এফডিআই নিয়ে তৃণমূলের আনা প্রস্তাব খারিজ হয়েছে। এ কারণে তারা সংসদের সামনে অবস্থান ধর্মঘট পালন করছে।
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, ইউপিএ ছাড়ার পর থেকেই কংগ্রেসকে কেন্দ্র থেকে হঠাতে মরিয়া মমতা৷ যেজন্য চির-শত্রু সিপিএমের রাজ্য সদর দফতর আলিমুদ্দিন গিয়ে পর্যন্ত আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি৷ সহযোগিতার আবেদন করেছিলেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে৷ কিন্তু, কেউ দাঁড়ায়নি মমতার পাশে৷ কার্যত একঘরে হয়ে পড়তে হয় তৃণমূল নেত্রীকে৷ সেকথা মোটেও ভোলেননি তিনি৷ তাই এখন বাম ও বিজেপি যখন ১৮৪ ধারায় ভোটাভুটি সহ আলোচনার দাবিতে সরব, তখন তাদের পাশে দাঁড়াল না তৃণমূল৷ কার্যত প্রতিশোধ নিলেন মমতা৷ তা করতে গিয়ে কংগ্রেসের সুবিধা করে দিতেও দ্বিধাবোধ করলেন না তিনি। পাশাপাশি তৃণমূলের অনাস্থা-রাজনীতি ব্যর্থ হওয়ার পর এখন যদি সিপিএম-বিজেপির দাবিমতো ১৮৪ ধারায় আলোচনা হয়, তাহলে গোটা কৃতিত্বটাই প্রকাশ কারাট-সুষমা স্বরাজরা পাবেন৷ তৃণমূলের ভাঁড়ার শূন্যই থাকবে৷ উল্টে সিপিএমের পেছনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে হবে তৃণমূলকে, যা মোটেও চান না মমতা৷ তৃণমূলের অবস্থান বদলের পেছনে এটাও অন্যতম কারণ বলেও মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ৷
এফডিআই ইস্যুতে কেন্দ্রের বিরোধিতায় অনড় মমতা
আনন্দবাজার – শনি, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২কলকাতা বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যাবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) নিয়ে চূড়ান্ত বিরোধিতার রাস্তায় যেতে তৈরি রাজ্য। কেন্দ্রকে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার মহাকরণে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে টাস্কফোর্সের বৈঠকে খুচরোয় এফডিআই নিয়ে সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'এফডিআই ইস্যুতে আমরা চূড়ান্ত বিরোধিতা করব। এর শেষ দেখে ছাড়ব। এটা নির্বাচনের সময় আমাদের অঙ্গীকার ছিল। কেন্দ্রকে ৭২ ঘণ্টা সময় দিয়েছি। খুচরোয় এফডিআই-এর সিদ্ধান্ত মানছি না। ভারতের ৫০ শতাংশ লোক এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। কোনও আপোস করব না। দি, ইজ মাই ব্যাটল।'
এদিন মহাকরণে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলির কাছে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, বনধ বা ধর্মঘটের রাস্তায় হাঁটবেন না। সরকারের সঙ্গে প্রতিবাদে সামিল হোন। যদিও ইতিমধেই কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স অর্গানাইজেশনের ২০ তারিখ দেশব্যাপী খুচরো ব্যবসায় ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। ধর্মঘটে সামিল হচ্ছে ফোরাম অফ ট্রেডার্স অর্গানাইজেশনস, ওয়েস্ট বেঙ্গলও।
তবে এফডিআই নিয়ে কেন্দ্রকে এক ইঞ্চি জমিও যে ছাড়া হবে না, তা এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মহাকরণ থেকে বেরনোর সময় মুখ্যমন্ত্রীর স্লোগান হেঁশেলে আগুন, মানুষের জন্য হাঁটুন।
এফডিআই ইস্যুতে ফেসবুকে সরব মমতা
আনন্দবাজার – শনি, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি (এফডিআই) সহ কেন্দ্র সরকারের আর্থিক সংস্কারমূলক পদক্ষেপগুলির বিরুদ্ধে ফের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সোচ্চার হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ফেসবুকে তিনি লিখেছেন,''সংস্কার দরকার। কিন্তু, সংস্কার মানে এক শ্রেণির মানুষকে খুশি করার জন্য সবকিছু বিক্রি করে দেওয়া নয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংস্কারের প্রভাব গরিব ও সাধারণ মানুষের কাছে অবশ্যই পৌছনো উচিত।
