Twitter

Follow palashbiswaskl on Twitter

Thursday, November 22, 2012

জয়ী কিন্তু কেবল চরমপন্থীরাই নতুন গাজা সংকটের ফলে পরিস্থিতি যা দাঁড়াল, তাতে সব নরমপন্থীরই পিঠ এখন দেওয়ালে। ‘শান্তিচুক্তি’ যখনই হোক, এই বিরাট ক্ষতিটা ঘটে গেল। প্যালেস্তাইন, ইজরায়েল, আমেরিকা সর্বত্র। সেমন্তী ঘোষ

http://www.anandabazar.com/22edit3.html

জয়ী কিন্তু কেবল চরমপন্থীরাই
বিটা বেশ বিখ্যাত হয়েছে। নানা দেশের খবরের কাগজে, ওয়েবসাইটে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। না, ওই মৃত (হত) শিশুটির জন্য নয় নিশ্চয়ই। এমন তো কতই ঘটছে প্যালেস্তাইনের গাজায়, যখনতখন মর্টার বা বোমার ঘায়ে বেরিয়ে যাচ্ছে কত শেষ নিঃশ্বাস। ছয় দশক পর আমাদের নিস্পৃহ ঔদাসীন্যকে আর বোধহয় টলায় না এই সব! ছবির গুরুত্বটা আসলে বাড়িয়ে দিয়েছেন ওই ভদ্রলোক, হামাসের নেতা ইসমাইল হানিয়ে-র ডান দিকে যিনি ধরে আছেন নিথর শিশুদেহটি। ইনি মিশরের প্রধানমন্ত্রী হিশাম কাণ্ডিল। সকলের আগে যিনি গাজায় পৌঁছে ধ্বংসের একেবারে মধ্যিখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। ছবির পাশের ক্যাপশন বলছে, মৃত শিশুটিকে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন কাণ্ডিল।
এটা নতুন দৃশ্য। আর সেই নতুনের জোরে, প্রতিবেশী দেশ মিশরের প্রধানমন্ত্রীর অশ্রুসজল স্পর্শে প্যালেস্তাইনে ওই অনামা শিশুটি মৃত্যুর পর কত গুরুত্বই না পেয়ে গেল আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমে। হায়!
কিন্তু কেন নতুন? গাজায় এবারকার ধ্বংসের আকারপ্রকারটা বুঝতে গেলে সেটা খেয়াল করা দরকার। পশ্চিম এশিয়া যে সম্প্রতি পাল্টে গিয়েছে, পরিচিত পরিস্থিতিতে একটা নতুন 'টুইস্ট' এসেছে, সেটা ধরিয়ে দেন এই ছবির হিশাম কাণ্ডিল। ঘটনা হল, ঠিক এই মুহূর্তে দুই যুযুধান পক্ষকে শান্তিচুক্তির আচ্ছাদনে আনার যে প্রয়াস দেখছি আমরা, মিশরই তার প্রধান হোতা। এটা নতুন নয়, আগেও তা-ই ছিল। কয়েক দশক ধরে, এমনকী চার বছর আগে ২০০৮-এ শেষ গাজা সংকটেও (ওবামার প্রথম বার অভিষেকের মুখে। আশ্চর্য সমাপতন!) শান্তিচুক্তিতে মিশরেরই প্রধান ভূমিকা থেকেছে। কিন্তু এই মিশর সেই মিশর নয়, এ বারের পরিস্থিতি সে বারের মতো নয়। আজ না হোক কাল, শান্তিচুক্তিতে দু'পক্ষকে পৌঁছতে হবেই। কিন্তু সেই চুক্তির সময় এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিটি জেনেবুঝে মাথায় রেখে নিজের জেদ না ছাড়তে পারলে ইজরায়েলকে এবং গোটা পৃথিবীকে ভাসতে হবে অফুরন্ত হিংসার স্রোতে, সন্দেহ নেই।

