানের সুবিধার জন্য তিনি কলকাতার বিখ্যাত বাবুঘাট, আহিরীটোলা ঘাট ও নিমতলা ঘাট নির্মাণ করেন। ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরি (অধুনা ভারতের জাতীয় গ্রন্থাগার) ও হিন্দু কলেজ (অধুনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠাকালে তিনি প্রভূত অর্থসাহায্য করেছিলেন।[১]

[সম্পাদনা]জীবনী

১৭৯৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অধুনা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার কোনা গ্রামে এক দরিদ্র কৃষিজীবী মাহিষ্য পরিবারে রাণী রাসমণির জন্ম হয়।[২] তিনি ছিলেন অসামান্যা সুন্দরী। মাত্র এগারো বছর বয়সে কলকাতার জানবাজারের ধনী জমিদার বাবু রাজচন্দ্র দাসের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি স্বহস্তে তাঁর জমিদারির ভার তুলে নেন এবং অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তা পরিচালনা করতে থাকেন। ব্যক্তিগত জীবনে রাণী রাসমণি এক সাধারণ ধার্মিক বাঙালি হিন্দু বিধবার মতোই সরল জীবনযাপন করতেন। ১৮৬১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তাঁর জীবনাবসান হয়।

[সম্পাদনা]পাদটীকা

  1.  Rashmoni Devi Dakshineswar Kali Temple website.
  2.  A Quest for Roots: Stree Shakti, by Rekha Mody, Stree Shakti, Calcutta, India. Published by Stree Shakti, 1999. Page 78.

স্বপনকুমার গোস্বামীর লেখা কলাবউএর বৃত্তান্ত এখানে প্রাসন্গিকঃ

কলাবউয়ের স্মরণীয় যাত্রা

স্বপনকুমার গোস্বামী

কলাবধূর নাম নবপত্রিকা। যদিও পাতা নয়, ন'টি গাছের ডাল অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে নবপত্রিকা স্থাপন করা হয়। এই ন'টি গাছের নাম: 'কদলী, দাড়িম্ব, ধান্য, হরিদ্রা, মান, কচু, বিল্ব, অশোক, জয়ন্তী।' বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর সমাজের সঙ্গে নবপত্রিকা স্থাপনার রীতি প্রচলিত।

কলকাতার রাস্তায় তখন শব্দের ডেসিবেলের চোখ রাঙানি না থাকায় রাস্তা বাদ্দি বাজনা কাঁসর ঘণ্টা শাঁখ সানাই কাড়া নাকাড়ায় সরগরম। রানি রাসমণির ঠাকুর বাড়ি থেকে শোভাযাত্রা বেরিয়েছে। নবপত্রিকা স্নানের জন্য বাবুঘাটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিশাল শোভাযাত্রা সহকারে।

kolabou

ফ্যাসাদ বাধাল এক সাহেব। তিনি ভোরবেলায় ঘুমের আমেজে ছিলেন। নেটিভদের বাদ্যি বাজনার শব্দে রাজার জাত, সাহেবের কাঁচাঘুম ভেঙে গেল। তিনি মহা খাপ্পা হয়ে সোজা রানি রাসমণির নামে কোর্টে মামলা করলেন। শোভাযাত্রা করে বিকট শব্দ করে সাহেবদের ঘুম ভাঙানোর অপরাধে। আর সে শোভাযাত্রার জৌলুস আড়ম্বরপূর্ণ। হুতোমের ভাষায় বাজনা বাদ্যির 'পশ্চাৎ কলাবউ কোলে পুরোহিত, পুঁথি হাতে তন্ত্রধারক, বাড়ির আচার্য বামুন, গুরু, সভাপণ্ডিত। তার পশ্চাৎ বাবু, বাবুর মস্তকে লাল সাটিনের রুপোর রামছাতা ধরেছে, আশেপাশে ভাগ্নে, ভাইপো ও জামাইয়েরা, পশ্চাৎ আমলা, ফয়লা ও ঘরজামাইয়ের ভগিনিপতিরা, মোসাহেব ও বাজে দল।' রানি রাসমণির ওই জাতীয় নবপত্রিকা চানের শোভাযাত্রায় ক্রুদ্ধ ইংরেজ সরকার রানি রাসমণিকে সতর্ক করে বললেন, ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের অবৈধ ও নিয়মবহির্ভূত শব্দ না করা হয়। রানি ব্রিটিশ আদালতের আদেশের তোয়াক্কা না করে দ্বিগুণ ভাবে শোভাযাত্রা বের করলেন। এবং সরকারকে জানালেন, এই রাস্তা আমার স্বামী করেছিলেন (রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ) গঙ্গাচানে যাবার পথ তৈরি করতে। আমার রাস্তায় আমি ধর্মীয় শোভাযাত্রা বের করবই, এতে কোনও হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করব না।

