রাষ্ট্র, তোমার হাতে রক্তের দাগ।
ভারতে মানবাধিকার লংঘনের যে সব ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে তার মধ্যে ৬৭ শতাংশই ঘটেছে উত্তর প্রদেশ ও রাজধানী দিল্লিতে। ভারতের ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন বা 'এনএইচআরসি' গত এক বছরের তথ্যের ভিত্তিতে এ কথা জানায়।
'এনএইচআরসি' বলেছে, গত বছরের ১লা ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত ভারতে মানবাধিকার লংঘনের মোট ৭৮ হাজারের বেশি ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪৭ হাজারটি ঘটেছে উত্তর প্রদেশে এবং প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ঘটেছে দিল্লিতে। এ ছাড়া বিহারে দুই হাজার সাতশ'র বেশি, রাজস্থানে প্রায় আড়াই হাজার ও মহরাষ্ট্রে ২১ শ'র বেশি এ জাতীয় ঘটনা ঘটেছে।
'এনএইচআরসি' ভারতে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনাকে শিশু, স্বাস্থ্য, কারগার, বিচারসহ ২১ ভাগে বিভক্ত করেছে। গত বছর উত্তর প্রদেশে পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করা হয়েছে। উত্তর প্রদেশে এ ধরণের অভিযোগ হয়েছে ১৮ হাজারেরও বেশি।
অথচ রাষ্ট্র (ইংরেজি: State) বলতে এমন এক রাজনৈতিক সংগঠনকে বোঝায় যা কোন একটি ভৌগোলিক এলাকা ও তৎসংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার সার্বভৌম ক্ষমতা রাখে। রাষ্ট্র সাধারণত একগুচ্ছ প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। এসব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ভৌগোলিক সীমার ভেতর বসবাসকারী সমাজের সদস্যদের শাসনের জন্য নিয়ম-কানুন তৈরি করে। যদিও একথা ঠিক যে রাষ্ট্র হিসেবে মর্যাদা পাওয়া না পাওয়া বহুলাংশে নির্ভর করে, রাষ্ট্র হিসেবে তার উপর প্রভাব রাখা ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির উপর।
বাংলা ভাষায় রাষ্ট্র শব্দটি ইংরেজি স্টেট শব্দের পারিভাষিক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইংরেজি স্টেট শব্দটি মূলত ল্যাটিন স্ট্যাটাস শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ অবস্থা। যা কখনো আইনানুগভাবে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে এমন ব্যক্তিদের অস্তিত্ব থাকা, কখনো বা রাজার অবস্থা আবার কখনো বা প্রজাতন্ত্রের অবস্থা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।
প্রাথমিক স্তরের রাষ্ট্রের অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায় যখনই ক্ষমতাকে টেকসইভাবে কেন্দ্রীভূত করা যায়। "কৃষি ও কলম" প্রায় সব ক্ষেত্রেই এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত। কৃষি, উদ্বৃত্ত ফসল উৎপাদন ও তার সঞ্চয়কে সম্ভব করে তুলেছে। এটাই পর্যায়ক্রমে এমন এক শ্রেণীর উদ্ভব সম্ভব করে তুলেছে যারা কৃষি উদ্বৃত্তের মজুত নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষা করতো। একই সাথে এই কাজে সময় ব্যায় করায় তারা ক্রমেই তাদের নিজেদের জীবিকানির্বাহী কর্মকান্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এছাড়াও রয়েছে লেখনীর বিকাশের ব্যাপারটি, যা প্রয়োজনীয় তথ্যের একত্রিত উপস্থাপন সম্ভব করেছে।
অনেক রাষ্ট্রচিন্তাবিদ বিশ্বাস করেন যে রাষ্ট্রের মূলসূত্র আদিবাসীদের সংস্কৃতিতে প্রোথিত। সে সংস্কৃতি মানুষের বোধের সাথে সাথে সেই কাঠামোকে উন্নত করেছে যা আদি পুরুষতান্ত্রিক ক্ষুদ্রসমাজের নজির, যেখানে দুর্বলের উপর সবলের দাপটই মূখ্য ছিলো। যাহোক, নৃবিজ্ঞানীদের মতে আদিবাসী গোষ্ঠীভিত্তিক সমাজে উল্ল্যেখ করা মত কোন কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ ছিল না। আর সেটাই সমাজগুলোকে বহুস্তরবিশিষ্ট করে তুলেছিলো।
বিশ শতকের শেষভাগ থেকে পৃথিবীর অর্থনীতিতে বিশ্বায়নের প্রভাব, শ্রম ও মূলধনের প্রবাহ এবং বহুসংখ্যক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্ভবের যৌথ প্রভাবে রাষ্ট্রসমূহের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে গিয়েছে। স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এই সীমাবদ্ধতার প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ হল পশ্চিম ইউরোপ যেখানে আন্তঃরাষ্ট্রীয় ঐক্যের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। যদিও ১৬ শতক থেকে এখনো রাষ্ট্রই বিশ্বের রাজনৈতিক একক। ফলে রাষ্ট্রকেই রাজনৈতিক পঠন পাঠনের মূল কেন্দ্রীয় বিষয় বলে মনে করা হয় এবং এর সংজ্ঞা নিয়েই তাত্ত্বিকদের মাঝে পাণ্ডিত্বপূর্ণ বিতর্ক সবচেয়ে বেশি হয়।
মানবতা আর মানবাধিকারের ফাঁকা বুলিতে পৃথিবী আজ শয্যাশায়ী। জীবন সায়াহ্নে মানবতার রূপও এমন হয় না। পুঁজিবাদী সমাজের আবিষ্কৃত দুই জিনিস আজ পৃথিবীতে শান্তির নামে অশান্তির ফেরি করছে। জাতিসঙ্ঘসহ সকল বিশ্ব সংস্থা মানবতার দোহাই দিয়ে পৃথিবীতে যতসব অমানবিক কাজ করতে দ্বিধা করছে না ।এমনকি অমানবিক কাজ হতে দেখেও না দেখার ভান করে "অনেক সময়"।
ম্যাক্স ওয়েবারের প্রভাববিস্তারী সঙ্গানুযায়ী রাষ্ট্র হচ্ছে এমন এক সংগঠন যা নির্দিষ্ট ভূখন্ডে আইনানুগ বলপ্রয়োগের সব মাধ্যমের উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণরাখে, যাদের মধ্যে রয়েছে সশস্ত্রবাহিনী, নাগরিক, সমাজ, আমলাতন্ত্র, আদালত এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সাম্প্রতিককালে রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়ার বিষয়ে মতভিন্নতার কারণে তাত্ত্বিক মহলে বেশ বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে এই আলোচনাকে কেন্দ্র করে যে ঠিক কিভাবে একটি "সার্থক রাষ্ট্র" এর অভ্যুদয়কে সমর্থন করা যেতে পারে।
লিখেছেন লুনিক ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০১২, দুপুর ১২:১৩ |
সংজ্ঞা
ব্যাপকার্থে সরকার বা প্রাচীন-আধুনিক সব অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানকেই রাষ্ট্র প্রত্যয়টির অংশ হিসেবে ধরা হয়। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার উল্ল্যেখযোগ্য সংখ্যক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যাদের সমন্বিত পদ্ধতির অংশ হয়ে ওঠাটা প্রথম স্পষ্টভাবে দেখা যায় ১৫ শতক নাগাদ। আর ঠিক সেসময়ই রাষ্ট্র প্রত্যয়টি তার আধুনিক অর্থ পরিগ্রহ করে। তাই রাষ্ট্র প্রত্যয়টি প্রায়ই নির্দিষ্ট করে শুধু আধুনিক রাজনৈতিক কাঠামোকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর স্বতন্ত্র পরিচয় থাকলেও তারা সম্পূর্ণভাবে সার্বভৌম নয়। এদের কর্তৃত্বের সীমা সেই সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে যা একই সাথে আংশিক বা অঙ্গরাষ্ট্রগুলোর সমান সার্বভৌমত্ব থাকা সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রটির রূপরেখা নির্ধারণ করে। রাষ্ট্র কাঠামোর রূপ বিভিন্ন স্তরে বিভিন্নভাবে সংগঠিত হতে পারে, যেমন – স্থানীয়/পৌর, প্রাদেশিক/আঞ্চলিক, যুক্তরাষ্ট্রীয় এমনকি সাম্রাজ্য বা জাতি-সংস্থার মত আন্তর্জাতিক রূপেও তা থাকতে পারে।