নতুন দৃশ্য। মিশরের প্রধানমন্ত্রী ও হামাসের নেতা। গাজা, ১৮ নভেম্বর। ছবি: রয়টার্স

'টুইস্ট'টা ঘটে গেছে প্যালেস্তাইন সমস্যা বিষয়ে মিশরের রাষ্ট্রীয় অবস্থানে। ২০০৮-৯ সালে গাজায় ইজরায়েল হানায় যখন দেড় হাজার প্যালেস্তিনীয় নিহত হন, সেই সময় প্রাণভয়ে অনেকেই পালিয়ে আসার চেষ্টা করেন সিনাই পেনিনসুলা দিয়ে, মিশর ও গাজার সীমান্ত পেরিয়ে। আশ্রয়প্রার্থীর চাপে সীমান্ত প্রায় ভেঙে পড়ার উপক্রম। তখনকার প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের কাছে মিশরীয়দের উত্তাল দাবি পৌঁছয়: সীমান্ত খুলে দেওয়া হোক! তৎকালীন বিরোধী পক্ষ মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতা মহম্মদ মুর্সি দাবি তোলেন: ইজরায়েল মিশরের শত্রু, ঘোষণা হোক। মুবারক সীমানা খোলেননি, ঘোষণা করেননি। 'মার্কিন দালাল' 'ইজরায়েলি দালাল', সব গালি হজম করেছেন, তবুও করেননি। 
আর আজ, ২০১২ সালে, সকলের আগে গাজায় গিয়ে কাঁদছেন সেই দেশেরই প্রধানমন্ত্রী! সে দিনের সেই বিরোধী নেতা, মুসলিম ব্রাদারহুডের সেই মুর্সি এখন নিজেই প্রেসিডেন্ট। হোসনি মুবারকের থেকে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে গত শনিবার কায়রোয় দাঁড়িয়ে হুমকি দিয়েছেন ইজরায়েলকে: ওরা জানে না, কী মারাত্মক হবে এর ফল! 
এই একশো আশি ডিগ্রিকে ছোট্ট দুটি শব্দে ধরা যায়: আরব স্প্রিং। গত দুই বছরে পশ্চিম এশিয়ায় পুরোনো স্বৈরতন্ত্রী শাসকরা সরে গিয়ে যে নতুন জননেতা শাসকরা এসেছেন, তাঁরা সকলেই অনেক বেশি রক্ষণশীল, ইসলাম-পন্থী, এমনকী মৌলবাদ-প্রভাবিত। সকলেই প্যালেস্তাইনের জন্য জান লড়াতে প্রস্তুত। নতুন টিউনিসিয়ার সাফ কথা, তারা প্যালেস্তাইনের সঙ্গে রয়েছে, রইবে। লিবিয়াও তা-ই। ইতিমধ্যে তুরস্ক থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন ইজরায়েলি রাষ্ট্রদূত। যে মিশর আগে মধ্যস্থের ভূমিকা পালন করত, জঙ্গি ইসলামকে ঠেকাত, হামাস-এর সঙ্গে লেনাদেনা করত না, সেই মিশর এখন হামাসেরই পিতৃ-সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের শাসনে। এইখানেই লুকিয়ে এ বারের গাজা সংকটের নতুনত্ব। টিউনিসিয়ায় যখন প্রথম ধিকিধিকি জ্বলে উঠেছিল আরব বসন্তের প্রথম লালিমা, সেই দিনই অলক্ষ্যে লেখা হয়ে গিয়েছিল আজকের এই সংঘর্ষের ভবিতব্য। ২০০৯-এর শেষ শান্তিচুক্তির আদৌ ধার না ধেরে, ওবামার মৃদুমধুর ভর্ৎসনায় কান না পেতে, গাজায় মাঝের এই ক'বছরও ইজরায়েলের আগ্রাসন চলেছে, গত এক বছরে সাতশোটি রকেট-মর্টার আছড়ে পড়েছে গাজায়। গত মাসেও পনেরো জন প্যালেস্তিনীয় নিহত হয়েছেন। এর পর নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে যে হঠাৎই ধেয়ে এল জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসের রকেট-ঝাঁক, শুরু হল একপক্ষীয় হানা, এবং ইজরায়েল যে পরের দিনই বহুগুণ বেশি সামর্থ্য নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল, অনেক বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন রকেটে ছারখার করতে শুরু করল গাজা এই সব কিছুর পিছনেই আরব বসন্তের রক্তিম মঞ্চ উদ্ভাসিত। উগ্রবাদী প্যালেস্তিনীয়রা জানে, তারা সমর্থন-সমৃদ্ধ, ইজরায়েলই একঘরে। আরব দুনিয়ার পুনরুজ্জীবনের জ্বালানিতেই জ্বলছে তাদের এ বারের আত্মপরঘাতী বহ্নি। 