ব্রিটিশ সরকার রানির ব্যবহারে অসন্তুষ্ট হয়ে সে কালে তাঁর পঞ্চাশ টাকা জরিমানা করলেন। রানি রাসমণি জরিমানা দিয়ে তাঁর বাড়ি থেকে বাবুঘাট পর্যন্ত রাস্তাটির দু'পাশ রেলিং দিয়ে ঘিরে দিলেন যাতে সব রাস্তার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ব্রিটিশ সরকার বেড়া খুলে দিতে কড়া আদেশ দিলেও রানি তা উপেক্ষা করলেন।

শেষে ব্রিটিশ সরকার রানির জরিমানার টাকা ফেরত দিয়ে ব্যাপারটা মিটমাট করে নিলেন। কিন্তু সেই থেকে কলকাতায় যে কোনও শোভাযাত্রার জন্য পুলিশের অনুমতি নেওয়া আবশ্যিক করা হল, যে আইন আজও প্রচলিত।

সৌজন্যঃ আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৯ আশ্বিন ১৪০৯ রবিবার ৬ অক্টোবর ২০০২


নব কলেবর

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সার্ধশতবর্ষ পূর্ণ হল পুণ্যশ্লোকা রানি রাসমণির প্রয়াণের। রবীন্দ্রনাথের জন্মের সামান্য ক'দিন আগে, এবং তাঁর সাধের দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দির প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ বছর ন' মাস পর যে-প্রয়াণ। তবে তারই মধ্যে তিনি শ্রীশ্রী জগদীশ্বরী কালীমাতা ঠাকুরানির পূজা সেবা ও সাধনার ভার ন্যস্ত করেছেন এক তরুণ পুরোহিত গদাধর চট্টোপাধ্যায়ের হাতে, জগজ্জন যাঁকে অনতিকালে চিনবে শ্রীরামকৃষ্ণ হিসেবে। রাসমণির বিদায়ে মন্দিরে দাঁড়িয়ে পশ্চিমে গঙ্গার দিকে চেয়ে অঝোরে কেঁদেছিলেন ঠাকুর 'ওই চলে গেলেন রানিমা' বলে।

রানিমা'র মৃত্যুর দেড়শো বছর পরেও কেমন আছে দক্ষিণেশ্বর মন্দির?

তা দেখতেই 'জয় মা' বলে হাজির হলাম মন্দিরে, এই সে দিন।

 

 

২০১২র মার্চ। সূর্যাস্তের আর সামান্য বাকি, অথচ দক্ষিণেশ্বর কালীমন্দিরের চত্বরে প্রবেশ করে মনে হল মন্দির জাগছে। চাতাল, সিঁড়ি ও নদীপাড় জুড়ে তখনও হাজার পাঁচেক মানুষের সমাবেশ। এখান-ওখান থেকে ভজন উঠছে, মন্দিরঘাটে গঙ্গার জল মাথায় ছোঁয়াচ্ছে নারীপুরুষআরেকটু পর শ্রীশ্রীজগদীশ্বরী কালীমাতা ঠাকুরানির সন্ধ্যারতি দর্শনের প্রস্তুতিতে।