উন্নত দেশগুলিতে সাধারণ মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে সেরকম কিছু নেই। এককভাবে নেওয়া কয়েকটি জনবিরোধী সিদ্ধান্ত কিছু সময়ের জন্য শেয়ার বাজারকে চাঙ্গা করতেই পারে। শেয়ার বাজারের চাঙ্গা থাকা দরকার। কিন্তু, সরকারের নীতি যেন সাধারণ মানুষের জন্য বোঝা না হয়ে দাঁড়ায়। সব কালো টাকা যদি দেশে ফিরিয়ে এনে উন্নয়নে ব্যবহার করা যায়, তাহলে আরও চাঙ্গা হবে শেয়ার বাজার। সব কিছু বিক্রির সিদ্ধান্ত আমি সমর্থন করি না। এটা সরকারের একটা অংশকে খুশি করতে পারে। সাধারণ মানুষের স্বার্থে লড়াই করতে বদ্ধপরিকর। প্রয়োজনে প্রাণ দেব, কিন্তু, আপোস করব না।''
অন্যদিকে টুজি কাণ্ডে সিএজি রিপোর্ট নিয়ে সংসদে আলোচনার দাবি জানালো ডিএমকে। একশো তিরানব্বই ধারায় আলোচনার দাবি জানিয়ে নোটিস দিল তারা। আজ একথা জানিয়েছেন ডিএমকে সাংসদ টি আর বালু। ডিএমকে-র নোটিস নিয়ে অবশ্য মাথা ঘামাতে রাজি নয় কংগ্রেস। তবে এফডিআই নিয়ে তারা যে সরকারের পাশে নেই গতকালই তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন ডিএমকে প্রধান করুণানিধি।
এনিয়ে সংসদে ভোটাভুটি হলে বিপক্ষে ভোট দেওয়ার হুমকি এর আগেই দিয়েছে ডিএমকে। তামিলনাড়ু রাজ্য রাজনীতিতে তাদের মূল প্রতিপক্ষ জয়ললিতার এআইএডিএমকেও এই ইস্যুতে একই নৌকোয় সওয়ার। এফডিআইয়ের বিরোধিতা করে ইউপিএ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বামেরাও বরাবর এফডিআইয়ের বিরুদ্ধে। ভোটাভুটি হবে এটা ধরে নিয়েই পরিস্থিতি সামাল দিতে নেমে পড়েছেন কংগ্রেসের ক্রাইসিস ম্যানেজাররা। তবে প্রয়োজনীয় সংখ্যা জোগাড় করতে গিয়ে কার্যত হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের।
এফডিআই নিয়ে তৃণমূলের আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ হয়ে গেছে। কিন্তু, তারপরও ইউপিএ সরকারের অস্বস্তি কমার কোনও লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না।
এফডিআই ইস্যুতে আলোচনা ও ভোটাভুটির দাবিতে অনড় বিরোধীরা। বিরোধী শিবিরের লাগাতার আক্রমণ তো রয়েছেই। পাশপাশি সামলাতে হচ্ছে শরিকদেরও। তৃণমূল ইউপিএ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর অন্যতম শরিক ডিএমকে যাতে তাঁদের পাশে থাকে, সেজন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে কংগ্রেস। রবিবার চেন্নাইয়ে ডিএমকে প্রধান করুণানিধির সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ। তবে সেই বৈঠকেরও নিট ফল ছিল শূন্য। করুণানিধির কাছ থেকে এফডিআই ইস্যুতে পাশে থাকার আশ্বাস জোগাড়ে ব্যর্থ কংগ্রেস।
প্রয়োজনীয় সংখ্যা হাতে না নিয়ে সরকার ভোটাভুটির পথে আদৌ পা বাড়াবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। সেক্ষেত্রে বিরোধীদের সামলে সংসদ সচল রাখা আর সরকারের মুখরক্ষা, দুটো কাজ একসঙ্গে করতে সর্বদল বৈঠকের শরণাপন্ন প্রধানমন্ত্রী।
অথচ, এহেন সমস্যার সামনে দাঁড়িয়েও দিনান্তে কংগ্রেস নেতাদের মুখে স্বস্তির রেখা। কারণ, পরিস্থিতি। ঘটনাক্রম কোন দিকে গড়াতে পারে, তা আঁচ করে এদিন সকালেই মুলায়ম সিং যাদবের সমর্থন নিশ্চিত করতে তত্পর হয় কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয় মুলায়মের। সমাজবাদী পার্টি নেতা রামগোপাল যাদবের সঙ্গে বৈঠক করেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমলনাথ। সূত্রের খবর, 'নেতাজি' আশ্বস্ত করেছেন, বিজেপি বা বামেদের আনা ভোটাভুটির প্রস্তাবে তাঁর দল ভোটদানে বিরত থাকবে। আর সর্বদল বৈঠকে সপা নেতারা জানিয়ে দেন, অধ্যক্ষের সিদ্ধান্ত তাঁরা মেনে নেবেন। অধ্যক্ষের কথা বললেও, মায়াবতী অবশ্য একটা শর্ত চাপিয়েছেন। সরকারি চাকরিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংরক্ষণ চালু করতে বিল পাশ করাতে হবে কেন্দ্রকে। তবেই মিলবে সমর্থন। লালুপ্রসাদ যাদব জানিয়েছেন, অধ্যক্ষের সিদ্ধান্তই তাঁর শিরোধার্য।