আরব বসন্ত না হয় নতুন সংঘর্ষের পরোক্ষ প্রেক্ষিত তৈরি করে রেখেছিল, কিন্তু প্রত্যক্ষ স্ফুলিঙ্গটি এল কোথা থেকে? স্পষ্ট নয় সেটা। নতুন কোনও 'প্রোভোকেশন' যখন ছিল না, তখন অনুমান ওই প্রেক্ষিতটাই আসলে প্রত্যক্ষ স্ফুলিঙ্গ। সামরিক নয়, কূটনৈতিক বক্তব্য প্রেরণের জন্যই এই হানা। "আমাদের রকেট ওদের ভয় পাওয়ায়, কিন্তু ওদের রকেট আমাদের প্রাণে মারে", বলেছেন এক প্রবাসী প্যালেস্তিনীয়। ইজরায়েলের সঙ্গে কোনও মতেই সামরিক শক্তিতে পাল্লা দিতে পারবে না জেনেও হামাসের এই অবিমৃশ্যকারিতার লক্ষ্য, ইজরায়েলের বেদম স্পর্ধা এবং প্যালেস্তাইনের নতুন সমর্থনের দিকে বিশ্বদুনিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ। ক'দিন আগেই গাজায় এসেছিলেন কাতারের রাষ্ট্রপ্রধান। সংঘর্ষ শুরু হতেই মিশরের প্রধানমন্ত্রীর পরে তুরস্কের বিদেশমন্ত্রীও সত্বর চলে এসেছেন গাজায়, প্যালেস্তিনীয় মৃতদেহ নিয়ে তাঁরও ছবি দেখা গিয়েছে। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীও আসছেন। (মনে রাখতে হবে তুরস্ক কিন্তু 'নেটো'রও সদস্য!) 
আরও একটা নিহিত হেতু সম্ভব। হামাসের অভ্যন্তরেও আরব বসন্তের প্রভাবে রদবদল শুরু হয়েছে, রক্ষণশীলদের সরিয়ে উঠে আসছে জঙ্গি-তর উপগোষ্ঠীগুলি, সালাফি এবং জিহাদিরা। সিনাই অঞ্চল পেরিয়ে মিশর থেকে গাজায় ঢুকছে সালাফিরা, মিশরের নতুন জমানায় তারা আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি শক্তিধর, অস্ত্রধর। বাইরে থেকে যেমনই দেখাক, ভেতরে ভেতরে হামাসও আসলে নানা দ্বন্দ্বে দীর্ণ, তার মধ্যেও চুক্তিবাদী ও জিহাদিদের তিক্ত বিভাজন। কখনও কখনও কট্টরতর অংশের কাছে আত্মসমর্পণ করেই সাংগঠনিক স্থিতি বজায় রাখে হামাস। তেমনই এক মুহূর্ত এখন। অর্থাৎ, এখানেও সেই আরব বসন্তেরই ছায়া। সেই ছায়াই জমাট বেঁধে আগুনের ফুলকি হয়ে গিয়েছে।
হামাসের গুরুত্বপূর্ণ নেতা আহমদ আল-জাবরি মারা গিয়েছেন ইজরায়েলের হানায়। হামাসের রকেট-ভাণ্ডার ছত্রখান। মাত্র পাঁচ জন ইজরায়েলি হত হয়েছেন, প্যালেস্তিনীয় নিহতের কোনও হিসেবই নেই, অন্তত পঞ্চাশ গুণ বেশি তো বটেই। তবুও শান্তিচুক্তির আগেই হামাসের 'লক্ষ্য: পূর্ণ। জেরুজালেম থেকে তেল আভিভ, সবই যে তাদের রকেটের সীমানায়, বোঝা গেছে। শেষ অবধি লড়ার ক্ষমতা তাদের, বোঝা গেছে। নতুন আরব বিশ্ব তাদের পাশে, বোঝা গেছে। হামাসের এতসব প্রাপ্তির পাশে কতটুকু পেয়েছেন মিস্টার আব্বাস, একা একা, রামাল্লায় বসে?