চলতি ধারণা অনুযায়ী দেশ, জাতি ও রাষ্ট্র প্রত্যয়গুলি প্রায়ই এমনভাবে ব্যবহৃত হয় যেন তারা সমার্থক; কিন্তু আরো সুচারু ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা যেতে পারে
- দেশ বলতে ভৌগোলিক এলাকা বোঝানো হয়।
- জাতি বলতে সেই জনগণকে বোঝানো হয়, যাদের রীতিনীতি, পূর্বপুরুষ, ইতিহাস ইত্যাদি একই। যদিও বিশেষণ হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শব্দদুটি দিয়ে সেইসব বিষয়কে বোঝানো হয় যেগুলি স্পষ্টতই রাষ্ট্র-সংশ্লিষ্ট; যেমন জাতীয় রাজধানী, আন্তর্জাতিক আইন।
- রাষ্ট্র সেইসব শাসনতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহকে বোঝায় যাদের একটি নির্দিষ্ট এলাকা ও জনগণের উপর সার্বভৌম কর্তৃত্ব আছে।
আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার উন্মেষধারা
নির্দিষ্ট ভূখন্ডে সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ তৈরির মাধ্যমে রাষ্ট্রের জনসম্পৃক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় ইউরোপে প্রাতিষ্ঠানীকিকরণের ক্রমোন্নতির হাত ধরে, যার সূচনা হয় পনের শতকের শেষভাগে, যা স্বৈরতন্ত্র এবং পুঁজিবাদের উত্থানের সাথে সাথে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছায়।
ইউরোপের পরিবারতান্ত্রিক রাজ্যগুলো ( ইংল্যান্ডের, স্পেনের এবং ফ্রান্সের) রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রণীত বিভিন্ন পরিকল্পনার আত্মীকরণ করে যা ক্রামাগত আধুনিক রাষ্ট্রের প্রাতিষ্ঠানিক বৈশিষ্ট্যের অনেকগুলিকেই সামনে নিয়ে আসে।
ইউরোপিয়ান রাজতন্ত্রগুলো ক্রমান্নয়ে ক্ষমতার অন্যান্য উৎসগুলোর কোন কোন্টিকে দমন আবার কোন কোনটিকে সহযোগী হিসেবে গ্রহণ করায় (চার্চ, সীমিত নোবলিটি) ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ একই সাথে রাজনৈতিক ক্ষমতা কর্তব্যের সীমানা স্পষ্ট করে এঁকে দেয়।
প্রায় ক্ষেত্রেই সীমানা নিয়ে বিবাদ ছিলো যে সামন্ত শাসনে, তার বদলে গড়ে ওঠে এককেন্দ্রীক রাষ্ট্রের, যার নির্দিষ্ট এলাকার উপর ব্যাপক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রক্রিয়া, ব্যাপকভাবে কেন্দ্রীভূত এবং ক্রমশ আমলাতন্ত্র নির্ভরপ্রবণ বিভিন্ন প্রকার একনায়কতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের জন্ম দেয়। সতের এবং আঠারো শতকে এটি ঘটে, যখন রাষ্ট্র ব্যবস্থার সমকালীন বৈশিষ্ট্যগুলো কাঠামোবদ্ধ রূপ লাভ করে। এতে অন্তর্ভুক্ত হয় নিয়মিত সেনাবাহিনী, কেন্দ্রীয় কর ব্যবস্থা, স্থায়ী দূতাবাসগুলোর সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতির উন্নয়ন ।
সাংস্কৃতিক ও জাতীয়তার অভিন্নতা আধুনিক রাষ্ট্রের উথ্থানে ব্যাপকবিস্তারী ভূমিকা রেখেছে। একনায়কতান্ত্রিক সময়কাল থেকেই রাষ্ট্রের সংগঠন বহুলাংশে জাতীয়তা নির্ভর। একথা স্পষ্ট হওয়া দরকার যে জাতীয় রাষ্ট্র আর জাতি-রাষ্ট্র এক বিষয় নয়। এমন কি নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের ঐক্য সবচেয়ে বেশি এমন সমাজেও রাষ্ট্র ও জাতির বৈশিষ্ট্য সমভাবে সঙ্গতিপূর্ণ হয়ে ওঠে না। ফলে প্রায়ক্ষেত্রেই ষেয়ার্ড সিম্বল ও জাতীয় পরিচয়ের উপর জোর দেয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্র জাতীয়বাদের প্রচার ও প্রসারে কাজ করে।
এই সময়কালেই রাষ্ট্র ব্যাপারটি বর্তমান অর্থের কাছাকাছি অর্থে রাষ্ট্র তত্ত্বের আলোচনায় ব্যবহৃত হতে থাকে। ১৫৩২ সালে প্রকাশিত দ্য প্রিন্স গ্রন্থে, আধুনিক অর্থে নির্দিষ্ট ভূ-খন্ডে সার্বভৌম সরকারক অর্থে রাষ্ট্রের ব্যবহারের জন্য কৃতিত্ব দেয়া হয় ম্যাকিয়াভেলিকে। যদিও ব্রিটিশ চিন্তাবিদ থমাস হব্সও জন লক এবং ফরাসি চিন্তাবিদ জেন বডিনের হাত ধরেই রাষ্ট্রের বর্তমান অর্থ পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়।
বর্তমানকালের অধিকাংশ রাষ্ট্রেই ম্যাক্স ওয়েবারের পলিটিক্স এ্যাজ ভোকেশন-এ বর্ণিত সংজ্ঞার মধ্যেই পড়ে। ওয়েবারের মতে আধুনিক রাষ্ট্র নির্দিষ্ট ভূ-খন্ডের ভেতর বলপ্রয়োগের সব মাধ্যমের উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে।
বলপ্রয়োগের এই যে একচ্ছত্র ক্ষমতা, তার আবার বিশেষ ধরণের। কারণ একে আবার আমধারণা অনুযায়ী আইনসিদ্ধ হতে হবে যে আইন ব্যাক্তি স্বার্থানু্যায়ী প্রণিত নয়।
আবার এমন রাষ্ট্রেরও অস্তিত্ব আছে যা ওয়েবারের সঙ্গার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। নির্দিষ্ট এলাকায় বলপ্রয়োগের মাধ্যমের উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নেই বা সেই বলপ্রয়োগের আমধারণা অনু্যায়ী আইনী ভিত্তি নেই এমন রাষ্ট্রও আছে যাদেরকে সামন্তসমাজের মত অন্যান্য কাঠামো থেকে পৃথক করা যায় আমলাতন্ত্রের উপর তাদের নির্ভরতা এবং বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করার বৈশিষ্ট্যের কারণে।
মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিকেরা আধুনিক রাষ্ট্রের উদ্ভবকে ব্যাখ্যা করেন সামাজিক শ্রেণীগুলোর ভেতর উপস্থিত শ্রেণী সংঘাতের ধারণার উপর ভিত্তি করে।
মানবাধিকার উন্নয়ন ও সুরক্ষার সংগ্রামে লিপ্ত থাকায় মানবাধিকারকর্মীরা প্রায় সরকারী বাহীনি ও বেসরকারী শত্র" কর্তৃক নির্যাতনের প্রথম শিকারে পরিনত হয়। তাদের জীবনের উপর হামলা, শারীরিক আক্রমন, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও মর্যাদা হননের মত সহিংসতার শিকার হওয়া নৈমত্তিক ব্যপার। আইনের মাধ্যমে সংগঠন, সমাবেশ, তথ্যপ্রাপ্তিসহ আন্দোলনের স্বাধীনতার মত মানবাধিকার কার্যক্রমকে অবৈধ ঘোষনা করে নির্যাতন চালানো হয়। বিচার বিভাগীয় নিষ্পেষন ও শারীরিক সহিংসতার মাধ্যমে অনেক সময় মানবাধিকার কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্থ করা হয়। মানবাধিকার কর্মীরা রাষ্ট্র কর্তৃক হয়রানী, হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং চাকুরী হারানো, কাজের অধিকার, চিকিৎসার অধিকার, ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার অধিকার অস্বীকার করাসহ বসতবাড়ী, জমিজমা ও নাগরিকত্ব হারানোর মতো নির্যাতনেরও শিকার হন। এমনি মানবাধিকার কর্মীর আত্বীয়স্বজন ও তাদের শুভাকাংখীরাও সংহিসতার শিকারে পরিনত হন। জাতিসংঘ সাধারন পরিষদ রেজুল্যুশন ৫৪/১৭০ অনেক রাষ্ট্রের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা সুরক্ষা ও উন্নয়নে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গদের হুমকি, হয়রানী ও নিরাপত্তাহীনতার সম্মূখীন হওয়ার বিষয়ে বিশেষভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
মানবাধিকারকর্মী কে?