দেখতে দেখতে মনে পড়ল ১৯৬৫-তে প্রকাশিত তাঁর অপরূপ জীবনীগ্রন্থ 'রামকৃষ্ণ অ্যান্ড হিজ ডিসাইপলস'-এ ক্রিস্টোফার ইশারউড যা লিখছেন: 'এক শ' বছরেরও আগে তৈরি দক্ষিণেশ্বর মন্দির ও প্রাঙ্গণ চেহারায় সেই আগেকার মতোই আছে।...এখন মন্দিরপ্রাঙ্গণের সে-দেখভাল নেই, যেটার দরকার ছিল। চাতালের টালি খসে গিয়ে জায়গাটা এবড়োখেবড়ো। তেমন যত্ন নেই বাগানগুলোরও। বেশ কিছু হর্ম্যে ভাঙন ধরেছে, উষ্ণ ও জলীয় আবহাওয়ায় যা সহজেই ঘটে যায়। ছেলেপুলে, মানুষজন ভিড় করে আসে ভিক্ষে করতে, নয়তো স্মারক বেচতে, কিংবা পয়সার বিনিময়ে দর্শনার্থীদের চটিজুতোর পাহারা দিতে। অবশ্য এ সবই অকিঞ্চিৎকর ব্যাপার-স্যাপার। আগন্তুকদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত এ-জন্যই যে, রামকৃষ্ণের প্রাপ্তবয়সে জায়গাটি যে-চেহারায় ছিল তার কতখানি আজও নিটোল, অটুট।'

আজকের 'মেকওভার' দক্ষিণেশ্বর

বলতে নেই, মন্দিরের চত্বরমুখে এসেই 'মেকওভার' করা দক্ষিণেশ্বর কালীধামের রূপসী বাংলা মূর্তির আঁচ পেয়েছিলাম ভর বিকেলেই। ইশারউডের বর্ণনার থেকে যা অনেকগুণ উন্নত। নদীর পাড় ধরে গজানো পুজোর ডালার হকারদের সরিয়ে, এককাট্টা করে, এক ছাদের নীচে বসিয়ে ডালা আর্কেড করা হয়েছে। পাণ্ডাগিরি, পুণ্যার্থী পাকড়াও করার চল দক্ষিণেশ্বরে কোনও কালেই ছিল না। যদিও একটা এলোমেলো অগোছালো চেহারা জায়গাটাকে পেয়ে বসেছিল এক সময়। মহিলাদের বস্ত্র-বদলের চালাগুলোও কেমন আলুথালু, চটের আড়ালসর্বস্ব ছিল। সেখানে পাকা দালানের ব্যবস্থাও নজরে পড়েছিল। অজস্র মানুষ মন্দিরে না এসেও পাড়ে বসে দেখলাম, দিব্যি একই সঙ্গে কোলে গঙ্গা আর অদূরে মন্দিরের চেহারা উপভোগ করছে। তখনই মনে একটা স্বস্তির ভাব এসেছিল, মনে পড়েছিল এক ফরাসি ঐতিহাসিকের অমর উদ্ধৃতি: 'দ্য মোর থিংগস চেঞ্জ, দ্য মোর দে আর দ্য সেম'। কোনও কিছু যত বদলায়, ততই যেন তা আগের মতোই হয়ে যায়।

দক্ষিণেশ্বর হবে আন্তর্জাতিক

এখনকার প্রবীণ মানুষদের অনেকেই ইশারউডের বর্ণিত দক্ষিণেশ্বরের স্মৃতি বহন করে চলেন। কিন্তু ইতিমধ্যে ভাগীরথীর পূর্ব ও পশ্চিম কূল দিয়ে বহু জল বয়ে গেছে। দিনে দিনে দক্ষিণেশ্বরে ভক্তের স্রোত বেড়েছে, কিন্তু সেই সমাগমে পরিচর্যার পরিকাঠামো ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল।

একবার কাগজে খবর বেরোল 'গঙ্গার ভাঙনে দক্ষিণেশ্বরের বারোটি শিবমন্দির বিপন্ন'। শঙ্কা হত, ভক্তসমারোহ বাড়লেও মন্দিরের যত্নে কি কিছু টান পড়ছে? সে-শঙ্কা এক সময় মিলিয়েও গেল মন্দিরের অছি পরিষদের নবোদ্যোগে। ২০০২ সালে মন্দিরের সার্ধশতবর্ষ উদযাপনে এক বিপুল স্থাপত্য সংরক্ষণ প্রকল্প গৃহীত হল দক্ষিণেশ্বরে। প্রস্তাব হল, বেলুড়-দক্ষিণেশ্বরকে নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ার।

কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতায় 'কথামৃত' বর্ণিত দক্ষিণেশ্বরের চিত্রমতে তার নব রূপায়ণেরও নকশা তৈরি হল। রাসমণির মৃত্যুর পর তাঁর জামাতা মথুরমোহন বিশ্বাস যেমন মন্দির পরিচালনার ভার গ্রহণ করেছিলেন, এই আধুনিক কালে সেই কাজে ব্রতী হলেন রানির আরেক জামাতা প্যারীমোহন চৌধুরীর প্রপৌত্র কুশল চৌধুরী।

কথা অমৃত সমান

মন্দিরের সিঁড়ি, উঠোন জুড়ে রাশি রাশি লোক। কোনও শব্দ নেই, শুধু আরতির ঘণ্টাধ্বনি। নাটমন্দিরে ভজন বসেছে। অছি পরিষদের অফিসে সৌম্যকান্তি কুশল চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হল। বললেন, চেষ্টা করেছি দক্ষিণেশ্বরকে ঠাকুরের কালে ফিরিয়ে দিতে। 'কথামৃত'য় নির্ভর করেই সব হয়েছে। মন্দিরের সাদাটে রঙের জায়গায় গেরুয়া দিয়েছি রং বেশি দিন টিকবে বলে।

বললেন, পাঠাগার চালু করেছি নানা ধরনের বই দিয়ে।

বললেন, মন্দিরকে পরিচ্ছন্ন রাখাই একটা যজ্ঞ। সেটাই চালিয়ে যাচ্ছি।

বললেন, গঙ্গার ভাঙন রোধ তো খুব বড় কাজ, চলতেই থাকবে। পাশাপাশি দর্শনার্থীদের পানীয় জল, শৌচাগার, গাড়ি রাখার জায়গা, ধ্যানভবন এ সবও করা গেছে। জায়গাটাকে যতখানি সম্ভব সবুজও করেছি।

উদাস ভৈরবের চাতালে

কনে দেখা আলোয় এমনিতেই ভারি শোভা মন্দির প্রাঙ্গণের, সে রূপ আরও চড়েছে পুরো ক্ষেত্রটির রং, টালি পুনর্বিন্যাসের প্রসাধনে। শীতেও বেশ সবুজ দেখাল পঞ্চবটীকে, কিছু কাল ধরে বাগান করে বাঁধানো। একশো বছর আগের এক ফটোতে ধরা পঞ্চবটী আসলে পাঁচ বটের শাখাপ্রশাখায় জড়ানো-মোড়ানো এক গাছের জটলা। তারও এক উদাসভৈরব মূর্তি। যাকে শ্রীরামকৃষ্ণ পরিণত করেছিলেন এক অধ্যাত্ম বিজ্ঞানাগারে। তাঁর ১২ বছরের সাধনকালে এই পঞ্চবটীই তাঁর ধ্যানাসন, যেখানে তোতাপুরী-সাহচর্যে বেদান্ত চর্চা করে তাঁর 'সন্ন্যাস' গ্রহণও। এরই উত্তর-পশ্চিমে ছিল ভৈরবী ব্রাহ্মণীর পঞ্চমুণ্ডীর আসন, যেখানে মুণ্ডাসনে সাধনায় বসেছিলেন ঠাকুর।

ঠাকুরের ঘরের কোণে কোণে

গোধূলির আলো নেভার আগে একবার গিয়ে দাঁড়াতেই হয় মন্দির প্রাঙ্গণের একাংশে ঠাকুরের ঘরের কোণে। জীবনের শেষ ১৪ বছর যে নিরাভরণ বালিশ-তক্তাপোশসর্বস্ব ঘরটিতে কাটিয়েছিলেন তিনি। ১৮৭২ সালের ৫ জুন তারিখে ফলহারিণী কালীপূজার রাতে এই ঘরেই সারদা দেবীকে মাতৃজ্ঞানে ষোড়শীপূজা করেছিলেন। ঘরটির পূর্ব দিক বরাবর একটা বারান্দা। পশ্চিম দিকেও গঙ্গামুখী অর্ধচন্দ্রাকৃতি আরেকটি বারান্দা। দ্বিতীয়টিতে দাঁড়িয়ে ঠাকুর গঙ্গা দেখতেন, আর পুবের বারান্দায় নবীন নরেন্দ্রকে দর্শন করে তিনি সমাধিস্থ হয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে দাঁড়াতেদেখলাম, সেই নরেন্দ্র রচিত গুরুবন্দনা 'খণ্ডন ভববন্ধন জগবন্দন বন্দি তোমায়' গেয়ে তাঁর সান্ধ্যকীর্তন চলছে।