সরকারের স্বস্তির মাত্রা নিঃসন্দেহে বাড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইঙ্গিত, পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে সংসদ সচল রাখার স্বার্থে তাঁরা ভোটাভুটি ছাড়াই আলোচনায় মত দিতে পারেন। তবে এই সিদ্ধান্ত যে চাপে পড়ে অবস্থান বদল নয়, তা বোঝাতে সুদীপবাবু বলেছেন, অচলাবস্থার জন্য বিজেপি এবং বামেরাই দায়ী। তাঁর কথায়, 'আমরা তো অনাস্থা এনেছিলাম। আমরা এখনও মনে করি, এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনও যোগ্যতা নেই।' তাঁর সংযোজন, 'আপনারা কেউ অনাস্থা আনুন, আমরা সমর্থন করব। আমাদের সমর্থন করেননি বলে লজ্জা পাবেন না। অনাস্থাই আমাদের অবস্থান। এখন শুনছি অনেকেই বলছেন, অনাস্থা আনলেই ভাল হত। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ যা ভাবেন, অন্যান্যরা তা একদিন পরে ভাবেন।' বিরোধীদের অবস্থানের সমালোচনা করে তাঁর তোপ, 'কী হল বিরোধিতা করে! সরকার তো বলেই দিয়েছে ভোটাভুটি তারা মানবে না। এখন সংসদকে চালু রাখতে আলোচনা ছাড়া গতি আছে কি?' একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এ বিষয়ে চূ়ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার।
তবে সুষমা স্বরাজ এদিন বুঝিয়ে দিয়েছেন, যে যা-ই বলুক, বিজেপি অনড়ই। বৈঠকেই বিজেপি জানিয়ে দেয়, ভোটাভুটি-সহ আলোচনা করতে হবে, নইলে তারা সংসদ চালাতে দেবে না। মূলত তিনটি যুক্তিতে এই সিদ্ধান্ত। এক, প্রণববাবু যখন লোকসভার নেতা ছিলেন, তখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব রাজনৈতিক দল ও মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে৷ সে কথার খেলাপ করে সরকার সংসদ অবমাননা করছে। দুই, ২০০২ সালে প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি বলেছিলেন, খুচরো ব্যবসায় এফডিআই দেশের স্বার্থের বিরোধী৷ তা হলে এখন সেটা কী করে দেশের স্বার্থের পক্ষে হয়ে গেল? তিন, মনমোহন যখন বিরোধী নেতা ছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, এটা দেশের মানুষের পক্ষে খারাপ৷ এফডিআই রাতারাতি কী করে ভাল হয়ে গেল?
ঘটনা হল, বিরোধীদের এই অবস্থানের সামনে সরকারেরও হাত-পা প্রায় বাঁধা। কারণ, ডিএমকে নেতা করুণানিধিকে বুঝিয়ে-সুঝিয়েও খুচরো ব্যবসায় এফডিআই-র পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য রাজি করতে পারেনি কংগ্রেস৷ লোকসভায় সংখ্যার যা অবস্থা তাতে ডিএমকে এবং বিএসপি সরকারকে সমর্থন না-করলে সরকারের পক্ষে ভোটাভুটির ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব নয়৷ করুণানিধির সঙ্গে চেন্নাইয়ে গিয়ে দেখা করেছিলেন গুলাম নবি আজাদ৷ কিন্তু তাঁর দৌত্য কাজে আসেনি। কারণ, ডিএমকে ভোটব্যাঙ্কের একটা অংশ খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ঘোরতর বিরোধী৷ এই অবস্থায় মুলায়ম ও মায়াবতী যদি সরকারের পক্ষে ভোট দিতেন, তা হলেও ভোটাভুটির প্রস্তাব মেনে নেওয়ার কথা ভাবতে পারতেন মনমোহনরা। কিন্তু মায়াবতী চাপিয়েছেন শর্ত আর মুলায়ম 'ধরি মাছ, না-ছুঁই পানি'র অবস্থান নিয়ে ভোটাভুটিতে বিরত থাকার কথা জানিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে সংকট কাটাতে আর একটা চেষ্টা চলছে৷ সরকার ভোটাভুটি মেনে নিক৷ সমাজবাদী ও ডিএমকে ওয়াকআউট করবে৷ তা হলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য ২৫২ জন সাংসদের সমর্থন লাগবে৷ মায়াবতী সরকারের পক্ষে ভোট দিলে সেই সংখ্যা জোগাড় করাটা শক্ত হবে না৷ কিন্তু অঙ্ক নিশ্চিত না-হলে সরকার এই পথে এগোতে পারবে না।
খান্ডেলওয়াল বলেন, বহুব্র্যান্ড খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগকে অনুমোদন দিতে হলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিদেশি মুদ্রা সংক্রান্ত ফেমা (ফরেন এক্সচেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট) আইনের ধারা ৪৮-এর অধীন নিয়ম কানুনের রদবদল করতে হবে যার জন্য সংসদের দুই কক্ষেরই (লোকসভা ও রাজ্যসভা) সম্মতি দরকার৷ তাই, প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করেই সরকার বহুব্র্যান্ড খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগকে অনুমতি দিতে পারেন এটা আসলে সত্যের অপব্যাখ্যা৷
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ফেমা আইনের ৪৮ নম্বর ধারার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স সমস্ত রাজনৈতিক দলের সংসদীয় নেতাদের চিঠি লিখে জানিয়েছে৷ 'ওই ধারায় বলা হয়েছে ফেমা আইনের সংশোধনী বিল পেশ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সংসদের দুই কক্ষে অনুমোদন পেতে হবে,' খান্ডেলওয়াল বলেন৷