যে ব্যাক্তি ব্যক্তিগতভাবে বা অন্যের সহযোগে মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন তিনি একজন মানবাধিকার কর্মী।[৮] মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নের আন্দোলনে মানবাধিকার কর্মীরা মুখ্য ভুমিকা পালন করে। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগনের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনের মাধ্যমে গনতান্ত্রিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে মানবাধিকারকর্মীরা অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। মানবাধিকারকর্মীরা সামাজিক, রাজনৈতিকও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপা উত্তেজনা প্রশমন, রাষ্ট্রীয় ও আন্তজাতিক শান্তিপূর্ন পরিবেশ বজায় রাখা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংগনে মানবাধিকার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে পৃষ্ঠপোষকতা করে। তারা মানবাধিকার উন্নয়ন ও সুরক্ষা করতে জাতিসংঘের আওতায় আঞ্চলিক ও অন্তর্জাতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার ভিত্তি গঠনে কাজ করে।
জাতিসংঘ মানবাধিকারকর্মী ঘোষনা গ্রহন:
পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে মানবাধিকারকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করে বিনা বাঁধায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ দিতে জাতিসংঘ প্রস্তাবনা এ/রেস/৫৩/১৪৪[৯] মাধ্যমে ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘ মানবাধিকারকর্মী ঘোষনা গ্রহন করে। মানবাধিকারকর্মীদের অধিকার ও কর্তব্য বিষয়ে একটি ঘোষনা গ্রহন করতে জাতিসংঘ ১৯৮৪ সাল থেকে আলোচনা শুরু করে এবং জাতিসংঘ সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনাপত্রের অর্ধশত বছর পুর্তিতে ১৯৯৮ সালে সাধারন পরিষদ কর্তৃক মানবাধিকারকর্মী ঘোষনা গ্রহনের মাধ্যমে তা সম্পন্ন হয়। অনেক সংখ্যক বেসরকারী মানবাধিকার সংগঠন ও রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিদের আন্তরিক সমন্বিত প্রচেষ্টা অতি প্রয়োজনীয় এই ঘোষনা চুড়ান্ত করতে সহযোগীতা করেছে। এই ঘোষনা শুধুমাত্র মানবাধিকারকর্মী ও রাষ্ট্রকেই নয়, সকলকে সমগুরুত্ব প্রদান করেছে। আমাদের প্রত্যেকের মানবাধিকারকর্মী হিসেবে কাজ করার সুযোগ আছে মর্মে এই ঘোষনা প্রকাশ করে। তাছাড়া, আমাদের প্রত্যেকের সার্বজনীন মানবাধিকার আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে এই ঘোষনা গুরুত্ব প্রদান করেছে। জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহিত মানবাধিকারকর্মীদের অধিকার সংক্রান্ত এই ঘোষনার পুরো নাম "সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন এবং সংস্থা সমূহের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কিত ঘোষনা" সংক্ষেপে "জাতিসংঘ মানবাধিকার কর্মী ঘোষনা" হিসেবে পরিচিত।
আইনগত বাধ্যবাধকতা:
জাতিসংঘ মানবাধিকারকর্মী ঘোষনা-১৯৯৮ এর নিজস্ব কোন আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। তবে ইহা আইনগত বাধ্যবাধকতা সম্পন্ন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি যেমন-নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি (আইসিসিপিআর) ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে অনেকগুলো নীতি ও অধিকারের সমন্বয়ে গৃহীত হয়েছে। তাছাড়া, এই ঘোষনা জাতিসংঘ সাধারন পরিষদে ঐক্যমতের ভিত্তিতে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি কর্তৃক বাস্তবায়নে সুদৃঢ় অংগীকারের ভিত্তিতে গৃহীত হয়েছে এবং বর্তমানে রাষ্ট্রসমুহ ক্রমবর্ধমানভাবে এই ঘোষনাকে তাদের রাষ্ট্রীয় আইনের মত বাধ্যবাধক হিসেবে গ্রহনের বিষয়টি বিবেচনা করছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকারকর্মী ঘোষনা-১৯৯৮ মানবাধিকারকর্মীদের কাজের প্রতি সমর্থন ও তাদের সুরক্ষা প্রদান করে। ইহা নতুন কোন অধিকার সৃষ্টি করে না, কিন্তু মানবাধিকার কর্মীদের জন্য বিদ্যমান অধিকারসমুহ কার্যক্ষেত্রে সহজে ব্যাবহারের সুযোগ সৃষ্টি করে। ইহা মানবাধিকারকর্মী ও সংগঠনের আর্থিক তহবিল প্রাপ্তি সহজলভ্য করা ও মানবাধিকার লংঘন ও মানবাধিকার মানদন্ড বিষয়ক তথ্য বিনিময় সহজীকরনের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। রাষ্ট্রীয় আইনের সাথে এই ঘোষনার সম্পর্ক বাখ্যা করাসহ রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং মানবাধিকার রক্ষাকালে প্রত্যেকের কর্তব্যসমুহ এই ঘোষনায় সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। ইহা গুরুত্বপূর্ন যে মানবাধিকারকর্মীদের অধিকার সংক্রান্ত এই ঘোষনার অধীনে শান্তিপূর্নভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
মানবাধিকার কর্মীদের অধিকার ও সুরক্ষা:
জাতিসংঘ মানবাধিকারকর্মী ঘোষনা-১৯৯৮ এর ১, ৫, ৬,৭,৮,৯,১১,১২ ও ১৩ নং ধারা মানবাধিকারকর্মীদের নিম্নলিখিত অধিকারসহ সুনির্দিষ্ট সুরক্ষা প্রদান করে:
১) জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবাধিকার পাওয়া ও সুরক্ষা চাওয়া;
২) ব্যক্তিগত ভাবে এবং অন্যের সঙ্গে সংঘবদ্ধ হয়ে মানবাধিকার রক্ষামুলক কাজ পরিচালনা করা;
৩) সমিতি ও বেসরকারী সংস্থা গঠন করা;
৪) শান্তিপূর্ণভাবে সাক্ষাৎ এবং সমাবেশ করা;
৫) মানবাধিকার সম্পর্কিত তথ্য চাওয়া, পাওয়া, গ্রহন ও ধারন করা;
৬) নতুন মানবাধিকার ধারনা ও নীতিসমুহের উন্নয়ন ও আলোচনা করা এবং তাদের স্বীকৃতির জন্য তদ্বির করা;
৭) সরকারী কর্তৃপক্ষ ও সংস্থা এবং বেসরকারী সংগঠন যারা সরকারী সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে, তাদের নিকট কার্য়ক্রম উন্নয়নের প্রস্তাব পেশ করা এবং তাদের কার্যক্রমে যদি কোন মানবাধিকার ব্যাহত হয়, তবে সে ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষন করা;
৮) মানবাধিকার সংশ্লিষ্ট সরকারী নীতি ও আইনের বিষয়ে অভিযোগ করা এবং সে অভিযোগ পুনরীক্ষন করা;
৯) মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকার রক্ষার স্বার্থে পেশাগতভাবে যোগ্যতা সম্পন্ন আইনী সহায়তা অথবা অন্যান্য প্রায়োজনীয় সাহায্য প্রদান করা;
১০) দেশীয় আইন এবং প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা ও প্রতিশ্র"তি মেনে চলা হচ্ছে কিনা সে সম্পর্কে মতামত তৈরী করার জন্য প্রকাশ্য শুনানী, কার্যক্রম এবং মামলায় উপস্থিত থাকা;
১১) বেসরকারী এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থার সঙ্গে বাঁধাহীনভাবে যোগাযোগ স্থাপন করা;
১২) ফলপ্রসু প্রতিকার পাওয়া;
১৩) মানবাধিকার কর্মীর পেশা ও বৃত্তি আইন সংগতভাবে অনুশীলন করা;
১৪) রাষ্ট্র কর্তৃক সংঘটিত কাজের ফলে মানবাধিকার লংঘিত হলে তার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ন উপায় বা কাজের মাধ্যমে প্রতিবাদ করলে জাতীয় আইনের মাধ্যমে কার্যকর সুরক্ষা পাওয়া; এবং
১৫) মানবাধিকার রক্ষার উদ্দেশ্যে সম্পদ প্রাপ্তির অনুরোধ, গ্রহন ও ব্যবহার করা।
রাষ্ট্রের দায়িত্ব:
মানবাধিকারকর্মী ঘোষনা-১৯৯৮ এর সব প্রোভিশন বস্তবায়ন করা ও মেনে চলা সকল রাষ্ট্রের দায়িত্ব। যাহোক, ২, ৯, ১২, ১৪ এবং ১৫ নং ধারা রাষ্ট্রের নিম্নলিখিত দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দিষ্ট করাসহ তার ভুমিকা বিষদভাবে উল্লেখ করেছে:
১) সকল মানবাধিকার সুরক্ষা, উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন করা;
২) মানবাধিকারকর্মীর সামাজিক, অথৃনৈতিক, রাজনৈতিকও অন্যান্য অধিকার ও স্বাধীনতা বাস্তবে নিশ্চিত করা;
৩) মানবাধিকারকর্মীর অধিকার ও স্বাধীনতা কার্যকারভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইনগত, প্রশাসনিক ও অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহন করা;
৪) মানবাধিকার লংঘনের শিকার ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় কার্যকর প্রতিকার প্রদান করা;
৫) মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করা;
৬) মানবাধিকারকর্মী ঘোষনা'র আওতাধীন কোন অধিকার আইন সংগতভাবে অনুশীলন করার ফলে তার বিরুদ্ধে সহিংসতা, হুমকি, প্রতিশোধ, জবরদস্তিমূলক বৈশম্য, চাপ অথবা অন্য কোন স্বেচ্ছাচারী ব্যাবস্থা গ্রহনের হাত থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা;