এক কালের নিরাভরণ ঘরটিতে এখন রামকৃষ্ণ, সারদা ও বিবেকানন্দের ছবি শোভা পাচ্ছে। এক দেওয়ালে টাঙানো ঠাকুরের মিষ্ট বাণী 'চৈতন্য হও'। তাঁর চৌকি ঘিরে ছোট্ট কাচের বেড়া উঠেছে, ঘর উপচে লোক বসেছেন বারান্দা জুড়ে। ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় পড়তে ফের সেই ভাগীরথীর দৃশ্য। যার কিছুই বদলায়নি শ্রীরামকৃষ্ণের আমল থেকেও।

বারান্দা বেয়ে প্রাঙ্গণে আসতে দিনের শেষ আলোয় কালীমন্দির দেখে একটা ঘোর এল প্রায়। ঘিয়ে আর টেরাকোটা রঙে এক অপূর্ব ষোড়শী রূপ হয়েছে মন্দিরের। প্রাঙ্গণ জুড়ে জ্বলে-ওঠা বিজলি বাতিতে ঝলমল করছে। ঝলমল করছে নতুন টালিতে বাঁধানো উঠোনও, যেন সদ্য নিকোনো। নবরত্ন মন্দিরের গায়ে দাঁড়ানো রাধাকৃষ্ণ মন্দিরেরও নব রূপায়ণ চোখ এড়াবার নয়।

কাশী কাঞ্ছী কে বা চায়

কথাটা ফের মনে এল মন্দিরের সিঁড়ি বেয়ে মায়ের সন্ধ্যারতি দেখতে এসে। গর্ভমন্দির দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে ১৫ ফুট। সেখানে পুরাতন চেহারারই আদলে নবনির্মিত রুপোর সিংহাসনে পাষাণময়ী মাতা ঠাকুরানির দীর্ঘ আরতি দেখতে দেখতে নিমেষে নিক্ষিপ্ত হলাম স্বয়ং ঠাকুরের কালে। মনে এল রামকৃষ্ণদেবের ভূমিকায় গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠোঁটে বসানো ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের গাওয়া 'রানী রাসমণি' ছবির সেই অমরগীতি...

'গয়া গঙ্গা প্রভাসাদি কাশী কাঞ্ছী কে বা চায়,

কালী, কালী, কালী বলে অজপা যদি ফুরায়।'

সত্যিই তো, দেশে দেশে তীর্থ করে বেড়ায় কোন আহাম্মক! ঘরের পাশে এই অপরূপা, এই গঙ্গা, ঠাকুরের স্মৃতিজড়িত এই দক্ষিণেশ্বর ফেলে কোথাও যাওয়া মানেই তো ঘর ছেড়ে ধান্ধায় বেরোনো। এমন মধুর মূর্তির প্রেমে না পড়লে বাঙালি কীসের!

 

এই ভাল খাচ্ছি, ও ভোগে গন্ধ লাগে

নবীন ভাস্করের গড়া কষ্টিপাথরের কালো দক্ষিণাকালীর মূর্তিটির পাশাপাশি মন্দিরটিরও প্রেমে পড়েছিলেন ঠাকুর। মাকে জাগাতে তাঁর খড়্গ তুলে নিজের গলায় বসাতে গেছিলেন। সে-খাঁড়া এখন দক্ষিণেশ্বর দেবোত্তর এস্টেটের সংরক্ষণে। মায়ের মতো মায়ের মন্দিরের সঙ্গেও তাঁর রসের সম্পর্ক ঘটেছিল। মন্দিরের সামনেই নাটমন্দির, যেখানে মহাদেবের অবস্থান। নিত্যদিন মন্দিরে প্রবেশের আগে এই মহাদেবকেই প্রণাম করতেন তিনি। নাটমন্দিরের দক্ষিণের প্রাঙ্গণে বলিদান মঞ্চ। যে একটি বিষয়ে সায় ছিল না ঠাকুরের। উৎসবের ভোগ খেতে ডাকলে ভাগ্নে হৃদয়রামকে শোনা যায় মুড়ি খেতে খেতে বলেছিলেন, 'এই ভাল খাচ্ছি। ও ভোগে গন্ধ লাগে।'

বড় আরাম হল দেখে যে, সেই বলিমঞ্চে এখন গাছ পোঁতা হয়েছে, বহু দিনের চেষ্টায় কুশল চৌধুরী দক্ষিণেশ্বরে পশুবলি রদ করতে পেরেছেন।

বললেন, খুব ইচ্ছা মানুষজনের জন্য একটা ফুড প্লাজা করার। এত লোক আসেন।

বললাম, কত লোক তবু?