তিনি আরও বলেন, 'সরকার যে বলছেন খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে জারি করা প্রশাসনিক বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে রাজ্যগুলি ঠিক করতে পারে তারা বিদেশি বিনিয়োগে অনুমতি দেবে কিনা, এটা ভুল প্রচার৷ কারণ, বিশ্ব বাণিজ্য সংগঠনের (ডব্লুটিও) গ্যাটস চুক্তি (জেনেরাল এগ্রিমেন্ট অন ট্রেড অ্যান্ড সার্ভিসেস) এবং আরও ৮২টি দেশের সঙ্গে ভারতের যে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি চুক্তি রয়েছে তার আওতায় ভারতে সরকার দেশি ও বিদেশি সংস্থাগুলির মধ্যে কোনও বৈষম্য সৃষ্টি করবে না৷ তাই, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগকে অনুমতি দেওয়া বা না দেওয়া নিয়ে রাজ্য সরকারগুলির নিজস্ব কোনও অধিকার বা পছন্দ-অপছন্দ থাকতে পারে না৷'
নভেম্বর ২২ থেকে শুরু হওয়া মাসাবধি শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দু'দিন ফলপ্রসূ হয়নি৷ খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে সরকার ও বিরোধী পক্ষের বিতণ্ডায় দু'দিনই অধিবেশন মুলতুবি হয়ে গেছে হৈ হৈ হট্টগোলে৷ ফলে, জমে থাকা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক আইন সংশোধনী বিল চলতি অধিবেশনে সংসদে পেশ করা যাবে কিনা এবং সেগুলি অনুমোদিত হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দানা বাঁধতে শুরু করেছে৷
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের অনাস্থা প্রস্তাব নামঞ্জুর হওয়ায় গত সন্তাহে মুম্বই শেয়ার বাজারের সেনসেক্স বেড়েছে ১৯৭ পয়েন্ট৷ বিনিয়োগকারীরা এখন তাকিয়ে প্রস্তাবিত বিলগুলির কতগুলি সংসদে পেশ এবং পাশ হয়৷ এদের মধ্যে কয়েকটি অনুমোদিত হলেই বাজার চাঙ্গা হবে৷
চলতি আর্থিক বছরের শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত প্রতি মাসে বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যত টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে তার থেকে বেশি টাকার শেয়ার কিনেছে৷ কিন্ত্ত, উল্টো ছবি দেখা গেছে দেশিয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের (যেমন, মিউচুয়াল ফান্ড, বিমা সংস্থা) মধ্যে৷ সংসদের অধিবেশন ফলপ্রসূ হলে, দেশিয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও বাজারে নতুন করে কেনা শুরু করবে৷
তবে, বিনিয়োগকারীদের হতাশ করতে পারে চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মোট জাতীয় উত্পাদনের পরিসংখ্যান যা শুক্রবার (নভেম্বর ৩০) প্রকাশিত হওয়ার কথা৷ প্রথম ত্রৈমাসিকে দেশের মোট জাতীয় উত্পাদন বৃদ্ধি পেয়েছিল ৫.৫ শতাংশ হারে যা এই দশকে সর্বনিম্ন৷ দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে এই পরিসংখ্যান আরও কমলে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে শেয়ার বাজারে৷
বিভিন্ন বৈদেশিক ঘটনাক্রমও শেয়ার বাজারকে প্রভাবিত করবে৷ সোমবারই ইউরোজোনের অর্থমন্ত্রীরা, ইউরোপিয়ান কমিশন এবং আইএমঅফ আবার নতুন করে আলোচনায় বসছে গ্রীসকে পরবর্তী দফার ঋণ-অনুদান দেওয়ার বিষয়টি চুড়ান্ত করতে৷ ২০-২১ নভেম্বরের বৈঠকে আইএমএফ এবং ইউরোগোষ্ঠীর নেতাদের মতের মিল না হওয়ায় প্রথম দফায় ৩,৩০০ কোটি ঋণ দেওয়ার বিষয়টি ঝুলে রইল৷ আইএমএফ চাইছে পূর্বশর্ত অনুযায়ী ২০২০ সালে গ্রীস সরকার তার ঋণের বোঝা মোট জাতীয় আয়ের ১২০ শতাংশে নামিয়ে আনুক৷ কিন্ত্ত, গ্রীস এবং ইউরোগোষ্ঠীর নেতাদের মতে ওই সময়সীমার মধ্যে গ্রীসের পক্ষে এই কাজ সম্ভব নয়৷ ২০১৩ সালে গ্রীসের সরকারি ঋণের বোঝা মোট জাতীয় আয়ের ১৮৯ শতাংশে পৌঁছবে৷ অর্থাত্ , ২০২২ সালের আগে গ্রীসের পক্ষে সরকারি ঋণের বোঝা ১২০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব নয়৷
সোমবারের আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে ডিসেম্বরের ৫ তারিখে গ্রীসের ৩৩০০ কোটি ইউরো ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে যে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে তার প্রভাব পড়বে ইউরোপের শেয়ার বাজারগুলিতে, এবং প্রকারান্তরে ভারতের শেয়ার বাজারেও৷