৭) নাগরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কে গনসচেতনতামুলক কার্যক্রম বৃদ্ধি করা;
৮) সকল স্তরের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ও পেশাভিত্তিক প্রশিক্ষন কার্যক্রমে মানবাধিকার শিক্ষা অন্তর্ভূক্ত করা।
ব্যক্তিগত কর্তব্য:
মানবাধিকার কর্মী ঘোষনা-১৯৯৮ সবায়কে সমাজের প্রতি ও সমাজের মধ্যে এবং মানবাধিকারকর্মী হিসেবে সমাজে ভুমিকা রাখতে উৎসাহ প্রদানের বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করেছে। এই ঘোষনার ১০, ১১, ১৮ নং ধারা প্রত্যেকের মানবাধিকার উন্নয়ন, গনতন্ত্র রক্ষা ও অন্যের অধিকার লংঘন না করার দায়িত্ব আরোপ করেছে। ১১ নং ধারা সেসব পেশা, যা অনুশীলনের সময় অন্যের অধিকার লংঘিত হওয়ার সম্ভা^াবনা থাকে, বিশেষত পুলিশ সদস্য, আইনজীবী ও বিচারকদের কর্তব্য সম্পর্কে গুরুত্ব আরোপ করেছে।
জাতীয় আইনের ভূমিকা:
জাতিসংঘ মানবাধিকার কর্মী ঘোষনা-১৯৯৮ এর ৩ ও ৪ নং ধারা এই ঘোষনার আলোকে আন্তর্জাতিক ও রাষ্ট্রীয় আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে মানবাধিকারের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ আইনগত মানদন্ড অনুসরনের নিশ্চয়তা প্রদান করেছে।
বাংলাদেশ জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্র এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক চুক্তিসমুহের পক্ষভুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে তা বাস্তবাস্তবানে বাধ্যবাধকতার কারনে মানবাধিকারকর্মীর অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ মানবাধিকারকর্মী ঘোষনা-১৯৯৮ বাস্তবায়নে অংগীকারাবদ্ধ। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার সে প্রতিশ্র"তির বাস্তবায়ন না করে মানবাধিকারকর্মীদের নির্যাতন, হুমকি, গ্রেফতার, মিথ্যা মামলায় জড়ানো, ভয়-ভীতি প্রদর্শনসহ হয়রানি করে প্রতিনিয়ত তা লংঘন করে চলেছে। সরকারের এখনই প্রয়োজন আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতাকে সম্মান দেখিয়ে প্রয়োজনে জাতিসংঘ মানবাধিকার কর্মী ঘোষনা-১৯৯৮ আলোকে মানবাধিকারকর্মী (অধিকার ও সুরক্ষা) আইন প্রনয়নের মাধ্যমে মানবাধিকারকর্মীদের অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
কিষেণজির সঙ্গীরা সক্রিয়ই, চিন্তায় পুলিশ | ||||||||
'অপারেশন এক্স' সফল। কিন্তু 'অপারেশন কে জে'? 'অপারেশন এক্স' কী, পুণের ইয়েরওয়াডা জেলে আজমল আমির কসাবের ফাঁসির পরে জেনেছে দেশ। ঠিক এক বছর আগে ঝাড়গ্রামের বুড়িশোলের জঙ্গলে মাওবাদীদের শীর্ষ নেতা কিষেণজির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযান শুরুর সময়ে তার কোনও নাম দেওয়া হয়নি। কিষেণজি নিহত হওয়ার পরেই সিআরপি ওই অভিযানকে অভিহিত করেছিল 'অপারেশন কে জে' নামে। কিন্তু 'অপারেশন এক্স'-এর মতো 'অপারেশন কে জে'-ও যে পুরোপুরি সফল, বুক বাজিয়ে তা বলতে পারছেন না স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারা। কেন? কারণ, কিষেণজির ছায়াসঙ্গীদের আতঙ্ক এখনও তাঁদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এক বছর তল্লাশি চালিয়েও ধরা যায়নি আকাশ ওরফে অসীম মণ্ডল এবং বিকাশ ওরফে সিঙ্গরাইল টুডুকে। দু'জনেই মাওবাদীদের রাজ্য কমিটির সদস্য। বিকাশ আবার পার্টির সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনেরও সদস্য। অধরাদের তালিকায় রয়েছে পার্টির রাজ্য মিলিটারি কমিশনের সদস্য রঞ্জিত পাল ওরফে রাহুলের মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতার নামও। | ||||||||
| ||||||||
কিষেণজির মৃত্যুর পরে পুলিশ-কর্তাদের ধারণা হয়েছিল, ছত্রভঙ্গ মাওবাদী নেতাদের সহজেই কাবু করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে প্রথমে সুচিত্রা মাহাতোর আত্মসমর্পণ, মাওবাদীদের রাজ্য কমিটির সদস্য অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম, কলকাতা সিটি কমিটির সম্পাদক অভিষেক মুখোপাধ্যায় ওরফে অরণ্য এবং নয়াগ্রাম-গোপীবল্লভপুরে মাওবাদীদের এরিয়া কম্যান্ডার রঞ্জন মুন্ডাকে গ্রেফতার করা ছাড়া তেমন কোনও সাফল্য আসেনি বলে ধারণা পুলিশ-কর্তাদের একাংশেরই। এর মধ্যেই নতুন একটি বার্তায় ফের উদ্বেগ বেড়েছে স্বরাষ্ট্র দফতরের। কিষেণজি-হত্যার বদলা নিতে এবং সমর্থকদের চাঙ্গা করতে কিষেণজির জায়গায় আসছেন কাদরি সত্যনারায়ণ রাও ওরফে কোসা। ২০১০-এর এপ্রিলে দান্তেওয়াড়ায় সিআরপি-র প্রায় ৮০ জন জওয়ানকে হত্যার অন্যতম মূল চক্রী কোসা, জঙ্গলমহলে ফের আঘাত হানতে চলেছেন বলে গোয়েন্দা-বার্তায় জানানো হয়েছে। তাই 'অপারেশন কে জে'-র বর্ষপূর্তিতে সাফল্য উদ্যাপন করবেন কি, উল্টে ব্যর্থতার কাঁটাই যেন খচখচ করছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্তাদের মনে। সিআইডি-র ডিরেক্টর জেনারেল ভি ভি থাম্বির কথায়, "কিষেণজি নিহত হয়েছে ঠিকই। কিন্তু জঙ্গলমহলে সুচিত্রা মাহাতো ছাড়া তার ছায়াসঙ্গীদের প্রায় কেউই ধরা পড়েনি। রঞ্জিত পাল আকাশ, বিকাশ, জয়ন্তেরা জঙ্গলমহলের কোনও গ্রামে রাত কাটিয়ে ঝাড়খণ্ডে চলে যাচ্ছে। ফের সমস্যা তৈরিতে এই ক'জনই তো যথেষ্ট। ওদের সকলকে ধরার আগে আত্মসন্তুষ্টির কোনও জায়গা নেই।" থাম্বির বক্তব্য, কিছু দিনের মধ্যেই পুরোদমে শীত পড়ে যাবে। রাত বড়, দিন ছোট। নাশকতা ঘটানোর উপযুক্ত সময়। "এই সময়ে ভীষণ সতর্ক থাকতে হবে আমাদের," বলছেন সিআইডি-প্রধান। রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ বা আইবি-র অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল বাণীব্রত বসুও বললেন, "কিষেণজির মৃত্যুর পরে এক বছর কেটে গেলেও ওই সব মাওবাদী নেতাকে ধরতে না-পারাটা অবশ্যই সমস্যার বিষয়।" অন্য সমস্যাও আছে। সেটা হচ্ছে প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামগুলোয় মাওবাদীদের জনভিত্তি নির্মূল করতে না পারা। গোয়েন্দারা জেনেছেন, কিষেণজি এবং তাঁর সঙ্গীরা পিছিয়ে পড়া ওই সব এলাকার মানুষদের আপদে-বিপদে পাশে দাঁড়াতেন। ঘনঘন চিকিৎসা শিবির করতেন। বিনামূল্যে ওষুধও বিলি হত। এই সব কাজের মধ্য দিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে তাঁর হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। কিষেণজির সঙ্গীরা এখনও তারই সুফল পাচ্ছে, ধারণা গোয়েন্দাদের। তাঁরা বলছেন, বাসিন্দাদের সহানুভূতি কিছুটা অটুট আছে বলেই রাতে গ্রামে সভা করেও সহজেই ঝাড়খণ্ডে গা-ঢাকা দিতে পারছে বিকাশ, রঞ্জিতেরা। http://www.anandabazar.com/24raj1.html
|
http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=32632
বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার লংঘনের খতিয়ান (১)
২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:১৫ |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর এক নম্বর সুপার পাওয়ার সমৃদ্ধ দেশ। বর্তমান পৃথিবীর সকল অশান্তির মূল ঘটক এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে মানবতা ধ্বংস ও মানবাধিকার লংঘনের মধ্যে দিয়ে। তাইতো প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম, দস্যুবৃত্তি ও মানবাধিকার লংঘন করেই চলেছে। যেন সৃষ্টিকর্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পৃথিবীর গজব হিসাবে পাঠিয়েছেন। দেশে দেশে মানবতা ধ্বংস ও মানবাধিকার লংঘন করে এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিহাসের খলনায়ক হয়ে পরবর্তীতে বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি সম্পন্ন দেশে পরিনত হয়েছে। বিশ্বের পরাশক্তি হতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়েছে, সৃষ্টি করতে হয়েছে অনেক ইতিহাস। এ ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেই ঘৃণিত রুপটি, যা মানবত ধ্বংস, মানবাধিকার লংঘন এবং গোটা পৃথিবীকে ত বিত করুণ ইতিহাস। দস্যুবৃত্তিই ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান পেশা। আজ যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধন সম্পদ, সহায় সম্পত্তি, টাকা-পয়সা সবই বিভিন্ন দেশ থেকে জোর পূর্বক দস্যুতা ও প্রতারণার মাধ্যমে আদায় করা। এরা মূলত পরের ধন সম্পদের উপরই পুদ্দারী করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দস্যুতার শিকার হয়নি পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই। কিভাবে তারা মানবতা ও মানবাধিকারকে গলাটিপে হত্যা করেছে, সুন্দর এ পৃথিবীকে করেছে রক্তাক্ত, করছে ধ্বংসস্তুপে। যেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবী ধ্বংসের দানব রুপে আর্বিভূত হয়েছেন। তাদের আগ্রাসনের শিকার হয়নি এমন দেশ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। পৃথিবীর পরাশক্তি হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন সবার উপরই খবরদারী শুরু করেছে । এমনকি জাতিসংঘের মহাসচিবের উপরও গোয়েন্দা নজরদারী করতে দ্বিধা করেনি তারা। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বিকল্প গণমাধ্যম উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া তার বার্তায় উঠে এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দস্যুবৃত্তির নানা অজানা কাহিনী। তাদের আসল চেহারা পৃথিবীবাসীর সামনে উন্মোচন করে দিয়েছে এ বিকল্প গণমাধ্যম। মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা সেজে মানবাধিকার ধ্বংসের মহানায়ক হয়ে যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম তারা চালিয়েছে তা কিছুটা হলেও তুলে ধরেছে উইকিলিকস। যা টনক নাড়িয়ে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। তারাই পৃথিবীটাকে যেমন ইচ্ছা চালাচ্ছে। তাইতো সকল দেশ তাদেরকে সমীহ করে চলে। দুর্বল রাষ্ট্রগুলো তাকে সন্তুষ্ট করার জন্য ব্যস্ত থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ মানবতা ধ্বংসের নেতৃত্ব দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্টগণ। যারা ইতিহাসে মানবতা ধ্বংসের জন্য কুখ্যাত হয়ে রয়েছেন। কিন্তু পৃথিবীতে কোন সাম্রাজ্যবাদই চিরস্থায়ী হয়নি। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদও হবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই ধ্বংসের সীমানায় পৌছে গেছে। বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব খর্বের কথা প্রকাশ পেয়েছে এফবিআইয়ের সা¤প্রতিক রির্পোটগুলোতে। কথায় আছে আলো নিবানোর আগে নাকি একটু বেশিই জ্বলে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও পতনের আগে একটু বেশি কুকর্ম করে নিচ্ছে। এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবতা ধ্বংস, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, দস্যুতা বর্ণনা করতে গেলে একটি বিরাট আকৃতির বই হয়ে যাবে। কারণ তাদের কুকর্মের ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ। কিন্তু সচেতন পৃথিবীবাসী ও পৃথিবী গড়ার কারিগর এ তরুণ সমাজের উদ্দ্যেশে আংশিক কুকর্মের বর্ণনা পেশ করা হল, যাতে সাম্রাজ্যবাদ ধ্বংসের নায়করা এর গুরুত্ব অনুধাবন করে সাম্রাজ্যবাদের শিকড়কে পৃথিবী থেকে উপড়ে ফেলে, একটি শান্তি, সুখের নির্মল পৃথিবী গড়তে পারেন।
* শ্যাময়েল হান্টিংটন একজন ইহুদী পন্ডিত। 'সভ্যতার সংঘাত' নামে একটি বই লিখেছেন তিনি। পুস্তকের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় পাশ্চাত্য সভ্যতার অস্তিত্বের জন্য ইসলামকে হুমকি হিসাবে উপস্থাপন করা । এটাও প্রমাণ করা যে, ইসলাম ও মুসলিমের সাথে বস্তুবাদী কথিত গণতান্ত্রিক পাশ্চাত্য সভ্যতার দ্বন্ধ এবং সংঘাত অনিবার্য। তার এই ত্বত্ত আমেরিকা ও ইউরোপের বৈদেশিক নীতির মূল চালিকাশক্তি। বৈদেশিক নীতি ছাড়াও আর্ন্তজাতিক যে কোন ইস্যু এবং অভ্যন্তরীন নীতি নির্ধারনে আমেরিকা ও ইউরোপ ইসলাম ও মুসলমানদেরকে প্রতিপ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিশ্বের তাবৎ সম্পদের সিংহ ভাগ নিয়ন্ত্রন করে ইহুদী ও খিষ্টান বলয়াধীন শক্তিগুলো । প্রায় সত্তর ভাগ মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় ইহুদীদের দ্বারা। আমেরিকা ও ইউরোপের সরকারগুলো কার্যত ইহুদী খৃষ্টান স্বার্থ সংরণে শতভাগ নিষ্ঠাবান। তারা মানবতাকে পদদলিত করে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট পন্থায়। তারা তখনই হিংস জানোয়ার হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। যখন তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ নিয়ে কতটা হীন, ঘৃন্য, জঘন্য ও পাপিষ্ট হতে পারে শয়তানের প্রতিভূ হতে পারে, তার একটি খন্ড চিত্র নিম্নে প্রদান করা হল:
১. আফগানিস্তানে তালেবান নির্মূলে ইঙ্গ-মার্কিন সামরিক অভিযান এখনো চলছে। কলম্বাসের আমেরিকা ও ভাস্কোদাগামার ভারতে আসার নৌপথ চিহিৃত করার পর ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গরা বিশ্বব্যাপী খৃষ্টীয় প্রধান্য বিস্তারের ল্েয যে আগ্রাসন, হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল। আফগানিস্তানে হামলা তারই আধুনিক সংস্করণ।
২. কলম্বাস আমেরিকা যাবার পথ চিহিৃত করার পর ব্যবসা ও ধর্ম প্রচারের ল্েয দলে দলে ইউরোপীয় শ্বেতাঙ্গরা আমেরিকা যাতায়াত শুরুকরে দেয়। তবে মূল কাজ ছিল দস্যুতা। আমেরিকার বা আদিবাসী যারা রেড ইন্ডিয়ান বলে চিহিৃত, তাদের সহায় সম্পত্তি শক্তিবলে দখল করা। আমেরিকার শ্বেতাঙ্গদের উল্লেখযোগ্য ব্যবসা ছিল দাস ও মাদক ব্যবসা। আর উভয় প্রকার ব্যবসাই ছিল রেড ইন্ডিয়ানদের স্বার্থবিরুধী। দাস ব্যবসার মাধ্যমে যেখানে তারা নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করত এবং এই শক্তি দিয়ে রেড ইন্ডিয়ানদের উপর হামলা চালাত। তাদের জমাজমি দখল করে নির্দোষ দাসত্বের মাধ্যমে চাষাবাদ করাত। আর মাদক ব্যবসার মাধ্যমে গোটা অধিবাসীদের মধ্যে মাদকাসক্তি ছড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। সেখানে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী শ্বেতাঙ্গরা রেড ইন্ডিয়ানদের সংখ্যালঘুতে পরিনত করার জন্য সংক্রামক ও মরণব্যাধী ছড়ায়, ব্যাপক মাদকাসক্তির বিস্তার ঘটায়। নির্বিচারে গণহত্যা চালায় ও পালের পর পাল বুনো মেষ হত্যা করে পরিকল্পিত খাদ্য সংকট ও দুর্ভি সৃষ্টি করে। আজকে ওবামা বুশের পূর্ব পুরুষরা যারা ধর্মীয় উন্মাদের হাত থেকে বাচাঁর জন্য ইউরোপ থেকে পালিয়ে আমেরিকা গিয়েছিল, তারা আনন্দ উল্লাসের জন্য রেড ইন্ডিয়ানদের ও তাদের খাদ্যের প্রধান উৎস বুনো মেষ হত্যা করত।
এর ফলে আধিবাসীরা এক পর্যায়ে রোগ ব্যাধি, খাদ্যভাব ও গণহত্যার শিকার হয়ে সংখ্যালগু জনগোষ্ঠিতে পরিনত হয় এবং বহিরাগতদের নির্দেশে অনুর্বর ও অস্বাস্থ্যকর স্থানে অমানবিক পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হয়। বর্তমানে সভ্যতার ছোঁয়া থেকে তারা সম্পূর্ণ বঞ্চিত। দিন দিন তাদের সংখ্যা কেবল হ্রাসই পাচ্ছে। এ হল আমেরিকার আদি ইতিহাস!!
৩. ইউরোপীয়রা যখন প্রথম আমেরিকায় পর্দাপন করে। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় এক কোটি দশ লাখ আদিবাসী বাস করত। ইউরোপীয় গণহত্যার কারণে বর্তমানে সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় এদের সংখ্যা এসে দাড়িয়েছে দশ লাখেরও নীচে। কানাডায় মাত্র পাঁচ লাখের মত রেড ইন্ডিয়ান বেঁচে আছে যা সেখানকার মোট জনসংখ্যার এক শতাংশ মাত্র। তবে তারা যে পরিবেশে বাস করতে বাধ্য হচ্ছে তাতে এপিচি, মাইকান, সুবিকেট, বিউথাক, নারাংগানসেট, ওয়াম, পানাগ প্রভূতি উপজাতীয়দের মত নিশ্চিহৃ হতে বেশি সময় লাগবে না। শ্বেতাঙ্গদের নির্মূল অভিযানের শিকার হয়ে এসব উপজাতি সমূহ নিশ্চিহৃ হয়ে যাচ্ছে।
৪.আমেরিকার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর শ্বেতাঙ্গরা মার্কিন নাগরিক পরিচয়ে বাণিজ্যের নামে রণপ্রস্তুতি নিয়ে এশিয়ার উদ্দ্যেশে তরী ভাসায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাত্র কয়েক বছর পরই মার্কিন বাণিজ্য ও রণতরী মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় গিয়ে হাজির হয়। প্রথমে তারা শুরু করে আদিম ব্যবসা যা প্রাচ্যের জাতিসংঘের কাছে গর্হিত অপরাধ হিসাবে চিহিৃত। প্রথমে এই ব্যবসায় বৃটিশরা মনোনিবেশ করে। পরে মার্কিনীরা এতে ভাগ বসায়। এই ব্যবসায় শতকরা ৫শ ভাগের বেশি লাভ হত। এই লাভজনক ব্যবসাকে নিরাপদ করার ল্েয মার্কিনীরা উঠেপড়ে লাগে।