বললেন, এমনি দিনে লক্ষ লোক। বিশেষ বিশেষ দিনে ১০-১৫ লক্ষ। এ বছর কল্পতরু দিবসে লোক হয়েছিল ১৭ লাখ। কিন্তু মন্দিরে পৌঁছানোর সরকারি রাস্তা সেই আগের মতোই সরু থেকে গেল। ও তো আমার সাধ্যের বাইরে। চাইলে সরকারই করতে পারে।

বললাম, আর ইচ্ছে কী? বললেন, দক্ষিণেশ্বরকে পৃথিবীর কাছে মেলে ধরা।

বসন্তের সুখের ছোঁয়া পরিবেশে। ভরসন্ধেয় নাটমন্দিরের পাশ বেয়ে ফিরতে ফিরতে মনে এল বছর ৩০ আগের এক সান্ধ্য আসরের কথা। রবিশঙ্কর বাজাচ্ছেন রাগ বসন্ত মুখারী আর আদি বসন্ত। হাজার হাজার মানুষ চোখ বুজে বাজনা শুনছেন। জীবনানন্দের ভাষায় বলতে গেলে, ... সেই মধুরেক্ষণ এখনও আমাদের ওষ্ঠে লেগে আছে।

দক্ষিণেশ্বর দক্ষিণেশ্বর।

যা হয়েছে    

• দু'টি বিশ্রামাগার, ধ্যান ভবন, উন্নত চাতাল, নিকাশি ব্যবস্থা, দ্বিতল শৌচালয়, দু'টি অতিরিক্ত কার পার্ক, জল পরিশোধন ব্যবস্থা, জলের ট্যাঙ্ক, প্রাঙ্গণ পরিধি এলাকার সবুজায়ন।    

• নিবেদিতা সেতু হয়ে শহর কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ মসৃণ হয়েছে।    

• মন্দির প্রাঙ্গণের ভেতরে পরিষেবার উন্নয়ন।    

যা দরকার

• মন্দিরে পৌঁছনোর সরু ও ভিড়াক্রান্ত রাস্তাটি অবিলম্বে চওড়া করা দরকার মনে করেন অনেকেই।

• মেট্রো কবে পৌঁছোবে অনেকের জিজ্ঞাস্য।

• ভিড়ের চাপ বাড়ছে। আরও পরিষেবার দাবি ক্রমবর্ধমান।

আনন্দবাজার পত্রিকা

http://bengali.yahoo.com/%E0%A6%A8%E0%A6%AC-%E0%A6%95%E0%A6%B2-%E0%A6%AC-100307346.html



দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি
Kolkatatemple.jpg
নামদক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি
স্রষ্টা রানি রাসমণি
নির্মাণকাল১৮৫৫
প্রধান দেবতাভবতারিণী কালী
স্থাপত্যনবরত্ন মন্দিরবঙ্গীয় স্থাপত্যশৈলী
স্থানদক্ষিণেশ্বরকামারহাটিউত্তর ২৪ পরগনা জেলা

দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি কলকাতার অদূরে হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত একটি কালীমন্দির। এটি উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার কামারহাটি শহরের অন্তঃপাতী দক্ষিণেশ্বরে অবস্থিত। ১৮৫৫ সালে প্রসিদ্ধ মানবদরদি জমিদার রানি রাসমণি এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।[১] এই মন্দিরে দেবী কালীকে "ভবতারিণী" নামে পূজা করা হয়।[১] ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট যোগী রামকৃষ্ণ পরমহংস এই মন্দিরে কালীসাধনা করতেন।