ক) শেয়ার বাজারে এবছর নীট বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ হয়েছে ৯৯,৪০৬ কোটি টাকা৷ ১৯৯২ থেকে এটাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খ) নথিভূক্ত সংস্থার সংখ্যার বিচারে পৃথিবীর সর্ববৃহত্ মুম্বই শেয়ার বাজার৷ এখানে ৫,১৭৪ সংস্থা নথিভূক্ত রয়েছে গ) মুম্বই শেয়ার বাজারের প্রথম ১০টি সবচেয়ে মূল্যবান সংস্থার মধ্যে ছ'টি সংস্থার বাজার মূল্য (মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন) গত সন্তাহে বেড়েছে ২২,৬৫৪ কোটি টাকা৷ এই সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে, আইটিসি, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, কোল ইন্ডিয়া, এইচডিএফসি, টিসিএস এবং ইনফোসিস৷ বাজার মূল্য সবচেয়ে বেশি পড়েছে এনটিপিসি, ওএনজিসি এবং ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক।
সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) সর্বশেষ তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চলতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-অগাস্ট) ৩১ কোটি ৭০ লাখ ডলার এফডিআই এসেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৬ শতাংশ বেশি।
গত বছর জুলাই-অগাস্ট সময়ে এফডিআই এসেছিল ২৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
২০১১-১২ অর্থবছরে মোট এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ৯৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা ছিল এক অর্থবছরে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ।
গত বৃহস্পতিবারই অর্থমন্ত্রী বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, "আমাদের বিনিয়োগ বাড়েনি, এফডিআই হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না? আমাদের সম্পদ কম, বহু ভোগান্তি, ছোট ছোট ঘুষ...।"
শনিবার ঢাকা চেম্বার আয়োজিত এক সেমিনারেও এফডিআই নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের বর্তমান অঙ্ক ভালো বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত।
অবশ্য তা যে প্রয়োজনের তুলনায় কম, সেটাও স্বীকার করেছেন তিনি।
জায়েদ বখত রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ভিয়েতনাম, ভারতের সঙ্গে তুলনা করলে ১ বিলিয়ন ডলার এফডিআই খুবই কম। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা, গ্যাস-বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাটসহ নানা সমস্যার মধ্যেও এই বিনিয়োগকে খাটো করে দেখার কোনো কারণ নেই।"
বর্তমানে মূলত জ্বালানি ও টেলিকম খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বেশি আসছে। সিমেন্ট খাতেও আসছে বিনিয়োগ।
বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেয়ার পাশাপাশি জায়েদ বখত বলেন, বিনিয়োগ বাড়াতে বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি নীতি-সহায়তাও বিনিয়োগ অনুকূল করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী প্রত্যাশিত বিদেশি বিনিয়োগ না আসার জন্য নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের 'অপপ্রচারকে' দায়ী করেন।
তা আসলেই কোনো প্রভাব রাখছে বলে মনে করেন কি না- জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি জায়েদ বখত।
মুহিতের মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন ইউনূস। অন্যদিকে মন্ত্রীও তার বক্তব্যের একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
তাতে তিনি বলেছেন, গত তিন বছরে বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার সরকারি সহায়তা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। কিন্তু সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বাংলাদেশে তেমন আগ্রহ দেখায়নি।
জয়ের জন্য ৫৭ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। কোনও উইকেট না হারিয়েই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় তারা।
সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এমন ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড বাংলাদেশে ঘটেনি।