৫. মার্কিন বণিকরা ইজমির ও অটোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে আফিম ক্রয় করে ভূমধ্য সাগরে পাড়ি দিয়ে আটলান্টিক সাগর হয়ে উত্তমাশা অন্তরীপ ঘূরে ভারত মহাসাগর ও দণি চীন সাগর দিয়ে চীনের ক্যান্টনে নিয়ে যেত। এ জন্য তাদেরকে মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া ও আধুনিক লিবিয়ার জলসীমা ব্যবহার করতে হত। বাণিজ্য তরীগুলো এসব দেশের বন্দর থেকে খাদ্য ও পানীয় সংগ্রহ করত। সেজন্য এসব দেশকে মার্কিন বণিকদের বড় অংকের কর দিতে হত। যা মার্কিন সরকার ১৭৮৭ সালে মার্কিন বণিকদের নিরাপত্তা বিধান ও আনুষাঙ্গিক সুবিধা প্রদান সংক্রান্ত একটি স্বার করতে মরক্কোকে বাধ্য করে। একই ধরণের চুক্তি স্বার করতে ১৭৯৬ সালে লিবিয়াকে এবং ১৭৯৭ সালে তিউনিসিয়াকে বাধ্য করে।
৬. এতেও মার্কিনীরা সন্তুষ্ট হল না। তারা উল্লেখিত দেশ গুলোর ওপর নিজস্ব নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার জন্য ১৮০১-১৮০৫ সাল পর্যন্ত প্রথমে লিবিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহন করে। মার্কিন রণতরীর বহর লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলী অবরোধ করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেফারসনের অনুমোদনক্রমে যুদ্ধমন্ত্রী চিমোথি পিকারিং এর নির্দেশে তিউনিসিয়া ও লিবিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল যথাক্রমে উইলিয়াম এটন ও জমস এল ক্যাথকাট লিবিয়ায় সামরিক অভ্যূথান ঘটানোর ষড়যন্ত্র শুরু করে। ল্েয পৌছার জন্য তারা লিবিয়ার শাসকের ভাই মিসরে নির্বাসিত হামেদ করমানের সাথে চুক্তি করে। মতা দখলের জন্য মার্কিনীরা তাকে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য করবে এই শর্তে যে, তিনি মার্কিনীদের বাণিজ্য শুল্ক বৃদ্ধি করবেন। পাশাপাশি তিউনিসিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল উইলিয়াম এটমকে তার সেনাবহিনীর সর্বাধিনায়ক করবে। অতঃপর এটম ও কারমনেলির সমর্থকরা মার্কিন মেরিন সেনা ও নৌ বাহিনীর গোলন্দাজ বাহিনীর সমর্থনে লিবিয়ার দেরনা শহর দখল করে নেয়। এ অবস্থায় ত্রিপলীর শাসনকর্তা ইউসুফ কারমানলি মার্কিনীদের সাথে এক অসম চুক্তি সম্পাদনে বাধ্য হন। এটম লিবিয়ার সেনাবাহিনীর প্রধানের পদটি দখল করে । এই কৃতিত্বের জন্য ম্যাসাচুয়েটস কর্তৃপ তাকে দশ হাজার একর ভূ-সম্পত্তি উপহার দেয়। একই কায়দায় অনুরুপ একটি চুক্তি সম্পাদনে করতে বাধ্য করা হয় মরক্কোকেও। এভাবে করে মার্কিনীরা দস্যুতার মাধ্যমে আস্তে আস্তে পৃথিবীতে সাম্র্যাজ্যবাদের কালো হাত প্রসারিত করে।
৭. লিবিয়া ও মরক্কোকে মার্কিন পরিকল্পনা সফল হবার পর তারা নজর দেয় কিউনিসিয়ার প্রতি। তিউনিসিয়ায় হামলা চালানোর অজুহাত দাঁড় করানোর জন্য সেখানকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত শাসনকর্তার সাথে ঔদ্ধাত্যপূর্ণ আচরণ করতে থাকে। ফলে শাসনকর্তা তাকে দেশ থেকে বহিস্কার করতে বাধ্য হন। আর সেই অজুহাতে ১৮০৫ সালের ১লা আগষ্ট জন রজার্ট এর নেতৃত্বাধীন মার্কিন নৌ বহর কোন প্রকার সতর্কবানী ছাড়াই তিউনিসিয়ায় প্রচন্ড গোলাবর্ষন শুরু করে। পাশাপাশি রজার্ট তিউনিসিয়ার শাসকের কাছে একটি চুক্তির খসড়া পাঠিয়ে বলেন, এতে স্বার না করলে তার রাজধানীকে গোলার আঘাতে গুড়িয়ে দেয়া হবে। বাধ্য হয়ে সরকার প্রধান সে অসম চুক্তিতে স্বার করেন।
৮. ১৮১৫ সালে কমোডর স্টিফেন ডেকাডুর ও কমোডর উইলিয়াম ব্রিজের নেতৃত্বে জলদস্যু দমনের নামে দু-স্কোয়াড্রন মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ আলজেরিয়ার উপকূলে এসে হাজির হয়। আলজেরিয়ার জনগণকে ধোঁকা দেয়ার জন্য জাহাজে বৃটিশ পতাকা উড়িয়ে স্কোয়াড্রন দু'টি পোতাশ্রয়ে প্রবেশ করে আলজেরীয় নৌ-বহরকে ধ্বংস করে দেয়। এর পর আলজিয়ার্স শহরের উপর প্রচন্ড গোলা বর্ষন শুরু করে । পাশাপাশি আলজিয়ার্সের গর্ভনর ড. ওমরের কাছে বশ্যতামূলক এক চুক্তিনামা পাঠায়, যাতে মার্কিন বণিকদের বিশেষ সুযোগ ও ভূমিসহ অধিকার প্রদানের কথা বলা হয়। চাপের মুখে মার্কিনীরা গর্ভনরকে সে চুক্তিতে স্বার করতে বাধ্য করে।
৯. এই সময় মার্কিনীরা আবারো নতুন করে তিউনিসিয়া ও ত্রিপোলী ও মৌরিতানিয়ায় আগ্রাসী হামলা চালিয়ে বাড়তি দাবী-দাওয়া আদায় করে নেয়।
১০. ভারত মহাসাগরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ল্েয মার্কিনীরা বর্তমান ওমান ও থাইল্যান্ডকে এক অধীনতামূলক চুক্তি সম্পাদনে বাধ্য করে।
১১. ১৮৮২ সালে আলেকজান্দ্রিয়ার ওপর ব্যাপক গোলাবর্ষনের পর মিসরকে দখল করে নিতে বৃটিশকে সহযোগিতা করেছিল মার্কিন স্কোয়াড্রনের চারটি যুদ্ধ জাহাজ। গোলার আঘাতে আলেকজান্দ্রিয়াকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার পর শত শত মিসরীয়দের লাশ মাড়িয়ে বৃটিশ বাহিনীর সাথে সেখানে অবতরণ করে মার্কিন মেরিন সেনা।
১২. ১৮২০ এর দশকে মার্কিনীরা সুমাত্রার উত্তর ও উত্তর পশ্চিম উপকূলে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্টার মানসে নানা প্রকার রোগ ছড়িয়ে দেয়। যে করণে সেখানে মৃত্যুহার বেড়ে যায়। এতে সুমাত্রা বাসীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা যায়। মার্কিন নাবিকেরা উদ্দেমূলক ভাবে নানা ঔদ্ধাত্যপূর্ণ ও গর্হিত আচরণের মাধ্যমে এই অসন্তোষকে আরো বাড়িয়ে দিলে স্থানীয় জনগণ ১৮৩১ সালে মার্কিন বণিক ও মৈত্রী নামক একটি জাহাজে হামলা চালায়। এর প্রতিশোধ গ্রহনার্থে ১৮৩২ সালে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ পোটেম্যাক কুয়ালাবাটুতে ভিড়ে এবং এর নাবিকরা বন্দরে অবতরণ করে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে দেড়শ মুসলিম শাহাদাত বরণ করেন এবং দুইশত জন আহত হয়। মার্কিনীদের উদ্দেশ্য যাতে কোন প্রকারে স্থানীয় বাসিন্দারা টের না পায়, সে জন্য পোটেম্যাকে ওলন্দাজ পতাকা উড়ান হয়েছিল।
১৩. ১৮৪২ সালে ছয়টি যুদ্ধ জাহাজ বিশিষ্ট এক মার্কিন নৌ-বহরের কমান্ডার চালর্স উইলিয়াম সুলু দ্বীপপুঞ্জের শাসক সুলতান মুহাম্মদকে একটি অধীনতামূলক মার্কিন চুক্তিতে স্বার করতে বাধ্য করে।
১৪. ১৮৫০ সালের ২৩ জুন মার্কিন স্বার্থসংশ্লিষ্ট একটি চুক্তিতে স্বার করতে ব্র"নাইর সুলতান ওমর আলীকে বাধ্য করে মার্কিনীরা। অতঃপর ১৮৯৬ সালে ব্র"নাইর উত্তরাংশের বিরাট এলাকা মার্কিনীদের ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দিতেও সুলতানকে বাধ্য করে। এরপর সুলতান বাধ্য হন আমেরিকান ট্রেডিং কোম্পানী অব বোর্ণিও'র প্রধান কর্মকর্তা টোরিকে এমবোয়ানা ও মারুদুর রাজা হিসাবে নিয়োগ করতে। সুলতান রাজাকে স্বাধীন সার্বভৌম শাসকদের মত আইন প্রনয়ন, মৃত্যু দন্ড দান, মুদ্রা তৈরি ও প্রচলন, প্রতিরা বাহিনী গঠনসহ নানাবিধ মতা প্রদানে ও বাধ্য হন।
১৫. ১৮৯৯ সালে আজকের ফিলিপাইনের তৎকালীন সুলতান জামাল উল কিরামের সাথে মার্কিনীরা এক সমঝোতা চুক্তিতে উপনীত হয়। কিন্তু স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার পর ১৯১৩ সালে মার্কিনীরা সকল মুসলিম এলাকা দখল করে নেয় এবং তাদেরকে সংখ্যালঘু জাতিতে পরিনত করা হয়। যে কারণে ফিলিপাইন এখন একটি খৃস্টান রাষ্ট্র।
১৬. ১৯৭০ সালের মধ্যে কৌশলে ৫০ জনেরও বেশি মার্কিন সেনা অফিসার মিসরীয় সশস্ত্র বাহিনীতে চাকরি নেয়, যার মধ্যে জেনারেল স্টোন কায়রোতে মিশরীয় সশস্ত্র বাহিনীর চীপ স্টাফ এবং কর্নেল চেইলি লঙ সুদানে মোতায়েনকৃত মিসরীয় সশস্ত্র বাহিনীর চীপ অব স্টাফের পদ দখল করে। এরপর ইরিত্রিয়াকে কেন্দ্র করে মার্কিনীরা মিসর-ইথিওপিয়া যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেয় এবং যুদ্ধে মিসরীয়দের পরজয় ঘটে। এই যুদ্ধে মিসর আর্থিক এবং সামরিক দিক থেকে ব্যাপক দুর্বল হয়ে পড়ে। আর সে সুযোগে ১৯৮২ সালে বৃটিশ মিসরকে দখল করে নেয়। এেেত্র মার্কিন যুদ্ধ জাহাজগুলোও বৃটিশকে সহায়তা করে। কর্নেল চেইলি লঙ এতে নেতৃত্ব দেয়। পাশাপাশি তারা ইথিওপিয়া থেকে ইরিত্রিয়াকে আলাদা করে ফেলে একটি খৃষ্টান রাষ্ট্রের জন্ম দেয়।
বিষয়বস্তুর স্বত্বাধিকার ও সম্পূর্ণ দায় কেবলমাত্র প্রকাশকারীর...
