ভারতের অর্থনীতিকে শেষ পর্যন্ত কোথায় রেখে গেলেন প্রণব?
আসজাদুল কিবরিয়া | তারিখ: ২৮-০৬-২০১২
অন্যদিকে বিশ্লেষক পলাশ বিশ্বাস তাঁর ব্লগে লিখেছেন, 'বিদেশি পুঁজি প্রবেশের নামে পাচার হয়ে যাওয়া কালোটাকা ফিরিয়ে আনাতেই মনোযোগ ছিল প্রণব মুখার্জির।... ইন্দিরা গান্ধীর সমাজতান্ত্রিক মডেলে অর্থমন্ত্রীর কাজ শুরু করে এই অভিজ্ঞ রাজনীতিক পরবর্তীকালে নয়া উদারতাবাদী ধারায় যুক্ত হয়ে মুক্তবাজারের রাজনীতিতে এসেছেন।'
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2012-06-28/news/269307
প্রণব মুখার্জির কার্টুন। ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
ভারতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দৌড়ে এগিয়ে আছেন প্রণব মুখার্জি। ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে প্রতিভা পাতিলের স্থলাভিষিক্ত হবেন—এমনটাই প্রত্যাশা তাঁর সমর্থক ও গুণগ্রাহীদের। যেহেতু নির্বাচন, সেহেতু তাঁকে গণসংযোগ ও প্রচারণা চালাতে হবে ভারতের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। আর তাই গত মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী হিসেবে শেষ দিনটি কাটিয়েছেন তিনি।
এর ফলে গতকাল বুধবার থেকে প্রণব মুখার্জি আর অর্থমন্ত্রী নেই। আপাতত প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বভারটি নিজের কাছে রাখছেন। এর ফলে আট বছরের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো সাময়িকভাবে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বটি নিজের কাছে নিলেন মনমোহন। আর এটা তো তাঁর জন্য নিজের পুরোনো বাড়িতে বেড়িয়ে যাওয়ার মতো! এর আগে ২০০৮ সালে পি চিদাম্বরমকে যখন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয়, তখনো তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে প্রণব মুখার্জি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
এই মুহূর্তে অবশ্য ভারতীয় অর্থনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যম ব্যস্ত রয়েছে অর্থমন্ত্রী হিসেবে প্রণব মুখার্জির সাফল্য-ব্যর্থতার মূল্যায়ন-বিশ্লেষণে। বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে প্রণব মুখার্জির সাফল্য-ব্যর্থতা মূল্যায়ন করছেন। তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে দেখানো হচ্ছে, প্রণব কোথা থেকে শুরু করে ভারতীয় অর্থনীতিকে কোথায় রেখে গেলেন।
অর্থনীতির প্রধান প্রধান সূচকগুলোর গত চার বছরের (২০০৮-১২) তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলে অবশ্য খুব বড় অর্জন দেখা যায় না; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দেয়। ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস গতকাল একটি সমন্বিত লেখচিত্র প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরই প্রণব মুখার্জির উজ্জ্বলতম বছর বিবেচিত হতে পারে। সাড়ে ৬ শতাংশ রাজস্ব ঘাটতি সত্ত্বেও ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি, ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ মূল্যস্ফীতির হার ও জিডিপিতে সঞ্চয় হার ৩৩ দশমিক ৮০ শতাংশে ছিল সে বছর। এর পরের বছরই মূল্যস্ফীতি প্রায় আড়াই গুণ বেড়ে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশে উন্নীত হয়। আর গত অর্থবছরে তা ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশে থেকেছে।
প্রবৃদ্ধির হার ২০১১-১২ অর্থবছরে নেমে এসেছে সাড়ে ৬ শতাংশে। অথচ প্রণবের যাত্রা শুরু হয়েছিল ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে, যদিও ওই অর্থবছরের (২০০৮-০৯) শেষ প্রান্তিকে তিনি অর্থমন্ত্রী হন। চিত্রটি আরও নেতিবাচক হয়ে যায়, যখন দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। জিডিপির অনুপাতে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতি গত অর্থবছর ৪ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে, যা তার আগের বছর ছিল ২ দশমিক ৭০ শতাংশ।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান বিপর্যয়টি হলো, মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় মুদ্রা রুপির বিরাট দরপতন। ২০ জুন যেখানে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ৫৫ দশমিক ৯৭ রুপি, সেখানে এক সপ্তাহের ব্যবধানে মানে ২৭ জুন তা নেমে এসেছে ৫৭ দশমিক ১২ ডলারে।
প্রণব অবশ্য ১৯৮২-৮৪ সময়কালেও ভারতের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী তখন প্রধানমন্ত্রী। সে সময়ও ভারতের অর্থনীতি সংকটের মুখে পড়ে আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছিল।
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এ এ কে ভট্টাচার্য লিখেছেন, 'প্রবৃদ্ধিকে জোরদার করতে সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রধান চালিকা হতে অর্থ মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হয়েছে। রাজনৈতিক দক্ষতা ও পরিপক্বতা থাকার পরও প্রণব মুখার্জি কেন রাজস্ব খাতে বিশেষত করবিষয়ক সংস্কারের কাজে রাজ্য ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ঐকমত্য আনতে ব্যর্থ হলেন তা রহস্যজনক।'
অন্যদিকে বিশ্লেষক পলাশ বিশ্বাস তাঁর ব্লগে লিখেছেন, 'বিদেশি পুঁজি প্রবেশের নামে পাচার হয়ে যাওয়া কালোটাকা ফিরিয়ে আনাতেই মনোযোগ ছিল প্রণব মুখার্জির।... ইন্দিরা গান্ধীর সমাজতান্ত্রিক মডেলে অর্থমন্ত্রীর কাজ শুরু করে এই অভিজ্ঞ রাজনীতিক পরবর্তীকালে নয়া উদারতাবাদী ধারায় যুক্ত হয়ে মুক্তবাজারের রাজনীতিতে এসেছেন।'
ইকোনমিক টাইমস-এ ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী যশোবন্ত সিং তিন দিন আগেই লিখেছেন, 'কোনো সন্দেহ নেই যে অর্থমন্ত্রী হিসেবে প্রণব মুখার্জি ব্যর্থ এবং তিনি অর্থনীতিকে গভীর সংকটের মধ্যে রেখে যাচ্ছেন।' ভারতীয় অর্থনীতির সর্বশেষ সূচকগুলো আপাতত এই মন্তব্যকেই সমর্থন দেয়।
No comments:
Post a Comment