শনিবার রাত সাড়ে ৭টায় ন'তলার ওই কারখানার একতলায় প্রথমে আগুন লাগে। সেইসময় কারখানাটির উপরের তলাগুলিতে কর্মচারীরা কাজ করছিলেন। অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে যায় কারখানার অন্যতলগুলিতেও। দমকলকর্মীরা জানিয়েছেন, আগুন থেকে বাঁচার জন্য শ্রমিকেরা প্রথমে বাড়িটির ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলেনন। আশা করেছিলেন উদ্ধারকারী দল এসে তাঁদের সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে। কিন্তু আগুন নেভাতে বেশি সময় লেগে যায়। দমকলের ১০টি ইউনিট প্রায় পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত পৌনে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। উদ্ধারকর্মীরা রাতেই সাতজন মহিলাসহ ন'জন শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করেন। এঁরা সবাই আগুন থেকে বাঁচতে লাফিয়ে পড়েছিলেন। পরে সেনাবাহিনী ও দমকলকর্মীরা বাড়িটির ভেতর থেকে একের পর এক অগ্নিদগ্ধ দেহ বাইরে বার করে নিয়ে আসেন।
বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলিতে এর আগে বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটলেও, এতো বেশি প্রাণহানির ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে কখনও ঘটেনি। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনা এমন এক জায়গায় ঘটেছে, যেখানে রয়েছে দেশের তিনভাগের মধ্যে দু'ভাগ পোশাক কারখানা। আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখতে প্রশাসন ও পুলিসের পক্ষ থেকে তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া।
এদিকে কারখানার ভিতরে আটকা পড়া শ্রমিকদের স্বজনরা রাতভর কারখানার বাইরে উৎকণ্ঠা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। সকালে উদ্ধারকর্মীরা ভবনের ভিতর থেকে একের পর এক অগ্নিদগ্ধ লাশ বের করে জড়ো করতে থাকেন নিশ্চিন্তপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। স্বজনদের আর্তনাদ, কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে নিশ্চিন্তপুর।
আগুনের কারণ খতিয়ে দেখতে এবং দায়ীদের চিহ্নিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার এ এন শামসুদ্দীন আল আজাদ। আগামী তিনদিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে এই কমিটিকে। পাশাপাশি, পুলিসের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। অন্যদিকে, প্রশাসন ও অর্থ বিষয়ক পরিচালক আব্দুস সালামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করেছে দমকল কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় প্রশাসন নিহতদের শেষকৃত্যের জন্য ২০হাজার টাকা এবং গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি অ্যাসোসিয়েশন নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে এক লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশে রয়েছে সাড়ে ৪হাজারের মতো কাপড়ের কারখানা। যারা টেসকো, ওয়ালমার্ট, জে সি পেনির মতো ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরি করে। চীনের পর দুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু কারখানাগুলিতে নিরাপত্তার ব্যবস্থা প্রায় কিছুই নেই। তোবা গ্রুপের তাজরিন ফ্যাশন কারখানাটি ছাড়াও মোট ১৩টি পোশাক কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে তাজরিনে শ্রমিক-কর্মচারী মিলিয়ে দেড় হাজারের বেশি মানুষ কাজ করতেন।
নয়া উদারবাদ নীতিগুলিকে জাঁকিয়ে বসতে মদত জোগাচ্ছে কেন্দ্রের ইউ পি এ সরকার। গত সেপ্টেম্বর থেকে এই সরকার বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী এবং বিদেশী পুঁজিপতিদের তোষণ করার মতো একের পর এক নীতি গ্রহণ করে চলেছে। এক ধাক্কায় ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ৫টাকা বৃদ্ধি, খুচরো ব্যবসায়ে বহু ব্রান্ডের বিদেশী বিনিয়োগ উন্মুক্ত করে দেওয়া বা রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত এমনই কয়েকটি পদক্ষেপ। অথচ এই নীতি থেকে সরে আসার কোনোরকম ইঙ্গিত