http://www.somewhereinblog.net/blog/JANAAT09YOUTH/29452234
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিল
নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তি
১৯৬৬ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্ত ২২০০ ক (২১) মোতাবেক স্বাক্ষরদান, অনুসমর্থন ও যোগদানের জন্য গৃহীত ও উম্মুক্ত৷
চুক্তির ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ১৯৭৬ সালের ২৩ শে মার্চ থেকে কার্যকর৷
ভূমিকা:
এই চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ যেহেতু স্বীকার করে যে, জাতিসংঘের সনদে ঘোষিত নীতি মোতাবেক পৃথিবীতে স্বাধীনতা, ন্যায়পরতা এবং শান্তির ভিত্তি হচ্ছে সকল মানুষের স্বাভাবিক মর্যাদা ও অবিচ্ছেদ্য সমঅধিকারের স্বীকৃতি, যেহেতু স্বীকৃত যে, মানব হৃদয়ের স্বাভাবিক মহত্ত্ব থেকে এই সকল অধিকারের উত্পত্তি ঘটেছে,
যেহেতু স্বীকার করে যে,
মানবাধিকার সার্বজনীন ঘোষণা অনুযায়ী মানুষ সত্যিকারভাবে অভাব এবং ভয়-ভীতি থেকে স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারে, যদি সে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক তথা নাগরিক এবং রাজনৈতিক অধিকারসমূহ উপভোগ করতে পারে,
যেহেতু মনে করে যে,
জাতিসংঘের আওতাধীন রাষ্ট্রসমূহের দায়িত্ব রয়েছে মানবাধিকার এবং স্বাধীনতাসমূহ প্রতিষ্ঠা এবং উহার প্রতি সার্বজনীন সম্মান প্রদর্শন,
যেহেতু মনে করে যে,
প্রতিটি ব্যক্তির কর্তব্য রয়েছে অন্যের প্রতি এবং নিজ সমাজের প্রতি আলোচ্য চুক্তিতে বর্ণিত অধিকারসমূহের প্রতিষ্ঠা এবং সংরক্ষণের জন্য, সেহেতু, অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ একমত হয়ে নিম্নবর্ণিত ধারাসমূহ (আলোচ্য চুক্তিতে) সম্বিবেশিত করছে :
প্রথম পরিচ্ছেদ
অনুচ্ছেদ-১
১. আত্ননিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে সকল জাতিসমূহের৷ এ অধিকার বলে তারা স্বাধীনভাবে ঠিক করবে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান এবং মুক্তভাবে চালিয়ে যাবে তাদের স্বকীয় অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়ন৷
২. সকল জাতিসমূহই তাদের স্ব-স্ব প্রয়োজনে তাদের প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ববহার করতে পারবে৷ পারস্পরিক স্বার্থ এবং আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় প্রতিষ্ঠিত কোন আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রতি পক্ষপাত দেখিয়েও তাদেরকে এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না৷ কোন কারণেই কোন জাতিকে তার নিজস্বভাবে বাঁচার এই উপায় উদ্ভাবন থেকে বঞ্চিত করা যাবে না৷
৩. চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ অছি রাষ্ট্রসহ আত্ননিয়ন্ত্রণের এই অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাবে এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণা অনুযায়ী এই অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে৷
২য় পরিচ্ছেদ
অনুচ্ছেদ-২
১. জাতি, বর্ন, ভাষা, রাজনৈতিক ও অন্যান্য মতাদর্শ, ধনী, গরীব ও জণ্মসূত্র নির্বিশেষে সকল ব্যক্তির অধিকারসমূহ যা আলোচ্য চুক্তিতে বর্ণিত হয়েছে তার প্রতি অংশগ্রহণকারী প্রতিটি রাষ্ট্র প্রদর্শন এবং নিশ্চিত করবে৷
২. প্রতিটি অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র যারা এখনও তাদের দেশে আইনগত এবং অন্যান্য পদক্ষেপ দ্বারা উক্ত অধিকারসমূহ প্রদান করেনি তারা আলোচ্য চুক্তির গঠনতান্ত্রিক পদ্ধতি এবং শর্তানুযায়ী সেই সব আইনগত ও অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে যাতে উক্ত অধিকারসমূহ কার্যকর হয়৷
৩. আলোচ্য চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে চায় যে,
(ক) যদি কোন ব্যক্তির চুক্তিতে বর্ণিত অধিকার এবং স্বাধীনতাসমূহ লংঘিত হয় তবে উহার প্রয়োজনীয় প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে, যদিও উক্ত লংঘন সরকারি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তির দ্বারাও সংগঠিত হয়;
(খ) যদি কোন ব্যক্তি এই ধরনের প্রতিকারে দাবি করে তবে তার উক্ত দাবির যথার্থতা প্রশাসনিক বিচার বিভাগীয় বা অন্য কোন যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিরূপিত হবে এবং তার বিচার বিভাগীয় প্রতিকার পাবার সম্ভাবনা নিশ্চত করতে হবে;
(গ) প্রতিকারের ব্যবস্থা অনুমোদিত হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ উহা কার্যকর করে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে৷
অনুচ্ছেদ - ৩
চুক্তিতে বর্ণিত নাগরিক ও রাজনৈতিক সকল অধিকারসমূহ উপভোগ নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ নিশ্চয়তা বিধান করবে৷
অনুচ্ছেদ - ৪
১. জরুরী অবস্থার সময়ে যখন জাতির জীবন হুমকির সম্মুখীন হয় এবং উহা যখন জাতির অস্তিত্বের জন্য সরকারিভাবে জারি করা হয় তখন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ চুক্তির পরিপন্থি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে, তবে উক্ত পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক হতে পারবে না এবং জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা, ধর্ম অথবা জণ্মসূত্রের পার্থক্য করে উহা প্রয়োগ করা যাবে না৷
২. এই শর্তে মোতাবেক ধারা ৬, ৭, ৮ (অনুচ্ছেদ ১ এবং ২) ১১, ১৫, ১৬ এবং ১৮ এর ক্ষতিকারক কিছু তৈরি করা যাবে না৷
৩. আলোচ্য চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী কোন রাষ্ট্র যদি উপরোক্ত ধারার ক্ষতিকারক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে তবে তা শীঘ্র জাতিসংঘের মহাসচিবের মাধ্যমে চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহকে অবহিত করতে হবে, উহা গ্রহণের কারণসমূহ জানাতে হবে, উক্ত ক্ষতিকর পদক্ষেপ তুলে নেয়ার তারিখও মহাসচিবের মাধ্যমে সকল রাষ্ট্রসমূহকে আবার জানিয়ে দিতে হবে৷
অনুচ্ছেদ - ৫
১. আলোচ্য চুক্তির কিছুই এমনভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না যার ফলে কোন রাষ্ট্র, দল অথবা ব্যক্তি তাদের কোন কাজ দ্বারা এই চুক্তির কোন অধিকার বিনষ্ট করে৷
২. কোন দেশের আইন, প্রথা বা রীতি-নীতির কোন অধিকার, যে কোন মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি বাধা বা অপবাদ বলে বলবত্ থাকে, তবে তা আলোচ্য চুক্তিতে গ্রহণীয় হবে না৷
http://www.abolombon.org/bangla_international_laws/political_rights_1966.html
| ||||||||||||||||
লিখেছেন নেটপোকা ২৮ এপ্রিল ২০১১, দুপুর ০২:১৯ | ||||||||||||||||
ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড : বাঙালি জাতীয়তাবাদ, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ | ||||||||||||||||
বিষয়শ্রেণী: রাজনীতি মানবাধিকার সনদ উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মানবাধিকার সনদ (ইংরেজি: Universal Declaration of Human Rights (UDHR)) একটি ঘোষণাপত্র। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এই ঘোষণা প্রদান করা হয়। প্রত্যেক মানুষের মানবাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে এই সনদ ঘোষিত হয়। [সম্পাদনা]সার্বজনীন ঘোষণাপত্র[সম্পাদনা]মুখবন্ধযেহেতু মানব পরিবারের সকল সদস্যের সহজাত মর্যাদা ও সম অবিচ্ছেদ্য অধিকারসমূহের স্বীকৃতি বিশ্বে স্বাধীনতা, ন্যায়-বিচার ও শান্তির ভিত্তি; যেহেতু মানবিক অধিকারসমূহের প্রতি অবজ্ঞা ও ঘৃণা মানবজাতির বিবেকের পক্ষে অপমানজনক বর্বরোচিত কাযর্কলাপে পরিণতি লাভ করেছে এবং সাধারণ মানুষের সর্বোচ্চ আশা-আকাঙ্খার প্রতীক হিসেবে এমন একটি পৃথিবীর সূচনা ঘোষিত হয়েছে যেখানে মানুষ বাক ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা এবং ভয় ও অভাব থেকে নিষ্কৃতি ভোগ করবে; যেহেতু চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে মানুষকে অত্যাচার ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হতে বাধ্য করা না হলে মানবিক অধিকারসমূহ অবশ্যই আইনের শাসনের দ্বারা সংরক্ষিত করা উচিত; যেহেতু জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উন্নয়নে সহায়তা করা অবশ্যক; যেহেতু জাতিসংঘভুক্ত জনগণ সনদের মাধ্যমে মৌল মানবিক অধিকারসমূহ অধিকারসমূহ, মানুষের মর্যাদা ও মূল্য এবং নারী ও পুরুষের সম-অধিকারের প্রতি আস্থা পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং সামাজিক অগ্রগতি ও ব্যাপকতর স্বাধীনতা উন্নততর জীবনমান প্রতিষ্ঠাকল্পে দৃঢপ্রতিজ্ঞ; যেহেতু সদস্যরাষ্ট্রসমূহ জাতিসংঘের সহযোগিতায় মানবিক অধিকার ও মৌল স্বাধিকারসমূহের প্রতি সার্বজনীন শ্রদ্ধা ও মান্যতা বৃদ্ধি অর্জনে অঙ্গীকারাবদ্ধ; যেহেতু সকল অধিকার ও স্বাধিকারের ব্যাপারে একটি সাধারণ সমঝোতা উক্ত অঙ্গীকার সম্পূর্ণরূপে আদায় করার জন্য সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ; তাই সাধারণ পরিষদ সকল জাতি ও জনগোষ্ঠীর অগ্রগতির একটি সাধারণ মানদণ্ড হিসেবে জারি করছে এই মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র; ঐ লক্ষ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি ও সমাজের প্রত্যেক অঙ্গ মানবিক অধিকারসমূহের এই সর্বজনীন ঘোষণাপত্রটিকে সর্বদা স্মরণ রেখে শিক্ষাদান ও জ্ঞান প্রসারের মাধ্যমে এ সকল অধিকার ও স্বাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধে জাগ্রত করতে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রগতিশীল ব্যবস্থাদির দ্বারা সদস্য-রাষ্ট্রসমুহের জনগণ ও তাদের অধীনস্থ অঞ্চলসমূহের অধিবাসীবৃন্দ উভয়ের মধ্যে ঐগুলোর সর্বজনীন ও কার্যকর স্বীকৃতি ও মান্যতা অর্জনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাবে৷ [সম্পাদনা]ধারাসমূহ[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১বন্ধনহীন অবস্থায় এবং সম-মর্যাদা ও অধিকারাদি নিয়ে সকল মানুষই জন্মগ্রহণ করে৷ বুদ্ধি ও বিবেক তাদের অর্পণ করা হয়েছে; অতএব ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে তাদের একে অন্যের প্রতি আচরণ করা উচিত৷ [সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২