মাহমুদ আব্বাস ফতে গোষ্ঠীর নেতা, পশ্চিমের কাছে প্যালেস্তাইনের একমাত্র গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। হামাসের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব প্রায় শত্রুতার পর্যায়ে। কিন্তু এই আব্বাসই ক্রমাগত কূটনৈতিক প্রয়াস চালিয়ে গিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের জেনারেল অ্যাসেম্ব্লি-তে প্যালেস্তাইনের জন্য একটি আসন সংগ্রহের লক্ষ্যে। দুর্ভাগ্য, আলোচনা সবে গুরুতর হয়ে উঠছিল এই আসন নিয়ে, তখনই নতুন গাজা সংকট। পরিস্থিতি যা দাঁড়াল, তাতে আব্বাসের তো বটেই, সব নরমপন্থীদেরই পিঠ এখন দেওয়ালে, বিস্ফোরণের পাশে আর সব নরম শব্দ এখন অতলে নিমজ্জিত। শান্তিচুক্তির আশা ছাড়া আব্বাসের কিছু করার নেই। 'শান্তিচুক্তি' যখনই হোক, এই বিরাট ক্ষতিটা ঘটে গেল: প্যালেস্তাইন, ইজরায়েল, আমেরিকা, সর্বত্র চরমবাদীদের জয় নিশ্চিত হল। 
ইজরায়েলের কথাই যদি ধরি, প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সামনেই নির্বাচনের করাল ডাক, ফেব্রুয়ারিতে। দেশের মধ্যে গত কিছু মাস ধরে সংকটে আছেন তিনি, বিদেশে ওবামাও চাপে রাখছিলেন তাঁকে। ওয়াশিংটনে উজিয়ে গিয়েও ওবামার কাছে বিশেষ পাত্তা পাননি তিনি। দলের চরমপন্থীদের কামান তাঁর দিকে তাক করা ছিল, এমন সময়ে গাজা সংকট তাঁকে কামানধারীদের দলেই একীভূত করে দিল, ব্যস, নির্বাচন নিয়ে আর তাঁ চিন্তা নেই। চরমপন্থী লিকুদ পার্টির আশীর্বাদ নিশ্চয়ই এখন সাড়ম্বরে বর্ষিত হচ্ছে তাঁর উপর হিলারি ক্লিন্টনকে মুখের উপর তিনি বলছেন 'ইজরায়েল হ্যাজ নো চয়েস'! তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এলি ইশাই ঘোষণা করছেন, গাজাকে পিটিয়ে-গুঁড়িয়ে প্রস্তর যুগে ফেরত পাঠানোই একমাত্র লক্ষ্য!
আর আমেরিকা? ওবামা জানেন, নির্বাচন শেষ, কিন্তু ওয়াশিংটনে 'জুইশ লবি'র বাস্তবতা শেষ নয়। ফলে এত দিনের টুকটাক বেগড়বাঁই ছেড়ে তাঁর সাফ কথা: "ইজরায়েলের নিজেকে বাঁচানোর অধিকার রয়েছে!" যেন প্যালেস্তিনীয়দেরও সেই একই অধিকার নেই, যেন সেই অধিকারে ভর করেই তারা লড়াইয়ে নামেনি! এ সব 'রেটরিক্যাল' কসরত ছেড়ে আসল কথাটা এই, হাজার সদিচ্ছা থাকলেও আলাদা প্যালেস্তিনীয় 'স্টেট' তৈরির কথাটা পিছিয়েই গেল অনেক পা। তেল আভিভে হার্ডলাইনারদের জয়ডঙ্কার অর্থ: ইরান বা প্যালেস্তাইন, কোনও ফ্রন্টেই ইজরায়েলকে চাপ দেওয়ার চেষ্টা ওয়াশিংটন আপাতত ছেড়ে দেবে। 
একেই বলে স্থিতিজাড্য, একেবারে 'ক্লাসিক' অর্থে। কোথাও এগোনোর নেই, যতই পা বাড়াও না কেন। আরব পৃথিবী বদলে গেলেও গাজা, তেল আভিভ একই আছে। একই জেদে, একই রণহিংসায় স্থিত। বরঞ্চ, আরব দুনিয়ার পরিবর্তন যেন তাদের আরও অপরিবর্তনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ফলে শান্তিচুক্তি যা-ই হোক না কেন, আসল 'চুক্তি'টা আবারও মরীচিকায় পরিণত। সামরিক পথে যে শান্তিও নেই, সমাধানও নেই, সেই বোঝাপড়ায় পৌঁছনোর আশা আপাতত ছেড়ে দেওয়া যাক অনেক কালের জন্য।

No comments:

Post a Comment

Related Posts Plugin for WordPress, Blogger...

Welcome

Website counter

Followers

Blog Archive

Contributors