মেলেনি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের কাছ থেকে। তিনি মুম্বাইয়ে বণিকগোষ্ঠীর সামনে উলটে তাঁদের আস্থা অর্জনে আরও মারাত্মক পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিতে কুণ্ঠা করেননি। ৪ঠা নভেম্বর রামলীলা ময়দানে দলীয় সমাবেশে খুচরো ব্যবসায়ে বিদেশী বিনিয়োগ এবং ভরতুকি কমানোর পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধী। নিবন্ধে কারাত একথা উল্লেখ করে বলেছেন, খুচরো ব্যবসায়ে বিদেশী বিনিয়োগের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের প্রতিটি রাজ্যের রাজধানীতে কনভেনশন করছে বামপন্থীরা। ওয়ালমার্টের মতো বিদেশী সুপার মার্কেট-এর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আন্দোলন গড়ে তোলার এটাই হলো প্রথম পদক্ষেপ।
লড়াই শুরু হয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা এবং সর্বজনীন গণ বণ্টন ব্যবস্থার দাবির পাশাপাশি নগদে ভরতুকি প্রকল্পের বিরুদ্ধেও। আগামী দু'মাস ৫কোটি সই সংগ্রহের সঙ্গে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বামপন্থী দলগুলি। এরইসঙ্গে শ্রমিকশ্রেণীর আন্দোলন ঐক্যবদ্ধ চেহারা নিয়েছে দেশে। কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি একযোগে আগামী ২১-২২শে ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। ধর্মঘটের সপক্ষে প্রচারও শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। কারাত বলেছেন, শ্রমজীবী মানুষের অন্যান্য অংশও রয়েছেন লড়াইয়ের ময়দানে। সোমবার ও মঙ্গলবার দিল্লিতে অঙ্গনওয়াড়ি, আশা এবং মিড ডে মিল-এর কর্মীরাও মিলিত হবেন 'মহাপদভ'-এ। মহিলাদের উপর ক্রমাগত নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার দিকটিও নজরে এনেছে পার্টি। এরই বিরুদ্ধে গত ৩০শে অক্টোবর গোটাদেশে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালিত হয়েছে। মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা এবং সংসদে যাতে যৌন হেনস্তা বিল পাস হয় তারজন্য জনমত গড়ে তোলার উপর জোর দিতে হবে পার্টিকে। এরই পাশাপাশি সারাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির মুখোশ খুলে দিয়ে একঘরে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পার্টি বলে জানিয়েছেন কারাত। সেকারণেই ৬ই ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিনটি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে বামপন্থীসহ গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি। দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষা এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির কৌশল প্রতিহত করতে মানুষের মধ্যে প্রচার চালানো হবে ঐদিন।
কারাত জানিয়েছেন, শুধু বাইরে নয় লড়াই চলবে সংসদের ভেতরেও। শীতকালীন অধিবেশনে খুচরো ব্যবসায়ে বিদেশী বিনিয়োগ বিরুদ্ধে লড়াই মুখ্য ভূমিকা নেবে। বিরোধীরা একযোগে এনিয়ে আলোচনা এবং পরিশেষে ভোটাভুটির দাবিতে অনড় অবস্থান নিয়েছে। এরইসঙ্গে জিনিসপত্রের দাম কমানো, একগুচ্ছ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং লোকপাল বিল পাসের দাবিও জোরালোভাবে উঠবে সংসদে। জোরালো প্রতিবাদ উঠবে বীমা ও ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানো এবং পেনশন তহবিল বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধেও।
সি পি আই (এম) তথা বামপন্থীদের এই লড়াই এবং প্রচার নয়া উদারবাদী নীতির আগ্রাসন প্রতিহত করতে সাহায্য করবে বলে মনে করেন কারাত। একইসঙ্গে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও জীবন-জীবিকা রক্ষা এবং সাম্প্রদায়িক শক্তির চক্রান্ত ভেঙে দিতেও সাহায্য করবে।
জোট-নীতিতে ভারসাম্যের কসরত |
ঝোলায় ওল ও তেঁতুল দু'টোই রাখছে কংগ্রেস |
জয়ন্ত ঘোষাল • নয়াদিল্লি |