[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-৩প্রত্যেকেরই জীবন-ধারণ, স্বাধীনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে৷ [সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-৪কাউকে দাস হিসেবে বা দাসত্বের বন্ধনে আবদ্ধ রাখা চলবে না। সকল প্রকার দাস-প্রথা ও দাস-ব্যবসা নিষিদ্ধ থাকবে৷ [সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-৫কাউকে নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক অথবা অবমাননাকর আচরণ অথবা শাস্তি ভোগে বাধ্য করা চলবে না৷ [সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-৬আইনের সমক্ষে প্রত্যেকেরই সর্বত্র ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতিলাভের অধিকার রয়েছে৷ [সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-৭আইনের কাছে সকলেরই সমান এবং কোনরূপ বৈষম্য ব্যতিরেকে সকলেরই আইনের দ্বারা সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে৷ এই ঘোষণাপত্রের লঙ্ঘনজনিত বৈষম্য বা এরূপ বৈষম্যের উস্কানির বিরুদ্ধে সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার সকলেরই আছে৷ [সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-৮যে কার্যাদির ফলে শাসনতন্ত্র বা আইন কর্তৃক প্রদত্ত মৌল অধিকারসমূহ লঙ্ঘিত হয় সে সবের জন্য উপযুক্ত জাতীয় বিচার আদালতের মারফত কার্যকর প্রতিকার লাভের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে৷ [সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-৯কাউকে খেয়াল-খুশিমত গ্রেফতার, আটক অথবা নির্বাসন দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে না৷ [সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১০প্রত্যেকেরই তার অধিকার ও দায়িত্বসমূহ এবং তার বিরুদ্ধে আনীত যে কোন ফৌজদারী অভিযোগ নিরূপণের জন্য পূর্ণ সমতারভিত্তিতে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার-আদালতে ন্যায্যভাবে ও প্রকাশ্যে শুনানী লাভের অধিকার রয়েছে৷ [সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১১
[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১২কাউকে তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তা, পরিবার, বসতবাড়ি বা চিঠিপত্রের ব্যাপারে খেয়ালখুশিমত হস্তক্ষেপ অথবা সম্মান ও সুনামের ওপর আক্রমণ করা চলবে না৷ [সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১৩
[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১৪
[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১৫
[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১৬
[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১৭
[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১৮প্রত্যেকেরই চিন্তা, বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে৷ নিজ ধর্ম অথবা বিশ্বাস পরিবর্তনের স্বাধীনতা এবং একাই অথবা অপরের যোগসাজশে ও প্রকাশ্যে বা গোপনের নিজ ধর্ম বা বিশ্বাস শিক্ষাদান, প্রচার, উপাসনা ও পালনের মাধ্যমে প্রকাশ করার স্বাধীনতা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত৷ [সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-১৯প্রত্যেকেরই মতামতের ও মতামত প্রকাশের স্বাধিকার রয়েছে; বিনা হস্তক্ষেপে মতামত পোষণ এবং যে কোন উপায়ে ও রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে তথ্য ও মতামত সন্ধান, গ্রহণ ও জ্ঞাত করার স্বাধীনতা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত৷ [সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২০
[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২১
[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২২সমাজের সদস্য হিসেবে প্রত্যেকেরই সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে; প্রত্যেকেই জাতীয় প্রচেষ্টা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এবং প্রতিটি রাষ্ট্রের সংগঠন ও সম্পদ অনুসারে তার মর্যাদা ও অবাধে ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ আদায় করতে পারবে৷ [সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২৩
[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২৪প্রত্যেকেরই বিশ্রাম ও অবসর বিনোদনের অধিকার রয়েছে৷ কাজের সময়ের যুক্তিসঙ্গত সীমা ও বেতনসহ নৈমিত্তিক ছুটি এ অধিকারের অন্তর্ভুক্ত৷ [সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২৫
[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২৬
[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২৭
[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২৮প্রত্যেকেই এমন একটি সামাজিক ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার জন্য স্বত্ববান যেখানে এই ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত অধিকার ও স্বাধীনতাসমূহ পূর্ণভাবে আদায় করা যেতে পারে৷ [সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-২৯
[সম্পাদনা]অনুচ্ছেদ-৩০এই ঘোষণার উল্লিখিত কোন বিষয়কে এরূপভাবে ব্যাখ্যা করা চলবে না যাতে মনে হয় যে এই ঘোষণার অন্তর্ভুক্ত কোন অধিকার বা স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে কোন রাষ্ট্র, দল বা ব্যক্তি বিশেষের আত্মনিয়োগের অধিকার রয়েছে৷ [সম্পাদনা]অনুমোদনজাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১০ ডিসেম্বর, ১৯৪৮ সালে মানবাধিকারের উপর সার্বজনীন ঘোষণার খসড়া সিদ্ধান্তটি অনুমোদিত হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ৪৮ ভোট পড়ে এবং বিপক্ষে কোন ভোট পড়েনি। কিন্তু ৮টি দেশ ভোট প্রদানে বিরত থাকে। দেশগুলো হলো - সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইউক্রেন, বেলারুশ, যুগোস্লাভিয়া, পোল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, চেকোস্লোভাকিয়া এবং সৌদী আরব।[১][২] [সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
অমর্ত্য সেনের আরগুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান : ইসলাম ত্যাগ করে দ্বীন-ই ইলাহি গ্রহণের আহ্বান : ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের উত্স হিন্দু ধর০৫ ই এপ্রিল, ২০১১ সকাল ১০:৩৩ |
লেখাটির বিষয়বস্তু(ট্যাগ/কি-ওয়ার্ড): অমর্ত্য সেনের আরগুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান : ইসলাম ত্যাগ করে দ্বীন-ই ইলাহি গ্রহণের আহ্বান : ধর্মনিরপে�� ; http://www.somewhereinblog.net/blog/chikon/29357314
মাতৃত্ব ও নারীর শ্রমবিথী চৌধুরী ১ আর এই নাটকের ফলাফল এত সুদূর প্রসারি যে তা নিয়ে আলোচনা করার অর্থই হল মানুষের সমাজবদ্ধতার, মানব সমাজের প্রথম শ্রম বিভাজন ও শ্রেনী বিভাজনের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা।মার্কস ও এঙ্গেলসের যৌথ রচনা 'জার্মান ভাবাদর্শ' গ্রন্থে বলা হয়েছে, '' সন্তান প্রজননকে ঘিরেই নারী ও পুরুষের মধ্যে প্রথম শ্রম বিভাজন ঘটে''। এবং সেই সাথে এঙ্গেলস তার 'পরিবার ব্যাক্তিগত মালিকানা ও রাষ্ট্রের উত্পত্তি' গ্রন্থে যোগ করেছেন, ''ইতিহাসের প্রথম শ্রেনী বিরোধ একগামী বিবাহের ফলে নারী ও পুরুষের মধ্যে উদ্ভুত বিরোধ, প্রথম শ্রেনী নিপীড়ন পুরুষ কর্তৃক নারী-নিপীড়ন''। একগামী বিবাহের উত্পত্তিও ঘটেছে নারী যাতে এক পুরুষের সাথে মিলিত হয়ে সন্তানের পিতৃপরিচয় নিশ্চিত করতে পারে সেই উদ্দেশ্যে।এবং সেই কারনে পুরুষের জন্যে একগামী বিবাহের প্রয়োজন হয় নি। ফলে পুরুষের জন্যে এক দিকে একগামী বিবাহ আবার সেই সাথে গণিকা গমনের রয়ে গেছে অবারিত সুযোগ। সন্তান জন্মদান ও প্রতিপালনে নারীর ভূমিকা মূখ্য হয়ে উঠেছে এবং সেই কারনে নারী-পুরুষের কর্ম ক্ষেত্র ভিন্ন হয়ে উঠেছে মূলত সন্তানকে দুগ্ধদানের প্রয়োজনে। মাতৃত্বের কারনেই নারীকে উত্খাত হতে হয়েছে তারই আবিষ্কৃত কৃষিক্ষেত্র থেকে। কেননা চাহিদা বৃদ্ধির কারনে প্রয়োজনীয় হয়ে উঠলেও সন্তানের কারনেই নিবিড় শ্রমদান তার জন্যে হয়ে উঠেছে কঠিন। এভাবেই নারী পুরুষের কর্মক্ষেত্র ক্রমাগত ভিন্ন হয়ে পড়েছে। নারীর জন্যে এমন সব কাজ নির্ধারিত হয়েছে যাতে সন্তান জন্মদান ও প্রতিপালনে কোন ব্যাঘাত না ঘটে। এবং ধীরে ধীরে মাতৃত্বই নারীর মূল কাজ ও পরিচয় হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। যেখানে পুরুষের জন্যে তৈরি হচ্ছিল এমন সব কর্মক্ষেত্র যা প্রতিনিয়ত তার মানসিকতাকে আরো সম্মৃদ্ধ করেছে। নারীর উপর পুরুষের আধিপত্যের এই সামাজিক বুনিয়াদী নিয়মকে আরো শক্তিশালী করে হাজির করেছে ধর্ম। ফলে তা আরো শক্তি ও স্পষ্টতা নিয়ে কেবল পুরুষ নয় বরং নারীর বিশ্বাসের ভিতকেও দখল করেছে। এর কারনে সভ্যতার অগ্রগতি যতই ঘটুক না কেন তার সাথে একই গতিতে নারী পুরুষের কর্মক্ষত্র বা দায়িত্বের বিষয়ে প্রচলিত বিশ্বাসের তারতম্য ঘটছে না। এমনকি যখন কোন পরিবারে নারী-ই প্রধান উপার্জনক্ষম সদস্য হয় তখনও সন্তান প্রতিপালন বা অন্যান্য গার্হস্থ্য দায়িত্ব মূলত নারীকেই পালন করতে হয়। http://www.meghbarta.info/gender-and-society/7-gender-and-society/72-2012-01-25-08-19-00.html |
No comments:
Post a Comment