কথিত আছে, রানি রাসমণি দেবী কালীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।[১]মন্দির প্রতিষ্ঠাকালে রামকৃষ্ণ পরমহংসের দাদা রামকুমার চট্টোপাধ্যায় রানিকে প্রভূত সাহায্য করেছিলেন। রামকুমারই ছিলেন মন্দিরের প্রথম প্রধান পুরোহিত।[১] ১৮৫৭-৫৮ সালে কিশোর রামকৃষ্ণ পরমহংস এই মন্দিরের পূজার ভার গ্রহণ করেন।[১] পরবর্তীকালে তিনি এই মন্দিরকেই তাঁর সাধনক্ষেত্ররূপে বেছে নেন।

দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি চত্বরে কালীমন্দির ছাড়াও একাধিক দেবদেবীর মন্দির ও অন্যান্য ধর্মস্থল অবস্থিত। মূল মন্দিরটি নবরত্ন মন্দির। এটি টালিগঞ্জের রামনাথ মণ্ডল নির্মিত নবরত্ন মন্দিরের আদর্শে নির্মিত।[১] মূল মন্দির ছাড়াও রয়েছে "দ্বাদশ শিবমন্দির" নামে পরিচিত বারোটি আটচালা শিবমন্দির। মন্দিরের উত্তরে রয়েছে "শ্রীশ্রীরাধাকান্ত মন্দির" নামে পরিচিত রাধাকৃষ্ণ মন্দির এবং মন্দিরের দক্ষিণে রয়েছে নাটমন্দির।[১] মন্দির চত্বরের উত্তর-পশ্চিম কোণে রয়েছে রামকৃষ্ণ পরমহংসের বাসগৃহ।[১] মূল মন্দির চত্বরের বাইরে রামকৃষ্ণ পরমহংস ও তাঁর পরিবারবর্গের স্মৃতিবিজড়িত আরও কয়েকটি স্থান রয়েছে, যা আজ পুণ্যার্থীদের কাছে ধর্মস্থানরূপে বিবেচিত হয়।

পরিচ্ছেদসমূহ

  [আড়ালে রাখো

[সম্পাদনা]ইতিহাস

১৮৬৫ সালের তোলা ছবিতে দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি

১৮৪৭ সালে ধনী বিধবা জমিদারনি রানি রাসমণি দেবী অন্নপূর্ণাকে পূজার মানসে কাশীতেতীর্থযাত্রার আয়োজন করেন। ২৪টি নৌকায় আত্মীয়স্বজন, দাসদাসী ও রসদ নিয়ে তিনি রওয়ানা হন। কিংবদন্তি অনুসারে যাত্রার পূর্বরাত্রে রানি দেবী কালীর স্বপ্নদর্শন পান। দেবী তাঁকে বলেন, [২]

"কাশী যাওয়ার প্রয়োজন নেই। গঙ্গাতীরেই একটি নয়নাভিরাম মন্দিরে আমার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পূজা কর। সেই মূর্তিতে আবির্ভূত হয়েই আমি পূজা গ্রহণ করব। "
রামকৃষ্ণ পরমহংস ১৮৫৫ সালে এই মন্দিরে আসেন তাঁর দাদা প্রধান পুরোহত রামকুমারের সহযোগীরূপে এবং রামকুমারের মৃত্যুর পর তিনি দাদার স্থলাভিষিক্ত হন

এই স্বপ্নের পর রানি অবিলম্বে গঙ্গাতীরে জমি ক্রয় করেন এবং মন্দির নির্মাণকাজ শুরু করেন। ১৮৪৭ সালে এই বিরাট মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু হয়; শেষ হয় ১৮৫৫ সালে।

মন্দিরের ২০ একরের প্লটটি জন হেস্টি নামে এক ইংরেজের কাছ থেকে কেনা হয়। লোকমুখে জায়গাটি পরিচিত ছিল সাহেবান বাগিচা নামে। এর একটি অংশ ছিল কচ্ছপাকার মুসলমান গোরস্থান। তাই তন্ত্রমতে স্থানটি শক্তি উপাসনার জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়।[৩] আটবছরে নয় লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই মন্দির নির্মিত হয়। ১৮৫৫ সালের ৩১ মে স্নানযাত্রার দিন মহাসমারোহে মন্দিরে মূর্তিপ্রতিষ্ঠা করা হয়। পূর্বে মন্দিরের আরাধ্যাকে মাতা ভবতারিনি কালিকা নামে অভিহিত করা হয়েছিল। রামকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রধান পুরোহিত পদে বৃত হন, তাঁর ছোটোভাই গদাধর বা গদাই (পরবর্তীকালে রামকৃষ্ণ পরমহংস) তাঁর সহযোগী হন। পরে তাঁর ভাগনে হৃদয়ও তাঁকে সহায়তা করতে থাকেন।[৪]