ইউপিএ-র সঙ্গে থাকার শর্ত দিয়েছেন মায়াবতী। সরকারি চাকরিতে তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংরক্ষণ চালু করতে অবিলম্বে বিল পাশ করাতে হবে সংসদে। মনমোহন সিংহ সরকার এই দাবি মেনে নিলে তবেই বহুজন সমাজ পার্টি ইউপিএ-র সঙ্গে থাকবে। এ ব্যাপারে সর্বদলীয় প্রস্তাব গৃহীত হলেও মুলায়ম সিংহ যাদব এই প্রস্তাবের ঘোরতর বিরোধী। আর সেই কারণে মনমোহন-সনিয়া সময় কিনছেন। কৌশল উত্তরপ্রদেশের যুযুধান দু'পক্ষকেই তুষ্ট রাখা। রাজনীতির এ এক বিচিত্র পরিস্থিতি। শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়। তামিলনাড়ুর ডিএমকে-এডিএমকে, বিহারের লালু-নীতীশ, এমনকী পশ্চিমবঙ্গে মমতা-সিপিএম এই উভয় পক্ষকে নিয়েই এগোতে চাইছেন সনিয়া-মনমোহন। বিভিন্ন রাজ্যে মেরুকরণের রাজনীতি এখন সরাসরি এসে প্রভাব ফেলছে দিল্লির সংসদীয় রাজনীতিতে। মুলায়ম সিংহ যাদব ও অখিলেশ এই পিতা-পুত্রের বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। তার রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে সকলে। মুলায়ম চাইছেন এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের সাহায্য। আদালত যদি তাঁর বিরুদ্ধে রায় দেয়, সে ক্ষেত্রে মুলায়মও কংগ্রেস বিরোধিতার লাইন নিতে দেরি করবেন না বলেই মনে করেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। তখন মুলায়মের বদলে মায়াবতীর দিকে ঝুঁকতে পারে কংগ্রেস। একই রকম অবস্থা তামিলনাড়ুর রাজনীতিতেও। ডিএমকে-র এক শীর্ষ নেতা বলেন, "খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির প্রশ্নে আমরা নীতিগত ভাবে বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার পক্ষে। এ ব্যাপারে আমাদের সমস্যা হল অন্য। আমরা বুঝতে পারছি এডিএমকে সরকারে ঢোকার জন্য মুখিয়ে আছে। সরকারের সঙ্গে আমরা সম্পর্ক ত্যাগ করলে ওরা সরকারে চলে আসবে। সেই কারণে সরকারের সঙ্গে আমাদের ভাল সম্পর্ক রাখতে হবে।" কংগ্রেস সূত্র বলছে, কিছু দিন আগেই প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে মনমোহন সিংহের উপদেষ্টা টি কে নাইয়ার চেন্নাই গিয়ে জয়ললিতার সঙ্গে দেখাও করে এসেছেন। সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, তিনি ওই রাজ্যে পরমাণু কেন্দ্রের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সূত্র বলছে, রাজনৈতিক জোটের পুনর্বিন্যাস নিয়েও আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে। বিহারে নীতীশ কুমার এখনও এনডিএ-তে। লালু প্রসাদ সমর্থন করছেন ইউপিএ-কে। কিন্তু এখন বিহারে ধীরে ধীরে লালু তাঁর জনপ্রিয়তা বাড়াচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস তলে-তলে দু'পক্ষের সঙ্গেই সম্পর্ক ভাল রেখে এগোতে চাইছে। লালু ইউপিএ-কে সমর্থন করলেও নীতীশও কিন্তু ইউপিএ সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই এগোচ্ছেন। নীতীশের সাম্প্রতিক পাকিস্তান সফরেও মনমোহন সিংহের সরকার ব্যাপক ভাবে সাহায্য করেছে। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জোট ভেঙে যাওয়ার পর কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ কিন্তু সিপিএম নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে। সীতারাম ইয়েচুরি কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে এগোচ্ছেন। এ কথা ঠিক যে সিপিএম এফডিআই-সহ অন্যান্য বিষয়ে তীব্র ভাবে কেন্দ্র-বিরোধিতায় মুখর। কিন্তু সিপিএম নেতাদেরও একটি বড় অংশ মনে করছে, সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে কংগ্রেস-বিরোধিতার চেয়ে মমতা-বিরোধিতা তাদের জন্য অনেক বেশি জরুরি। তাই মমতাকে চাপে রাখতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে সচেষ্ট সিপিএমের একাংশ। সনিয়া-মনমোহন এই কারণেই সিপিএমের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন। আবার মমতার সঙ্গে যতই বিরোধ হোক, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে আবার মমতার সঙ্গে বোঝাপড়ার সম্ভাবনাও সম্পূর্ণ খারিজ করে দিচ্ছে না। এই একই রণকৌশল উত্তরপ্রদেশ, বিহার, তামিলনাড়ুতে প্রয়োগ করছে কংগ্রেস। আর জোট-যুগে আঞ্চলিক রাজনীতির এই ভারসাম্য জাতীয় রাজনীতিতে হয়ে উঠেছে এক অন্যতম নির্ধারক শক্তি। http://www.anandabazar.com/26desh1.html এফডিআই নিয়ে কল্যাণ-আনন্দ বাগযুদ্ধ ডিজিটাল ডেস্ক |
No comments:
Post a Comment