মন্দিরের আরাধ্যা দেবী ভবতারিণীকালী, পদতলে শিব

পরের বছরই রামকুমার দেহরক্ষা করেন। শ্রীরামকৃষ্ণ মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের স্থলাভিষিক্ত হন। তাঁর সহধর্মিনী সারদা দেবীমন্দির চত্বরের বাইরে নহবতখানায় অবস্থান করতে থাকেন। এই নহবতখানা এখন সারদা দেবীর মন্দির।

এই সময় থেকে ১৮৮৬ পর্যন্ত প্রায় তিরিশ বছর শ্রীরামকৃষ্ণ এই মন্দিরে অবস্থান করেন। তাঁর অবস্থানের কারণে পরবর্তীকালে এই মন্দির পরিণত হয় একটি তীর্থক্ষেত্রে।

[সম্পাদনা]স্থাপত্য

মন্দিরটি বঙ্গীয় স্থাপত্যশৈলীর নবরত্ন স্থাপত্যধারায় নির্মিত। মূল মন্দিরটি তিন তলা। উপরের দুটি তলে এর নয়টি চূড়া বণ্টিত হয়েছে। মন্দির দক্ষিণমুখী। একটি উত্তোলিত দালানের উপর গর্ভগৃহটি স্থাপিত। এই দালানটি ৪৬ বর্গফুট প্রসারিত ও ১০০ ফুট উঁচু।[৫]

গর্ভগৃহে (স্যাঙ্কটাম স্যাঙ্কটোরিয়াম) শিবের বক্ষোপরে ভবতারিণী নামে পরিচিত কালীমূর্তিটি প্রতিষ্ঠিত। এই মূর্তিদ্বয় একটি রুপোর সহস্রদল পদ্মের উপর স্থাপিত।

উত্তোলিত দালানের উপর নির্মিত দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ির গর্ভগৃহ

মূল মন্দিরের কাছে যে বারোটি একই প্রকার দেখতে পূর্বমুখী শিবমন্দির রয়েছে সেগুলি আটচালা স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত। গঙ্গার একটি ঘাটে দুই ধারে এই মন্দিরগুলি দণ্ডায়মান। মন্দির চত্বরের উত্তর-পূর্বে রয়েছে বিষ্ণুমন্দির বা রাধাকান্ত মন্দির। এই মন্দিরে একটি রুপোর সিংহাসনে সাড়ে একুশ ইঞ্চির কৃষ্ণ ও ষোলো ইঞ্চির রাধামূর্তি প্রতিষ্ঠিত।

[সম্পাদনা]চিত্রকক্ষ

[সম্পাদনা]আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]আরও দেখুন

[সম্পাদনা]টীকা

  1. ↑ ১.০ ১.১ ১.২ ১.৩ ১.৪ ১.৫ ১.৬ ১.৭ পশ্চিমবঙ্গের কালী ও কালীক্ষেত্র, দীপ্তিময় রায়, মণ্ডল বুক হাউস, কলকাতা, ১৪১৪ মুদ্রণ, পৃ. ১০৭-১৩
  2.  Rosen, Steven (2006). Essential Hinduism. প্রকাশক: Greenwood Publishing Group. pp. 201-202.
  3.  Prabhananda 2003
  4.  Mehrotra 2008 p.11
  5.  Dakshineswar Temple Banglapedia.

[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র

Map of Kali Temple at Dakshineshwar। সংগৃহীত হয়েছে: 2008-11-05.

Harding, Elizabeth U. (1998). Kali: The Black Goddess of Dakshineswar. প্রকাশক: Motilal Banarsidass. আইএসবিএন 8120814509.

Mehrotra, Rajiv (2008). Thakur: A Life Of Sri Ramakrishna. প্রকাশক: Penguin Books India. আইএসবিএন 0143063715.

[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ



No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Welcome

Website counter

Followers

Blog Archive

Contributors